চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসায় জবি ছাত্রলীগের গ্রুপ গ্যাং
২৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:১২ পিএম | আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:১২ পিএম
বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের মার্কেট থেকে চাঁদা আদায়,ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা আদায়,বাস স্ট্যান্ড থেকে চাঁদা আদায়, ক্যাম্পাসে মাদকের জমজমাট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, জিম্মি করে টাকা আদায়সহ নানা রকম অনৈতিক কাজের নরক রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করতো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ভাগবাটোয়ারায় ব্যাচভিত্তিক গ্রুপের কাছে অসহায় হয়ে পড়তো স্বয়ং সভাপতি-সেক্রেটারী।
২০২২ সালে পহেলা জানুয়ারি ইব্রাহিম ফরাজিকে সভাপতি ও আকতার হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটিঘোষণা করা হয়। তারপর থেকেই শুরু হয়েছে চাঁদাবাজি, মাদক,টেন্ডারবাজি, জিম্মি করে টাকা আদায়, ভিন্নমত দমনের নামে টাকা আদায়সহ নানা রকম অপকর্মের বিভিন্ন গ্রুপ। এসব গ্রুপের মধ্যে সবচেয়ে উগ্র ও অমানবিক ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ ব্যাচের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে গঠিত 'উৎপাত১২' নামের একটি গ্যাং। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ ব্যাচের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নিয়ে গঠিত 'অগ্নি১৫' নামের একটি গ্যাং। এছাড়াও ব্যাচভিত্তিক গ্রুপ ১৩ ব্যাচের নাম 'অনির্বাণ ১৩',১৪ ব্যাচের নাম 'দূর্বার ১৪', ১৫ ব্যাচের গ্রুপের নাম অগ্নি ১৫। তবে এসকল গ্রুপের সকলেই অনৈতিক কাজের সাথে জড়িত ছিল না। যারা বেশি উগ্র ছিল তাদের নিয়ে গ্যাং,গ্রুপ করা হয়েছিল।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ ব্যাচ, ১২ ব্যাচ ও ১৩ ব্যাচের ছাত্র লীগের নেতাকর্মীরা ছিল 'উৎপাত১২' এর সদস্য। ১৪ ব্যাচ,১৫ ব্যাচ ও ১৬ ব্যাচের নেতাকর্মীরা ছিল 'অগ্নি১৫'এর সদস্য। এই গ্রুপগুলো ব্যাচভিত্তিক সিনিয়ররা নিয়ন্ত্রণ করতো, হাইকমান্ডে ছিল শাখা সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজি ও সাধারণ সম্পাদক এসএম আকতার হোসাইন। যত মারামারি, প্রভাব বিস্তার সব কিছু করাতো এই দুই গ্রুপকে দিয়ে। নিজেদের স্বার্থের ভাগবাটোয়ারা নিয়েও একাধিকবার এই দুই গ্রুপের মাঝে সংঘর্ষ হয়েছে। শাখা ছাত্র লীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা এদের বিরুদ্ধে মুখ খুললে তাকে জঙ্গি সংগঠনের সদস্য বলে ধরিয়ে দেয়ার ভয় দেখান স্বয়ং সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক।
পুরান ঢাকা হকার্স সমিতি সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে বাহাদুর শাহ পার্ক সংলগ্ন ফুটপাতে প্রতিদিনই ৬-৭ টি ফল দোকান বসে। এসব দোকান থেকে দৈনিক ১৫০ থেকে ২০০ করে প্রতিদিন চাঁদা তুলতো গাজী মো. শামসুল হুদা, রবি, বারেক, শুভ সাহাসহ উৎপাত ১২ গ্রুপের সদস্যরা। বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে শুরু করে সোনালী ব্যাংকের সদরঘাট শাখা, ফ্লাইওভার পর্যন্ত আড়াইটা থেকে শুরু করে ৪টা পর্যন্ত প্রতিদিন দোকান থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা তুলে। ভিক্টোরিয়া পার্ক মসজিদ থেকে শুরু করে মুসলিম গভ. স্কুল পর্যন্ত আরেকটি গ্রুপ টাকা তুলে। ফুটপাতে দোকানপাটের চাদা নিত সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজি। বাহাদুর শাহ পার্ক ঘুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গেইটের সামনে যেসকল বাস ঘুরে যেত তাদের কাছে বাস প্রতি ১০০-২৫০ টাকা নিত। প্রতিদিন প্রায় ৮-১০ হাজার টাকা উঠতো, মাস প্রতি টাকা উঠতো আড়াই থেকে তিন লাখ। এই টাকার একটি অংশ সাধারণ সম্পাদক আকতারের পকেটে যেতো। বাস থেকে চাঁদা তুলতেন ১৪ ব্যাচের সৈকত, ১৫ ব্যাচের সিফাত,রানা,সাজবুল, মুসা,রাহুল,মুকিত,আরাফাতসহ অগ্নি ১৫ গ্রুপের সদস্যরা।
অগ্নি ১৫ সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদকের ব্যবসায় লিপ্ত ছিল অগ্নি ১৫ গ্রুপের সদস্যরা। হেরোইন থেকে শুরু করে গাজা সবকিছুই জমজমাট ভাবে চলতো। বিশেষ কোন অনুষ্ঠানে তারা পুরান ঢাকায় মাদক সরবরাহ করতো। তাদের কাছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছিল জিরো পয়েন্ট। মাদক সেবনের স্থান ছিল বিবিএ বিল্ডিংয়ের আন্ডারগ্রাউন্ড, সাইন্সফ্যাকাল্টি,সমাজবিজ্ঞান ভবনের পাশে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি। সেবনকালে প্রক্টরিয়াল টিমের কাছে ধরা পড়লে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে ছেড়ে দিতে বাধ্য হতো। এই মাদক ব্যবসায় সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী ছিল নৃবিজ্ঞান বিভাগের ১১ ব্যাচের শুভ সাহা,১৩ ব্যাচের গাজী শামসুল হুদা, ১৫ ব্যাচের রাফি আহমেদ ও ইতিহাস বিভাগের সিফাত উল্লাহ। এই ব্যবসায় তাদের মাসিক আয় ছিল প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা। জবি শাখা ছাত্রলীগ এ সকল কাজে অতিষ্ঠ হয়ে ২০২৩ সালের ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জবি ছাত্রলীগের চাঁদাবাজীর ফিরিস্তি দিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়ন। ২০২৪ সালের ১৬ জুন সুমনা হাসপাতাল থেকে চাঁদা নেয়ার জন্য জবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মেহেদী বাবুকে পাঠান সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইন ও রবিউল ইসলাম রবিকে পাঠান সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজি। এরপর হাসপাতালের পরিচালক ইমাদুল উদ্দিন তাদের চাঁদা না দিলে পরে ফোনে সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইন গালিগালাজসহ হুমকি প্রদান করেন।২০২২ সালের ২৫ আগস্টে সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজি ও ফরহাদ ব্যাপারী মশিউর রহমানের কাছে থেকে ব্যবসার কথা বলে চার লাখ টাকা ধার নেন এবং ব্যবসায় লাভ হলে লভ্যাংশ দেবেন বলে জানান। কিন্তু পরবর্তী টাকা দিয়ে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেন। গত আড়াই বছরে শাখা ছাত্র লীগের এরকম অগণিত অভিযোগ ও ঘটনার সত্যতা মিলেছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে শাখা ছাত্র লীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজি ও সাধারণ সম্পাদক এসএম আকতার হোসাইনের সাথে যোগাযোগ করা হলেও ব্যর্থ হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাখা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি বলেন, আমরা এগুলো আগেও জানতাম, এগুলো নতুন কিছু না। মূলত সভাপতি-সেক্রেটারী মিলেমিশেই এই কাজগুলো করাতো। আমরা যারা স্বচ্ছ রাজনীতি করেছি তারা কিছুই পায় নি, ছাত্রজীবনটাও ভালোভাবে শেষ করতে পারি নি। যেহেতু তাদের পকেট ভারী হয়েছে, সব দায়ভার তাদের দুইজনকেই নিতে হবে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের বরাদ্দ পেল বাফুফে
ইজতেমা মাঠকে যারা খুনের মাঠে পরিণত করেছে তারা সন্ত্রাসী
আসছে ভিভোর এক্স সিরিজের নতুন ফ্ল্যাগশিপ
বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২ ভারতীয় নাগরিককে স্বদেশে ফেরত
মুন্সীগঞ্জে বিএনপি’র দু পক্ষে সংঘর্ষ,৩ জন গুলিবিদ্ব সহ আহত ১০
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সাকিব-তামিমকে পাওয়া যাবে: ফারুক
ইজতেমা মাঠে হত্যাযজ্ঞে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার করুন
কলাপাড়ায় অটোরিকশা উল্টে শিশুর মৃত্যু
আগামীকাল পঞ্চগড়ে বিএনপির জনসমাবেশ
ব্যাক্তিস্বার্থ পরিহার করে, দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে: ইলিয়াস পাটোয়ারী
সখিপুরে বিদ্যুৎষ্পৃষ্টে ডিস ব্যবসায়ীর মৃত্যু
যারাই সুযোগ পেয়েছে তারাই দেশের সাথে বেঈমানী করেছে: ডা. মু. তাহের
পঞ্চমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো মৌমাছি ও মধু সম্মেলন
শীতের দিনে ঝিরঝিরে বৃষ্টি স্থবির খুলনা শহুরে জীবন
টেকসই উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য নীতি করার তাগিদ
লোকসংগীত শিল্পী নিপা আহমেদ সারাহ্ এর একক সঙ্গীত সন্ধ্যা
বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি ও হার্ট ফাউন্ডেশনের কর্মশালা
বাফেদার ৩১তম এজিএম অনুষ্ঠিত
পাকিস্তান থেকে যেসব পণ্য নিয়ে এবার এলো জাহাজ
হারের বৃত্তে সিটি, নেমে গেল ছয়ে