কিশোরগঞ্জে গাছ আলু চাষে ভাগ্য খুলেছে শতাধিক কৃষকের
০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০০ পিএম | আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:০০ পিএম
কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে মাঁচা পদ্ধতিতে ‘গাছ আলু’ চাষ। সাধারণ আলুর চেয়ে অধিক পুষ্টিগুণে ভরপুর এ আলু স্বপ্ন দেখাচ্ছে কৃষকদের। তাই অধিক লাভের আশায় প্রতিটি মৌসুমেই পাকুন্দিয়া উপজেলার কৃষকরা বিভিন্ন জাতের আলু চাষাবাদ করে থাকেন। বর্তমানে আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকরা আলু চাষে ব্যাপক সাফল্য এনেছেন। চাহিদা থাকায় ও ব্যাপক লাভজনক হওয়ায় অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন এ আলু চাষে।
অন্যান্য ফসলের তুলনায় আলু চাষে পরিশ্রম ও খরচ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় কৃষকেরা লাভের মুখ দেখছেন। সঠিক পরিচর্যায় দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। খরচের তুলনায় লাভ বেশি হওয়ায় আগ্রহী হচ্ছেন নতুন নতুন কৃষকরাও।
কৃষকরা জানায়, প্রতি একরে গাছ আলু চাষের খরচ হয় মাত্র তিন হাজার টাকা। প্রতি ১০ শতাংশ জমিতে মাটির ওপর ৩০-৩৫ মণ ফলন হয়। যা প্রতি কেজির বাজারমূল্য ৪০-৪৫ টাকা। মাটির নিচে ২৫-৩০ মণ ফলন হয়। যা ১৪০০-১৬০০ টাকা মণ বিক্রি করা যায়। ফসল উত্তোলনের পর সেগুলোকে পরিষ্কার করাসহ নানা প্রক্রিয়ায় বাজারজাত করা হয়।
উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে পাকুন্দিয়া উপজেলায় ৪০২ হেক্টর জমিতে গাছ আলু এবং মেটে আলুর চাষ হয়েছে। আগে এই আলুসমূহ বসতবাড়ির আঙিনায় চাষ হলেও বর্তমানে মাঠ ফসল হিসেবে কৃষকদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই আলুসমূহ মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের মধ্যে সম্প্রসারিত হয়েছে। আপৎকালীন ফসল হিসেবে এই আলু খুব জনপ্রিয়। কারণ, বর্ষা পরবর্তী মৌসুমে মাঠে অন্য কোনো সবজি থাকে না। এই ফসলটি বর্ষার অতিবৃষ্টি সহ্য করতে পারে বলে বর্ষার পরে সবজিটি কৃষকদের আর্থিকভাবে লাভবান করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও এ সবজিতে রোগবালাই এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ নেই বললেই চলে। ফলে নিরাপদ সবজি হিসেবে আমাদের খাবারের তালিয়কায় যুক্ত হতে পারে।
কৃষি বিভাগ আরও জানায়, এপ্রিল মাস এ জাতের আলু রোপনের উপযুক্ত সময়। বীজ রোপনের চার মাস পর থেকে ফলন সংগ্রহ করা যায়। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে পুরোপরি ফলন চলে আসে। কম সময়ের এ চাষাবাদে অল্প খরচে কৃষকেরা কয়েকগুণ লাভ পেয়ে থাকেন। গাছ আলু আবাদ করতে খরচের পরিমাণ খবুই কম। একই মাচাতে অন্য একটি সাথী ফসলের (চালকুমড়া, ঝিঙা, চিচিংগা) সঙ্গে গাছ আলু আবাদ করা যায়। এতে মাচার খরচ কমে যায়। মাটিতে জৈব সার ও গোবর ব্যবহার করা হয়। এর ফলে রাসায়ানিক সার কম ব্যবহার হয়। এতে মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়া পোকামাকড়ের আক্রমণও কম হয়। তাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাচায় উঠিয়ে দেয়া মেটে আলু লতা যেন সাপের মত আঁকা বাকা হয়ে এক মাচা থেকে অন্য মাচায় তার প্রভাব বিস্তার করছে। মাঠের পর মাঠ অন্য সব ফসলে সবুজের সমারোহ তার মাঝে মেটে আলুর পানের মত পাতা যেন অন্য এক সৌন্দর্য বহন করে যাচ্ছে।
'
উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নের লাউতলি এলাকার কৃষক হেলাল উদ্দিন বলেন, আলু চাষাবাদে তেমন কোনো বাড়তি পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। তাই তিনি এবার দুই বিঘা জমিতে গাছ আলু চাষ করেছেন। আশা করছেন প্রতি বিঘা জমি থেকে ১২০ মণ আলু উৎপাদন হবে। গত বছর একই জমিতে আলু চাষ করে প্রায় ৫২ হাজার টাকা লাভ করেছিলেন বলেও তিনি জানান।
কৃষক আসাদ মিয়া বলেন, ‘গাছ আলু চাষ করে তার আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। এ বছর প্রায় এক একর জমিতে গাছ আলু চাষ করেছি। আমার ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। খরচ বাদ দিয়ে আমার জমি থেকে ৪ লাখ টাকা লাভ করেছি। একবার মাচা তৈরি করলে আর যতœ লাগে না। এই সবজি চাষে খরচ কম, কীটনাশক লাগে না, শ্রমিকও লাগে না। এই গাছ আলুতে লাভ বেশি।’
উপজেলার বড় আজলদী গ্রামের গাছ আলু চাষী রফিকুল ইসলাম জানান, কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় তিনি ২০ শতাংশ জমিতে একটি প্রদর্শনী বাস্তবায়নের পাশাপাশি আরো ৪০ শতক জমিতে গাছ আলুর চাষ করেন। এরমধ্যে এই জমি থেকে ৬০ হাজার টাকার আলু বিক্রি করেছেন। মাস দেড়েকের মধ্যে আরও লাখ টাকার মতো আলু বিক্রি করতে পারবেন তিনি। তিনি আরও বলেন, তাছাড়া মাটির নিচেও এই আলু হয়। মাটির নিচের আলু থেকে আরো প্রায় ৩০-৪০ মণ আলু পাওয়ার আশা করছেন তিনি।
উপজেলার চরফরাদি ইউনিয়নের চরতেরটেকিয়া গ্রামের কৃষক রফিক মিয়া বলেন, এপ্রিলের দিকে ৫০ শতাংশ জমিতে গাছ আলু চাষ করেছি। এলাকার অনেক কৃষক এ জাতের আলু চাষ করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তখন আমি গাছ আলু চাষে উদ্বুদ্ধ হই। এরপর এখন জমি থেকে ভালো আলু উৎপাদন হয়েছে। আশা করছি আমার জমিতে এই গাছ আলু দুই লাখ টাকায় বিক্রি হবে। ইতোমধ্যে আমি ৬০ হাজার টাকার আলু বিক্রি করেছি।
পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নুর-ই আলম বলেন, চলতি মৌসুমে পাকুন্দিয়া উপজেলায় ৪০২ হেক্টর জমিতে গাছ আলু এবং মেটে আলুর চাষ হয়েছে। যা দেশের অন্য জেলার তুলনায় সবচেয়ে বেশি। কৃষকেরা এই সবজিটি সাথী ফসল হিসেবে জমিতে চাষ করে থাকেন। মার্চ-এপ্রিল মাসে কুমড়া জাতীয় সবজির সঙ্গে এই আলুর চাষ করা হয়। কুমড়া জাতীয় সবজি সংগ্রহের পরপর আগস্ট মাস থেকে এই সবজিটির ফলন উত্তোলন শুরু হয়। আগস্ট থেকে শুরু করে নভেম্বর পর্যন্ত ফসল উত্তোলন করা যায়। স্থানীয় তারাকান্দি বাজারে এই ফসলটি বিক্রির বাজার তৈরি হওয়ায় এই ফসলের আবাদ দিনদিন বেড়েই চলছে। এ আলু চাষে রোগবালাই কম থাকায় খরচও কম হয়।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এসবির প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে গোলাম রসুলকে
পিএসসির ৬ সদস্যের নিয়োগ বাতিল করেছে সরকার
বাংলাদেশের সীমান্তে ১৬০টি জায়গায় কাটাতারের বেড়া দিয়েছে ভারত : রিজভী
সব ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি বন্ধ, ভোগান্তিতে গ্রাহকরা
মোক্ষম চাল রাশিয়ার
লুকিয়ে পাথর লুঠে যেয়ে সিলেটে এক শ্রমিকের মৃত্যু !
বাগেরহাটে আওয়ামী লীগ নেতা বাদশা মিয়া গ্রেফতার
ভারতে পালানোর সময় ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ নেত্রী সুস্মিতা পান্ডে গ্রেপ্তার
খুশদিল ঝড়ে খুলনাকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দিল রংপুর
টানা ৩৫ ঘণ্টা পর অনশন প্রত্যাহার জবি শিক্ষার্থীদের
যাদের চিন্তাধারায় গড়ে উঠেছে পাশ্চাত্য জীবন দর্শন
`সমন্বয়ক, মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হ'
মুজিবনগর ঘোষণায় সেক্যুলারিজম সমাজতন্ত্র বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ ছিল না : ৭২ এর সংবিধানে আছে
সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি-দখলবাজি রুখতে হবে
এইচএমপিভি: বিমানবন্দর ও এয়ারলাইন্সগুলোকে বিশেষ নির্দেশনা
হতাহত ৩০
৩শ’ সৈন্য নিহত
৫ মাওবাদী হত্যা
দাবানলে চুরি
চেক প্রজাতন্ত্রে নিহত ৬