ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার একটি গ্রামে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত এক সচিব নিজের জায়গা দখলে নিতে গিয়ে শতবর্ষের অধিক সময় ধরে বসবাসকারী প্রতিবেশী দুটি পরিবার বসতবাড়ি হারানোর শঙ্কায় পড়েছে। এ শঙ্কা মাথায় নিয়ে দিন কাটছেন পরিবার দুটির সদস্যরা। এমন ঘটনা ঘটেছে উপজেলার রাজীবপুর ইউনিয়নের বৃ-দেবস্থান গ্রামে। এ ঘটনায় সচিবের বিরুদ্ধে দুটি পরিবার ঈশ্বরগঞ্জ উপজলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সরেজমিন গিয়ে স্থানীয় বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলামিটার দক্ষিণে বৃ-দেবস্থান গ্রামের অবস্থান। ওই গ্রামে বেশ কয়েকটি হিন্দু পরিবার শতাধিক বছর ধরে বসবাস করে আসছে। একই গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী। সচিবের প্রতিবেশী বেশ কয়েকটি হিন্দু পরিবার নিজেদের পৈতৃক জমিতে বসবাস করছেন। পাশাপাশি সচিবদের সম্পত্তি যুগযুগ ধরে ভোগদখল করে আসছেন। এ ধরনের ভোগদখল বংশানুক্রমিকভাবে চললেও এ নিয়ে কখনও কেউ কিছু বলনেনি।
সম্প্রতি সুবীর কিশোর চৌধুরী সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যান। তিনি গ্রামের বাড়িতে গিয়ে নিজের পরিবারের মধ্যে জমিজমার বিরোধ অবসানের জন্য জমির মাপজোঁক করেন। ভেকু এনে নিজের জমি সমান করার জন্য মাটি কাটা শুরু করেন। এ সময় কিছুটা দূর অবস্তি প্রতিবেশী দুটি হিন্দু পরিবারের বাড়ির ভিটির কিনারাঘেঁষে মাটি কাটা শুরু হয়। এতে বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার শঙ্কায় প্রতিবাদ করেন প্রভাত চন্দ্র জনি দে ও দীপক কুমার ঘোর। বাঁধা প্রদানকারীদের অভিযোগ সচিব নিজের জমি দখলে নেওয়ার সময় তাঁদের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে ও গাছ-পালা কেটে সাবাড় করে দিয়েছেন। এ অবস্থায় তাঁরা তাঁদের বসতবাড়ি হারানাের শঙ্কায় রয়েছেন। উচু মাটি কেটে নিচু করে ফেলায় যে কােন সময় তাঁদের অন্য বসতঘরগুলা ধসে পড়বে বলে আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে সামনে বর্ষা মুওসুমে পানি জমলে ধসে পড়বে ঘরবাড়ি। পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁরা এ ঘটনাটি সচিব সুবীর কিশার চৌধুরীকে জানানাে হলেও তিনি তাঁদের আর্জি শোনেননি। বরং দিন রাত ভেকু দিয়ে আশেপাশের উচু মাটি কেটে ফসলি জমিতে রুপান্তরিত করেছেন।
এ ঘটনায় প্রভাত চন্দ্র দে জানান, প্রায় আশি বছর বয়সের তাঁর বৃদ্ধ বাবা-মা এই বাড়িতেই বসবাস করে আসছেন। এখানেই তাঁর বাবার জন্ম হয়েছে। তাঁর জন্মও এখানে। নিজেদের জমিজমা ছাড়াও বাড়ির আশেপাশে রয়েছে চৌধুরী পরিবারের পরিত্যক্ত জায়গাজমি। এসব জমিতে শতবর্ষ ধরে অনেকেই বসবাস করে আসছে। কি কেউ কখনো প্রশ্ন তোলেন নি। সম্প্রতি সুবীর কিশাের চৌধুরী চাকরি থেকে অবসরে বাড়ি এসে নিজের জমিজমার খোঁজ নিয়ে দখল নেওয়ার চেষ্টা করেন। নিজেদের জমি দখলে নেওয়ার নামে আমাদের সাথে অন্যায় করা হচ্ছে। জোরপূর্বক ঘরবাড়ি ভেঙ্গে দিছেন। তাঁদের বাড়ির আশেপাশের উচু মাটি কেটে নিয়ে নিজের পুকুর ভরাট করছেন।
প্রতিবেশী অশীত কুমার দে (৭৫) বলেন, আমার বাপদাদারাও এখানে বসবাস করে গেছেন। কেউ কিছু বলেননি। এখন কেনো এতো অত্যাচার করা হচ্ছে। ক্ষমতার প্রভাব খাঁটিয়ে সচিব সাহেব আমাদের তাড়াতে চাইছেন। এটার একটা সঠিক সমাধান চাই।
আরতী রানী ঘোর (৭০) বলেন, আমার বিয়ে হইছে প্রায় ৪০ বছর। কখনাে কোন ধরনের আতঙ্কে ছিলাম না। এখন সচিব নিজের জমি দখলে নেওয়ার নাম করে আমাদের উচ্ছেদের পরিকল্পনা করছেন। আমরা এখন আতঙ্ক নিয়ে দিন পার করছি। ভবিষ্যতে কি হয় জানি না।
স্থানীয় বাসিন্দা লাল মিয়া ও লিটন সরকার জানান, সচিব সাহেব অমানবিক কাজ করেছেন। তাঁদের জায়গা তো কেউ দখল নেওয়ার কথা বলেনি। তবে কেনো এতাে বছর পর সচিব এমন কান্ড করেছেন।
সচিবের চাচাতো ভাই সঞ্জয় কিশাের চৌধুরী জানান, তিনি ও তাঁর পরিবার সচিবের বিভিন্ন কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে আছেন। নিজেদের অনেক জমি জোরদখল করে রেখেছেন। তিনি বলেন, থুথু উপরে ফিকলে নিজের শরীরেই পড়ে। তাই কিছু বলতেও পারছি না। এখন আপনেরাই পারেন উনার কর্মকান্ড তুলে ধরতে। তাছাড়া এতোদিন যখন প্রতিবেশীরা আমাদের জায়গায় ছিলো এখন তিনি কেনো তাদের উচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু করছেন তা প্রশবিদ্ধ।
জানতে চাইলে অবসরপ্রাপ্ত সচিব সুবীর কিশোর চৌধুরী বলেন, অনেকদিন তো জায়গা ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছে। এখন আর না। তাই বেহাত হওয়ার আশঙ্কায় জায়গা দখল নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এছাড়া অন্য কিছু না।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. এরশাদুল আহমেদ জানান, তিনি ওই দুই পরিবারের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে স্থানীয় তহশিলদারকে তদন্তের জন্য দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পেলেই পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।