রাবি অধ্যাপক ড. হীরা সোবাহানের ৩০০’×২’ স্ক্রলচিত্র : গ্রাম-বাংলার লোকজ স্মৃতি ও শিকড়ের সন্ধান
১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:১৮ পিএম | আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:১৮ পিএম

ভোরের আলো ফোটার আগেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চারুকলার আঙিনায় যেন বাজতে শুরু করেছে এক নীরব বাউলের একতারা। আর সেই অদৃশ্য সুরে সাড়া দিয়ে বাংলার হারিয়ে যাওয়া জীবনের গল্পেরা একে একে ধরা দিয়েছে রঙে, রেখায়, প্রাণে–তিনশো ফুট লম্বা এক মহাকাব্যের মতো স্ক্রলচিত্রে।
১৪ এপ্রিল, রবিবার—নববর্ষের রৌদ্রছায়া মেশানো সকালে—প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব। আর শুরু হলো একদিনব্যাপী এক অন্যরকম যাত্রা। দর্শনার্থীরা হাঁটলেন দীর্ঘ তিনশো ফুটের ক্যানভাসের পাশে পাশে, আর আবিষ্কার করলেন নিজেদের হারানো শৈশব, গ্রামীণ শেকড়, লোকগানের সুর আর মাটির ঘ্রাণ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্রকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সোবাহান, যিনি শিল্পীজগতে হীরা সোবাহান নামে পরিচিত, সেই বিস্ময়কর শিল্পকর্মের নির্মাতা। দুই মাস ধরে রঙ, ক্যানভাস আর হৃদয়ের গভীরতম অনুভব দিয়ে গড়ে তুলেছেন এই অনন্য সৃষ্টি। প্রস্থ মাত্র ২ ফুট, অথচ দৈর্ঘ্যে তিনশো ফুট! ভাবতেই শিহরণ জাগে।
প্রস্থে মাত্র ২ ফুট হলেও, এই স্ক্রলচিত্র যেন হয়ে উঠেছিল বাংলার বিস্তৃত আত্মচিত্র। এই স্ক্রলচিত্র যেন বাংলার লোকজ সংস্কৃতির এক বিশাল নদী—যেখানে ভেসে বেড়ায় নবান্ন উৎসবের ধানগন্ধা, পৌষ সংক্রান্তির উড়ন্ত রঙিন ঘুড়ি, গাঁয়ের মেলার বাঁশি, গরুর গাড়ির চাকার শব্দ, শৈশবের খেলাধুলা, পুকুরঘাটে মাছ ধরার দৃশ্য, মাটির হাঁড়ির কারুকাজ, বউচি খেলা, পুতুল নাচ, লোকমেলা, মায়ের কাঁথা—যা আজ হারিয়ে যাচ্ছে শহরের কোলাহলে কিংবা সান্ধ্য গানের আসরে হারিয়ে যাওয়া বাউল কণ্ঠ।
শিল্পী অধ্যাপক আবদুস সোবাহান (হীরা সোবাহান) জানান, “এই স্ক্রলচিত্র আমার হৃদয়ের মাটি, আমার শেকড়কে ছুঁয়ে দেখার প্রয়াস। আমি শুধু ছবি আঁকিনি—আমি আমার বাংলা খুঁজে ফিরেছি।” “আমার জানামতে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এত বড় (৩০০ ফুট × ২ ফুট) স্ক্রলচিত্র এর আগে কখনো প্রদর্শিত হয়নি,” বলছিলেন তিনি, এক চিলতে গর্ব আর অপার ভালোবাসা নিয়ে।
প্রদর্শনীটি শুধু চিত্রশিল্প নয়, ছিল আবেগ, ছিল স্মৃতিচারণ, ছিল দর্শকের চোখে জল এনে দেওয়া মুহূর্ত। দর্শনার্থীদের অনেকেই বলছিলেন, “এই ছবিগুলো যেন কথা বলছে!”—কেউ ছেলেবেলার স্মৃতি খুঁজে পেয়েছেন, কেউবা মাটির গন্ধ।
এই স্ক্রলচিত্র ছিল কেবল এক শিল্প প্রদর্শনী নয়—এ ছিল বাংলার আত্মার এক দীর্ঘচিত্র। তিনশো ফুটে লেখা হয়েছিল, আমাদের শেকড়ের কবিতা। প্রতিটি ফুটে লুকিয়ে আছে একেকটি জীবন্ত গল্প—যা বাংলার শেকড় থেকে উঠে এসে বলে, “আমরা ছিলাম, আছি, এবং থাকব—তোমার রক্তে, তোমার স্মৃতিতে, তোমার সংস্কৃতিতে।”
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করলেন নাহিদ ও হাসনাত

তারুণ্যের সমাবেশ সফল করতে কিশোরগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রস্তুতি সভা

জ্ঞানভিত্তিক, নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন প্রজন্ম গড়ে তুলতে হবে : কাইয়ুম চৌধুরী

রায়িসির স্মরণে তেহরানে ‘জাতির সেবক’ প্রদর্শনীর উদ্বোধন

আসামি গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পেল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা

‘ফ্যাসিস্ট আমলে গ্রেফতারকৃত আলেমদের ঈদের আগেই মুক্তি দিতে হবে’

ভারত হাজার হাজার ‘বাংলাদেশিকে’ ফেরত পাঠাতে চায়

ঝিনাইদহে গ্রাম আদালত বিষয়ক প্রশিক্ষণ ”অল্প সময়ে স্বল্প খরচে সঠিক বিচার পেতে চলো যায় গ্রাম আদালতে”

শাহরাস্তিতে বিএনপি নেতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আওয়ামীলীগ নেতার হামলা ও ভাংচুর

প্যারাবন কেটে ঘের নির্মাণের পায়তারা আওয়ামী ভূমিদস্যু চক্রের

ইরানের মধু রপ্তানি বেড়েছে ২০ শতাংশ

বিভাজন মিটিয়ে ফের এক হওয়ার আহ্বানে যা বললেন জুলাই যোদ্ধারা

সৈয়দপুরে সড়ক থেকে অতিরিক্ত স্পিড ব্রেকার অপসারণের দাবিতে গণস্বাক্ষর ও মানববন্ধন

জুলাই-আগস্টের আন্দোলন তারেক রহমানের নির্দেশেই পরিচালিত হয়েছে - শফিউদ্দিন আহম্মেদ সেন্টু

সীমান্ত অনুপ্রবেশের সময় বিজিবি'র হাতে আটক ২ জন

ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান মির্জাপুরে সড়কে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ৩ ব্যবসায়ীর জরিমানা

ঈশ্বরদীর পদ্মা নদীতে বালুমহালের আধিপত্যের দ্বন্দ্বে দুই গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে ৭ জন গুলিবিদ্ধ

কাশ্মীরে স্বাধীনতাকামী সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতীয় সেনা নিহত

কুষ্টিয়ায় দুধ দিচ্ছে পাঠা

মনোহরগঞ্জ উপজেলার নবাগত নির্বাহী অফিসারের মতবিনিময় সভা