রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন উদ্যোগের বিপরীতে উখিয়ায় পাহাড় কেটে নতুন করে রোহিঙ্গা শেড নির্মাণ- স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ
১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০১:১১ পিএম | আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০১:১১ পিএম

২০১৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তারিখে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় পাওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। প্রায় ১৪ লক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী উখিয়া টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার। তবে এ পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকে তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি, অধিকন্তু লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটেছে।
গত কিছুদিন পূর্বে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। তবে কিছু সংস্থা ও মহল এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার খবরে যেন বেজাই অখুশি। উল্টো নতুন করে রোহিঙ্গাদের দেশে অনুপ্রবেশ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটেছে। সেসব নতুন রোহিঙ্গা, রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও তার আশে পাশে স্থানীয়দের আবাস স্থলে অবস্থান করছে বলে অভিযোগ সচেতন মহলের। আর এসব দালালদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সুত্রে জানা যায়, গত কয়েক মাসে কৌশলে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা ফের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। তারা টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। ইউএনএইচসিআরের খাতায় তাদের নাম লিপিবদ্ধ হয়েছে। তারা ত্রাণ সামগ্রীও পাচ্ছে। কিন্তু সরকারের রেজিস্ট্রারে তাদের উদ্বাস্তু হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়নি। ওই রোহিঙ্গাদের দেড়শ’ পরিবারের জন্য ‘সাওয়াব’ নামক একটি এনজিওটি প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে শেড তৈরি করে চলেছে। আর এই শেড নির্মাণকে কেন্দ্র করে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় লোকজন।
সরজমিনে দেখা যায়, নতুন করে ১৪ নম্বর রোহিঙা ক্যাম্পে কাটাতারের সাথে লাগোয়া ১২২টির অধিক শেড নির্মাণ করা হয়েছে । যা ২০০৮ সালের সৃজিত বন বিভাগের সামাজিক বনায়নের জায়গা জলধার হিসেবে ছিল। উক্ত জলধার ভরাট করে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়। নির্মাণের কাজ করছে ‘সাওয়াব নামের একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও)’। নতুন করে তৈরি রোহিঙ্গা পল্লীটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘আমেনা ভিলেজ’।
স্থানীয় সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের একজন জনৈক রফিক সওদাগর দাবি করেন, ইতিমধ্যে অনেক রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ায় খালি হওয়া শেডগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে এখনো। সেখানে স্থান না দিয়ে নতুন রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন শেড নির্মান কীসের ঈঙ্গিত? আসলেই কী তাদের জন্য নতুন শেড তৈরি করার খুব দরকার ছিল? স্থানীয়রা পাহাড়, বনভুমি উজসড় করে নতুন শেড নির্মাণ করার কাজকে প্রত্যাবাসনের বিপক্ষে একটি চরম ব্যবস্থা বলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
সামাজিক বনায়নের অংশীদার সা্হাব উদ্দিন বলেন, গত ৮ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় নতুন করে আবারও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় না দিতে সচেতন মহল সরকারের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তিনি আরো বলেন, আমরা দ্রুত রোহিঙ্গাদের তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন চাই। নতুন করে রোহিঙ্গা পুর্ণবাসনের লক্ষ্যে শেড নির্মান করা ঘোষিত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার বিপরীত বলে তিনি উল্লেখ করেন।
'সাওয়াদ' নামক এনজিওটির বিরুদ্ধে সামাজিক বনায়নের হাজার হাজার গাছ কর্তন ও জলাধার ভরাট করে নতুন করে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য ঘর তৈরির অভিযোগ উঠেছে।
সংস্থাটির বিরুদ্ধে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার, জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় বনকর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তর ও সংশ্লিষ্ট বিভাগে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত উপকারভোগীরা লিখিত অভিযোগও করেছেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগকারীরা জানান, ২০০৮ সাল থেকে বনবিভাগের সাথে চুক্তির মাধ্যমে সামাজিক বনায়ন করে আসছে। বনায়নের উপকারভোগীরা কোন ধরণের ক্ষতিপূরণ পাননি। অথচ নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের সরিয়ে আনতে শেড নির্মাণ করা উদ্বেগজনক।
উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহিনুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি নিয়ে বনবিভাগ অবগত রয়েছে। জায়গাটি বনবিভাগ ও সামাজিক বনায়নের হলেও এখন যেতেতু কাটাতারের ভেতরের অংশ হয়ে গেছে তা নিয়ে বনবিভাগের তেমন কিছু করার নেই। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার ভালো বলতে পারবে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা হলে তিনি বলেন, নতুন করে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য বেশ কিছু শেড নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণের কাজ পেয়েছে ‘সাওয়াব’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা। তারা সকল ধরণের নিয়ম মেনে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। যেহেতু কাটাতারের ভেতরে রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দকৃত জমি তাই স্থানীয়দের সমস্যা হওয়ার কথা না।
তিনি আরও বলেন, যদি বনায়নের গাছকর্তন ও জলধার ভরাট করা হয়ে তাকে তদন্তপূর্বক সংস্থাটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থানগ্রহণ করা হবে। স্থানীয় বাংলাদেশিদের লিখিত অভিযোগের বিষয়ে আমি অবগত রয়েছি।
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত, পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চেয়ারম্যান বলেন, আমরা তো সবাই মিলে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। রোহিঙ্গারা যখন এপারে পালিয়ে এসেছিল, তখন আমরা ঘর থেকে খাবার এনে তাদের পাশে দাড়িয়েছি। কিন্তু এটা কি তার বদলা? একটি চক্রের সদস্যরা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অধিকারকে বঞ্চিত করে ক্যাম্প ১৪ হাকিমপাড়া সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ক্ষতি করে যাচ্ছে। যা উদ্বেগজনক ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য এক ধরনের বাধাগ্রস্ত বলে মনে করেন তিনি।
তিনি যোগ করে আরো বলেন, স্থানীয় বাংলাদেশীদের জায়গায় রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প বা আশ্রয়শিবির তৈরির কারণে বসতভিটা, চাষের জমি, মাছের পুকুর, ক্ষেতের ফসল, স্বপ্নের বাগান, সমস্ত আয়ের উৎস থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশি নাগরিকদের সহয়তা দেওয়ার কথা থাকলে তা কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক, দেশি ও স্থানীয় এনজিও সংস্থাগুলো রোহিঙ্গা আগমনের শুরু থেকেই নানাভাবে ষড়যন্ত্র করে আসছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে। নতুন করে শেড ও ঘরবাড়ি নির্মাণ করাও একটি ষড়যন্ত্রের অংশ বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবী করেন সীমান্তের এ জনপ্রতিনিধি।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

পেকুয়ায় পাচারের সময় জব্দকৃত মাছ ২ লাখ টাকায় নিলামে

মঙ্গলে ‘সোনার খনি’! অবাক হল নাসার বিজ্ঞানীরা

আরও মারাত্মক বোমা তৈরি করল চীন!

আনোয়ারায় ২ বছর বয়সী শিশুকে চুরির চেষ্টা, অভিযুক্ত নারীকে অবরুদ্ধ করে পুলিশে দিলো স্থানীয়রা

জাতীয়ভাবে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের সুপারিশ শ্রম সংস্কার কমিশনের

সাভারে এসএসসি পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগে ৭ শিক্ষক বহিস্কার

থানা থেকে টেনে বের করে ব্রিটিশ নাগরিককে পুড়িয়ে মারল উন্মত্ত জনতা

কার্গো পরিবহনে প্রস্তুত হচ্ছে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর

কক্সবাজারে জুলাই মাসে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট শুরু : বেবিচক

বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি মডেল ধর্ম উপদেষ্টা

১৩ বছর পর পরিবারের দেখা পেলেন আকরাম

লালপুরে বেপরোয়া অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কায় আহত ৩, রোগীর মৃত্যু

ঐক্যবদ্ধভাবে ব্যবসার সকল সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিতে হবে- আইবিডব্লিউএফ"র - শহিদুল ইসলাম

শেরপুরে অবৈধ হাইড্রোলিক হর্ণ ব্যবহারে ৫ ট্রাক ও বাস চালককে অর্থিক জরিমানা

হজ্জ ফরজ না হওয়া বাবাকে হজ্জ করিয়ে ছেলের হজ্জ করা প্রসঙ্গে।

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের সি-িকেটকে যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করা হবে

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের সফর থেকে কী পেতে পারে ভারত?

মূল ক্যাম্পাসে ফেরার দাবিতে চবি চারুকলার ৯ শিক্ষার্থীর অনশন

সাভারে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রের সাত পর্যবেক্ষককে বহিষ্কার, কেন্দ্র সচিবকে অব্যাহতি

পূর্ব এশিয়ার জাতিসংঘের পর্যটন সম্মেলনের আয়োজন করবে ইসফাহান