সুনামগঞ্জের ছাতকে বেড়েছে সড়ক দূর্ঘটনা। ২০২৪ সালের ১৮ এপ্রিল থেকে ২০২৫ সালের ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত গত এক বছরে এ উপজেলায় সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৬ জন ব্যক্তি। আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশত। এসব দূর্ঘটনার কারণ নির্ণয়, দোষিদের শাস্তি ও সড়ক পরিবহন আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় সড়কে মৃত্যুর মিছিল বাড়ছে বলে ধারণা সচেতন মহলের।

জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৮ এপ্রিল ভোরে ছাতক সুরমা সেতুর এ্যাপ্রোচ সড়কে সিএনজি অটোরিকশা ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত হন উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের শিমুলতলা গ্রামের প্রয়াত গীতিকার ও সঙ্গীত শিল্পি মতিউর রহমান হাসান (পাগল হাসান) ও একই গ্রামের আবদুস সত্তার ও জাহাঙ্গীর হোসেন। তারা ছিল সিএনজি অটো রিকশার যাত্রী। এরপর থেকে চলতি ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত এ উপজেলায় সড়ক দূর্ঘটনায় মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে আরও ১৩ জনের। আর এসব দূর্ঘটনায় আহত হয়েছে প্রায় অর্ধশত নারী-পুরুষ।

খোজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১ ডিসেম্বর উপজেলার গোবিন্দগঞ্জে রাস্তার উপর গ্যাস স্যালেন্ডার ভর্তি ট্রাক উল্টে সিএনজি অটোরিকশার উপরে পড়লে ঘটনাস্থলে মারা যান উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের হায়াতপুর গ্রামের সিএনজি অটো রিকশা চালক সিহাব উদ্দিন। গত ২ জানুয়ারি উপজেলার জাউয়াবাজার ইউনিয়নের বড়কাপন এলাকায় সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কে মাছবাহী পিকআপ নিয়ন্ত্রন হারিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা লেগে নিহত হন শান্তিগঞ্জ উপজেলার মৎস্য ব্যবসায়ী আবদুল করিম, দিরাই উপজেলার নুরুল হক ও জামালগঞ্জ উপজেলার আছাব উদ্দিন। গত ২৩ মার্চ ছাতক-সিলেট সড়কের ছাতক সুরমা সেতুর চত্বর এলাকায় সিএনজি অটো রিকশায়-ট্রাক ও মোটরসাইকেলের ত্রিমুখী সংঘর্ষে মারা যান উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের করছখালী গ্রামের শাহিন আহমদ, হুমায়ুন আহমদ ও লয়ালম্বাহাটি গ্রামের হুসাইন আহমদ। গত ১৩ এপ্রিল ছাতক-সিলেট সড়কের কিবরিয়া কমিউনিটি সেন্টারের সামনে মোটরসাইকেল ও ট্রাকের সংঘর্ষে মোটর সাইকেলের আরোহী আনোয়ার হোসেন নামের এক যুবকের মর্মান্তিক মৃত্য হয়েছে। তিনি উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের বাসিন্দা। সর্ব শেষ গত ১৬ এপ্রিল ছাতক-সিলেট সড়কের তাজপুর পয়েন্ট এলাকায় মোটরসাইকেলের ধাক্কায় মারা যান নোয়ারাই ইউনিয়নের ভাটিপাড়া গ্রামের সামছু মিয়া নামের এক বৃদ্ধ। এছাড়াও গত বছর ছাতক থেকে প্রাইভেটকার যোগে জাফলং ঘুরতে গিয়ে ছাতকের ৩জন তরুনের মৃত্যু হয়। চালকদের অমনযোগ, ওভার স্পীড, ওভার লোড, ওভার ট্টেকিং, যান্ত্রিক ক্রুটি, অদক্ষ ও লাইসেন্স বিহীন মোটরবাইক চালক, ভারী যানবাহনের চালকের অনিদ্রা, মোটসাইকেল আরোহীদের হেলমেট ব্যবহার না করা ও সড়ক পরিবহন আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় ঘটছে এসব দূর্ঘটনা। আর ঝড়ে যাচ্ছে তাজা তাজা প্রাণ।
গত এক বছরে এ উপজেলায় শুধু মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় মাথায় গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হয়ে ৫ জন আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। মাঝে মধ্যে পুলিশ দূর্ঘটনা কবলিত গাড়ি ও চালক আটক করলেও নিহতের স্বজনরা মামলা করতে অনাগ্রহী। কেউ কেউ মামলা করলেও আপোষে নিস্পত্তি করে দেয়। এছাড়া ভারী যানবাহনের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রধান সড়ক সমুহে চলছে সিএনজি অটো রিকশা ও ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা। অভিজ্ঞরা বলছেন দূর্ঘটনার কারণ নির্ণয়, দোষিদের শাস্তি ও সড়ক পরিবহন আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় সড়কে বাড়ছে প্রাণহানি। গত এক বছরে এ উপজেলা ছোট বড় সড়ক দূর্ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৪৪ টি। আর মামলা দায়ের হয়েছে মাত্র ১৩টি। এর মধ্যে ৯টি মামলার বাদী পুলিশ। বিভিন্ন কারণে এসব মামলায় দোষিদের শনাক্ত করা হয়নি। দায়েরি মামলাগুলো যে কোন সময় আপোষ নিস্পত্তি হতে পারে। এ কারনে এসব মামলার ভবিষ্যৎ প্রায় অনিশ্চিত বলে মন্তব্য বিজ্ঞজনের।

ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান আকন্দ জানিয়েছেন সরু রাস্তায় হেলমেট বিহীন বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল ও অন্যান্য গাড়ির চালক নিয়ম মেনে না চলার কারণেই মুখোমুখি দূর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়া অধিকাংশ নিহতের স্বজনরা মামলা দায়ের করতে অনাগ্রহী। মামলা হলেও পরে আপোষে নিস্পত্তি হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে দোষিদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের জয়কলস হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রশিদ সরকার বলেন, সড়ক দূর্ঘটনায় নিহতের স্বজনরা মামলা না করলেও পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়েরের নির্দেশনা রয়েছে।

সড়ক পরিবহন আইনের প্রয়োগ ও প্রতিটি দূর্ঘটনার কারণ নির্ণয় করে দোষিদের শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব হলে কমতে পারে সড়ক দূর্ঘটনা। এমন দাবি স্থানীয় সচেতন মহলের।