স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে নিজকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা প্রমান করে সিলেট সরকারী ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ হওয়ার সিঁড়ি পার হন হাকিম মো. মুহিব বুল্লাহ। দলীয় লোক প্রমানে প্রত্যয়ন পত্রে সই করেছিলেন নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান, পরবর্তীতে এমপি কাম স্থানীয় উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মরহুম মো: ওয়ালী উল্লাহ। ওই প্রত্যায়ন পত্রের মুজেজায় বেপরোয়া হয়ে উঠেন তিনি। দায়িত্ব পাওয়ার পরও শুরু করেন বহুবিধ অনিয়ম-দুর্ণীতি। তাকে নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিলেও স্বৈরাচারের দোসর হওয়ায় কেউ থামাতে পারেনি তাকে। কিন্তু রক্ত স্নাত জন বিপ্লবে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন হলেও, এখনো যেই সেই দুর্নীতিবাজ মুহিব বুল্লাহ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিলেট সরকারী ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ হাকিম. মো. মুহিব বুল্লাহ। ২০১১ সালের ২২ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি দায়িত্ব পালন করেনদেশীয় চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নয়ন প্রকল্পের মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন ঢাকা মিরপুরস্থ সরকারী ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজে। চাকুরীরত অবস্থায় সাবেক এমপি স্থানীয় তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ'লীগ সভাপতি মো. ওয়ালী উল্লাহ স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যায়ন পত্রে ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায় তার। ২০১১ সালের ২ ফ্রেব্রুয়ারী মৌলভী হাজী আজিজুর রহমান ৪ নং নলচিরা ইউনিয়ন আ'লীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। সেই সাথে প্রত্যয়নপত্র গ্রহিতা মুহিব বুল্লাহ নিজে হাতিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি হিসেবে পালন করেছেন দায়িত্ব। এই প্রত্যয়নপত্র হাতে পাওয়ার পরও নড়েচড়ে বসেন হাকিম মুহিব বুল্লাহ। তীর নিশানা করেন চুড়ান্ত লক্ষে। এ পথে দ্রুত যে সফল হবেন তিনি নিজেও হয়তো কল্পনা করেনি। কিন্তু পতিত শেখ হাসিনার সরকারের কথিত স্মার্ট বাংলাদেশে যে ছিল সব সম্ভব, তাই প্রমাণ করে দিয়ে এক লাফে গদিসীন হন ( চলতি দায়িত্বে) সিলেট সিলেট সরকারী ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক কলেজের অধ্যক্ষ পদে। ওই পদে দায়িত্বে বসে অনিয়ম করে আতœসাত করেন ২ লাখ ৬৯ হাজার ৯শত ৬৮ টাকা। পরবর্তীতে স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদপ্তরের মো: আবুল বাসার ( এসএএস সুপারিনটেডেন্ট) এর যাচাই বাচাইয়ে ধরা পড়ে এহেন আর্থিক অনিয়ম। এতে পড়ে অডিট আপত্তি, আজ অবধি এই আপত্তির নিস্পত্তি করেননি ছাত্রলীগের সাবেক ওই নেতা ও কলেজ অধ্যক্ষ মুহিব বুল্লাহ। অথচ এই অভিযোগ নিস্পত্তি না হওয়ায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তিব্বিয়া কলেজের অধ্যক্ষ পদ থেকে মেডিকেল অফিসার, ঢাকা মিরপুরস্থ সরকারী ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজে বদলি করেন ( স্বাঃঅধিঃ/হোঃদেঃচিঃ/ব্যক্তিগত/০৮/২০১১/৮২৮:তাং১৪/১১/২০১৩ইং) হাকিম. মো. মুহিব বুল্লাহকে। কিন্তু এই আদেশ প্রতিপালন করতে হয়নি তাকে। তাকে সুরক্ষা দেন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব , আ'লীগ নেতা ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল ও সাবেক সংসদ সদস্য ইউনানী বোর্ড চেয়ারম্যান মো. মুজিবুল হক।
পরবর্তীতে এক তদবিরে প্রভাষক পদে পদোন্নতির আদেশ জারি করা হয় (স্বাঃঅধিঃ/হোঃদেঃচিঃ/ব্যক্তিগত/০৮/২০১১/৮৪৮ :তাং২৪/১১/২০১৩ইং) ডা. মো. মুহিব বুল্লাহকে ( কোড নং ১০৬৭৮১) ।
অপরদিকে, এই তদবিরে প্রভাব এতোই শক্তিশালী ছিল যে সিলেট সরকারী তিব্বিয়া কলেজে মেডিকেল অফিসার পদ এবং পদের আইড নম্বর ও স্থায়ী মেডিকেল অফিসার পদ না থাকা সত্ত্বেও ওই কলেজের নামে চাকরি স্থায়ী করে দেয়া হয় মুহিব বুল্লাকে স্মারক নং ৫৯.০০.০০০.১১১.১৫.০০১.১৮-২২২; তাং ১৮/০৯/২০২২)।
ওই কলেজে প্রভাষক (ইউনানী মেডিসিন) পদ স্থায়ী না থাকায় এবং আইডি নম্বর না থাকা সত্ত্বেও এক সাথে দুইটি উচ্চতর গ্রেড গ্রহণ করেন বিধি বহির্ভুতভাবে (স্মারক নং ৫৯.০০.০০০.১১১.১৫.০০১.১৮-২৭৮; তাং ১০/১১/২০২২) হাকিম মো. মুহিব উল্লাহ।
এছাড়া তার ব্যাপারে চমকপ্রদ তথ্য হলো তার আইডি কার্ড প্রেসক্রিপশন প্যাডে ব্যবহৃত এমডি এবং ডিএসসি ডিগ্রিগুলো কোন একাডেমিক ডিগ্রি নয়।
শ্রীলংকার কলেম্বোতে অবস্থিত ওপেন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ফর কমপ্লিমেন্টারি হতে ৩ মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন ১৯৯৪ সালে তিনি। ভর্তি বিজ্ঞপ্তি ও ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই কথিত ভর্তিতে ঢাবি হতে বিইউএমএস ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন ২০০৭ সালে। বিচিত্র এমন ডিগ্রি ভান্ডারে সমৃদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা।
এদিকে, দাখিল পরীক্ষা পাশ ছাড়াই ১৯৮০ সালে ভৌতিক ভাবে পাশ করেছেন আলিম ক্লাস। মার্কশিট ঘষামাজা করে ১৯৮৭ সালে ডিইউএমএস পাশ করে দেশীয় চিকিৎসা পদ্ধতির উন্নয়ন প্রকল্পে মেডিকেল অফিসার পদে চাকুরী নিশ্চিত করেন তিনি। অথচ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত ছিল প্রত্যেক সাবজেক্টে ৫০ শতাংশ মার্ক থাকতে হবে। কিন্তু মুহিব বুল্লাহর ডিইউএমএস কোর্সের প্রত্যেক সাবজেক্টে নেই ৫০ শতাংশ মার্ক।
এছাড়া অধ্যক্ষের চলতি দায়িত্ব কালীন কর্মস্থল ফাঁকি দেয়ার ঘটনায় একাধিক সংবাদ মাধ্যম ইতিপূর্বে তার বিরুদ্ধে গুরুত্ব সহকারে সংবাদ প্রকাশ করেছিল। তারপরও বেপরোয়া ছিলেন তিনি। ছাত্র জীবনে যেমন পদে পদে জালিয়াতি, তেমনি চাকুরী জীবনে নানা কেলেংকারীর জন্ম দিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেও এখনো বহাল তবিয়তে অধ্যক্ষের চেয়ার বসে ছড়ি ঘুরাচ্ছেন হাকিম মুহিব বুল্লাহ সিলেট সরকারী ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজে।
এ ব্যাপারে হাকিম মো. মুহিব বুল্লাহ বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ ভূয়া ও ভিত্তিহীন। কিছু চক্রান্তকারী আদালতের নিষেধাজ্ঞা স্ব্ত্বেও হাকিম পদবীর পরবর্তীতে ডা; হিসেবে নিজকে জাহির করে সাধারন মানুষকে ধোঁকা দেয়. ওরাই হয়রানি করতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে। তিনি প্রত্যয়ন পত্রের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন তাকে নিয়ে যড়যন্ত্র হওয়ায় তার পক্ষে এই পত্রটি সংগ্রহ করেন তার এক ভাতিজা তবে কোনদিন ছাত্রলীগ রাজনীতি করেননি তিনি ।