যশোর প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যরে চাচাত ভাই চঞ্চল ভট্টাচার্য আড়াই কোটি টাকা আত্মসাত করে পালিয়েছে
১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৩ এএম | আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৩ এএম
যশোরের মনিরামপুরে আওয়ামী লীগ সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্যরে চাচাত ভাই নেহালপুর স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ চঞ্চল ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়াও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে নিজ কর্মস্থল নেহালপুর কলেজের তহবিল ও শিক্ষকদের কাছ থেকে প্রতারণা করে আরো প্রায় ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন চঞ্চল ভট্টাচার্য্য। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পাওনাদারদের রোষাণল থেকে রক্ষা পেতে চঞ্চল ভট্টাচার্য্য জমি ও বাড়ি বিক্রি করে পরিবার নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন। এদিকে অধ্যক্ষ চঞ্চল ভট্টাচার্য্য কোন ছুটি ছাড়াই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকায় পরিচালনা কমিটি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়েছে।
ভুক্তভোগীসহ এলাকাবাসী জানায়, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ স্বপন ভট্টাচার্য্য ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী খান টিপু সুলতানের সাথে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই সময় স্বপন ভট্টাচার্যের চাচাত ভাই চঞ্চল ভট্টাচার্য্য নেহালপুর স্কুল এন্ড কলেজের প্রভাষক ছিলেন। পরে কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হন স্বপন ভট্টাচার্য্যরে স্ত্রী তন্দ্রা ভট্টাচার্য্য। তখন ক্ষমতার দাপটে অধ্যক্ষের শূন্যপদে নিয়োগ দেওয়া হয় চাচাত ভাই চঞ্চল ভট্টাচার্য্যকে। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের টিকিটে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে দ্বিতীয়বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন স্বপন ভট্টাচার্য্য। এর পরই স্বপন ভট্টাচার্য্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ফলে প্রতিমন্ত্রী পরিবার মনিরামপুরে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে। নিয়োগ বাণিজ্য, দখলদারিত্ব, টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে পরিবারটি।
এরই ধারাবাহিকতায় নেহালপুর স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ চঞ্চল ভট্টাচার্য্য আধিপত্য বিস্তার করে খাটুয়াডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বাজিতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হন।
অভিযোগ রয়েছে, খাটুয়াডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ চারটি পদে নিয়োগের নামে অন্তত ১০ জনের কাছ থেকে অগ্রিম বাবদ প্রায় এক কোটি টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। এ অভিযোগ করেছেন প্রধান শিক্ষক হযরত আলী। শ্যামনগর গ্রামের আশীষ কুমারের কাছ থেকে দুই বছর আগে অগ্রিম বাবদ পাঁচ লাখ টাকা নেওয়া হলেও চঞ্চল তাকে চাকরি দেননি। পরে তার টাকাও ফেরত দেননি। বাজিতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে বিল্লাল হোসেন নামে এক যুবকের কাছ থেকে ১৮ লাখ টাকা নেন অধ্যক্ষ চঞ্চল। কিন্তু ২০২৪ সালে সংসদ নির্বাচনে স্বপন ভট্টাচার্যের পরাজয় হলে বিল্লালকে চাকরি দিতে পারেননি তিনি। তবে অভিযোগ রয়েছে, বিল্লালের কাছ থেকে আরো আট লাখ টাকা নিয়ে পেছনের তারিখে তাকে নিয়োগ দেন চঞ্চল ভট্টাচার্য।
অপরদিকে নেহালপুর কলেজে ল্যাব সহকারী পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ইমন হোসেন নামে এক যুবকের কাছ থেকে অগ্রিম বাবদ সাত লাখ, কোনাকোলা গ্রামের বিল্লাল হোসেনের কাছ থেকে পাঁচ লাখ, আয়া পদে আম্রঝুটার হাসিনা খাতুনের কাছ থেকে ১৩ লাখ টাকা নেন চঞ্চল। নেহালপুর কলেজে চারজন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের নামে ৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন তিনি।
কলেজের শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সভাপতি সহকারী অধ্যাপক এমএম এ সালাম অভিযোগ করেন, শিক্ষক তহবিল থেকে অধ্যক্ষ ছয় লাখ টাকা, কলেজের রিজার্ভ ফান্ড থেকে (আইএফআইসি ব্যাংক ও রুপালী ব্যাংক) চার লাখ, সাধারণ তহবিল থেকে চার লাখ ১৭ হাজার, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ফিস বাবদ পাঁচ লাখ টাকা আত্মসাত করেন । এছাড়াও অধ্যক্ষ তিন শিক্ষকের নামে ব্যাংক থেকে ১০ লাখ টাকা ঋণ নেন।
আশীষ কুমার নামে এক যুবক জানান, দুই বছর আগে অগ্রিম বাবদ পাঁচ লাখ টাকা নিলেও চঞ্চল ভট্টাচার্য্য তাকে চাকরি দেননি। এমনকি তার টাকাও ফেরত দেননি।
ইউনুস আলী নামে এক অভিভাবক জানান, প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের দাপট দেখিয়ে অধ্যক্ষ চঞ্চল চাকরি দেওয়াসহ প্রতারণা করে অন্তত তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। কিন্তু হাসিনা সরকারের পতনের পর পাওনাদারদের রোষাণল থেকে রক্ষা পেতে চঞ্চল ভট্টাচার্য্য জমি ও বাড়ি বিক্রি করে পরিবার নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন।
এদিকে অধ্যক্ষ চঞ্চল ভট্টাচার্য্য কোন ছুটি ছাড়াই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকায় গভনির্ং বডি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়েছে। গভর্নিং বডির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্নার সভাপতিত্বে গত সোমবার বিকেলে জরুরি সভায় সহকারী অধ্যাপক লিয়াকত আলীকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ ছাড়াও বিনা অনুমতিতে দীর্ঘদিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় অধ্যক্ষকে শোকজ করার সিদ্ধান্ত হয়।ওই সভায় অনেক পাওনাদার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে অভিযোগ করেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিশাত তামান্না জানান, অধ্যক্ষের দুর্নীতির ব্যাপারে সব অভিযোগকারীকে আদালতের শরণাপন্ন হতে বলা হয়েছে।
অভিযোগ সম্পর্কে অজ্ঞাত স্থান থেকে অধ্যক্ষ চঞ্চল ভট্টাচার্য্য মোবাইল ফোনে জানান, তিনি পরিস্থিতির শিকার মাত্র। তবে অচিরেই সব পাওনাদারকে তাদের পাওনা পরিশোধ করা হবে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রাশিয়া
রাজনীতি ও রাষ্ট্রাচার ব্যবসায়িক পণ্যে পরিণত হয়েছে : সেলিম উদ্দিন
ভারতে ঢুকে পড়েছে এইচএমপিভি
আন্তর্জাতিক আইকিউ টেস্টে দ্বিতীয় ইরান
গণঅধিকার পরিষদের ফারুকের ওপর হামলা : দুই আসামির জামিন
লেনদেন ও সূচকের উত্থান পুঁজিবাজারে চাঙাভাব
খালেদা জিয়ার নাইকো মামলায় ৩২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ
পাবনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী কাঙ্গাল বাবু গ্রেপ্তার
১৫ হাজার পিচ ইয়াবার মামলায় প্রবাসীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে : মাহমুদুর রহমান
বৃদ্ধাশ্রমের বাবা মায়ের পাশে জেলা প্রশাসন সব সময় আছে এবং থাকবে
তামিমের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের দিন প্রশ্নবিদ্ধ এনামুল
বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে চীনের সহযোগিতা চান পরিবেশ উপদেষ্টা
গাজীপুরে বিএনপির বিক্ষোভ
সোনারগাঁওয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জমি দখলের অভিযোগ
র্যাগিংমুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার প্রতিশ্রুতি শেকৃবি ভিসির
অংশীজনদের সঙ্গে আজ বসছেন অর্থ উপদেষ্টা
কোম্পানীগঞ্জের ইউএনওর নাম্বার ক্লোন করে শিক্ষকের কাছে টাকা দাবি
সমস্যাগ্রস্ত ৬ ব্যাংকের নিরীক্ষায় ২ বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক
অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদারের সিদ্ধান্ত