সীমান্ত দিয়ে ভারতে যাচ্ছে রসুন, আসছে মাদকসহ অবৈধ পন্য আনোয়ারুজ্জামান পালালেও, থামছে না চোরাচালান ব্যবসা
১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন সীমান্ত জুড়ে ওপেন সিক্রেট চোরাকারবার। নগদ কাঁচা টাকার লোভনীয় এ ব্যবসায় এখন চলছে হাই রিস্ক, হাই রেটে । এ ব্যবসায় আড়াল থেকে অর্থ লগ্নি করছে দেশের এক শ্রেনীর প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা, সীমান্তে সেই ব্যবসার মালামাল পারাপারে রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধিসহ রাজনীতিক নেতাকর্মীরা। অপরদিকে এ ব্যবসার পৃষ্টপোষকতায় রয়েছেন প্রশাসনের বিভিন্নস্তর। প্রশাসনকে অর্থের গরমে বশ্যতা করিয়েই এ ব্যবসা রাতারাতি জমজমাট হয়ে উঠছে সিলেটে। চোরাই পণ্যের মধ্যে রয়েছেন কাপড় থেকে শুরু করে প্রসাধন-সামগ্রী এমনকি আপেল, কম্বল, মাদক, মোবাইল যন্ত্রাংশ, গরুসহ বিভিন্ন পণ্য। এর বিপরীতে হাজার হাজার কেজি বাংলাদেশী রসুন বড় বড় চালান যাচ্ছে সীমান্তের ওপারে। গত ৫ নভেম্বর মধ্যরাতে এসএমপির দক্ষিণ সুরমা থানার চন্ডীপুল এলাকা থেকে স্থানীয়দের তথ্যে পুলিশ আটক করে রসুন বোঝাই ৩টি ট্রাক। থানা থেকে ৫ গজ দুরে এই স্থানটি। কিন্তু পুলিশের নাকের ডগায় বসে, বড় বড় ট্রাক থেকে রসুন আনলোড হচ্ছিল ছোট ছোট ট্রাকে। কারন সহজে সীমান্ত পথে ছুটতে এই ট্রাকগুলাে সুবিধাজনক। এছাড়া অপ্রত্যাশিতভাবে ট্রাকগুলো আটক হলে, আর্থিক ক্ষতির পরিমান কমও। অথচ পুলিশ, রসুন বোঝাই ট্রাক আটকের পরও পুলিশের ভূমিকায় স্থানীদের বুঝতে বাকী ছিলনা যে, চোরাকারবারীদের সাথে সখ্যতার কারনে ট্রাকগুলো দাঁড়িয়ে আনলোড করেছিল ওই স্থানে।
সীমান্তের দায়িত্বে থাকা বিজিবি তথ্য বলছে, সীমান্তে চোরাচালান ঠেকাতে সর্বোচ্চ তৎপর রয়েছেন তারা। নিয়মিত করছেন অভিযান। এছাড়া সীমান্তের অনেকস্থানে নির্জন জংগল, জনপদ, পাহাড় টিলা। যেগুলো নজরে রাখা অসম্ভব, সেই স্থানগুলো দিয়ে চোরাকারবারীরা পন্য পাচারে তৎপর থাকে। অপরদিকে, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশের সীমানায় প্রবেশের পর জেলা পুলিশের দায়িত্ব থাকলেও তারা পূর্ব ম্যানেজের কারনে চোরাই পন্য নিরপদে চলে যায় গন্তব্য পথে।
সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জ, কানাইঘাট ও বিয়ানীবাজার সীমান্ত দিয়ে চোরাই পণ্য দেদারচ্ছে প্রবেশ করে। এছাড়াও সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার সীমান্ত এলাকায় চোরাকারবারিরা তৎপর। তারা ভারতের কিছু ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে চোরাই পথে ভারতীয় পণ্য দেশে আনছেন। আর এপার থেকে ভারত যাচ্ছে দেশী রসুন, ইলিশ, শিং ও শুকনো সুপারিসহ বিভিন্ন পণ্য।
গত মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সকালে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৪ হাজার ৮৪০ কেজি রসুন আটক করা হয়। এ অভিযানে রসুন ছাড়াও ৭২টি ভারতীয় শাড়ি, ২১৭.৫ মিটার পর্দার কাপড়, দুটি মোটরসাইকেল, ১৪ হাজার ৮৪০ কেজি রসুন এবং অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারী পাঁচটি নৌকাসহ অন্যান্য ভারতীয় পণ্য আটক করা হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৯৩ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকা। আর আগে রোববার (১০ নভেম্বর) সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় বিজিবির চোরাচালান বিরোধী অভিযানে সিলেট জেলার সীমান্ত এলাকা থেকে রসুন ৬০ কেজি আটক হয়। এদিন রসুনের সঙ্গে জব্দ হয় ভারতীয় শাড়ি ৪১৮ পিস, লেহেঙ্গা ৩৮ পিস, জুতা ৪১২ জোড়া, কম্বল পাঁচ পিস, সাবান ১১০ পিস, মদ ৮৮ বোতল, দুটি ট্রলি ও অবৈধ পাথর উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত ছয়টি নৌকাসহ বিভিন্ন পণ্য জব্দ করা হয়। যার বাজারমূল্য আনুমানিক এক কোটি ২১ লাখ ৭২ হাজার ২শ টাকা বলে জানায় বিজিবি। ১৪ অক্টোবর ও ১৫ অক্টোবর সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৮৮০ কেজি বাংলাদেশি রসুন আটক করে বিজিবি। ২০ অক্টোবর সিলেট ও সুনামগঞ্জের পৃথক স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ৪১ হাজার ৮৭৭ কেজি বাংলাদেশি রসুন জব্দ করে বিজিবি। ২৭ অক্টোবর ও আজ ২৯ অক্টোবর লেট এবং সুনামগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে সিলেট ব্যাটালিয়নের (৪৮ বিজিবি) ৭হাজার ৬৮৮ কেজি রসুন জব্দ করে। ২ অক্টোবর সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৩ হাজার ৮০০ কেজি রসুন জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
এছাড়াও ভারত থেকে চোরাই পথে প্রায় প্রতিদিনই আসছে ভারতীয় চিনি। সিলেটের বাজারসহ এই চিনি পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন এলাকায়। চোরাচালানে আসা এসব চিনি সিলেটে ‘বুঙ্গার চিনি’ নামে পরিচিত। বুঙ্গার এই চিনির চালান সিলেট হয়ে দেশে প্রবেশের ধুমধাম সূচনা হয়ে স্বৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামীলীগের বিশেষ কিছূ নেতা নিয়ন্ত্রন নেন চোরাকারবারের। সেই সাথে প্রশাসনের একটি অংশ মিলেমিশে যায় রাজনীতিক চোরাকারীদের সাথে। এতে বেপরোয় গতি পায় চোরাই ব্যবসা। এ ব্যবসার আশ্রয় প্রশয়দাতা ছিলেন সিসিকের পদচ্যুত মেয়র, লন্ডনে পালিয়ে যাওয়া যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগ যুগ্ম সাধারন সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান। তার অনুসারীরাই চোরাই ব্যবসায় ছিল টপ লাইনে।
সিলেট ব্যাটালিয়নের (৪৮ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. হাফিজুর রহমান পিএসসি বলেন, ঊর্ধ্বতন সদরের নির্দেশনা অনুযায়ী সীমান্তে নিরাপত্তা রক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবির অভিযানিক কার্যক্রম ও গোয়েন্দা তৎপরতা সর্বতোভাবে অব্যাহত আছে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
প্রত্যেকটা অফিসের কেরানি পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসর: উপদেষ্টা আসিফ
সিরাজগঞ্জে ডাকাত দলের ৯ সদস্য আটক
বিশ্বব্যাপী ২২ টি দেশে মুক্তি পেল শাকিব খানের 'দরদ'
ইসলামে পাঁঠার গোশত খাওয়া প্রসঙ্গে।
অন্তর্বর্তী সরকার অধ্যাদেশ কি আবশ্যক?
জেন জি’র দৃষ্টিভঙ্গি ও বাস্তবতা
ভারতের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে
শ্রীলঙ্কার সংসদ নির্বাচনে দিশানায়েকের বামপন্থী জোটের জয়
সংসদের অন্দরে আদিবাসী নৃত্য প্রদর্শন
দিল্লিতে ভয়াবহ বায়ুদূষণ : সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, নির্মাণকাজ স্থগিত
পাপুয়া নিউগিনিতে ৬.৫ মাত্রার ভূমিকম্প, তবে সুনামির আশঙ্কা নেই
ইসরাইলি হামলায় লেবাননে সাংবাদিকসহ ১৫ জন নিহত
ভ্যাকসিনবিরোধী কেনেডি জুনিয়রকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বানালেন ট্রাম্প : সমালোচনার ঝড়
ইউক্রেন যুদ্ধ : উ. কোরিয়ার পদক্ষেপে দ. কোরিয়ার নতুন কৌশল
আত্মঘাতী ড্রোনের উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দিলেন কিম
বৈঠকে বসছেন ভারত ও চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী
স্পেনে বৃদ্ধাশ্রমে অগ্নিকাণ্ডে ১০ জনের প্রাণহানি
ইরান নিয়ে সুর নরম করতে চান ট্রাম্প?
গাজায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ভিডিও ভাইরাল
কূটনৈতিক সমাধানে পৌঁছাতে ইরানে জাতিসংঘের পরমাণু প্রধান