প্রমাণ না থাকায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে পারছি না: ইউএনও
১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৬ পিএম | আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:০৩ পিএম
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে অনলাইন জুয়ায় ব্যাপকভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে তরুণরা। ভিন্ন ভিন্ন নামের বেশ কয়েকটি অ্যাপে এমন জুয়া খেলা হচ্ছে। স্থানীয় যুবকরা সবেচেয়ে আসক্ত হয়ে পড়েছে এসমস্ত অনলাইন জুয়ার অ্যাপে। সহজে প্রচুর টাকা উপার্জনের লোভে পড়ে তরুণরা এই খেলা শুরুর পরই নেশায় পড়ে যাচ্ছে। প্রথমে লাভবান হয়ে পরবর্তী সময় খোয়াচ্ছে লাখ লাখ টাকা। বিভিন্ন অ্যাপে অনলাইন জুয়ায় লোভনীয় ফাঁদে বেশিরভাগ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, যুবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আসক্ত হয়ে পড়ছে।
অনলাইন জুয়ার সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্মার্ট ফোনে নির্ধারিত কয়েকটি অ্যাপ ডাউনলোড করে সেখানে জুয়া খেলা চলে। এসব অ্যাপে দশ টাকা থেকে শুরু করে যেকোনো অঙ্কের টাকা দিয়ে শুরু করা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি অ্যাপের একজন গ্যাম্বলিং মাস্টার এজেন্ট বলেন, ঈশ্বরগঞ্জ পৌর শহরে বেশকিছু যুবক সর্বপ্রথম গ্যাম্বলিং মাস্টার এজেন্ট হয়। তারপর এজেন্ট হয়। বর্তমানে তারা প্রায় কোটি টাকার মালিক। পুলিশ প্রশাসন তাদের কে গ্রেপ্তার করে জুয়া আইনে মামলা দিয়ে কোর্টে প্রেরণ করলে সাথে সাথেই জামিন হয়ে যায়। তবে বেশিরভাগ অনলাইন জুয়াড়ি উপজেলার বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দের ছত্রছায়ায় রয়েছে বলে জানান সে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সামাজিক এই অবক্ষয়ের নেপথ্যে রয়েছেন ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার বেশ কয়েকজন গ্যাম্বলিং মাস্টার এজেন্টসহ ১০০ জনেরও বেশি সাব-এজেন্ট। তাদের মাধ্যমে চলছে লাখ লাখ টাকার অবৈধ অনলাইন ব্যবসা। এ কারণে বাড়ছে পারিবারিক অশান্তি ও দাম্পত্য কলহ। এ ছাড়াও উপজেলার দত্তপাড়া, রহমতগঞ্জ, শিমরাইল, চরনিখলা, ধামদী, কাকনহাটি, চরহোসেনপুর, চরশিহারি, বড়হিতসহ প্রত্যন্ত গ্রামগুলোয় রয়েছে এই জুয়ার মাস্টার এজেন্ট এবং সাব-এজেন্ট। তাদের দৌরাত্ম্যে প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতেও মারাত্মকভাবে বিস্তার লাভ করছে এই অপরাধমূলক অনলাইন জুয়া।
স্থানীয়রা আরো বলেন, রহস্যময় বিষয় হলো ঈশ্বরগঞ্জ পৌর শহরে এজেন্টদের অবস্থিতি থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের আটকের পর শক্তিশালী কোন আইন না থাকায় আবার চলে আসে। যে কারণে বছরের পর বছর ধরে এমন খেলা চলমান রয়েছে। অনলাইন জুয়ার নেশায় পড়ে টাকা-পয়সা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পথে বসছে এবং পথে বসতে চলেছে অসংখ্য পরিবার। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা জুড়ে অনেক তরুণ বিভিন্ন ব্যাংক ও বেসরকারি সমিতি থেকে টাকা তুলে জুয়া খেলে কয়েকদিনেই সব টাকা হেরে নিঃস্ব হয়ে যায়। অবশেষে সেই ঋণের বোঝা বইতে না পেরে অনেকেই ভিটেমাটি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অনলাইন জুয়ার খেলোয়াড় বলেন, অনলাইন জুয়ার নেশা মস্তিষ্কের জন্য খুব বেশি ভয়াবহ। কারণ গেমসটি না খেলতে পারলে কিছুই ভালো লাগে না। বিরাট টেনশন হয়। আরে সেই টেনশনে মাথার মস্তিষ্ক এলোমেলো হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, যে ব্যক্তি গেমসটিতে আসক্ত সে টাকার জন্য মানুষকে হত্যা করতেও দ্বিধা করবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী বলেন, যেদিন থেকে আমার স্বামী মোবাইলে জুয়া খেলতে শুরু করেছে সেদিন থেকেই সংসারে অশান্তি শুরু হয়েছে। জুয়ায় হেরে বাসায় এসে আমার স্বামী আমাকে মারধর করে। কাছে টাকা না থাকলে ঘরের আসবাবপত্র বিক্রি করতে যায়। বাধাঁ দিলে সেগুলো ভেঙে তছনছ করে ফেলে। জুয়ার নেশায় মনে হয় আমার স্বামী পাগল হয়ে গেছে।
একজন সন্তানের মা বলেন, তার ছেলে জুয়ায় নেশায় পাগলের মতো থাকে সবসময়। স্বর্ণালংকারসহ ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্র বন্ধক রেখে জুয়া খেলে হেরে গেছে আমার ছেলে। শুধু তাই না, সুদের ওপর টাকা নিয়েও হেরে যায়। এখন সুদের টাকা পরিশোধ করব কীভাবে? এলাকায় মুখ দেখানো যায় না। তাই আমি একজন মা হিসেবে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য হয়েছি।
স্থানীয় কয়েকজনের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, জুয়ার অর্থ উপার্জনে ঈশ্বরগঞ্জের তরুণরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে ঝুঁকে পড়েছে। বর্তমানে এই উপজেলায় প্রতিনিয়ত ঘটছে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা। বাড়ছে মাদকসহ নানা ধরনের অপরাধ। চুরি-ছিনতাই ও মাদক কারবারির অত্যাচারে সাধারণ জনগণ অতিষ্ঠ। অথচ এ নিয়ে যেনো প্রশাসনের কোন নজরদারি নেই। যে কারনে পুরো উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ঘটেছে। ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা জুড়ে এখন লেজে গোবরে অবস্থা। এলাকায় বখাটেদের উৎপাত বেড়ে গেছে। তরুণ-তরুণীদের হাতে হাতে এখন স্মার্ট ফোন। লেখাপড়া বাদ দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্য ঝুঁকছে অনলাইন জুয়ার নেশায়।
এবিষয়ে এডভোকেট (এলজিপি) এ.এস.এম সারোয়ার জাহান বলেন, বর্তমানে অনলাইন জুয়া ঈশ্বরগঞ্জে যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা বলার মতো না। এখনি যদি এই খেলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হয় তাহলে তরুণদের ধ্বংস অনিবার্য। তাই বিষয়টি নিয়ে আমাদের সকলের একসাথে মিলে কাজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন অনলাইন জুয়াড়িদের পুলিশ গ্রেপ্তার করে কোর্টে প্রেরণ করলে সাথে সাথেই তারা জামিনে চলে আসে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, কঠিন কোন আইন না থাকা। তবে এব্যাপারে একটা কঠিন আইন করা দরকার তাহলে এগুলো বন্ধ করা সম্ভব হবে অন্যতায় এই খেলা বন্ধ করা সম্ভব হবে না।
এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ওবায়দুর রহমান বলেন, আমি এ থানায় নতুন এসেছি। অনলাইন জুয়ার বিষয়টি জানতাম না। যখন জানতে পেরেছি সাথে সাথেই আমাদের অভিযান পরিচালনা করা শুরু করেছি। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে আইনের ফাঁকে সহজেই বের হয়ে যায় তারা। তারপরও অনলাইন জুয়ার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলবে।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সারমিনা সাত্তার বলেন, জুয়া আইনের চোখে অবশ্যই অপরাধ। পুলিশ মামলা দিয়ে কোর্টে পাঠিয়ে দেওয়ার পরপরই জামিন চলে আসে। আপনি মোবাইল কোর্ট করে সাজা দিবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলে মোবাইল কোর্টের বিষয়টি হলো প্রমানসহ হাতে নাতে ধরে তারপর মোবাইল কোর্ট করা যায়। কিন্তু এমন প্রমান সহজে পাওয়া যায় না। যে কারনে মোবাইল কোর্ট করা যায় না। যদি মোবাইল কোর্ট করা যেতো তাহলে ব্যবস্থা নিতে পারতাম। তারপরও বিষয়টি নিয়ে আমরা একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
'তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে' - যুবদল সভাপতি মুন্না
সিলেটে সাংবাদিক তুরাব হত্যাকান্ডে ৫ দিনের রিমান্ডে কনস্টেবল উজ্জ্বল
আরএমপির তিন থানায় নতুন গাড়ি হস্তান্তর করেন পুলিশ কমিশনার
ভারতীয় চ্যানেল ‘রিপাবলিক বাংলা’র কনটেন্ট নিষিদ্ধ ও ব্লকের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট
চীনে ইয়াও জাতিগোষ্ঠীর পানওয়াং উৎসব অনুষ্ঠিত
চীনে ইয়াও জাতিগোষ্ঠীর পানওয়াং উৎসব অনুষ্ঠিত
সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটক রাত্রিযাপন সীমিতকরণ ও ভ্রমন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবী
খুলনাকে দেশের শ্রেষ্ঠ নগরীতে পরিণত করতে হবে; কেসিসি সচিব
এটা বিপ্লবী সরকার, নির্বাচন দেওয়াটাই শুধু আমাদের কাজ নয়: উপদেষ্টা নাহিদ
ব্রিটেনে নওয়াজ শরীফের পুত্রকে ‘দেউলিয়া’ ঘোষণা
এস আলম-বেক্সিমকোসহ কোনো কোম্পানি বন্ধ করা হবে না: গভর্নর
২৪ ঘণ্টায় আরও ১০৮৩ ডেঙ্গু শনাক্ত, মৃত্যু ৬
আবারও প্রেমের ভেলায় ভেসেছেন চিত্রনায়িকা পরিমণি
পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার নতুন অডিও ফাঁস
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক-রেলপথ ছাড়লেন
জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি-সম্পাদকের সঙ্গে ডিএসইসি নেতৃবৃন্দের সৌজন্য সাক্ষাৎ
এবার তেল আবিব ও আশকেলনে হামলা হুথিদের
এক ছবি বিক্রি হচ্ছে ১২০০ কোটিতে, কী রয়েছে?
আশুলিয়ায় দুই মাস পর হাসপাতালের মালিক গ্রেফতার
বিজয় দিবস উদযাপনে কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা