কুষ্টিয়ায় পা ফেলার জায়গা নেই শিশু ওয়ার্ডে, মেঝে-বারান্দায় চলছে চিকিৎসা

Daily Inqilab বিশেষ সংবাদদাতা

৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৯ পিএম | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:১৯ পিএম

 

 

শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুষ্টিয়ায় শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ বাড়ছে। সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, টনসিলাইটিস, ব্রঙ্কিওলাইটিস, ব্রংকাইটিস, সাইনোসাইটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা। কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ২০ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রয়েছে ১৬০ শিশু। শয্যা সংকটের কারণে অধিকাংশের ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের বারান্দা ও মেঝেতে।

ধারণক্ষমতার আটগুণ বেশি রোগী থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীর স্বজনরা। জনবল-সংকট ও অতিরিক্ত রোগীর চাপে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। প্রতিদিনই এ রোগে আক্রান্ত ৫০-৬০ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।

শনিবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরের দিকে সরেজমিনে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে দেখা যায়, আক্রান্ত রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। পা ফেলার জায়গা নেই। মেঝে-বারান্দায় চলছে চিকিৎসা। অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন স্বজনরা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন শিশু রোগী ভর্তি হচ্ছে। গত সপ্তাহ থেকে হঠাৎ করেই কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে শিশু রোগীর ভিড় বেড়ে গেছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, টনসিলাইটিস, ব্রঙ্কিওলাইটিস, ব্রংকাইটিস, সাইনোসাইটিসসহ নানা রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়েছে। ধারণক্ষমতার আটগুণ বেশি রোগী থাকায় নার্সরাও চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।

এদিকে হাসপাতালের বহির্বিভাগেও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বেড়েছে। বহির্বিভাগে প্রতিদিন প্রায় ২৫০ থেকে ৩৫০ শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে। বেশিরভাগ শিশুই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত।

হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, শিশু ওয়ার্ডের প্রবেশ পথে অসংখ্য রোগীর অভিভাবক ও স্বজনরা গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছেন। ওয়ার্ডের ভেতরেও ভিড়। ভিড়ের মধ্যেই চিকিৎসক-নার্সরা সেবা দিচ্ছেন। ২০ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছে ১৬০ শিশু। রোগীর ভিড়ে হাসপাতালের কোথাও পা ফেলার জায়গা নাই। গাদাগাদি করে বারান্দা ও মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। জনবল ও জায়গার অভাব দেখা দিয়েছে।

রোগীর মা সেলিনা খাতুন বলেন, আমার বাবুর ঠান্ডা লেগেছে। তাকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করেছি। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে চরম ভোগান্তিতে পড়েছি। প্রচুর রোগীর ভিড়। চলাফেরার রাস্তায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছি। খুব কষ্ট হচ্ছে।

আরেক শিশু রোগীর স্বজন জুয়েল রানা অভিযোগ করে বলেন, সরকারি এই হাসপাতালে ওষুধ দেয় না। ঠিকমতো চিকিৎসক আসে না। নার্সদের আচরণও অসৌজন্যমূলক। শয্যার চেয়ে বহুগুণ বেশি রোগী ভর্তি। রোগীর ভিড়ে হাসপাতালের কোথাও পা ফেলার জায়গা নাই। গাদাগাদি করে বারান্দা ও মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। নোংরা পরিবেশে আমরাও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। এখানকার খাবারের মান ভালো না। খাওয়া যায় না।

রোগীর স্বজনরা বলেন, গাদাগাদি করে বারান্দা ও মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। নার্সদের ডাকতে গেলে খারাপ ব্যবহার করে। চিকিৎসকরা ঠিকমতো আসেন না। সরকারি ওষুধ দেওয়া হয় না। নোংরা পরিবেশে খুব কষ্ট হচ্ছে। চরম অব্যবস্থাপনা এখানে। এসব সমস্যা সমাধানের দাবি জানান তারা।

শিশু ওয়ার্ডের নার্সরা বলেন, হঠাৎ করে এক সপ্তাহ ধরে সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, টনসিলাইটিস, ব্রঙ্কিওলাইটিস, ব্রংকাইটিস, সাইনোসাইটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এত রোগী সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। তবুও আমরা ভালোভাবে সেবা দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।

তারা আরও বলেন, রোগীর তুলনায় চিকিৎসক ও নার্স সংকট রয়েছে। এতে রোগীদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে আমরা সাধ্যমতো চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি। ২০ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে ১৬০ রোগী ভর্তি আছে। প্রতিদিনই প্রায় ৫০-৬০ শিশু ভর্তি হচ্ছে।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রফিকুল ইসলাম বলেন, শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ বেড়েছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ চালু হলে এ সমস্যার সমাধান হবে। আমরা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে রোগীদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি। শিশুদের প্রতি অভিভাবকদের সচেতন ও যত্নবান হতে হবে। খাবার ও পোশাকের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

মুরাদনগরে শীতার্ত মানুষের মাঝে পীরসাহেব চরমোনাই'র পক্ষ থেকে কম্বল বিতরণ

মুরাদনগরে শীতার্ত মানুষের মাঝে পীরসাহেব চরমোনাই'র পক্ষ থেকে কম্বল বিতরণ

লিটনকে সেরা ছন্দে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরাতে চাই: প্রধান নির্বাচক

লিটনকে সেরা ছন্দে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরাতে চাই: প্রধান নির্বাচক

মাস্তুল ফাউন্ডেশন বিতরণ করলো  ১ লক্ষ কেজি চাল

মাস্তুল ফাউন্ডেশন বিতরণ করলো ১ লক্ষ কেজি চাল

লক্ষ্মীপুরে রঙ-কেমিক্যাল মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে শিশুখাদ্য, ২ ফ্যাক্টরি সিলগালা

লক্ষ্মীপুরে রঙ-কেমিক্যাল মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে শিশুখাদ্য, ২ ফ্যাক্টরি সিলগালা

সীমান্তে বিএসএফের কর্মকাণ্ড নি‌য়ে বাংলা‌দেশের উদ্বেগ প্রকাশ

সীমান্তে বিএসএফের কর্মকাণ্ড নি‌য়ে বাংলা‌দেশের উদ্বেগ প্রকাশ

উৎসব মুখর পরিবেশে পালিত হলো জাবির ৫৪ তম দিবস

উৎসব মুখর পরিবেশে পালিত হলো জাবির ৫৪ তম দিবস

২ হাজার কেজি পলিথিন জব্দ, কারখানা সিলগালা

২ হাজার কেজি পলিথিন জব্দ, কারখানা সিলগালা

কুষ্টিয়ায়  স্কুল কমিটি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ, আহত ৩০

কুষ্টিয়ায় স্কুল কমিটি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ, আহত ৩০

জুলাই বিপ্লবে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ির চাকার পিষ্ট হয়ে নিহত মাহবুব আলমের পরিবারের পাশে তারেক রহমান

জুলাই বিপ্লবে ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ির চাকার পিষ্ট হয়ে নিহত মাহবুব আলমের পরিবারের পাশে তারেক রহমান

ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির  ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক

ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রকারী বিএনপির  ক্ষতি করতে পারবে না : আমিনুল হক

যায়যায়দিন পত্রিকায় নির্বাহী সম্পাদক হলেন খুরশীদ আলম

যায়যায়দিন পত্রিকায় নির্বাহী সম্পাদক হলেন খুরশীদ আলম

বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড

বিধ্বংসী শতকে লিটনের জবাব, ঝড়ো সেঞ্চুরি তানজিদেরও, বিপিএলে রেকর্ড

ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫

ফরিদপুরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় তিন দিনে মোট ১১ জন নিহত, আহত ৩৫

চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না

চলমান সংস্কার গতিশীল করতে হবে, যাতে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে : মান্না

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ

ওয়ান টাইম প্লাস্টিক বন্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান: বিপিজিএমইএ

পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১

পাটগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশিকে লক্ষ্য করে বিএসএফের গুলি, আহত ১

ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন

ওসি মুহিবুল্লাহকে বাঁচাতে স্বজনদের মানববন্ধন

ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ

ব্র্যাক ব্যাংকের টপ টেন রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড জয় ২০২৪ সালে ১.৬ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ

শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম

শেখ হাসিনা ভারতের সাথে বৈষম্যমৃলক চূক্তি করেছিলেন-মৌলভীবাজারে সারজিস আলম

শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস

শেখ হাসিনার চোখ ছিল শুধু ঢাকা থেকে টুঙ্গীপাড়া পর্যন্ত : সারজিস