জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে রাজনৈতিক অস্থিরতা, শিক্ষার্থী জিহানের ওপর হামলার ঘটনায় প্রশাসনের নীরব ভূমিকার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে তারা।
সোমবার (৬ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইন্স ফ্যাকাল্টি থেকে শুরু হয়ে কলা ভবন ঘুরে এসে ভাস্কর্য চত্বরে এসে এ সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় 'শিক্ষা ফ্যাসিজম, একসাথে চলে না' ; 'আমার ভাইকে মারল কেন, প্রশাসন জবাব চাই' ; 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস' এসব স্লোগান দেন তারা।
সমাবেশে বখতিয়ার ইসলাম বলেন, আমাদের সহপাঠী জিহানকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অত্যাচার করেছে। কিন্তু এবিষয়ে প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। প্রশাসনের এই আচরণ ফ্যাসিস্টের আমলে ছাত্রলীগের হামলার বিচার না হওয়ার সমতুল্য। প্রশাসন থেকে যদি কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে আমরা আরো জোরদার আন্দোলন করবো।
সিয়াম আন নুফাইস বলেন, ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জিহানকে মারার ঘটনায় প্রশাসনকে জানানো হয়নি বলে মিথ্যাচার করা হয়েছে। যেখানে প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্ত করা। প্রশাসন ভুলে গেছে এই শিক্ষার্থীদের রক্তের উপর দাঁড়ানো। তারা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপর রাজনৈতিক কর্মীদের দমন-পীড়নের দায়ভার এই প্রশাসনকে নিতে হবে। যদি তা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে যেমন শিক্ষার্থীরা এই প্রশাসনকে চেয়ারে বসিয়েছে তেমন চেয়ার ছাড়তে বাধ্য করবে।
জুনায়েদ মাসুদ বলেন, জুলাইয়ে যারা আন্দোলন করেছে তারা এই কারণে করেনি যেন বিপ্লবোত্তর পরে চাঁদাবাজি, শোডাউন করবে, মামলা দিয়ে টাকার বিনিময়ে মামলা তুলে নিবে। আমি মানবাধিকার সংগঠনের ব্যানারে জিহানকে মারার প্রতিবাদ করতে গেলে সেখানে বিশৃংখলা করার চেষ্টা করা হয়। আমার দায়িত্ব যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় সেখানে আওয়াজ তোলা। কিন্তু আমার আওয়াজকে রুখে দেওয়া চেষ্টা করা হয়। এছাড়া আমাকে আমার সংগঠন নিয়ে ট্যাগিংও করা হয়। এখনও এই ট্যাগিংয়ের রাজনীতি কীভাবে ক্যাম্পাসে চলতে পারে? এই জবাব প্রশাসনকে দিতে হবে।
আসিকুর রহমান বলেন, আমার বড় পরিচয় আমি এই ক্যাম্পাসের ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। কিন্তু একদল রাজনৈতিক কর্মীরা এটা ভুলে যায়। তারা ভুলে গেছে ৫ আগস্টের আগেও ছাত্রলীগের দ্বারা তারাও একইরকম হামলার শিকার হয়েছে। সবচেয়ে বেশি দায় নিতে হবে এই প্রশাসনকে। অভিযোগ উঠার পরেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি তারা। শিক্ষার্থীরা তাদের বসিয়েছে। তারা যদি এই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা না দিতে পারে তাহলে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।
মাসুদ রানা বলেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি সংস্কারের কথা বললেও তা করা হয় নি। সাজিদ, আবু সাইদ মুগ্ধরা কারো তাবেদারী করার জন জন্য রক্ত দেয়নি। ক্যাম্পাস হবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। এই ক্যাম্পাসে অবাধে সুষ্ঠুভাবে সবাই ঘুরে বেড়াবে। কিন্তু তা করতে ব্যর্থ এই প্রশাসন। যদি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা না দিতে পারেন তাহলে যেভাবে দায়িত্বে এসেছেন, সেভাবেই চলে যেতে হবে।
তিনি আরো বলেন, পরবর্তীতে কেউ যদি ক্যাম্পাসে কারো গায়ে তোলে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে তা রুখে দেবো। শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। আমরা চাই দ্রুত এই ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দূর করে ক্যাম্পাসকে স্থিতিশীল করতে হবে। ষড়যন্ত্র ও তাবেদারীর বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। নিরাপদ ক্যাম্পাস আমাদের এক দিনের দাবি নয়। খুনি হাসিনার শাসনামলে ছাত্রলীগ তাড়িয়েছি বুক উচিয়ে লড়াই করার জন্য। আগামীতে যদি পেশী শক্তি ব্যাবহার করে হামলা করে আমরা তার প্রতিবাদ করব।