নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় প্রভাবশালী এক আওয়ামী ঠিকাদারের বিরুদ্ধে নিম্নমানের কাজ করে বিল নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
রহমানিয়া বানিজ্য সংস্থা নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক সফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে কাজ না করে এবং নিম্নমানের কাজ করে বিল হাতিয়ে নেয়া’সহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও একই ধরনের প্রভাব খাটিয়ে ঠিকাদার রহমান পূর্বের মতো নিম্নমানের কাজ করে বিল তুলে নিতে কর্তৃপক্ষকে অনৈতিক চাপ সৃষ্টি করছে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, আসলে এ ঠিকাদারের খুঁটির জোর কোথায়?
একাধিক সূত্র জানায়, ঠিকাদার সফিকুর রহমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ভাই ও বসুরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র আবদুল কাদের মির্জার ঘনিষ্ট ছিলো। সেই সুবাদে সফিকুর রহমান এলজিইডি, পিআইও (প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস)সহ পৌরসভার বড় কাজগুলো বাগিয়ে নিয়ে যেতেন। নিম্নমানের কাজ করে বা কখনও কাজ না করেই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিল তুলে নিতেন। আর তার এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে সংশ্লিষ্ট সরকারী সংস্থা এলজিইডি’সহ অন্যান্য সংস্থার কর্মকর্তাদের একাধিকবার হেনস্তাও করেছে সফিক।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানেও সফিক নিজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও অন্য প্রতিষ্ঠানের হয়ে ৯টি বিদ্যালয়ের কাজ করছে। যেগুলো নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। কিন্তু এগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ না করেই প্রভাব খাটিয়ে ৫আগস্টের আগে প্রায় সোয়া ৬ কোটি টাকা তুলে নিয়ে গেছে সফিক। এরপরও সংশ্লিষ্ট্র দপ্তর থেকে বার বার তাগাদা দেয়ার পরও তিনি কাজ শেষ করছেন না। এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, স্কুলগুলোর কাজ শেষ করে ৯ মাসের মধ্যে বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও প্রায় দেড় বছর পার হতে চললেও এখনও কাজ শেষ হয়নি।
আরও জানা গেছে, ঠিকাদার সফিকুর রহমান তার প্রতিষ্ঠান ছাড়াও অন্যান্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যবসা করে আসছেন। মেসার্স সেলিম এন্ড ব্রাদার্স নামের সাহাব উল্যার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সে কাজ করেন তিনি। ওই লাইসেন্সের অধিনে কোম্পানীগঞ্জের রামপুর ইউনিয়নের বাহার মাস্টার সড়কের ৮শ মিটার নতুন সড়কের কাজ চলমান রয়েছে। এ সড়কটিতে নিম্নমানের কাজের অভিযোগ পাওয়ায় গত ২৬নভেম্বর সরেজমিনে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী’সহ একটি দল কাজ পরিদর্শনে যান।
পরে পরিদর্শন শেষে, সড়কটিতে ডব্লিউবিএম এর কম্পেকশন স্পেসিফিকেশন, ওভার সাইজ খোয়া ব্যবহার এবং সোল্ডারের মাটি স্পেসিফিকেশন মোতাবেক না দেয়ায় ঠিকাদার সফিকুর রহমানকে গত ২৭ নভেম্বর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আজাহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ৩৮১৪নং স্মারকে একটি কারন দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। একই সাথে স্বাক্ষর পরবর্তী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে ওই সড়কের কাজ সংশোধন করে উপজেলা প্রকৌশলীর মাধ্যমে নির্বাহী প্রকৌশলীকে অবগত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো।
অভিযোগ রয়েছে, কারনদর্শানোর নোটিশের জবাব না দিয়ে ঠিকাদার সফিকুর রহমান উপজেলা এলজিইডি’র ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে সংস্থার সুনাম ক্ষুন্ন এবং হয়রানী করছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার সফিকুর রহমান সব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, আমি ৬টি বিদ্যালয়ের কাজ করছি, তার কাজ শেষ পর্যায়ে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সেগুলো সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে বুঝিয়ে দিতে পারবেন বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, সেলিম এন্ড ব্রাদার্স এর হয়ে তিনি একটি সড়কের কাজ করছেন। তবে সেটির নিম্নমানের কাজ করা হচ্ছে মর্মে এলজিইডি থেকে তাকে কোন চিঠি দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন ।তিনি নিজ লাইসেন্সের বাইরে অন্য লাইসেন্সেও কাজ করেন বলে স্বীকার করেছেন।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) কাজী কামরুল ইসলাম জানান, বাহার মাস্টার সড়কটির কাজে ত্রুটি পাওয়ায় ২৭ নভেম্বর তাকে সংশোধন করার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু অদ্যবধি ঠিকাদার সফিকুর রহমান ওই চিঠি মোতাবেক কিছুই করেননি। উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের মিথ্যা অভিযোগ তুলেছেন। এতে প্রতিয়মান হচ্ছে যে, ঠিকাদার সফিকুর রহমান আওয়ামী দুশাসনের আমলের মতোই কোন নিয়ম না মেনেই তার সকল কাজ এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদার সফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে নিম্নমানের কাজের অনেক অভিযোগ রয়েছে। আমরা সরজমিনে কয়েকটি কাজ পরিদর্শন করেছি। অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে এবং তার কাছে নিম্নমানের কাজের সংশোধন পূর্বক জবাব চাওয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই কাজগুলো আমরা আবার পরিদর্শন করবো। যদি একই সমস্যা পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।