মুরগির বিষ্ঠায় উত্তরে আলু চাষ,বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি
০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪১ পিএম | আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪১ পিএম
হিমালয় কোলঘেষা উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও। এ জেলার মাটি অত্যন্ত উর্বর। সব ধরনের ফসলের আবাদ ভাল হওয়ায় দিন দিন বেড়েছে আলুর চাষ। এ বছর জেলায় চলতি মৌসুমে ২৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
আলুর চাষে জমি তৈরির পূর্বেই চাষ দেবার সময় ভাল ফলনে ব্যবহার করা হচ্ছে মুরগির বিষ্ঠা। আলু চাষে জমিতে মুরগির বিষ্ঠার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তা মানছেন না আলু চাষিরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুরগির বিষ্ঠায় থাকা জীবাণু গাছের মাধ্যমে আলুতে গিয়ে রোগবালাই বাড়ছে। আবার সেই আলু খেয়ে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,বর্তমানে ঠাকুরগাঁও জেলার আলু চাষিসহ জেলার সকল সবজি চাষিরা সঠিক প্রক্রিয়াজাত করা জৈব স্যার ব্যবহার না করে কৃষি জমিতে পর্যাপ্ত পরিমানে ব্যবহার করছে কাঠের গুড়ায় মিশ্রিত অথবা ছাই মিশ্রিত মুরগির বিষ্ঠা। দেশের বিভিন্ন স্থানের বড় মুরগির খামার ও জেলা শহরের বিভিন্ন খামার থেকে ভেজা বিষ্ঠা সংগ্রহ করে গ্রামে গঞ্জে মেইন সড়কের পাশে^,কৃষি জমির পাশে^ মুরগির বিষ্ঠার স্তুপ বসিয়ে বেচাকেনা করছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা। এলাকার বিত্তবান ও প্রভাবশালী ব্যক্তি দ্বারাই এই ব্যবসা চলছে বলে দাবি স্থানীয় সচেতন মহলের।
তবে আলুচাষিরা জানান, আলু চাষের খরচ অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় এখন আর আগের মতো পুষিয়ে উঠতে পারছেন না তাঁরা। ফলে খরচ কমাতেই মুরগির বিষ্ঠা ব্যবহার করছেন। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানের বড় মুরগির খামার ও জেলা শহরের আশপাশের এলাকার মুরগির খামারগুলো থেকে বিষ্ঠা সংগ্রহ করে থাকেন তাঁরা। কম দামে পাওয়া ওই বিষ্ঠা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জেনেও আলু চাষে তা ব্যবহার করছেন কৃষকরা।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.ইজাহার আহমেদ খান এর সাথে দৈনিক ইনকিলাব ঠাকুরগাঁও জেলা সংবাদদাতা মাসুদ রানা পলক এর সাথে কথা হলে জানান, সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জৈব্য স্যার তৈরি করা হয় তাহলে ভাল মুরগির বিষ্ঠার মধ্যে যে ভাইরাস, ব্যকটেরিয়া থাকে এগুলোকে মারার জন্য চুনমেশানো হয়। চুন মেশানোতে ভাইরাস, ব্যকটেরিয়ার ক্ষতিকারক জীনিষগুলো মারা পরে, মারা গেলে নিদৃষ্ট সময় পর্যন্ত রেখে দেওয়া হয়। তাপপরে এটা সঠিক প্রক্রিয়ায় জৈব্য সারে প্ররিণত হয়। তবে এটাতে কোন ধরনের দূগন্ধ থাকবে না। আর যদি মুরগির বিষ্ঠার জৈব্য সারে দুগন্ধ থাকে তাহলে এই মুরগির বিষ্ঠায় অ্যান্টিবায়োটিক রেসিডিও, ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের ডিজিজ ইনফেকট্যান্ট থাকে। মুরগির বিষ্ঠা জমিতে ব্যবহার করার পরে তা জীবানুগুলি নষ্ট না হয়ে শেকড়ের মাধ্যমে আলুতে জমা হয়। পরে সেগুলো মানবদেহে প্রবেশ করে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তা ছাড়া, মুরগির বিষ্ঠায় থাকা অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ধীরে ধীরে জমির উর্বরতা নষ্ট করে।
তিনি আরও জানান, মুরগির বিষ্ঠায় ক্ষতিকর উপাদানগুলো জমিতে অক্সিজেনের স্বল্পতা ঘটানোর মাধ্যমে আলুর গাছে ক্ষতি ও রোগব্যাধি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এই সব জমির আলুতে রোগবালাই দেখা দিলে নরমাল ওষুধে কাজ করে না। উচ্চমার্ত্রার বালাইনাশক ব্যবহার করতে হয় যা মানব স্বাস্থের জন্য আরও ক্ষতিকর। আমরা মুরগির বিষ্ঠা ব্যবহার না করার জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা সেমিনারের মাধ্যমে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. ফিরাজ জামান জুয়েল বলেন, মুরগি পালনে নানা রকম অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। যেগুলো বিষ্ঠার মাধ্যমে আলু গাছের শেকড়ের সাহায্যে আলুতে প্রবেশ করে এগুলো ধ্বংস হয় না। এই সব আলু খাওয়ার মাধ্যমে মানুষের শরীরে রোগজীবাণু প্রবেশ করে, যা মানবদেহের জন্য অনেক ক্ষতিকর। বিশেষ করে কিডনি ও লিভারের বেশি ক্ষতি করে।
ডা. জুয়েল আরও বলেন, জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিষ্ঠার ব্যবহার বন্ধে আমাদের সকলকে যে যার অবস্থান থেকে কৃষকদের সচেতন করতে হবে। সবাইকে নিজের অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঠাকুরগাঁও এর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো: সিরাজুল ইসলাম এর সাথে দৈনিক ইনকিলাব ঠাকুরগাঁও জেলা সংবাদদাতা মাসুদ রানা পলক এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, মুরগির বিষ্ঠা শুধু আলু চাষে নয় যে কোন সবজি ফসলের জমিতে ব্যবহার করা ক্ষতিকর নয়। তবে মুরগির বিষ্ঠাকে আগে পুরোপুরি ভাবে ডি-কম্পোস্ট করে নিতে হবে তাহলে সেটা একটা উন্নত মানের জৈব স্যার হবে। এ জৈব স্যারে কোন ধরনের দূগন্ধ থাকবে না। তবে আমাদের ঠাকুরগাঁও জেলায় বেশির ভাগ জমির পাশ দিয়ে চলাচল করলে নাকে দূগন্ধ চলে আশে। আমরা নিয়মিত মাঠ পর্যায়ে গিয়ে আলু চাষিদের মুরগির বিষ্ঠা ব্যবহারে পুরোপুরি পচিয়ে প্রক্রিয়াজাত (ডি-কম্পোস্ট ) করে জমিতে দেবার পরামর্শ দিচ্ছি। ঠাকুরগাঁওয়ের মাটি ও প্রকৃতি আলুর জন্য যথেষ্ট উপযোগী।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা এর সাথে দৈনিক ইনকিলাব ঠাকুরগাঁও জেলা সংবাদদাতা মাসুদ রানা পলক এর সাথে কথা হলে জানান, বিষয়টি জানা ছিলনা আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর জিনিষ ফসলের জমিতে ব্যবহার করা হচ্ছে সেটা পরবর্তীতে এটা মানবদেহে ক্ষতিকর প্রতিক্রীয়ার সৃষ্টি হবে এ বিষয়টি নিয়ে সবাইকে আগে সচেতন করবো। সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে তাদের সুবিধে অসুবিধে শুনে যাদের যাদের সচেতন করা দরকার সে জায়গায় গিয়ে কথা বলবেন, মিটিং করবেন, মুডিফিকেশন করবেন বলে জানান।
জেলা প্রশাসক ইশরাত আরও বলেন, দরকার হলে তিনি প্রান্তিক প্রর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে তারা যেন সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মুরগির বিষ্ঠাকে প্রক্রিয়াজাত করে জৈব স্যার হিসেবে ব্যবহার করবে। তারপরে কৃষকরা যদি না শুনে তখন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪
মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫
সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই
ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের
গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি
রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের
শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা
বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা
এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম
বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের
ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?
আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু
বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ
রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী
ধূমপানকে না বলুন
জালিমের পরিণতি ভালো হয় না
অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি
মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়
১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত