বৈশাখী মেলার জন্য নওগাঁয় তৈরি হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন কাগজের ফুল
১০ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৫০ পিএম | আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৫০ পিএম

আর মাত্র ক’দিন পরেই আসছে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। এই বৈশাখ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবে বৈশাখী মেলা। তবে কাগজের বাহারি ফুল ছাড়া এসব মেলার যেন পূর্ণতা পায় না। কারণ প্রিয়জনকে উপহার দেওয়া কিংবা ছোট্ট সোনামুনিদের খেলনার জন্য কাগজের ফুলের তুলনা নেই। আর তাই কাগজের ফুলের চাহিদা মেটাতে দিন-রাত নানান রঙের বাহারি কাগজ, কাপড় ও শোলা দিয়ে ফুল তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নওগাঁর বিভিন্ন গ্রামের ফুল কারিগররা।
এই বৈশাখকে সামনে রেখে আত্রাই উপজেলার জামগ্রামের ফুলের কারিগররা স্টার, চর্কি, মানিক চাঁদ, গোলাপ, সূর্যমুখী, কিরণমালা, জবা, বিস্কুট, গাঁদাসহ বাহারি ডিজাইনের ফুল তৈরি করছেন। দেখে মনে হয়, এক একটি জীবন্ত ফুল।
প্রায় ৪০ বছর আগে ওই গ্রামের ২-৩টি হিন্দু পরিবার এই ফুল তৈরির কাজ শুরু করেন। তাদের হাত ধরে এখন পুরো গ্রামের প্রধান আয়ের উৎস হয়ে উঠেছে ফুল তৈরি। বর্তমানে প্রায় ৪০০ পরিবার এই পেশায় নিয়োজিত। সংসারের কাজ সামলানোর পাশাপাশি নারী-পুরুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, ছোট-বড় সবাই যুক্ত হয়েছেন এই কাজে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বসা বৈশাখী মেলাগুলোকে রঙিন ও বর্ণিল করতে তাদের এই প্রাণান্ত চেষ্টা। পাশাপাশি স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত মানুষগুলো।
পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে কাকডাকা ভোর থেকে রাত অবধি কাজ করছেন ফুল কারিগররা। গ্রামে ঢুকলেই দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে দল বেঁধে তৈরি হচ্ছে বাহারি ফুল। এসব ফুল পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফেরি করে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। পহেলা বৈশাখে ফুলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকলেও দুই ঈদ, পূজা-পার্বণসহ বিভিন্ন মেলাতেও এগুলো বিক্রি হয়।
কেউ কাপড়, কাগজ, বাঁশসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সকাল থেকে রাত অবধি ফুল তৈরি করছেন। পরিবারে একজন নয়, বরং সবাই মিলে কাজটি করে থাকেন। বিশেষ করে বাড়ির নারীরা সংসারের কাজ শেষ করে তৈরি করছেন বাহারি সব ফুল। খুব বেশি পরিশ্রম না হলেও ধৈর্যের সঙ্গে করতে হয় এই কাজ। ফুল তৈরি শেষে পুরুষরা দেশের ৬৪ জেলাতেই বিক্রির উদ্দেশ্যে রওনা হন। অনেক সময় ১৫-২০ দিন অবস্থান করে ফুল বিক্রি শেষে তারা বাড়ি ফেরেন। এতে করে বছরে একটি বড় অঙ্কের আয় হয় এই পেশাজীবীদের।
জামগ্রামের ফুল কারিগর সুরুজ ইসলাম দুলু বলেন, “প্রথমে আমার দাদা, পরে বাবা এই কাজ করতেন। তারা মারা যাওয়ার পর আমি প্রায় ২০ বছর ধরে এই ফুল ব্যবসা করে আসছি।” এসব ফুল তৈরির উপকরণ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত করে ফুলে রূপান্তরিত করা হয় বলে জানান তিনি। তার স্ত্রী ও দুই সন্তানও এ কাজে সহযোগিতা করেন। পহেলা বৈশাখের এক মাস আগেই শুরু হয় প্রস্তুতি।
ফুল কারিগর মনিরুল ইসলাম কানন জানান, “আমার বাবা ফুল তৈরি ও বিক্রির কাজ করতেন। সেখান থেকেই আমি এই পেশায় এসেছি। এখন স্ত্রী, সন্তান ও বাবা-মাকে নিয়ে আমরা যৌথ পরিবারে এই পেশায় নিয়োজিত। ফুল বিক্রির আয়েই আমাদের সংসার ভালোভাবে চলে।”
৫৫ বছর বয়সী আমিনুল ইসলাম বুলু জানান, “জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই আমি ফুল বিক্রির সঙ্গে জড়িত। জয়পুরহাট, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, রাজশাহীসহ বিভিন্ন এলাকায় বৈশাখী মেলায় ফুল নিয়ে যাই।” সেখানে তাঁবু খাটিয়ে নিজেরাই রান্না-বান্না করে থাকেন। সব ফুল বিক্রি শেষে বাড়ি ফেরেন। পহেলা বৈশাখ, দুর্গাপূজাসহ নানা অনুষ্ঠানে মৌসুমি আয় হয় প্রায় ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
কারিগর আফরোজা বানু বলেন, “ফুল তৈরিতে গৃহিণীদের অবদান সবচেয়ে বেশি। সংসারের সব কাজ শেষ করে আমরা পরিবারের পুরুষদের ফুল তৈরিতে সাহায্য করি। সরকার যদি স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করত, তাহলে আমাদের এ শিল্প আরও এগিয়ে যেত।”
আত্রাই মোল্লা আজাদ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী পূজা বলেন, “বাবা ফুলের ব্যবসা করে আমাদের পড়ালেখার খরচ চালান। আমিও পড়ালেখার পাশাপাশি ফুল তৈরির কাজে সাহায্য করি। এতে আমার হাত খরচ চলে যায়।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামাল হোসেন বলেন, “এটি একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প, যার কদর দেশজুড়ে। শিশু ও সৌখিন মানুষের কাছে এই কৃত্রিম বাহারি ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এই কারিগররা শুধু উপার্জনই করছেন না, বরং বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে বর্ণিল করে তুলতেও বিশেষ ভূমিকা রাখছেন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কুটির শিল্প। এর সঙ্গে জড়িত কারিগরদের উন্নত প্রশিক্ষণ এবং স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের আশ্বাসও দেন তিনি।”
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

গাজায় ইসরাইলি হামলা অব্যাহত, এক দিনে নিহত আরও ৩১ ফিলিস্তিনি

শেরপুরে অসুস্থ বন্য হাতির চিকিৎসা করলো বন বিভাগ!

দুঃশাসনের সময়ে সবচেয়ে বেশি নিপীড়িত হয় শ্রমিক শ্রেণি : অধ্যাপক ড. তামিজী

‘দেশের প্রচলিত আইনে শ্রমিকেরা পুঁজিপতিদের ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছে’

শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় মজুরি কমিশন গঠনের দাবি জাগ্রত পার্টির

শেরপুরে ভারতীয় চিনি, মদ ও গাজাসহ গ্রেপ্তার ৫

জিয়াউর রহমান ছিলেন শ্রমিকদের প্রকৃত বন্ধু: নুরুজ্জামান লিটন

মুরাদনগর নোমান কলেজের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হলেন শরীফুল ইসলাম

বর্ণিল আয়োজনে পটুয়াখালীতে মহান মে দিবস পালিত

পটুয়াখালীতে জেলা শ্রমিক দলের আয়োজনে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালিত

চাকরি হারানো তিন সাংবাদিককে ধুয়ে দিলেন ব্যারিস্টার ফুয়াদ

শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় পাশে থাকবে বিএনপি : ওয়াহাব আকন্দ

গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহত শ্রমিকদের স্মরণ ও আ‘লীগ নিষিদ্ধের দাবি করলো সিলেটে এনসিপি

টঙ্গীতে বজ্রপাতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যু

কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে নতুন টেকনোলজির মাধ্যমে- ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান

বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিসের নতুন কমিটি সভাপতি নাজমুল সম্পাদক আনিসুজ্জামান

মুজিবনগরে কৃষকের ৩০০ ড্রাগন গাছ কেটে দিল দুর্বৃত্তরা

“বিক্ষোভে নতি, রুয়া নির্বাচনে ফেরার আভাস: কালই গঠিত হচ্ছে নতুন অ্যাডহক কমিটি”

সিলেটে লাল পতাকা মিছিল করলো সমাজতান্ত্রিক ফ্রন্ট

সীমান্তে আরাকান আর্মির কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট মানুষ