খেলাকে কেন্দ্র করে ছাত্রদলের মারামারি সাংবাদিকসহ আহত ২০, বিচারের দাবীতে মানববন্ধন
১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৯ পিএম | আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৯ পিএম
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টে গণিত বিভাগ ও ইংরেজি বিভাগের খেলায় জয় পরাজয়কে কেন্দ্র করে দফায় দফায় হামলা ও মারামারির ঘটনা ঘটে এতে আহত হয়েছেন অন্তত ২০জন শিক্ষার্থী। মারামারির সময় লাঠি ও রডসহ কয়েকজন ছাত্রদল নেতাকর্মীকে দেখা যায়। বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থী ছাড়াও ভিডিও ধারণ করার সময় আহত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধির এক সাংবাদিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাস ভাংচুর করা হয়।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক জোট’ এর ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ সময় দোষীদের বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন জবির ক্রিয়াশীল সাংবাসিকদের তিন সংগঠনের এই জোট।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল ১৭ তারিখে ইংরেজি বিভাগ ও গণিত বিভাগের ফুটবল ম্যাচে ইংরেজি বিভাগ জয়লাভ করার পর তুচ্ছ ঘটনায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিভাগ দুইটির শিক্ষার্থীরা। পরে ২ পক্ষের সংঘর্ষে প্রায় ১০ জন আহত হয়। খেলার মাঠে বিষয়টি মিটমাট হলেও বাসে আসার সময় গণিত বিভাগের কয়েকজন ছাত্র লাঠি ও রড নিয়ে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিত হামলা করে। এতে ইংরেজি ইবরাহিম, শিপন, কলিমসহ ৬ জনকে রক্তাক্ত আহতসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ভাংচুর করে। এদিকে হামলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের গণিত বিভাগের সাধারণ সম্পাদক সাদিউল সৈকত, ছাত্রদলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাশফিকুর রাইন, ছাত্রদলের কর্মী ১৪ ব্যাচের এনামুল হক ইহাদ, ফয়সাল ও ১৬ ব্যাচের এ এইচ হৃদয় লাঠি হাতে বাসের কাঁচ ভাঙ্গছেন।
ইংরেজি বিভাগের মো ইবরাহিম বলেন, টাইব্রেকারে গোল দিয়ে জয় লাভের আনন্দে আমার টিমমেট নিয়ে মাঠের একপাশে গিয়ে আনন্দ উল্লাস করি। পরে ১৭ ব্যাচের জুনিয়র ছোট ভাই এসে বলে, ভাই আমাদের ১৩ ব্যাচের সোহেল কে ওরা ৫/৬ জন মারছে। পরে সেখানে গিয়ে সেটাতে বাঁধা দেয়। পরে গণিত বিভাগের ১৬ ব্যাচের ফয়সাল আমাকে পিঠের পিছনে বুট দিয়ে লাথি মেরে রক্তাক্ত করে।
ইংরেজি বিভাগের উম্মে হাবিবা বলেন, গণিত বিভাগের ফয়সাল আর হৃদয় লাঠি নিয়ে বাসে হামলা করে, মারামারি করে খেলায় হারার পর। আমাদের বিভাগের কলিম ও ইব্রাহিম ভাইকে অনেক মারধোর করেছে। মেয়েদের হেনস্তা করেছে। আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে সংকিত।বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ নষ্ট করা এবং নারী শিক্ষার্থীসহ শিক্ষক ও অন্য শিক্ষার্থীদের কে হ্যারাসমেন্ট করার কারণে আমরা তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
ঐদিন পৌনে চারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ার পূর্ব পাশে শিক্ষার্থীদের মারামারির ভিডিও করায় সাংবাদিককে মারধর করেছে শাখা ছাত্রদলের হাতে মারধরের শিকার হন দৈনিক কালের কণ্ঠে'র জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মো. জুনায়েত শেখ। হামলাকারী ছাত্রদল নেতা গণিত বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মাসফিকুল রেইন। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লার অনুসারী।
মারামারির ভিডিও মোবাইলে ধারণ করতে গেলে প্রথমে বাঁধা দেন শাখা ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক পরাগ হোসেন। তিনি পরিচয় জিজ্ঞেস করলে জুনায়েত শেখ নিজেকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন। তবুও গণিত বিভাগের ১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম আলিফ সাংবাদিক জুনায়েতকে বারবার বলেতে থাকে তুমি কে, তুমি কে? পরে জোনায়েদকে বুকে আঘাত করেন গণিত বিভাগের ১৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী মাসফিকুল রাইন।
মানববন্ধনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ‘জনকণ্ঠ' এর জবি প্রতিনিধি মামুন শেখ বলেন, সাংবাদিকরা নির্দিষ্ট কারও পক্ষের নয়, তারা দেশ ও জনগনের পক্ষে কাজ করে। কালের কন্ঠের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মো. জুনায়েত শেখ এর ওপর হামলা একটি ন্যাক্কারজনক ঘটনা। আমরা ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিচ্ছি, এই সময়ের মধ্যে বিশ্বিবদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিবে এবং ছাত্রদলের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যতায় আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবো।
জবি প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও বাংলা ট্রিবিউনের সাংবাদিক সুবর্ণ আস-সাইফ বলেন, ২০১৮ সালে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাংবাদিকদের উপর হামলার প্রতিবাদে সাংবাদিক সমিতি ও প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকরা এই শান্ত চত্বরে দাঁড়িয়েছিল। আজ পাঁচ বছর পর সেই নিষিদ্ধ সংগঠন না থাকলেও আবার আমদের এখানে দাঁড়াতে হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। গতকাল কালের কণ্ঠের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জুনায়েত শেখের উপর হামলার ২৪ ঘণ্টা পার হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। যারা সমাজের কণ্ঠস্বর ও দর্পনকে বন্ধ করতে চাচ্ছেন, তাঁদের জন্য হুঁশিয়ারিসহ এই ঘটনার সাথে জড়িত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
জবি রিপোটার্স ইউনিটির সভাপতি অমৃত রায় বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের সত্য মিথ্যাকে তুলে ধরে। তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করা কোনভাবে কাম্য নয়। অতীতে ছাত্রলীগের মত একটি বৃহৎ সংগঠনকে তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের জন্য নিষিদ্ধ হতে হয়েছে। বর্তমান ছাত্রদলও যদি সেই একই ধরণের কাজ করে, তাদেরকেও একই পরিণতি ভেগ করতে হবে। আমি ছাত্রদলের দায়িত্বপ্রাপ্তদের আহ্বান করবো, অতিদ্রুত আপনারা এই ঘটনায় কার্যকর পদক্ষেপ নিবেন।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
প্রথমবারের মতো ঢাকার মঞ্চ মাতাবেন পাকিস্তানি ব্যান্ড "কাভিশ"
বাতিল হওয়া অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডধারী সাংবাদিক আবেদন করলে বিবেচনা করা হবে
ছাত্র মজলিস সিলেট মহানগরীর ক্যাম্পাস বিভাগের সংবর্ধনা অনুষ্টিত
মুর্খ সাংবাদিকতার মাধ্যমে যেভাবে ড. ইউনূসকে ফাঁসানোর চেষ্টা
মন্দির থেকে চুরি হওয়া শিবলিঙ্গটি উদ্ধার, যুবক গ্রেপ্তার
ব্যাংকিং ডিপ্লোমা বাধ্যতামূলক রেখেই জিএম পদে পরিক্ষা
হত্যাকে পুঁজি করে চাঁদাবাজি: সালথায় ফের গ্রেপ্তার হওয়া দুই আসামির জামিন নামঞ্জুর
শাহজাদপুরে নিখোঁজের ১৫ দিন পর ব্যবসায়ীর গলিত লাশ উদ্ধার
খামেনি কোমায়! ছবি প্রকাশ করে গুজব উড়িয়ে দিল ইরান
গফরগাঁওয়ে বালুর নিলাম সম্পন্ন
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের সাথে হজ এজেন্সি প্রতিনিধিদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
প্রাইম ব্যাংক’র সাথে চুক্তি করলো কাশপিয়া গ্রুপ
ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, শিক্ষক-সাংবাদিকসহ আহত ১০
সড়কে ফের তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা, ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ
বিএনপির দুই গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আহত ১০
শাহজালাল বিমানবন্দরের সব নিরাপত্তা পাস স্থগিত
কানাইঘাটে গ্রুপিং কোন্দলে প্রাণ হারলেন ছাত্রদল কর্মী
নবায়নযোগ্য জ্বালানি রূপান্তরে জাপান ও জার্মানির সহায়তা চাইলেন পরিবেশ উপদেষ্টা
জাকারিয়া পিন্টুর মৃত্যুতে ক্রীড়াঙ্গনে শোকের ছায়া
ব্যবসায়ী সাব্বির হত্যা, জাকির খানের উপস্থিতিতে প্রতিদিন হবে সাক্ষ্যগ্রহণ