ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১
প্রফেসর ড. মো. শামছুল আলম

‘অল্পদিনের মধ্যেই মাদরাসায় সত্যিকারের নায়েবে রাসূল (স.) তৈরির সিলেবাস প্রণয়ন হবে’

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২৪ পিএম | আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২৪ পিএম

গাজীপুর জেলাধীন শ্রীপুর ভাংনাহাটি রহমানিয়া কামিল মাদরাসার ৭৫তম বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে আগত অতিথিবৃন্দ বলেন, মাদরাসা শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা। এ শিক্ষা থেকেই সকল শিক্ষার উৎপত্তি। যুগে যুগে ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য নানাভাবে চক্রান্ত করা হয়েছে। মাদরাসা শিক্ষার মাঝে নাস্তিক্যবাদ, পৌত্তলিকতা অনুপ্রবেশের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে ইসলাম থেকে দূরে সরানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে। ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

 

শনিবার পীরজাদা মাওলানা এস এম রুহুল আমীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পুনর্মিলনীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. শামছুল আলম বলেন, শিক্ষার্থীরাই আমাদের পরিবার। একজন শিক্ষকের সব থেকে প্রিয় স্থান শ্রেণিকক্ষ। যারা অবসরে আছেন তাঁরা প্রতিটি মুহূর্তে শ্রেণিকক্ষের শূন্যতা অনুভব করেন। আমাদের আদর্শবান ছাত্র তৈরি করতে হবে, যারা সমাজ সংস্কারে ভূমিকা রাখবে। মুরুব্বিদের সম্মান ও শ্রদ্ধা করবে। সমাজের মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সকল প্রকার অপসংস্কৃতি দূর করে ইসলামি রাষ্ট্র কায়েমের মাধ্যমে মানুষকে কুরআন সুন্নাহর দিকে আহ্বান করবে।

 

তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব প্রাপ্তির পর থেকেই কাজ শুরু করেছি। অচিরেই মাদরাসা শিক্ষায় নতুন সিলেবাস আসবে। যে সিলেবাসের মাধ্যমে মাদরাসা থেকে মুফতি আমীমুল ইহসানের মত আলেম তৈরি হবে ইনশাআল্লাহ। তিনি আরো আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমরা বিগত সময়ে কর্তৃত্ববাদী মনোভাব দেখেছি, তাদের শাসনকালে মুসলিম অধ্যুষিত বাংলাদেশের মানুষ কি পেয়েছে, ইসলামের কতটা উন্নয়ন ঘটেছে তা আমরা দেখেছি। যাদের মধ্যে তাকওয়া নেই, আল্লাহভিতি নেই তাদের দ্বারা আর যাই হোক, দেশের জন্য কল্যাণকর কিছুই হতে পারে না। আগামী নির্বাচনে আলেম ওলামাগণ অন্তত ৫০টি আসনে নির্বাচিত হবেন ইনশাআল্লাহ। তাঁদের হাতেই এদেশ নতুনভাবে সজ্জিত হবে। ইসলামের আলোয় আলোকিত হবে পুরো দেশ।

 

সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ মাহবুব-উল-ইসলাম স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদগণ ও জুলাই আগস্টের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ইসলামের শত্রুরা অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে মানুষের মস্তিস্কে ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাব তৈরির মন্ত্র ঢুকিয়ে দিচ্ছে। তাদের পরিকল্পনা সুদূর প্রসারী। এ থেকে উত্তোরণের জন্য আমাদের আরো চৌকস হতে হবে। মাদরাসা শিক্ষার্থীদের কুরআন সুন্নাহর গভীরে প্রবেশ করতে হবে। সঠিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মাধ্যমে ইসলামের প্রকৃত জ্ঞান আহরণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। ইসলামের পূর্বসূরীগণ যেভাবে সংকট থেকে উত্তরণ পেয়েছিলেন সেসকল ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে অগ্রসর হলে আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত।

 

বিশেষে অতিথির বক্তব্যে এশিয়ান ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও ভাইস-চ্যান্সেলর ড. আবুল হাসান মু. সাদেক ভাংনাহাটি রহমানিয়া কামিল মাদরাসা একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে নিজেকে ধন্য মনে করে বলেন, এই মাদরাসা শিক্ষার্থীরা শুধু দেশ নয় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠ রয়েছে। যার বাস্তব দৃষ্টান্ত আমি নিজেই। আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশিত পথে ফিরে আসতেই হবে। সারাবিশ্ব আজ ভ্রষ্টতায় পরিপূর্ণ। আমরা আলেমগণ যদি নিজ দায়িত্ব তথা ইসলামের রীতিনীতি প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ না করি, কুরআন হাদিস অধ্যয়নের মাধ্যমে যে শিক্ষা অর্জন করলাম তা যদি সমাজে বাস্তবায়ন না করতে পারি, কুফরী ও জুলুমের বিরুদ্ধে অবস্থান না নিতে পারি তাহলে আল্লাহর নিকট কি জবাব দিব? আমরা প্রত্যেকেই এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হব।

 

তিনি উপস্থিত সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং সর্বস্তরের মাদরাসা শিক্ষকদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, ইসলামের শত্রুদের থেকে সতর্ক থাকার পাশাপাশি ইমানী শক্তিতে বলীয়ান হয়ে সর্বত্র দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

 

বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব ও মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী বলেন, ইসলামকে সমুন্নত রাখার ও মাদরাসা শিক্ষার স্বকীয়তা বজায় রাখার ব্যাপারে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমাদের সভাপতি আলহাজ্ব এ এম এম বাহাউদ্দীনের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও দূরদর্শী চিন্তাধারার ব্যাপারে সংগঠনের সকল নেতৃবৃন্দ আস্থাশীল। তিনি কখনোই অন্যায়ের কাছে আপোষ ও বাতিলের সম্মুখে মাথানত করেননি। তারই নেতৃত্বে দেশে সর্বপ্রথম বিতর্কিত ও ইসলাম পরিপন্থি সিলেবাসের বিরুদ্ধে একযোগে দেশব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। মাদরাসা শিক্ষায় বিদ্যমান অসংগতিসমূহ দূরীকরণের ব্যাপারে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের প্রত্যেক নেতৃবৃন্দ নিজ নিজ অঙ্গনে কাজ করে যাচ্ছেন। মাদরাসা শিক্ষায় জমিয়াতের অবদান ব্যাখ্যা করার অপেক্ষা রাখে না।

 

মহাসচিব আরো বলেন, হিন্দুত্ববাদ ইসকন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও দেশকে নেতৃত্বহীন করে ভারতীয় আধিপত্য বিস্তারের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। একইসাথে ভারতের তাঁবেদারি সরকার ব্যবস্থা ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হওয়ায় সেখানকার রাজনৈতিক নেতা ও বুদ্ধিজীবীগণের দিশেহারা অবস্থা। যার দরুন তারা বাংলাদেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিনষ্টের জন্য বহুমুখী চক্রান্ত শুরু করেছে। বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি ও মিডিয়ার মাধ্যমে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে।

 

তিনি ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, নিজেদের দেশ নিয়ে ভাবুন, পরের কোটি মুসলমানের সাথে হীন স্বার্থের জন্য শত্রুতায় জড়াতে যাবেন না। আমরা সেই জাতি, যে জাতি মাত্র তিনশত তেরো জন সৈন্য নিয়ে দশহাজার অশ্বারোহী কাফেরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছে। আমরা সেই মুসলিম যে মুসলিমের হুংকারে গৌরগবিন্দের মসনদ ভেঙ্গে চুড়ে মাটিতে বিলীন হয়েছে। আমরা সেই বাঙ্গালি যে বাঙ্গালি কেবল নিজ ভাষার জন্য প্রাণ দিতে দ্বিধাবোধ করেনি, যে বাঙ্গালি ১৯৭১ এ দেশের তরে তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে অকাতরে। প্রয়োজনে বাংলাদেশের মানুষ আবারও প্রাণ দিবে কিন্তু এদেশের এক ইঞ্চিও মাটি বেদখল হতে দিবে না। এদেশে ভিনদেশীদের কালো থাবা পরতে দিবে না। তিনি মাদরাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সর্বসাধারণকে সতর্ক থেকে চলমান সংকট মোকাবেলার আহ্বান জানান।

 

শ্রীপুর ভাংনাহাটি রহমানিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ফারুক আহমদ মোমতাজীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক মো. নাছিমুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ব্যারিস্টার সজীব আহমদ, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ সাইফুল ইসলাম, ইনফিনিটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ও মাদরাসার প্রাক্তন শিক্ষার্থী মোহাম্মদ জুনাইদ, জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইজহারুল হক, মাদরাসা প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও বিএনপি নেতা আলহাজ্ব হুমায়ুন কবির সরকার, প্রাক্তন ছাত্র ও জামায়াত নেতা ড. জাহাঙ্গীর আলম, প্রাক্তন ছাত্র অবসর প্রাপ্ত যুগ্মসচিব এ এইচ এম আতাহর, ড. লুৎফুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, মাদরাসা প্রধান, প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫
সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই
ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের
গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের
আরও

আরও পড়ুন

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

ধূমপানকে না বলুন

ধূমপানকে না বলুন

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত

শেষ তিন মাসে রেকর্ড বাজেট ঘাটতি যুক্তরাষ্ট্রের

শেষ তিন মাসে রেকর্ড বাজেট ঘাটতি যুক্তরাষ্ট্রের