কালীগঞ্জে ভাইরাল চিতাবাঘ হত্যার ঘটনায় দুইজন গ্রেপ্তার বন বিভাগ ও প্রশাসনে তোলপাড়

ঝিনাইদহ) উপজেলা সংবাদদাতা

২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৭ পিএম | আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৭ পিএম

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কালীগঞ্জে ভাইরাল মেছোবাঘ হত্যা ও হত্যার পর ঝুলিয়ে রাখার ঘটনায় প্রশাসনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমোধ্যে পুলিশ এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান চলছে।

এর আগে ২০ ডিসেম্বর বন্যপ্রাণী হত্যার অভিযোগে যশোর শার্শা ওয়াইল্ড লাইফ কন্ট্রল ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। ২১ ডিসেম্বর বিকালে পুলিশ ওই দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার খেদাপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে ইজিবাইক চালক জাহিদুল ইসলাম (৩৫) ও নলডাঙ্গা বাজারের ইজিবাইক ষ্টান্ডের স্টাটার ও সদর উপজেলার খড়াশুনি গ্রামের মৃত শামছুদ্দিন লস্কারের ছেলে মোশারফ হোসেন (৬০)।

বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ১৯ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ-নলডাঙ্গা সড়কের কাদিপুর নামক স্থানে একটি চিতাবাঘটি পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে জাহিদুল ইসলাম নামক ওই ইজিবাইক চালক মৃত বাঘটি বাজারে নিয়ে যান। নলডাঙ্গা বাজারের ইজিবাইক স্টান্ডে নেওয়ার পর সেখানে উপস্থিত কিছু মানুষ মৃত বাঘটি একটি দোকানোর সামনে খুটির সঙ্গে বেঁধে তারা গলায় ফুলের মালা দিয়ে সজ্জিত করে। বাঘের মুখের মধ্যে সিগারেট আর সামনে চায়ের কাপে চা রেখে ছবি উঠায়। পরে সেটা ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এছাড়া ওই ছবিতে কিছু লেখা হয় যা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মনহানীকর। এটা দেখে বনবিভাগের ঝিনাইদহ ও যশোর সকল ইউনিটের কর্মকর্তারা শুক্রবার ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। তারা সরেজমিনে তদন্ত করে ঘটনা যাচাই শেষে কালীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দেন।

শনিবার নলডাঙ্গা বাজারে গেলে স্থানীয়রা জানান, ঘটনার দিন চলন্ত যানবাহনে বাড়ি লেগে বাঘটি মারা যায়। সেটা মজা করার জন্য একজন চালক তার ইজিবাইকে করে বাজারে নিয়ে আসেন। পরে বাচ্চা বয়সের কয়েকজন এটাকে সাজিয়ে ছবি উঠায়। তাদের ইচ্ছা ছিল ছবিটি ভাইরাল করা।

কাদিপুর জামে মসজিদের ইমাম নূর ইসলাম জানান, তিনি ভোরে নামাজ পড়ানোর পর ফেরার পথে বাঘটিকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখেছেন। তার ধারনা রাতের কোনো এক সময় চলন্ত যানবাহনে ধাক্কা খেয়ে বাঘটি মারা গেছে। এরপর সকালে ইজিবাইক চালকরা সেটা বাজারে নিয়ে গেছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় ওয়াইল্ড লাইফ এন্ড ¯েœক রেসকিউ টিম ইন বাংলাদেশের কালীগঞ্জের দায়িত্বে থাকা আইন বিষয়ক সম্পাদক আদনান মীম জানান, তারা ঘটনাটি তদন্ত করছেন। কিভাবে বাঘটি মারা গেল এখই বলা যাচ্ছে না। তবে যেভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল সেটা ঠিক হয়নি। তিনি আরো বলেন, ঘটনার পর তারা এলাকায় গিয়ে সচেতনতামূলক সভাও করেছেন। আগামীতে যেন এ জাতীয় ঘটনা কেউ না ঘটায় তার জন্য কাজ করছেন।

আঞ্চলিক বন সংরক্ষক কর্মকর্তা জহির আকন জানান, তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবরটি দেখে সেখানে কর্মকর্তাদের পাঠিয়েছিন। ঘটনা নিয়ে থানায় মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশ আসামী গ্রেপ্তার করেছে।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা ওসি তদন্ত মোফাজ্জেল হক জানান, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তার লিখিত অভিযোগে তারা দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছেন। মামলার পক্রিয়া চলছে। এই ঘটনায় অন্য যারা জড়িত তাদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে যোগ করেন।

বিভাগ : বাংলাদেশ