দুই বাহু বাড়িয়ে আছে সুন্দরবন পর্যটকদের আনাগনা কম

Daily Inqilab কালিগঞ্জ সাতক্ষীরা) উপজেলা সংবাদদাতা

০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৪৫ পিএম | আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩:৫৩ পিএম

সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি মৎস্য ও বণ্যপ্রাণীর প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১ জুন-৩১ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্ব ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন টানান তিন মাস বন্ধ থাকে। এসময়ে পর্যটক, বাওয়ালী, মৎস্যজীবী সবার যাতায়ত ছিলো নিষিদ্ধ। মাসের খনি সন্দরবন এলাকা হাজারো মৎস্যজীবীর আয়ের উৎস্য। ফলে সুন্দরবনের নদী খালে মাছ ধরা ও পর্যটকদের যাতায়াত নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বনবিভাগ।

 

তিন মাস বন্ধ থাকার পর সুন্দরবন উন্মুক্ত হলেও পর্যটকের দেখা মিলছে না। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) এক সপ্তাহে সুন্দরবন ভ্রমণে তেমন পর্যটক আসেনি। বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, এখন পর্যটক মৌসুম নয়, তাই পর্যটক আসছেন না।

 

পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, তিন মাস বন্ধ থাকার পর পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হলেও তেমন পর্যটক আসছে না। এখন নদী উত্তাল এবং শীত মৌসুম। তবে নভেম্বর থেকে মার্চ পাঁচ মাস হচ্ছে পর্যটক মৌসুম। তখন পর্যটকদের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হয়।

 

তিনি আরও বলেন, সুন্দরবন উন্মুক্ত করা হলেও প্রথম দুই দিনে ২০০ পর্যটক এসেছেন। এ সময়ে জনপ্রতি ৪৬ টাকা হারে ৯ হাজার ২০০ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। সুন্দরবন ভ্রমণ করে পর্যটকরা খুশি।

 

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার থেকে আসা কামরুজ্জামান নামে আরেক পর্যটক বলেন, অনেকদিন পর পরিবার নিয়ে সুন্দরবন দেখতে এলাম। সুন্দরবন যে এত সুন্দর বাস্তবে না আসছে বোঝা যেতো না। অনেক উপভোগ করেছি। রাজশাহী বিভাগ থেকে আসা আবুল কালাম নামে এক পর্যটক বলেন, তিন মাস বন্ধ থাকার পর সুন্দরবনে ঘুরতে আসলাম। অনেক পশু-পাখি এবং নানারকম গাছপালা দেখলাম। সুন্দরবন ঘুরে মুগ্ধ সবাই।

 

১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট এই তিন মাস মূলত বনের গাছপালা, বন্যপ্রাণী-পশুপাখি ও মাছের প্রজনন মৌসুম। একারণে প্রতি এসময়টাতে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বন বিভাগ। প্রজনন মৌসুম নির্বিঘ্ন হওয়ায় এক নতুন রূপে এখন সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি। বৈরী আবহাওয়া এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে সুন্দরবনে দেখা মিলছে না পর্যটকদের। এমন অবস্থায় ট্রলার ঘাটগুলোতে অলস সময় পার করছেন ট্যুর অপারেটর, ট্রলার শ্রমিকসহ পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।

 

ট্যুর অপারেটররা বলছেন আবহাওয়া ভালো হলে পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা ও দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় গত বছরের তুলনায় এই বছর পর্যটকদের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত কম। করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, সুন্দরবনকে পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে সুন্দরবনের করমজল পর্যটনকেন্দ্রে তৈরি করা হয়েছে ঝুলন্ত ব্রিজ, তথ্যকেন্দ্র, ফুট ট্রেইলার, ওয়াচ টাওয়ার ও প্রশস্ত রাস্তাসহ নান্দনিক সব স্থাপনা।

 

ঢেলে সাজানো হয়েছে সুন্দরবনের অন্যান্য পর্যটন স্পটগুলোও। নতুন রূপে সাজানো করমজলসহ সুন্দরবনের পর্যটন স্পটগুলোতে স্থানীয় কিছু লোকজন ও পর্যটকরা ঘুরছেন। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা প্রস্তুত আছি। বন বিভাগের দাবি, নতুন নতুন সব স্থাপনা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে সুন্দরবনকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলবে। সেসঙ্গে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সুন্দরবনে পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গ কিলোমিটার, যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ।

 

সুন্দরবনে প্রায় ২৮৯ প্রজাতির স্থলজ প্রাণী বাস করে। এছাড়া প্রায় ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ ২১৯ প্রজাতির জলজ প্রাণী রয়েছে। বন বিভাগ জানায়, সুন্দরবনের ৩১৯ প্রজাতির মাছ, ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা এবং ১০৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী-পশুপাখির বেশির ভাগেরই প্রজননকাল ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট। এই সময়ে বনের গাছপালার বীজ থেকে চারা গজায়, এতে গাছের সংখ্যা বেড়ে থাকে। আর প্রজননের ফলে কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায় প্রাণিজ ও জলজ সম্পদ।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সচিবালয়ের গেটে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া-পুলিশের ফাঁকা গুলি
দুদক কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার তিন ভুয়া কর্মকর্তা রিমান্ডে, হত্যা মামলায় যুবলীগ নেতা সোহাগ রিমান্ডে,
শিগগিরই চালের দাম কমে আসবে : বাণিজ্য উপদেষ্টা
ঢাবিতে হাসিনার ‘ডামি নির্বাচন’ প্রদর্শনী
ঈশ্বরদীতে যুবদল কর্মী গুলিবিদ্ধ
আরও

আরও পড়ুন

সচিবালয়ের গেটে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া-পুলিশের ফাঁকা গুলি

সচিবালয়ের গেটে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া-পুলিশের ফাঁকা গুলি

ফ্রান্সের উগ্র ডানপন্থী রাজনীতিবিদ মারি লা পেনের মৃত্যু

ফ্রান্সের উগ্র ডানপন্থী রাজনীতিবিদ মারি লা পেনের মৃত্যু

দুদক কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার তিন ভুয়া কর্মকর্তা রিমান্ডে, হত্যা মামলায় যুবলীগ নেতা সোহাগ রিমান্ডে,

দুদক কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তার তিন ভুয়া কর্মকর্তা রিমান্ডে, হত্যা মামলায় যুবলীগ নেতা সোহাগ রিমান্ডে,

শিগগিরই চালের দাম কমে আসবে : বাণিজ্য উপদেষ্টা

শিগগিরই চালের দাম কমে আসবে : বাণিজ্য উপদেষ্টা

কুরস্কে ২৪ ঘন্টায় ইউক্রেনের ৪৮৫ সেনা নিহত

কুরস্কে ২৪ ঘন্টায় ইউক্রেনের ৪৮৫ সেনা নিহত

পশ্চিম তীরে বন্দুক হামলায় ৩ ইসরাইলি নিহত

পশ্চিম তীরে বন্দুক হামলায় ৩ ইসরাইলি নিহত

ঢাবিতে হাসিনার ‘ডামি নির্বাচন’ প্রদর্শনী

ঢাবিতে হাসিনার ‘ডামি নির্বাচন’ প্রদর্শনী

জুলাই গণহত্যা: হাসিনাসহ ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল

জুলাই গণহত্যা: হাসিনাসহ ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল

শিগগিরই চালের দাম কমে আসবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

শিগগিরই চালের দাম কমে আসবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

গাজায় ফিলিস্তিনিদের ত্রাণ সহযোগিতা দিচ্ছে হাফেজ্জী চ্যারিটেবল সোসাইটি

গাজায় ফিলিস্তিনিদের ত্রাণ সহযোগিতা দিচ্ছে হাফেজ্জী চ্যারিটেবল সোসাইটি

ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতি যুদ্ধ নাকি বন্ধুত্বের পক্ষে

ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতি যুদ্ধ নাকি বন্ধুত্বের পক্ষে

মিথ্যা ন্যারেটিভ ভেঙ্গে দেয়া আমাদের ইতিহাসের দায়বদ্ধতার অংশ

মিথ্যা ন্যারেটিভ ভেঙ্গে দেয়া আমাদের ইতিহাসের দায়বদ্ধতার অংশ

বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে

এক-পঞ্চমাংশ এইচ-১বি ভিসাই ভারতীয় সংস্থাগুলোর কাছে

এক-পঞ্চমাংশ এইচ-১বি ভিসাই ভারতীয় সংস্থাগুলোর কাছে

গ্রীনল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন ট্রাম্প জুনিয়র

গ্রীনল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন ট্রাম্প জুনিয়র

মক্কা-মদিনায় ভারী বৃষ্টিতে বন্যা

মক্কা-মদিনায় ভারী বৃষ্টিতে বন্যা

ভারতে চীনের পরিবর্তে বাড়ছে জাপানি বিনিয়োগ

ভারতে চীনের পরিবর্তে বাড়ছে জাপানি বিনিয়োগ

পশ্চিম তীরে ৩ ইসরাইলি নিহত

পশ্চিম তীরে ৩ ইসরাইলি নিহত

যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা একীভূত করার প্রস্তাব ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা একীভূত করার প্রস্তাব ট্রাম্পের

অস্ট্রিয়ায় সরকার গঠন করছেন অতি ডানপন্থি নেতা কিকল

অস্ট্রিয়ায় সরকার গঠন করছেন অতি ডানপন্থি নেতা কিকল