চলছে মহিমান্বিত মাস রমজান। দিন কয়েক বাদেই মুসলিম সম্প্রদায়ের সবথেকে বড় উৎসব ঈদুল ফিতর। ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। এই উৎসবে পরিবারের সদস্যদের মুখে মাংস দিয়ে দুমুঠো ভাত কিংবা পছন্দসই খাবার তুলে দিতে চায় সবাই। সে চিন্তা থেকেই ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে সুলভ মূল্যের হাটে ১৮ টি বড় আকারের গরু জবাই করা হয়েছে। শুক্রবার (২৮ মার্চ ২০২৫) ভোর থেকেই শুরু গরু জবাই ও মাংস প্যাকেট তৈরির প্রক্রিয়া। জুমার নামাজের পর থেকে শুরু হয় বিক্রি। এদিন উপজেলা প্রশাসন ও উলামায়ে কেরামদের যৌথ উদ্যোগে জবাইকৃত গরুর মাংস কিনতে হাটে ছিলো ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে,পবিত্র মাহে রমজানে দ্রব্যমূল্য জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সুলভ মূল্যে হাট বসানো হয়। পহেলা রমজান থেকে উপজেলা পরিষদ চত্বরে সুলভ মূল্যের হাটে ৩২টি স্টল বসানো হয়। বাজার হতে তুলনা মূলক কম মূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে হাটে ক্রেতাদের ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মতো। প্রতিদিনেই গরুর মাংস, মুরগির মাংস, সবজি, মাছ, ডিম, তেল, পেঁয়াজ-রসুন, আদা, খেজুর, ডাল, আলু, সেমাই-চিনি, লবণ ও মুড়িসহ অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। রয়েছে আপেল, কমলা, আঙুর, আনারস, তরমুজসহ অনেক রকমের ফল। পছন্দমতো পণ্য সামগ্রী সুলভমূল্যে কিনে নিতে পারছেন অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষরা। কম দামে ব্যাগ ভর্তি এমন বাজার পেয়ে খুশি এসব মানুষ। শুক্রবার জুমার পর থেকে সুলভ মূল্যের হাটে গরুর মাংসের জন্য ছিলো দীর্ঘ লাইন। এদিন ৬৫০ কেজি দরে ২৫০ গ্রাম, ৫০০ গ্রাম ও ১ কেজি প্যাকেটজাত প্রক্রিয়ায় মোট ১৮ টি গরু জবাই করে বিক্রি করা হয়।
ইউএনওর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, উলামায়ে কেরাম ও সামজিক সংগঠনের বাস্তবায়নে এই সুলভ মূল্যের হাট ব্যাপক জমজমাট হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে ব্যাগভর্তি বাজার করে বাড়ি ফেরার পথে কথা হয় ঈশ্বরগঞ্জ পৌর এলাকার বেদেনা খাতুনের সঙ্গে। এসময় তিনি বলেন, বাজারে যে দাম, এই দামে এত কিছু আমার পক্ষে কিইন্যা খাওয়া সম্ভব ছিলো না। কিন্তু ইউএনও স্যারের সুলভ মূল্যের হাট থেকে তুলনামূলক কম টাকায় গরুর মাংস, মাছ, মুরগির মাংসসহ ব্যাগভর্তি সদাই করেছি। ঈদে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে শান্তিতে খেতে পারব। আল্লাহ ইউএনও স্যারকে উত্তম বদলা দান করুন।
হাটে মাংস কিনতে আসা উপজেলার বাসিন্দা আব্দুল জব্বার, গণি মিয়া,রুবেল মিয়া ও শফিকুল ইসলামসহ অন্তত আরও ১০ জন ক্রেতা বলেন, সুলভ মূল্যের হাটে সব ধরণের পণ্য দামের তারতম্য অনুযায়ী যথাক্রমে ১০,২০,৩০,৫০,১০০ ও ২০০ টাকা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, এখানে ৬৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। দাম কমের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো-এখানে ফ্রেশ মাংস পাওয়া যাচ্ছে। একদিনে ১৮ গরু জবাই করে সুলভ মূল্যে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত ঈশ্বরগঞ্জে ইতিহাস হয়ে থাকবে। আমরা সবাই কম দামে ফ্রেশ মাংস কিনতে পেরে খুশি। এজন্য উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনেক ধন্যবাদ জানাই।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা মো. এরশাদুল আহমেদ বলেন, রোজা উপলক্ষে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে সুলভ মূল্যের হাটে মাছ, মাংস, ডিম, শাক-সবজি, নানা জাতের ফল ও ইফরতার সামগ্রীসহ বিভিন্ন ধরণের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সুলভ মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বিনা লাভে উপজেলা পরিষদের উদ্বৃত্ত তহবিল থেকে ভর্তুকি মূল্যে এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও ঈশ্বরগঞ্জ প্রেসক্লাবের বাস্তবায়নে ৩২ স্টলে এসব পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে শুক্রবার উপজেলা প্রশাসন ও উলামায়ে কেরামদের যৌথ উদ্যোগে ১৮টি গরু জবাই করে ৬৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়েছে। পুরো রমজান মাস জুড়েই নিম্ন আয়ের মানুষসহ সকলের জন্য এই বাজার চালু ছিলো। মাসব্যাপী বাজার পরিচালনায় যারা প্রশাসনকে সহযোগিতা করেছেন সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ।