বরিশাল ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড অ্যলায়েড সায়েন্সেস চিকিৎসা সেবায় ব্যাপক অবদান রাখছে
১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৬ এএম | আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৬ এএম
পরমানু শক্তি কমিশনের ‘বরিশাল ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড অ্যলায়েড সায়েন্সেস’ গত অর্থ বছরে প্রায় ৩৭ হাজার মানুষকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছে। এরমধ্যে শুধু ১৫ হাজার নারী-পুরুষ শিশুর বিভিন্ন চিকিৎসা সহায়তায় অল্ট্রাসোনাগ্রাফী করা হয়েছে। ১৯৮৯ সালে বরিশাল শের এ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বারান্দায় অতি ক্ষুদ্র পরিসরে পরমানু শক্তি কমিশনের বরিশাল ইন্সটিটিউটটি প্রতিষ্ঠার পরে প্রতি বছর হাজার হাজার রোগী বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা সহায়তা লাভ করছেন। ১৯৯৩ থেকে ‘৯৬ সালের মধ্যে হাসপাতাল ক্যাম্পাসে প্রায় ১ একর জমির ওপর ৪তলা নিজস্ব ভবনে ‘বরিশাল ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড অ্যলায়েড সায়েন্সেস’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির পুনর্বাসন আধুনিকায় কাজও প্রায় শেষের পথে।
দক্ষিণাঞ্চলে পরমানু শক্তি কমিশনের একমাত্র এ প্রতিষ্ঠানটিতে সরকার নির্ধারিত সেবামূল্যে বিভিন্ন ধরনের অল্ট্রাসোনোগ্রাফী, টাইফয়েড সহ বিভিন্ন চিকিৎসায় সাইন্টিগ্রাফী, ইন-ভিট্রো এ্যসে এন্ড টাইফয়েড স্টাডিজ, এসপিইসিটি স্পট্যাডিজ সহ বিভিন্ন ধরনের থেরাপী প্রদান করা হচ্ছে। যা বেসরকারি যেকোন প্রতিষ্ঠানের চেয়ে অনেক সাশ্রয়ী।
‘বরিশাল ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড অ্যলায়েড সায়েন্সেস’এ চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি গবেষণা ও শিক্ষা কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে রেডিওইমুনো এ্যাসের মাধ্যমে হরমোনের মাত্রা নির্ণয়, থাইরয়েড সম্পর্কিত হরমোন, প্রজনন হরমোন ও টিউমার মার্কারের আধুনিক ব্যবস্থাও বিদ্যমান রয়েছে। স্পেক্ট গামা ক্যামেরার মাধ্যমে কিডনির কার্যকারিতা নির্ণয়ে রেনোগ্রাম ছাড়াও বোন স্ক্যান, ব্রেইন স্ক্যান, লিভার-স্পিন স্ক্যান, পিত্ত থলি ও হৃদপিন্ডের কার্যকারিতা নির্ণয় সহ সংশ্লিষ্ট আরো বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার সুযোগ বিদ্যমান রয়েছে পরমানু শক্তি কমিশনের বরিশালের কেন্দ্রটিতে।
পাশাপাশি অত্যাধুনিক আল্টাসোনোগ্রাফী ব্যবস্থায় পেটের বিভিন্ন অংশের পরীক্ষা সহ গর্ভস্থ ভ্রনের সার্বিক অবস্থা এবং গর্ভের শিশুর ব্রেইন, থাইরয়েড গ্লান্ড , অন্ডকোষ, স্তন, চক্ষু গোলক সহ টিভিএস পরীক্ষা করা হচ্ছে। একইসাথে ৩ডি ও ৪ডি পদ্ধতিতে গর্ভস্থ শিশুর জন্মগত ত্রটি এবং ফাইব্রোস্ক্যান পদ্ধতিতে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত রোগীর যকৃতের সার্বিক অবস্থা নির্ণয় করা হচ্ছে। কালার ডপলারের মাধ্যমে ক্যরোডিড এবং হাত ও পায়ের রক্ত নালীর দুরূহ পরীক্ষাও এখানে সম্পন্ন হচ্ছে।
বরিশালের ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড অ্যলায়েড সায়েন্সেস’ রোগ নির্ণয়ের পাশাপাশি রোগ নিরাময়েও ব্যাপক অবদান রাখছে। প্রতিষ্ঠানটিতে থাইরয়েড গ্রন্থি, ক্যান্সার ও অতিক্রিয়াজনিত অবস্থায় ‘আয়োডিন-১৩১’ দ্বারা চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীদের পর্যবেক্ষণ সহ চিকিৎসাত্তোর পরবর্তী জীবনের সার্বিক পরামর্শ ও সেবা প্রদান করা হয়ে থাকে। ‘বিটা রেডিয়েশন’এর মাধ্যমে চোখের ‘টেরিজিয়াম’ অপারেশন পরবর্তী অবস্থায় প্রবৃদ্ধি বন্ধে ‘বিটা-রেডিয়েশন’ প্রদান করা হচ্ছে। এমনকি বরিশালের এ প্রতিষ্ঠানটি থেকে ‘স্টেরিলাইজড বোন চিপস’ এবং আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসায় ‘অ্যামনিওটিক ওমেমব্রেন’ সরবারহ করা হয়ে থাকে।
বরিশাল ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড অ্যলায়েড সায়েন্সেস’এ নিয়মিত গবেষণা কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের একাধিক গবেষণার ফলাফল বিভিন্ন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক জার্ণালে প্রকাশের পাশাপাশি বিভিন্ন সেমিনারেও উপস্থাপিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটিতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের থিসিস পর্ব সম্পন্ন সহ আল্ট্রাসোনোগ্রাফী ও নিউক্লিয়ার মেডিসিন-এর ওপর নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে বওে পরিচালক জানিয়েছেন।
এমনকি গত অর্থ বছরে পরমানু শক্তি কমিশনের বরিশাল কেন্দ্রটিতে সরকার নির্ধারিত স্বল্পমূল্যে প্রায় ২২ হাজার রোগীর হরমোন ও ব্লাড স্যাম্পল সংগ্রহ ও পরীক্ষা নিরীক্ষা সম্পন্ন হয়।
তবে জনবল সংকটে প্রতিষ্ঠানটির সেবার ধারায় প্রতিনিয়ত ছন্দপতন ঘটছে। তবে এ সংকট উত্তরণে পরমাণু শক্তি কমিশন চেষ্টা অবাহত রেখেছে বলেও দায়িত্বশীল সূত্রে বলা হয়েছে।
পরমানু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশন বরিশাল সহ দেশের ১৪টি ‘ইন্সটিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন এন্ড অ্যলায়েড সায়েন্সেস’এর মাধ্যমে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ রোগীকে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ‘রেডিও আইসোটোপ’ ব্যবহার করে বিভিন্ন রোগীদের আধুনিক চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। ‘রেডিও আইসোটোপ’ বা তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে নির্গত বিকিরণের ঝুঁকির বিষয়ে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা অবলম্বন করে নিরাপদ প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত পরমানু চিকিৎসা পদ্ধতি সারা বিশে^ প্রচলিত ও জনপ্রিয় বলে জানিয়েছে পরমানু শক্তি কমিশন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে বিচ্ছুরিত ‘গামা’ রশ্মি ব্যবহ্রত হয়ে আসছে। আর রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে ব্যবহ্রত হচ্ছে ‘বিটা’কণা। তবে বিজ্ঞানীদের মতে, রোগ নিরাময়ের চেয়ে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রেই এ পদ্ধতি অধিক ফলপ্রসূ বলে প্রমাণিত সত্য। রোগ নির্ণয়ে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ব্যবহারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে সন্ধানী বা ট্রেসার হিসেবে তেজস্ক্রিয় পদার্থ এত স্বল্প পরিমাণে ব্যবহ্রত হয়, যা প্রাণীদেহের জীবন ধারা সংক্রান্ত প্রণালীতে বিশেষ কোন পরিবর্তন ঘটে না। এমনকি রোগ নির্ণয়ে ব্যহৃত স্বল্প পরিমাণ তেজস্ক্রিয় পদার্থ সংক্রান্ত বিকিরণ প্রয়োগ-এর পরিমাণ রেডিওলজি বা এক্স-রে ’তে ব্যবহ্রত বিকিরণ প্রয়োগের তুলনায়ও অনেক কম বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে । জানিয়েছে পরমাণু শক্তি কমিশনের দায়িত্বশীল সূত্র।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
কালীগঞ্জের পল্লীতে টমেটো, বেগুন ও সবজিসহ বিভিন্ন গাছ নিধন করেছে দুর্বৃত্তরা
অধিক গাড়িতে সারচার্জ খড়গ
সীমান্ত থেকে বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেল বিএসএফ
অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের দ্বিতীয় রাউন্ডেই বিদায় অলিম্পিক সোনাজয়ীর
সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ পতিত স্বৈরাচারের ৯ দোসর নতুন মামলায় গ্রেপ্তার
মারা গেছে ইনফ্লুয়েন্সার তনির স্বামী
সিটির ড্রয়ের রাতে পয়েন্ট হারাল লিভারপুল-চেলসিও
পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করে যাচ্ছে: আইজিপি
রাধানগর উচ্চ বিদ্যালয় এডহক কমিটির সভাপতি হলেন মাহাবুব চেয়ারম্যান
হাজীগঞ্জে ভেকু দিয়ে কৃষি জমির মাটি কাটার হিড়িক
৪ হাজার বাংলাদেশি কর্মী নেয়ার ঘোষণা দিলো গ্রিস
গাছ বিক্রির টাকা আত্মসাতের মামলায় ডেসটিনির এমডিসহ ১৯ জনের কারাদণ্ড
খুঁজে খুঁজে একে একে সবাইকে ধরা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
বিএনপি নির্বাচনের জন্য ‘অস্থির’ কেন?
বরিশালে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকগন মুনফা সহ বিনিয়োগকৃত আসল অর্থ তুলতে পারছেন না
মানিকগঞ্জে ক্যান্সার আক্রান্ত দুই সন্তানের জননীকে জবাই করে হত্যা
ভারত কেন এখন তালিবানকে কাছে টানছে ?
মুরাদনগরে ভূমিদস্যুদের আতঙ্ক এসিল্যান্ড
বিশ্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একত্রে কাজ করলেই সফল হবে জাতিসংঘ : ফিলেমন ইয়াং
গুরুদাসপুরে একই গ্রামে প্রবাসীর স্ত্রী ও কলেজ ছাত্রের রহস্যজনক মৃত্যু