সুরমার ভাঙনে ভিটেমাটি হারানোর শঙ্কায় কয়েক শত শত পরিবার

Daily Inqilab দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা

০৫ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪০ পিএম | আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪০ পিএম

সুরমা নদীর অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হওয়ার পথে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রাম। ইতিমধ্যে সোনাপুর গ্রামের বিস্তীর্ণ ফসলি জমি, গাছপালা, রাস্তা, কবরস্থান, খেলার মাঠ ও শতাধিক বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গ্রামের আরও অন্তত দুই শতাধিক বসতভিটা ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে । ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আরও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী।

 

 

সরেজমিন দেখা গেছে, সুরমা নদীর পানির স্রোতের সঙ্গে কয়েকটি স্থানে পাড় ভেঙে পড়ছে। নদীর তীরের বাসিন্দাদের অনেকেই নিজেদের ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যত্র নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছেন। কেউ কেউ নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় বসতভিটার গাছপালা কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে অনেক গাছপালা ভেঙে নদীর পানিতে পড়েছে। কয়েক বছর ধরেই সোনাপুর গ্রামে চলছে ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়ার কর্মযজ্ঞ। ভাঙন আবার অনেকের বসতভিটা পর্যন্ত চলে এসেছে। উপজেলায় সুরমা নদীর একাধিক সাইটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের শত কোটি টাকার নদী ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও সবচেয়ে ভাঙন কবলিত সোনাপুর গ্রাম প্রকল্পের আওতাভুক্ত হয়নি। ফলে ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে সোনাপুর গ্রামের বাসিন্দারা।

 

 

 

সোনাপুর গ্রামের বয়োবৃদ্ধা ছয়দুন নেছার (৭০) বসতঘর ভাঙন-কবলিত স্থান থেকে মাত্র কয়েক ফুট দূরে। এখন কী করবেন, জানেন না তিনি। ভাঙনের আশঙ্কা নিয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে তীরে বসে আছেন তিনি। চোখেমুখে স্পষ্ট চিন্তার ছাপ। নিজের বসতঘরটি ভেঙে গেলে আর যাওয়ার জায়গা নেই বলে জানান তিনি।

 

 

কৃষক আনোয়ার আলী ও নূর ইসলামের মতে, পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। গত দশ বছরে প্রায় শতাধিক বসতবাড়ি চোখের সামনে নদীতে চলে গেছে।

 

 

চার সন্তানের জননী খালেদা আক্তার নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে এখন পরিবার পরিজন নিয়ে থাকেন অন্যের জমিতে। নদীর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি জানান, একসময় বসতঘর, ফসলি জমি সবই ছিলো। চোখের সামনেই সবকিছু গিলে খেয়েছে সুরমা নদী। কিছুই করতে পারেননি তিনি। একইভাবে পাঁচ সন্তানের জননী নাজমিন আক্তারও আক্ষেপ নিয়ে জানান, আমাদের খোঁজ খবর কেউ রাখেনা। জমিজমা, বসতবাড়ি হারিয়ে এখন সামান্য মাথাগুজার ঠাঁইটুকু নিয়েও দুশ্চিন্তায় থাকি সারাক্ষণ। কখন জানি এইটুকুও বিলীন হয়ে যায় সুরমা নদীতে!

 

 

আফতাব উদ্দিন জানান, পৈতৃক সূত্রে পাওয়া তিন কেয়ার জমি ছিলো তাঁর। ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে এখন কেবলমাত্র তাঁর আধ কেয়ার ভিটেজমি অবশিষ্ট আছে। গ্রামের প্রবীণ মুরুব্বী মোঃ জমশেদ আলী জানান, গ্রামের বসতবাড়ি, ফসলিজমি, খেলার মাঠ, সামাজিক কবরস্থান সবকিছুই সুরমা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রায় চারশো বছরের পুরনো এই সোনাপুর গ্রামটি এখনই রক্ষার কোনো উদ্যোগ না নিলে একসময় পুরো গ্রাম নদীগর্ভে হারিয়ে যাবে। গ্রামবাসীরা উদ্বাস্তু হয়ে পড়বে। সরকারিভাবে চলমান নদী ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পে সোনাপুর গ্রামকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তিনি।

 

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের দোয়ারাবাজার পওর উপ-বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (অঃ দাঃ) মোঃ শমশের আলী দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ‘সুরমা নদী ভাঙন প্রতিরোধে ইতোমধ্যে দোয়ারাবাজার উপজেলায় প্রায় শতকোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে সুরমা নদীর একাধিক সাইটে আরো কিছু প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। সোনাপুর গ্রামসহ দোয়ারাবাজারের আরো কয়েকটি ভাঙন কবলিত এলাকা আমাদের নজরে আছে। আগামীতে নতুন প্রকল্পে এসব এলাকাকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।'

 


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

টঙ্গীতে র‌্যাবের অভিযান মহানগর তাঁতীলীগের  যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ ৫জন গ্রেফতার
হিলিতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা
দাউদকান্দিতে মাদ্রাসায় সংবর্ধনা ও দোয়া মাহফিল
সদরপুরে জাটকা রক্ষার অভিযানে ৪০০ মিটার অবৈধ বাঁশের বাঁধ উচ্ছেদ
সালথায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৪০
আরও
X

আরও পড়ুন

টঙ্গীতে র‌্যাবের অভিযান মহানগর তাঁতীলীগের  যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ ৫জন গ্রেফতার

টঙ্গীতে র‌্যাবের অভিযান মহানগর তাঁতীলীগের  যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকসহ ৫জন গ্রেফতার

হিলিতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা

হিলিতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা

সুন্দরবনে ডাকাতদের কবল থেকে ছয় নারীসহ ৩৩ জেলে উদ্ধার

সুন্দরবনে ডাকাতদের কবল থেকে ছয় নারীসহ ৩৩ জেলে উদ্ধার

ইয়েমেনের বন্দরশহরে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা : নিহত ১৬

ইয়েমেনের বন্দরশহরে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা : নিহত ১৬

গাজায় অভিযানে আপত্তি, পাইলটসহ বিমানবাহিনীর ৯৭০ কর্মীকে বহিষ্কারের হুমকি ইসরাইলের

গাজায় অভিযানে আপত্তি, পাইলটসহ বিমানবাহিনীর ৯৭০ কর্মীকে বহিষ্কারের হুমকি ইসরাইলের

শহীদদের রক্তের সাথে কোন আপোষ বরদাস্ত করা হবে না: ইশরাক

শহীদদের রক্তের সাথে কোন আপোষ বরদাস্ত করা হবে না: ইশরাক

মেসির জোড়া গোলে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনে সেমিতে মায়ামি

মেসির জোড়া গোলে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনে সেমিতে মায়ামি

সৌদি আরবে নতুন ১৪টি তেল ও গ্যাসের খনির সন্ধান

সৌদি আরবে নতুন ১৪টি তেল ও গ্যাসের খনির সন্ধান

দাউদকান্দিতে মাদ্রাসায় সংবর্ধনা ও দোয়া মাহফিল

দাউদকান্দিতে মাদ্রাসায় সংবর্ধনা ও দোয়া মাহফিল

করতোয়া নদীর ১০.৭৫ একর জমি উদ্ধার

করতোয়া নদীর ১০.৭৫ একর জমি উদ্ধার

ভিলাকে হারিয়ে সেমিতে এক পা পিএসজির

ভিলাকে হারিয়ে সেমিতে এক পা পিএসজির

টঙ্গী মাজার বস্তিতে র‍্যাবের অভিযানে শীর্ষ সন্রাসী সৈকত গ্রেফতার

টঙ্গী মাজার বস্তিতে র‍্যাবের অভিযানে শীর্ষ সন্রাসী সৈকত গ্রেফতার

বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী তিন বহুজাতিক কোম্পানি

বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী তিন বহুজাতিক কোম্পানি

ডর্টমুন্ডকে উড়িয়ে সেমির দুয়ারে বার্সা

ডর্টমুন্ডকে উড়িয়ে সেমির দুয়ারে বার্সা

বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী তিন বহুজাতিক কোম্পানি

বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে আগ্রহী তিন বহুজাতিক কোম্পানি

কামরাঙ্গীরচরে গণপিটুনিতে দুই ‘চাঁদাবাজ’ নিহত, এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন

কামরাঙ্গীরচরে গণপিটুনিতে দুই ‘চাঁদাবাজ’ নিহত, এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু

রাণী রূপে মায়ের চরিত্রে আসছে দীপিকা পাড়ুকোন

রাণী রূপে মায়ের চরিত্রে আসছে দীপিকা পাড়ুকোন

ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে ফ্রান্স

ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে ফ্রান্স

ইহুদিবিরোধী পোস্ট দিলেই যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা, গ্রিনকার্ড আবেদন বাতিল

ইহুদিবিরোধী পোস্ট দিলেই যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা, গ্রিনকার্ড আবেদন বাতিল