লক্ষ্মীপুরে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেওয়ায় স্কুল শিক্ষকদের মারধর চেষ্টা ও হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে। সাবেক শ্রমিকদল নেতা আব্দুল আজিজ ও তার ছেলে সাবেক ছাত্রদল নেতা সাইয়েদ সারওয়ার শুভ দলের প্রভাব খাটিয়ে ঘটনাটি ঘটায়।
সোমবার (৭ এপ্রিল) দুপুরে সদর উপজেলার দালালবাজার ইউনিয়নের কামানখোলা অলিউল্যাহ মুসলিম পলিটেকনিক একাডেমিতে ঘটনাটি ঘটে। ভূক্তভোগী প্রধান শিক্ষক সেলিম আহমেদ ভূঁইয়া ও সহকারী শিক্ষক সেলিম রেজাকে মারধরের চেষ্টাসহ হেনস্তা করে আজিজ ও তার ছেলে শুভ।
অভিযুক্ত শুভ দালাল বাজার ডিগ্রি কলেজ ব্যবসায় শিক্ষা শাখা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও তার বাবা আজিজ সদর (পশ্চিম) উপজেলা শ্রমিক দলের সাবেক সভাপতি।
সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ঘটনার সময় বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান চলছে৷ এরমধ্যেই শুভ একটি এসএস পাইপ হাতে নিয়ে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে। তার পড়নে লুঙ্গি ও গেঞ্জি ছিল। সে প্রধান শিক্ষকের কক্ষের সামনে এসে ক্ষিপ্ত আচরণ করে। পরে অনুষ্ঠান স্থলে গিয়ে মঞ্চে থাকা শিক্ষক সেলিম রেজাকে ডেকে এনে মারধরের চেষ্টা করে। এতে শিক্ষার্থীরা তাকে ধরে পাইপটি নিয়ে নেয়।
শিক্ষক ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির ভাষ্যমতে, বিদায় অনুষ্ঠানে দাওয়া না পেয়ে শুভ হামলা করতে আসছিল। শিক্ষার্থীরা তাকে না ধরলে শিক্ষক রেজাকে মারধর করতো সে। একপর্যায়ে গালমন্দ করে সে বিদ্যালয় থেকে চলে যায়। পরে পৌনে ২ টার দিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য ও সাংবাদিকদের সামনেই শুভ'র বাবা আজিজ এসে কক্ষে ঢুকে প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আহমেদকে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। একপর্যায়ে তিনি শিক্ষককে ধাক্কাও দিয়েছেন।
শিক্ষক সেলিম রেজা বলেন, এসএস পাইপ হাতে শুভ অনু্ষ্ঠানস্থলে এসে আমাকে মারধরের চেষ্টা করে। শিক্ষার্থীদের বাধায় আমাকে মারতে পারেনি। তবে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করেছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, শুভ আমাকেও মারার জন্য তেড়ে এসেছিল। মারতে না পেরে গালমন্দ করে। তার বাবা আজিজ এসেও আমাকে মারধরের চেষ্টা করেছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য মাকসুদুর রহমান বলেন, শুনেছি বিদায় অনুষ্ঠানে দাওয়া না পেয়ে শুভ শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতে চেয়েছে। ঘটনাটি নিন্দনীয়।
সাঈদ সারোয়ার শুভ অভিযোগের প্রশ্নে উত্তর না দিয়ে বলেন, শিক্ষক সৈয়দ আহমেদ আওয়ামী লীগের দোসর। তাকে বিদ্যালয়ে রাখা যাবে না।
শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণে ছেলের বিচার না করে প্রধান শিক্ষককে মারধরের চেষ্টার অভিযোগে শ্রমিকদলের সাবেক নেতা আব্দুল আজিজ বলেন, প্রধান শিক্ষক আওয়ামী লীগের দোসর। তিনি বিগত দিনে স্কুলের আয় ব্যয়ের হিসাব স্বচ্ছভাবে দেয়নি। সব লুটপাট করে খেয়েছে। এখনো একই কাজ করে যাচ্ছে। তবে শিক্ষকদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া আজকের ঘটনার কোন জবাব দেননি তিনি।
জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, শুভ আমাদের কোন দায়-দায়িত্বে নেই। জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি আবুল হাসেম বলেন, আজিজ আমাদের সাবেক নেতা। তার অন্যায়ের দায়-দায়িত্ব আমাদের না। তার বিরুদ্ধে সদর (পশ্চিম) উপজেলা বিএনপি ব্যবস্থা নিয়ে পারবে।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জামশেদ আলম রানা বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। শিক্ষকরা কোন অভিযোগও দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।