ভয়াল ১২নভেম্বর ‘ঘূর্ণিঝড় হেরিকেন’র কালো রাত আজ
১২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৩ পিএম | আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৪৫ পিএম

প্রকৃতির রুদ্র রোশের শিকার উপকূলবাসীর কাছে ‘ভয়াল ১২ নভেম্বর’ আজ। দেশের উপকূলের ৭১০ কিলোমিটার এলাকার দেড় কোটি মানুষের এক বিভিষিকার এ রাতটির কথার মনে করে আজো সবাই শিউরে ওঠেন। ১৯৭০-এর ১২ নভেম্বর রাতে বঙ্গোপসাগর থেকে ধেয়ে আসা প্রায় ৩০ফুট উচ্চতার জলোচ্ছাস নিয়ে আড়াইশ কিলোমিটার বেগে ঘূর্ণিঝড় ‘হেরিকেন’ উপক’লের বিশাল জনপদের প্রায় ৫ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। ভয়াল সে কালো রাতে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ নিখোজ হলেও তাদের বেশীর ভাগেরই ঠিকানা ছিল না ফেরার দেশে। ফুসে ওঠা বঙ্গোপসাগরের জলোচ্ছাস সে রাতে লক্ষাধীক মানুষকে ভাসিয়ে নেয়ায় তাদের সলিল সমাধী ঘটে। ফলে নিকটজনেরা তাদের লাশেরও কোন সন্ধান পায়নি।
মৃত্যু আর ধংশ নিয়ে প্রতি বারের মত ’৭০-এর ১২ নভেম্বর হেরিকেন-এর তান্ডবে উপকূলের ৭১০ কিলোমিটার এলাকা যুড়ে যে ভয়াবহ বিভিষিকা নেমে এসেছিল তা আজো গোটা বিশ্বে বিরল। কোন প্রকৃতিক বিপর্যয়ে একই রাতে এত মৃত্যু আর কখনো দেখনি গোটা বিশ^। সে রাতে উপকূলের এমন কোন পরিবার ছিল না যাদের কেউ না কেউ নিহত বা নিখোজ হননি।
মার্কিন উপগ্রহ থেকে প্রথম ঐ ঘূর্ণিঝড়ের বার্তা তৎকালীন পাকিস্তান আবহাওয়া বিভাগকে দেয়া হলেও সময়মত উপকূলবাশীকে সতর্ক করা সহ তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার কোন ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে জানমালের ক্ষতি অনেকগুনই বেড়ে যায়।
এখনো নভেম্বর এলেই গোটা উপক’লী জনপদের মানুষ চরম আতঙ্কে থাকেন। এমনকি ২০০৭-এর ১৫ নভেম্বর রাতে হেরিকেন-এর অনুরূপ ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ বঙ্গোপসাগর থেকে প্রায় ২০ফুট উচ্চতার জলোচ্ছাস মাথায় করে আড়াইশ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে এসে বরিশাল, বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরগুনা ও পিরোজপুরের বিশাল এলাকাকে লন্ডভন্ড করে দেয়। ২০২০-এর ১১ নভেম্বর সকালে আরেক ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপক’লে আছরে পড়েছিল। সুন্দরবন সহ উপকলীয় বনভ’মি সে ঝড়কে প্রতিহত করায় দূর্বল হয়ে যায়।
বাংলাদেশের দক্ষিন সীমানা জুড়ে বি¯তীর্ণ জলরাশির সঞ্চালন সুনীল ঢেউ-এর মাথায় যে রূপালী উর্মিমালা আলিঙ্গন করছে, বিশ্ব মানচিত্রে তা-ই বঙ্গোপসাগর। পৃথিবীর অন্য সব সাগরের মতই প্রকৃতির সব লীলার সঙ্গীনী হয়ে মেতে আছে আমাদের অবিচ্ছেদ্য বঙ্গোপসাগরও। প্রকৃতির সাথে বঙ্গোপসাগরের বিচিত্র লীলার যে ভয়ঙ্কর রূপ, তার অস্তিত্ব অনুভব করতে গিয়ে দেশের উপক’লবাশীকে বার বারই ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপ ঘূর্ণিঝড়ের রূপ ধরে উপক’লে ছোবল হানছে শতাব্দীর পর শতাব্দী।
প্রকৃতির রুদ্র রোশে গত দুই শতকে উপকুলভাগের অন্তত ২৫ লাখ মানুষের প্রানহানী ঘটেছে। সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমানও ১০ লাখ কোটি টাকারও বেশী। এরপরেও প্রকৃতির সাথেই লড়াই করেই বেঁচে আছেন দেশের দক্ষিণ উপকুলের দেড়কোটি মানুষ। তবে একের পর এক প্রকৃতির তান্ডব অব্যাহত থাকলেও এখনো দূর্যোগের হাত থেকে উপক’লবাশীর নিরাপদ আশ্রয় সহ প্রাণী ও মৎস্য সম্পদ রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত হয়নি। তবে আগাম সতর্কতার কারনে প্রাণহাণীর সংখ্যা আশাতীতভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।
পাশাপাশি প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রে ৫ লক্ষাধিক মানুষের নিরাপদ আশ্রয় সম্ভব হলেও বিশার জনগোষ্ঠী এখনো নিরাপত্তার বাইরে। তবে প্রাণী সম্পদের আশ্রয় এখনো বেদানাদায়ক। মৎস্য সম্পদ আরো ঝুাকপূর্ণ। প্রকৃতির এ রুদ্র লীলায় বার বারই দক্ষিণ উপক’লভাগের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা চরম বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের অর্থনীতিতেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এমনকি বার বার প্রকৃতির তান্ডবে দক্ষিণ উপক’লের অর্থনীতি আজো সারা দেশের অনেক পেছনে
বিজ্ঞানের প্রসারের ফলে ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তির কারণ ও এর গতিপথ নির্ণয় সম্ভব হলেও নিয়ন্ত্রন আজো মানুষের সাধ্যের বাইরে হলেও সময়মত সতর্ক করার ফলে প্রানহানীর সংখ্যা যথেষ্ঠ হ্রাস করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি টেকশই অবকাঠামো নির্মানে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিও কিছুটা হ্রাস পেলেও প্রকৃতি নির্ভর উপক’লীয় কৃষি ব্যবস্থা বারবারই বিপর্যস্ত হচ্ছে। ফলে ক্ষুধা আর দারিদ্রতা দক্ষিন উপক’লবাশীর জীবনসঙ্গী হয়ে আছে আজো।
’৭০-এর ১২ নভেম্বর রাতে হেরিকেন’র তান্ডবে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সহ গোটা পাকিস্তানের সর্বাধীক অনুন্নত ও দারিদ্র পীড়িত উপক’লীয় এলাকা আরো একবার বিপন্ন হবার পরে বেঁচে যাওয়া মানুষগুলোর জন্য অবশিষ্ট ছিল শুধু সাগরের গর্জন আর শব মিছিল। ধংশস্তুপ থেকে ভেসে আসছিল স্বজন হারাদের কান্নার রোল। বিশুদ্ধ পানি, খাবার আর বসনের সাথে মাথার ওপর ছাউনির অভাবে উপক’লের বেশীরভাগ এলাকার বাতাসই দীর্ঘশ্বাসে ভারি হয়ে গিয়েছিল। সৃষ্টি হয়েছিল চরম মানবিক বিপর্যয়। হেরিকেনের তান্ডব উপক’লের শত শত মাইল যুড়ে শুধু বিধ্বস্ত জনপদ, লাশের মিছিল আর জনবসতীর ধংশস্তুপের চিঞ্হ রেখে গিয়েছিল। হেরিকেনের তান্ডবে বেঁচে যাওয়া অন্ন-বস্ত্র আর মাথা গোজার নুন্যতম ঠাই বিহীন মানুষের জীবনে চরম অনিশ্চয়তা নেমে এলেও পাকিস্তান সরকারের ত্রান তৎপড়তা শুরু হয় অন্তত ১৫ দিন পরে। তারপরেও প্রকৃতির একের পর এক রুদ্র রোষ থেকে বেঁচে যাওয়া উপক’লের মানুষগুলো প্রকৃতির সাথে লড়াই করেই টিকে আছে আজো।
’৭০-এ ১২ নভে¤বর কালো রাত্রীর সে বিভিষিকা আজো উপক’লের বয়োজেষ্ঠদের তারা করছে। স্বজনহারা সব বয়সী মানুষ বড় দুঃসহ যাতনা নিয়েই স্মরন করছেন ভয়াল ১২ নভেম্বরকে। হেরিকেন-এর ছোবলে নিহতদের স্মরনে আজ উপক’লের বিভিন্ন এলাকায় মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

শহীদ জিয়া এদেশের শ্রমিকদের কল্যানে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন - শ্রমিক সমাবেশে বিএনপি নেতা কাজী শিপন

বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ জনতার ঢল, বক্তব্য রাখছেন শীর্ষ নেতারা

সারা বিশ্বে শ্রমিকরা তাদের শ্রমের উপযুক্ত মর্যাদা পেতে শুরু করেছে: ডিসি মানোয়ার হোসেন

বৈধ অভিবাসীদের জন্যও নতুন সতর্কতা যুক্তরাষ্ট্রের

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিজেকে শ্রমিক পরিচয় দিতে গর্ববোধ করতেন: তারেক রহমান

জোট নয় একক ভাবেই নির্বাচন করবে গণঅধিকার পরিষদ: আবু হানিফ

স্বৈরাচারের দোসররা শ্রমিকদের ব্যাবহার করে চেষ্টা করছে ফায়দা হাসিলের : মিফতাহ্ সিদ্দিকী

পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে সীতাকুণ্ড : আসলাম চৌধুরী

শুক্রবার হজে যাচ্ছেন ৪ হাজারের বেশি বাংলাদেশি

ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দুটি উচ্চ জলাধার তিন বছরেও চালু হয়নিঃ তীব্র পানিসংকটে বরগুনা পৌরবাসী

কুয়েটের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য চুয়েট অধ্যাপক হযরত আলী

নিষেধাজ্ঞার পর মেঘনায় মাছ ধরা শুরু কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পাওয়ায় হতাশ জেলেরা

"তলে তলে' সর্ম্পকে প্রকাশ্যে ঘুরতেন সিলেট আ লীগের শীর্ষ নেতা মাহফুজ, : অবশেষ গ্রেফতার

কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ

শ্রমিকরা দিনরাত পরিশ্রম করে এই বাংলাদেশ বিনির্মাণ করেছে - অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন

৩২ বছর পর জাকসু নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা

মাগুরায় শ্রীপুরে ও মহম্মদ পুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ২ জন নিহত, আহত ১

যারা শ্রমিকদের টাকায় ভাগ বসান, তারা সবচেয়ে বড় ভিক্ষুক : রেজাউল করিম

বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে তানিয়া আমিরের বক্তব্য বিভ্রান্তিকর: প্রেস উইং

দাওয়াতে ইসলামীর জামিয়াতুল মদীনার দাওরাতুল হাদীস উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মাঝে দস্তারবন্দী প্রদান