ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ | ২ মাঘ ১৪৩১

দোয়ারাবাজারে চেলা নদীতে বালু উত্তোলনে বিলিন হচ্ছে বাড়ি-ঘরসহ গ্রাম

Daily Inqilab দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা

০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২১ পিএম | আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২৫ পিএম

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নে চেলা নদীতে বালু উত্তোলনের মহোৎসবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে নদীর তীরবর্তী ২ টি গ্রাম। চেলা নদীর অব্যাহত এই ভাঙনে এলাকার আরও পাঁচটি গ্রামের আবাদি জমি, বাড়িঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,হাটবাজারসহ বিস্তীর্ণ এলাকা হুমকির মুখে পড়েছে।
বলু উত্তোলনের ফলে ভাঙনে বিলীন হচ্ছে একের পর এক বসতঘর ও ফসলি জমি। নদীভাঙন থেকে আত্মরক্ষায় ইতোমধ্যে বসতঘর ভেঙে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছে নদীর পাড়ের শতাধিক বাসিন্দা। সীমান্তবর্তী দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহমান এই চেলানদীর বালু মহাল বন্ধ করে পাশবর্তী এলাকাগুলো রক্ষা করতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

 

রবিবার (৮ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিন দেখা গেছে, চেলা নদীর উত্তর পাড় সারপিন পাড়া গ্রামের আজাদ মিয়া, সানুর আলী, মইনুল ইসলাম,আরব আলী, মনির হোসেন,আব্দুস সালাম,সেলিম আহমদ, মন্তাজ আলীসহ অন্তত ৩০ টি পরিবারের বসতঘর নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বিলিন হয়েছে।

 

জানা যায়, শুধু তারাই নন, চলতি বছরে সারপিন পাড়া গ্রামের বড় একটি অংশ নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। অভিশপ্ত এই চেলা নদীভাঙনের কবল থেকে নিজেদের রক্ষায় বসতঘর নিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেছে এলাকার অনেকেই।

 

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত বছরে চেলার ভাঙনে বিলীন হয়েছে পূর্বচাইরগাঁও গ্রামের ২০টি বসতঘর, একটি স্কুল ও কাস্টমস অফিস। সোনাপুর, দৌলতপুর, রহিমের পাড়া, সারপিন পাড়া গ্রামের অর্ধশত বসতঘর ও পাশবর্তী গ্রামীণ সড়ক।

 

পূর্বচাইরগাঁ গ্রামের শাহজাহান মিয়া'র একসময় প্রায় দুই একর জমি ছিল। তিনি জানান, গত দুই বছরের মধ্যে দুই একর জমিই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গত বছরে নদীতে বিলীন হয়েছে তার শেষ সম্বল বসতবাড়িটি। বর্তমানে তিনি গ্রামের একজনের ভিটায় মাচা বেঁধে পরিবার নিয়ে থাকছেন। তিনি বলেন, ‘নদীটায় যদি বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হয়, তাহলে আশপাশের কোন গ্রাম থাকবে না।

 

সারপিন পাড়া গ্রামের আজাদ মিয়া বলেন, চেলা নদী শুধু বাড়িঘরই ভেঙে নিচ্ছে না, নদীটি আমাদের গিলে খাচ্ছে। নিয়ে গেছে আমাদের স্বপ্ন, জীবিকার নির্বাহের মাধ্যম।


এ পর্যন্ত পাঁচবার বসতবাড়ি সরাতে হয়েছে। জমিজমা সবই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আমাদের দেখার কেউ নেই। এলাকার কিছু অসাধু অর্থলোভী ও অর্থলোভী বিজিবি সদস্যদের যোগসাজশেই নদীর তীর কেটে বালু উত্তোলন করায় আজ নদীর পাড়ের মানুষজন দিশেহারা।

 

রহিমের পাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য ফয়েজ উদ্দিন বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছর পার হলেও চেলা নদীর পাড়ের মানুষের জীবন মানের কথা কেউ চিন্তা করেনি। স্থানীয় প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা ও অর্থ লোভী কিছু মানুষকে হাতে নিয়ে বালু উত্তোলন করে আজ কয়েকটি এলাকা ধঃস করে দিছে। এবছর যদি বালু মহাল ইজারা বন্ধ না করা হয় তাহলে আগামীতে চেলার পাড়ের চাইরগাঁও, পূর্বসোনাপুর,সোনাপুর,নাছিমপুর, দৌলতপুর,সারপিন নগর,রহিমের পাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাবে। তিনি জানান,ইতোমধ্যে নাছিমপুর,দৌলতপুর, রহিমের পাড়া এলাকার বেশ কয়েকটি বসতঘর নদী গর্ভে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এলাকাবাসীর দাবি অভিশপ্ত এই চেলা নদীর বালু মহাল ইজারা বন্ধ করে নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলো রক্ষা করা।

 

এদিকে স্থানীয় সোনালী চেলা বিজিবি (সিলেট ব্যাটালিয়ন ৪৮ বিজিবি) ক্যাম্পের যোগসাজশে নদীর পাড় কেটে বালু উত্তোলনের বিষয়টির ব্যপারে জানতে চাইলে বিজিবি সদস্যরা জানান, অনেক সময় নৌকার মাঝিরা বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন জায়গা হতে বালু উত্তোলন করতে যায়। বিজিবি সদস্যদের দেখা মাত্রই তারা আবার দূরে সরে যায়।

 

নরসিংপুর ইউপি চেয়ারম্যান নুর উদ্দিন আহমদ ইনকিলাবকে বলেন, চেলা নদীতে একটি অসাধু চক্রের মাধ্যমে সীমান্ত অতিক্রম করে ও পাড় কেটে বালু উত্তোলনের ফলে নদীপাড়ের মানুষদের বসতঘর বিলিন হওয়ার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। চেলার পাড়ের মানুষদের রক্ষা করতে হলে বালু মহাল ইজারা বন্ধ করা প্রয়োজন। না হয় দেশের মানচিত্র থেকে এই এলাকাটি হারিয়ে যাবে।

 

এবিষয়ে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া ইনকিলাবকে জানান,চেলা নদীতে বালু উত্তোলনের ফলে বসতভিটা বিলিন হচ্ছে এই সংবাদটি মাত্র জানলাম। নদীর তীরবর্তী এলাকা রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪
মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫
সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই
ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের
গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি
আরও

আরও পড়ুন

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

বগুড়ায় কলেজ শিক্ষার্থী হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৪

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

মতিঝিলে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ১৫

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

সাভারে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ২৫ লাখ টাকার তেলসহ পিকআপ ছিনতাই

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

ডাকসু নিয়ে ৩৭৭ সংস্কার প্রস্তাব ঢাবি ছাত্রদলের

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

গাজীপুরে থানায় ব্যবসায়ীকে আটক করে ২ লাখ টাকা ঘুষ নিলো ওসি

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র অফিস অবরোধের ঘোষণা চাকরি বঞ্চিতদের

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

শামীম ওসমান-নানক পরিবারের বিরুদ্ধে দুই মামলা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

বায়ু দূষণে আবারও শীর্ষে ঢাকা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

এক মাসের মধ্যে সংস্কারের রোডম্যাপ দিবে সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

দেশে ফিরেই ছিনতাইয়ের শিকার মালয়েশিয়া প্রবাসী ডালিম

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

বিপিএল শেষ কর্নওয়ালের

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

ওয়াটসাপ, টেলিগ্রাম বা বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে দেওয়া সালামের জওয়াব দেওয়া প্রসঙ্গে?

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

আরচ্যারী ফেডারেশনের তারুণ্যের উৎসব কর্মসূচি শুরু

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

বেনাপোলে আড়াই বছর পর কবর থেকে তোলা হলো বিএনপি নেতা আলিমের লাশ

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

রাষ্ট্রের কল্যাণে উপসচিব পদে কাকে প্রয়োজন: নীতি ও ন্যায্যতা কী

ধূমপানকে না বলুন

ধূমপানকে না বলুন

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

জালিমের পরিণতি ভালো হয় না

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

অখণ্ড ভারতের নীলনকশা এবং মুখোশপরা গণশত্রুদের দাস্যবৃত্তি

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

মাজারে হামলা ও উগ্রপন্থা কাম্য নয়

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত

১২ কোটি জনসংখ্যার ৭ কোটি আক্রান্ত