সর্বত্র প্রশংসিত ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্ব

প্রথমবারে মিয়ানমার ফেরত নিচ্ছে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা, ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের উল্লাস

Daily Inqilab কক্সবাজার ব্যুরো

০৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৩৩ পিএম | আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৩৭ পিএম

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া ১২ লাখ রোহিঙ্গা থেকে প্রথমবারের মতো এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিচ্ছে মিয়ানমার সরকার। এটি অবশ্যই একটি বড় সুখবর।
 
 
বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার অনেক মায়া কান্না করেও রোহিঙ্গাদের ফেরানোর ব্যাপারে মিয়ানামার সরকারকে রাজি করাতে পারেনি। অন্তর্বর্তী সরকারে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস সরকারের দায়িত্ব নিয়ে ৮ মাসের মাথায় চমক দেখান। ইতোমধ্যে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের জন্য তাদেরকে উপযুক্ত হিসেবেও শনাক্ত করেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও এবিষয়ে উল্লাস প্রকাশ করছে রোহিঙ্গারা। 
 
 
গেল শুক্রবার (৪ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের অফিশিয়াল ফেইসবুক পেইজে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। রোহিঙ্গা সংকটের দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের পথে একটি বড় পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।
 
 
শুক্রবার ব্যাংককে ষষ্ঠ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে মিয়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান শিউ বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমানের কাছে এ তথ্য তুলে ধরেন। ২০১৭ সালে মিয়ানমার বাহিনীর নির্যাতনের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ছয় দফায় এ মূল তালিকাটি মিয়ানমারের কাছে সরবরাহ করেছিল। এছাড়া আরও ৭০ হাজার রোহিঙ্গার চূড়ান্ত যাচাইকরণের জন্য তাদের ছবি ও নাম এখনো যাচাই-বাছাই বাকি রয়েছে। 'মূল তালিকায় থাকা বাকি পাঁচ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গার যাচাইকরণ দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করা হবে বলেও নিশ্চিত করেছে মিয়ানমার।
 
 
বৈঠকে হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান মিয়ানমারে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানান এবং বলেন, বাংলাদেশ দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য আরও মানবিক সহায়তা পাঠাতে প্রস্তুত। সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন প্রসঙ্গটি একাধিক দফায় উত্থাপন করেছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
 
 
এদিকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, মিয়ানমারে নৃশংস সংঘাতের অবসানের কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, দেশটিতে সহিংসতার অবসান ঘটাতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে। এ সংকট সমাধানে অবশ্যই বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের পথ নিশ্চিত করতে হবে। গেল মাসে আমি বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফর করেছি। মিয়ানমারজুড়ে সংঘাত-সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার অবসান করতে হবে।
 
 
বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য একটি মানবিক চ্যানেল স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন। যাতে সেখানে বাস্তুচ্যুতি বন্ধ করা যায়। তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে দুর্ভিক্ষের বিষয়ে ইউএনডিপির সতর্কবার্তা রয়েছে। রাখাইন থেকে আরও বাস্তুচ্যুতি বন্ধ করার জন্য জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে সেখানে একটি মানবিক চ্যানেল স্থাপন করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, দীর্ঘস্থায়ী রোহিঙ্গা সংকটের যদি মীমাংসা না হয়, তাহলে সমগ্র অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। তিনি বলেন, বিমসটেক অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, বিশেষ করে রাখাইনের বিরোধপূর্ণ পক্ষগুলোর মধ্যে সমাধানের জন্য সংলাপ চালাতে পারে।
 
 
কুতুপালং ক্যাম্পের মাওলানা আব্দুল আমিন বলেন, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের আহবানে জাতিসংঘ মহাসচিব এন্থেনিও গোতেরেস রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সফর করে তাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার আহবানে তারা খুশি। যত দ্রুত সম্ভব তারা দেশে ফিরে যেতে চায়।
 
 
ক্যাম্প ১০ এর এক মাঝি বলেন, আমরা এতদিন আশ্বস্থ হতে পারিনি মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের প্রচেষ্টায় মিয়ানমার সরকার আমাদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে রাজি। এতে আমরাও খুশি। আমরা দেশে ফিরতে চাই।ক্যাম্প ৮ টের আব্দুর রহমান বলেন, বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্থিরতা সৃষ্টি করে এতদিন মিয়ানমারে ফিরতে বাধা দিচ্ছিল। এখন ওগুলো আর নাই। আমরা এখন দেশে ফেরার জন্য অস্থির।
 
 
এ প্রসঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবসন কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি এখনো আলোচনার পর্যায়ে আছে। তবে সরকারের প্রচেষ্টা ও মিয়ানমারের আন্তরিকতায় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের পথ সুগম হবে বলে আমরা আশা করছি।

বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সদরপুরে জাটকা রক্ষার অভিযানে ৪০০ মিটার অবৈধ বাঁশের বাঁধ উচ্ছেদ
সালথায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৪০
জাতিসংঘ-ওআইসির নিশ্চুপ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন এনপিপির
তানজির ফাহিম জুম্মার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে সিকিউরিটি গার্ড আহত
আরও
X

আরও পড়ুন

ডর্টমুন্ডকে উড়িয়ে সেমির দুয়ারে বার্সা

ডর্টমুন্ডকে উড়িয়ে সেমির দুয়ারে বার্সা

কামরাঙ্গীরচরে গণপিটুনিতে দুই ‘চাঁদাবাজ’ নিহত, এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন

কামরাঙ্গীরচরে গণপিটুনিতে দুই ‘চাঁদাবাজ’ নিহত, এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু

রাণী রূপে মায়ের চরিত্রে আসছে দীপিকা পাড়ুকোন

রাণী রূপে মায়ের চরিত্রে আসছে দীপিকা পাড়ুকোন

ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে ফ্রান্স

ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে ফ্রান্স

ইহুদিবিরোধী পোস্ট দিলেই যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা, গ্রিনকার্ড আবেদন বাতিল

ইহুদিবিরোধী পোস্ট দিলেই যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা, গ্রিনকার্ড আবেদন বাতিল

সদরপুরে জাটকা রক্ষার অভিযানে ৪০০ মিটার অবৈধ বাঁশের বাঁধ উচ্ছেদ

সদরপুরে জাটকা রক্ষার অভিযানে ৪০০ মিটার অবৈধ বাঁশের বাঁধ উচ্ছেদ

সালথায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৪০

সালথায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৪০

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ডিপি ওয়ার্ল্ডের সিইও’র সাক্ষাৎ

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ডিপি ওয়ার্ল্ডের সিইও’র সাক্ষাৎ

ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানালেন ড. মোহাম্মদ ইউনূস

ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানালেন ড. মোহাম্মদ ইউনূস

চীন ছাড়া সব দেশের ওপর আরোপিত নতুন শুল্ক স্থগিত করলেন ট্রাম্প

চীন ছাড়া সব দেশের ওপর আরোপিত নতুন শুল্ক স্থগিত করলেন ট্রাম্প

ট্রাম্পের শুল্কে বাংলাদেশে কমবে প্রবৃদ্ধি, বাড়বে শঙ্কা-অনিশ্চয়তা

ট্রাম্পের শুল্কে বাংলাদেশে কমবে প্রবৃদ্ধি, বাড়বে শঙ্কা-অনিশ্চয়তা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে শীর্ষে সউদী

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে শীর্ষে সউদী

দাঁত ভাঙ্গা জবাব চীনের

দাঁত ভাঙ্গা জবাব চীনের

সেনাবাহিনীতে আরও রোবট নিয়োগ করছে রাশিয়া

সেনাবাহিনীতে আরও রোবট নিয়োগ করছে রাশিয়া

ইমরান খানের সমর্থকদের বিক্ষোভ

ইমরান খানের সমর্থকদের বিক্ষোভ

ইনভেস্টমেন্ট সামিটে টেকসই অর্থনীতির ধারণা উপস্থাপন জামায়াতের

ইনভেস্টমেন্ট সামিটে টেকসই অর্থনীতির ধারণা উপস্থাপন জামায়াতের

বাংলাদেশে সউদী আরবের সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে -স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে সউদী রাষ্ট্রদূত

বাংলাদেশে সউদী আরবের সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে -স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে সউদী রাষ্ট্রদূত

ট্রাম্প ও ওবামার মধ্যে জনপ্রিয়তায় কে এগিয়ে?

ট্রাম্প ও ওবামার মধ্যে জনপ্রিয়তায় কে এগিয়ে?

জাতিসংঘ-ওআইসির নিশ্চুপ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন এনপিপির

জাতিসংঘ-ওআইসির নিশ্চুপ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন এনপিপির