ময়মনসিংহ নগরীর গাঙ্গিনাপাড়ে অবস্থিত ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব। সম্প্রতি ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের নির্বাহী পরিষদ নির্বাচন ২০২৫ এর নির্বাচন পরিচালনা কমিটি হতে একযোগে রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ ৩ জন কর্মকর্তা একযোগে পদত্যাগ করেছেন। তিনজন কর্মকর্তা হলেন রিটার্নিং অফিসার এডভোকেট এ.এইচ.এম খালেকুজ্জামান,ডা.কে.আর. ইসলাম ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার মো.আ.সামাদ আজাদী। গত (২৩ ডিসেম্বর) ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক বরাবর তাঁদের স্বাক্ষরিত এ পদত্যাগ পত্র পাঠান।
পদত্যাগপত্রে তাঁরা বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের নির্বাহী পরিষদ এর নির্বাচন পরিচালনা করিয়া আসিতেছি। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের কোন নির্বাচন প্রার্থী কিংবা সদস্য নির্বাচন পরিচালনার বিষয়ে এবং আমাদের কার্যক্রমের নিরপেক্ষতা নিয়ে কেহ কোন সময়ই প্রশ্ন তুলে নাই। কিন্তু এবার ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের নির্বাহী পরিষদ নির্বাচন/২০২৫ এর একটি প্যানেলের প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী আমাদের কার্যক্রমের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং বলেছেন যে, আমরা নিরপেক্ষ নই। ইতিমধ্যে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তাকে ফোনে তিনি হুমকি দিচ্ছেন যে, প্রেসক্লাবে সে যেন আর না যায়। এই হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে এ নির্বাচন পরিচালনা কর্মকর্তা ইতিমধ্যেই ময়মনসিংহ কোতোয়ালী থানায় একটি সাধারন ডাইরী (জিডি) করেছেন। ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের প্রার্থীদের নমিনেশন পেপার দাখিলের দিন এক পক্ষের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী তাদের নমিনেশন দাখিল করে সেই কক্ষেই তালা দিয়ে কিছু বহিরাগত লোক নিয়ে অন্য কেহ যেন কোন নমিনেশন পেপার দাখিল করতে না পারে তার বাধার সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার স্বয়ং প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে প্রেসক্লাবের চলমান সাধারণ সম্পাদক অমিত রায়ের উপস্থিতিতে অপর পক্ষের নমিনেশন পেপারে স্বাক্ষর ও তারিখ দিয়ে তা গ্রহণ করেন। এসময় প্রেসক্লাবের হিসাব রক্ষকের কক্ষে যাওয়ার চেষ্টা করলে ওই সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর মাধ্যমে বাধাগ্রস্থ হন। উল্লিখিত পরিস্থিতিতে আমরা নির্বাচন পরিচালনা কার্যক্রম করতে নিরাপদবোধ করছিনা। বিধায় আমরা নির্বাচন পরিচালনা কমিটি হইতে একযোগে ০৩ (তিন) জন কর্মকর্তা পদত্যাগ করিলাম।
এ ঘটনায় সৃষ্ট উত্তেজনা সংঘর্ষে গড়াতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। তথ্য মতে, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবের নির্বাহী পরিষদ নির্বাচনের লক্ষ্যে ২৭ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের তারিখ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
এদিকে,৫ই আগষ্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর জাতীয় প্রেসক্লাবসহ সারাদেশের সকল প্রেসক্লাব ফ্যাসিস্টদের হাত থেকে মুক্ত হলেও ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে এখনো সেই ফ্যাসিস্ট সিন্ডিকেটের হাত থেকে রক্ষা পায়নি।প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পদাধিকার বলে সভাপতি জেলা প্রশাসক। তবে স্থানীয় সাংবাদিকদের দীর্ঘদিনের আন্দোলনে বর্তমান ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক এ প্রেসক্লাবের সভাপতি হিসেবে থাকবেন না বলে জানিয়েছেন। এবং ময়মনসিংহে যোগদানের পর নতুন জেলা প্রশাসক এখন পর্যন্ত প্রেসক্লাবের কোন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেননি বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
সূত্র জানায়, বিভাগীয় নগরী হওয়ায় ময়মনসিংহে সাংবাদিকদের সংখ্যাও ব্যাপক হারে বাড়ছে। তবে পেশাদার সাংবাদিকদের সংগঠন ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে অ-সাংবাদিক (আইনজীবী, ব্যবসায়ী, সরকারি চাকরিজীবি) থাকায় গঠনতন্ত্র সংশোধনসহ পেশাদার সাংবাদিকদের প্রেসক্লাবে অন্তর্ভূক্তসহ এ প্রেসক্লাবটি সংস্কারের জন্য স্থানীয় বঞ্চিত সাংবাদিকরা বিভিন্ন দাবি জানিয়েছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় ২৪ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব সংস্কারে গঠিত কমিটির আহ্বায়ক মোঃ শামসুল আলম খান ও সদস্য সচিব আজগর হোসেন রবিনের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক সাংবাদিক ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে অবস্থান করে ক্লাবের নির্বাহী কমিটির সঙ্গে এক মতবিনিময় করেন। মতবিনিময় সভায় মাঠ পর্যায়ের সাংবাদিকদের ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে অন্তর্ভূক্ত করা এবং প্রেসক্লাব সংস্কার শেষে সকল সাংবাদিকদের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আহ্বান জানান।
কোতোয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সফিকুল ইসলাম খান বলেন, প্রেসক্লাবে নির্বাচনের ঘটনায় বিভিন্ন হুমকির অভিযোগ এনে সাংবাদিক বাবুল হোসেন একটি জিডি করেছেন। আমরা তদন্ত করছি। এসআই সোলাইমান এর দায়িত্বে আছেন।