শীতের শুরু থেকেই সীমান্তবর্তী অঞ্চলে লেপ-তোষকের দোকানে কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়েছে

Daily Inqilab বেনাপোল অফিস

০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৮ এএম | আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৮ এএম

শীতের শুরু থেকেই সীমান্তবর্তী অঞ্চলে লেপ-তোষকের দোকানে কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে অনেক রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের ফরমায়েশ অনুযায়ী লেপ-তোষক তৈরি করছেন তারা। তবে, রেডিমেড লেপ-তোষক-ম্যাট্রেসের কদর বৃদ্ধি, উপকরণের মূল্য ও মজুরি বৃদ্ধির কারণে এবার কমেছে চাহিদার পরিমাণ। সে কারণে কারিগরদের ব্যস্ততাও আগের থেকে একটু কম।

 

তীব্র শীত শুরু হতে এখনো বাকি কিছুদিন। কনকনে শীতের আগে তাই লেপ-তোষকের দোকানে আসছেন ক্রেতারা। নতুনের পাশাপাশি কেউ কেউ আবার পুরনো লেপ-তোষকই নতুন করে গড়িয়ে নিচ্ছেন। কারিগররা কেউ তুলা সেট করছেন, তো কেউ তুলায় মোড়ানো কাপড় সেলাই করছেন, এমনিভাবে শহরের অধিকাংশ দোকানে কাজ চলছে সকাল নয়টা থেকে রাত আটটা বা নয়টা পর্যন্ত। বেনাপোল বাজারে , শার্শা বাজার, নাবারন ও বাগআচড়া বাজারে বিভিন্ন প্রান্ত ও পাড়া মহল্লার কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন। এসকল দোকানে বানানো লেপ-তোষকের পাশাপাশি রেডিমেড লেপ-তোষকও বিক্রি হচ্ছে। পাওয়া যাচ্ছে রেডিমেড ফোম এবং ম্যাট্রেসও। এবারে তুলা ও কাপড়ের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে লেপ, তোষক তৈরিতে খরচও বেড়েছে। উপকরণ ও মজুরি মিলিয়ে গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর খরচ কিছুটা বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ে। তাই কমেছে অর্ডারের সংখ্যাও। সেই সাথে কম্বল, ফোম ও ম্যাট্রেসের ব্যবহার বেড়ে যাবার কারণে লেপ তোষকের কারিগরদের ব্যস্ততাও আগের চেয়ে কমেছে। এ কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট কারিগররা ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।

 

তবে যেসব মানুষ পারিবারিক ঐতিহ্য অনুসরণ করে চলেন, তারা এখনো নির্ভর করেন বানানো লেপ ও তোষকের ওপর। এ ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান, শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন প্রান্তে একশ’র বেশি দোকান রয়েছে। যেসব দোকানে লেপ, তোষক বানানোর পাশাপাশি রেডিমেড লেপ, তোষক, ফোম ও ম্যাট্রেস বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে লেপ বানাতে এক হাজার থেকে এক হাজার আটশ’ টাকার মধ্যে খরচ পড়ছে। বালিশ বানাতে খরচ পড়ছে একশ’ থেকে একশ’ ৫০ টাকা। তোষক সর্বনিম্ন চারশ’ ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ এক হাজার দুশ’ টাকা। জাজিম দুই হাজার পাঁচশ’ থেকে তিন হাজার টাকার মধ্য বানানো হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ম্যাট্রেস চার হাজার থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

 

কারিগর আ; সামাদ বলেন, ৮/১০ বছর ধরে এ কাজের সাথে রয়েছি। দিনে ৫০০/ ৬০০ টাকা মজুরি পাই। আগে দিনে এক হাজার টাকাও মজুরি পেয়েছি। কম কাজ ও কম মজুরির জন্য এখন লেপ-তোষকের কারিগররা অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন’। আরেকজন কারিগর আলেয়া খাতুনও একই কথা জানান।

 

বাগাআচড়ার কারিগর মোতালেব হোসেন বলেন, ‘বংশ পরম্পরায় তিন পুরুষ ধরে লেপ তোষক বানানোর কাজ করছি। কয়েক বছর আগেও কাস্টমার বেশি ছিল। বর্তমানে ম্যাট্রেস আর ফোমের ব্যবহার বেড়ে যাবার কারণে কাস্টমার কমেছে। তাছাড়া, কাপড় ও তুলার দামও বেড়েছে আগের চেয়ে’।

 

বেনাপোলের আর এক কারিগর রহিম মুন্সী বলেন, ‘দেশি-বিদেশি বাহারি কম্বল ও ম্যাট্রেসে বাজার সয়লাব হলেও এখনো লেপ-তোষকের বিকল্প নেই। তুলা ও কাপড়ের দাম বাড়লেও যারা বানানো লেপ তোষকে অভ্যস্ত, তাদের কম্বল বা ম্যাট্রেসে চলে না’।

 

‘তুলা ও কাপড়ের দাম বেড়েছে। তবু লেপ বানাতে দিয়েছি। বারো বছর আগের লেপের তুলা খানিকটা ড্যাম হয়েছে, তাই এবার পুরনো লেপ নতুন করে বানাতে দিয়েছি’।
‘ম্যাট্রেসের অনেক বেশি দাম, যা আমাদের মতো মধ্যবিত্তের পোষায় না। ভালো মানের ম্যাট্রেস কিনতে না পারলে তা বেশিদিন যায়ও না। কিন্তু একটা তোষক বা জাজিমে ১৫/২০ বছরও পার হয়ে যায়’।

 

ব্যবসায়ী বাবলুর রহমান জানান, বানানো লেপ-তোষকে অনেক যত্নের ছোঁয়া থাকে তাই স্থায়ী হয় বেশি। যার সাথে এখনকার ফোম বা ম্যাট্রেসের তুলনা চলে না’। ‘এক শ্রেণির কাস্টমার আছেন যারা এখনো বানানো লেপ, তোষক ও জাজিমের ওপরই নির্ভর করেন। তাদের কারণেই আমাদের ব্যবসাটা এখনো টিকে রয়েছে’।

 


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতির উপর লেখা 'জয় বাংলা’, 'জয় বঙ্গবন্ধু', শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
শ্বশুরবাড়ির অদূরেই মিললো যুবকের মরদেহ
না‌জিরপু‌রে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মৃত্যু
কুড়িগ্রামে নসিমন খাদে পড়ে চালক নিহত
গণধর্ষণ মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি এক যুগ পর গ্রেপ্তার
আরও

আরও পড়ুন

জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতির উপর লেখা 'জয় বাংলা’, 'জয় বঙ্গবন্ধু', শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতির উপর লেখা 'জয় বাংলা’, 'জয় বঙ্গবন্ধু', শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ

কাজাখস্তানে আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনা, উদ্ধার অভিযান চলছে

কাজাখস্তানে আজারবাইজান এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনা, উদ্ধার অভিযান চলছে

শ্বশুরবাড়ির অদূরেই মিললো যুবকের মরদেহ

শ্বশুরবাড়ির অদূরেই মিললো যুবকের মরদেহ

না‌জিরপু‌রে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মৃত্যু

না‌জিরপু‌রে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মৃত্যু

সংস্কার কমিশনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে প্রশাসন ক্যাডারদের সভা

সংস্কার কমিশনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে প্রশাসন ক্যাডারদের সভা

সুইমিং পুলে প্রস্রাব করে নতুন বিতর্কে আল্লু অর্জুন, হয়েছে মামলা

সুইমিং পুলে প্রস্রাব করে নতুন বিতর্কে আল্লু অর্জুন, হয়েছে মামলা

কুড়িগ্রামে নসিমন খাদে পড়ে চালক নিহত

কুড়িগ্রামে নসিমন খাদে পড়ে চালক নিহত

ভারত সীমান্তে চিন প্রদেশও মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের দখলে

ভারত সীমান্তে চিন প্রদেশও মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের দখলে

বাংলাদেশিদের অবদান শান্তিরক্ষা মিশনে বিশ্ব স্বীকৃত

বাংলাদেশিদের অবদান শান্তিরক্ষা মিশনে বিশ্ব স্বীকৃত

গাজায় যুদ্ধের প্রভাবে বেথেলহেমে খ্রিস্টানদের বড়দিনে হতাশা, নেই আনন্দ উৎসব

গাজায় যুদ্ধের প্রভাবে বেথেলহেমে খ্রিস্টানদের বড়দিনে হতাশা, নেই আনন্দ উৎসব

চিকিৎসকদের আরও মানবিক হওয়ার আহ্বান জামায়াত আমিরের

চিকিৎসকদের আরও মানবিক হওয়ার আহ্বান জামায়াত আমিরের

গণধর্ষণ মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি এক যুগ পর গ্রেপ্তার

গণধর্ষণ মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি এক যুগ পর গ্রেপ্তার

ভূঞাপুরে শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত

ভূঞাপুরে শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানির অভিযোগে প্রধান শিক্ষককে বরখাস্ত

আমরা নির্বাচন নিয়ে ধৈর্য ধরতে প্রস্তুত: জামায়াত আমির

আমরা নির্বাচন নিয়ে ধৈর্য ধরতে প্রস্তুত: জামায়াত আমির

ভূরুঙ্গামারীতে নিজ ভটভটি উল্টে যুবকের মৃত্যু

ভূরুঙ্গামারীতে নিজ ভটভটি উল্টে যুবকের মৃত্যু

মিজানুর রহমান আজাহারীর আগমনে পেকুয়ায় দশ লক্ষ মুসল্লি সমাগমের সম্ভাবনা

মিজানুর রহমান আজাহারীর আগমনে পেকুয়ায় দশ লক্ষ মুসল্লি সমাগমের সম্ভাবনা

ক্ষমতা ছাড়ার আগে রাশিয়ার ওপর আরেক দফা নিষেধাজ্ঞা বাইডেনের

ক্ষমতা ছাড়ার আগে রাশিয়ার ওপর আরেক দফা নিষেধাজ্ঞা বাইডেনের

আব্দুল্লাহ আল মামুন খান রনির উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ

আব্দুল্লাহ আল মামুন খান রনির উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ

চট্টগ্রাম বোর্ডের নূরানি কেন্দ্রীয় সনদ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ : পাশের হার ৯৭.৮৮%

চট্টগ্রাম বোর্ডের নূরানি কেন্দ্রীয় সনদ পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ : পাশের হার ৯৭.৮৮%

বিপিএলের সূচি

বিপিএলের সূচি