বিলুপ্তির পথে বরেন্দ্র অঞ্চলের ‘মাটির ঘর বাড়ি’
২০ এপ্রিল ২০২৫, ০২:২৫ পিএম | আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০২:২৫ পিএম

রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলাসহ বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের নিদর্শন সবুজ শ্যামল ছায়াঘেরা শান্তির নীড় মাটির বাড়ি। যাকে গ্রামের মানুষ বলতো, গরিবের এসি ঘর। কিন্তু আভিজাত্যের দাপটে, মানুষের জীবন যাত্রার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় এমন মাটির দোতলা বাড়ি এখন আর তেমন নজরে পড়ে না বিলুপ্ত প্রায়।
বেশী দিনের কথা নয়, ১৫ থেকে ২০ বছর পূর্বে উত্তরাঞ্চলের প্রতিটি গ্রামে নজরে পড়তো মাটির ঘর। কিন্তু গ্রামের আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন এসেছে, মানুষের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, সরকারী পাবলিক লিমিটেড ব্যাংকসহ বিভিন্ন এনজিওর ঋণ ও কায়িক পরিশ্রম করা গরিব পরিবারগুলো এখন তৈরি করছে ছোট্ট আকারে দালান। তার উপরে তুলছেন টিনের চালা কিংবা ছাঁদ।
এক সময় গোদাগাড়ী উপজেলার ৯টি ও তানোর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামে এ মাটির বাড়ি-ঘর, মাটির দোতলা চোখে পড়তো। যেখানে লাল বা চিপটে মাটি সহজলভ্য সেখানে এ ঘরগুলো বেশি তৈরি করা হয়। কিন্তু কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে এই ঐতিহ্যবাহী মাটির বাড়ি। এই বাড়ি শীত ও গরম মৌসুমে আরামদায়ক বলে গ্রামের গরিব ও দরিদ্র মানুষের পাশাপাশি অনেক বিত্তবানও এই মাটির দ্বিতল বাড়ি তৈরি করতেন।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, অতি প্রাচীনকাল থেকেই মাটির বাড়ির প্রচলন এবং গ্রামের মানুষের কাছে এই বাড়ি ঐতিহ্যের প্রতীক ছিল। এঁটেল বা আঠালো মাটি কাদায় পরিণত করে ২-৩ ফুট চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হয়। ১০-১৫ ফুট উঁচু দেয়ালে কাঠ বা বাঁশের সিলিং তৈরি করে তার ওপর খড় বা টিনের ছাউনি দেয়া তৈরি করা এই মাটির বাড়িতে গৃহিণীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাটির দেয়ালে বিভিন্ন রকমের আল্পনা এঁকে ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতেন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বর্ষা মৌসুমে মাটির ঘরের ক্ষতি হয় বলে বর্তমান সময়ে দীর্ঘ স্থায়িত্বের কারণসহ গ্রামাঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক পরিবর্তন হওয়ায় গ্রামের মানুষরা ইট-সিমেন্টের বাড়ি নির্মাণে আগ্রহী হচ্ছেন। ভূমিকম্প বা বন্যা না হলে একটি মাটির বাড়ি শত বছরেরও বেশি স্থায়ী হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে কালের বির্বতনে ইট-বালির দালান কোঠা আর বড় বড় অট্টালিকার কাছে হার মানছে মাটির বাড়ি।
উপজেলার গোদাগাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদুল গনি মাসুদ বলেন, বাপদাদার তৈরি মাটির বাড়ীতে এখনও আমরা বাস করাচ্ছি, মাটির তৈরি বাড়ীতে বিদ্যুৎ চলে গেলেও ঘরগুলি ঠান্ডা হওয়ায় বাস করতে ভাল লাগে। মনে হয় এসি রুমে বাস করাচ্ছি। ২৪ নগর এলাকার মাহাবুব অলম বলেন, মাটির তৈরি এই বাড়ি তারা পেয়েছেন পৈত্রিকভাবে। তাদের পূর্ব পুরুষরাও এই মাটির তৈরি বাড়িতেই জীবন কাটিয়ে গেছেন। তাই এখনও তারা এই বাড়িগুলো ভাঙ্গেন নি।
গোদাগাড়ী উপজেলার সৈয়দপুর এলাকার আলহাজ্ব দুলাল ফকির বলেন, মাটির তৈরি বাড়ী খুব আরামদায়ক, ফ্যান ছাড়া ঘুমানো যায়, তেমন অসুবিধা হয় না। কিন্তু কালের বিবর্তনে সব হারিয়ে যাচ্ছ, প্রধান কারণ হিসেবে তিনি জানান, যৌথপরিবারগুলি ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছে, বিয়ের কিছুদিন পর বাবা, মা, ভাই, বোনকে ত্যাগ একক পরিবার গঠন করতে আগ্রহী হচ্ছে। পরিবারে বসবাস করতে শহরমুখি বসবাস ঝুঁকে পড়ছেন।
গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার ফলেই গত ১০ বছরের মধ্যেই মাটির বাড়ি ভেঙ্গে পাঁকা বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। সেই সাথে এখন আর কেউ নতুন ভাবে মাটির বাড়ি তৈরি করার কথা মাথায় আনতে চাচ্ছেন না, যার যা আছে তা দিয়েই সকলেই ইট-সিমেন্ট দিয়ে পাকা বাড়ি তৈরি করছেন। অনেকেই বলছেন এঅবস্থা চলতে থাকলে একসময় মাটির দোতলা বাড়ির ছবি ছাড়া আর বাস্তবে মাটির দোতলা বাড়ি খুজে পাওয়া যাবেনা।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

বরিশালে ছাত্র লীগ কর্মী পালানের ঘটনায় পুলিশ কর্মী ক্লোজ

হিলি সীমান্তের ধান ক্ষেতে পড়ে থাকা সচল ড্রোন ক্যামেরা উদ্ধার

কুড়িগ্রামের রৌমারী সীমান্তে বজ্রপাতে টহলরত বিজিবি সদস্য নিহত, আহত-৪

কাশ্মীর নিয়ে ভারতকে ‘ব্যাপক সংলাপের’ আমন্ত্রণ পাকিস্তানের

পালালো আটক ছাত্রলীগ নেতা, ৪ পুলিশ ক্লোজড

মাহফুজের ঘটনায় ‘হতাশ’ উপদেষ্টা আসিফ

ভারতের অহংকার মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী : শেহবাজ শরীফ

উপদেষ্টার আশ্বাসের পরও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা শিক্ষার্থীদের

মাহফুজ আলমকে লক্ষ্য করে বোতল নিক্ষেপ : এনসিপি নেতাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

ব্যথায় উঠতে পারছেন না শাবনূর,হাঁটছেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে

এবার কাতারে গিয়ে ২০০ বিলিয়ন ডলারের বোয়িং চুক্তি করলেন ট্রাম্প

রাস্তাতেই রাত কাটিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

সাম্য হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে রাবি জিয়া পরিষদের তিন দফা দাবি

ভারতে ধ্বংস করা হলো মুসলমানদের ২৮০টি ধর্মীয় স্থাপনা

ভারতের মণিপুরে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ১০

‘একটি গোষ্ঠী ৯ মাস ধরে আমার ওপর ক্ষেপে আছে, তারাই এটি ঘটিয়েছে’

ছাগলনাইয়ায় বিজিবি'র হাতে আটক ভুয়া এনএস আই কর্মকর্তা

ঝিনাইদহে ১২০ টাকায় পুলিশের চাকরি পেলেন ২৫ জন, আবেগে কাঁদলেন অভিভাবকরা

কোটচাঁদপুর রেলস্টেশনে বিজিবির অভিযান স্কুল ব্যাগে মিললো হেরোইন

হামলার হুমকিতে ফের অনিশ্চয়তায় আইপিএল