কুষ্টিয়ার খোকসায় একইসঙ্গে মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়ন প্রকল্প ও একটি মাদরাসায় আরবি প্রভাষক পদে চাকরি করছেন মো. রেজাউল করিম। অভিযোগ রয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে প্রতিমাসে দুই প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন-ভাতাসহ সব সুবিধা ভোগ করছেন তিনি। এই দুই প্রতিষ্ঠানের দূরত্ব শত কিলোমিটার হলেও অধ্যক্ষ এবং মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের ভাষ্য, নিয়মিত অফিস করেন রেজাউল করিম।
কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার চাঁদট এম বি মদিনাতুল উলুম ফাজিল মাদরাসার আরবি প্রভাষক রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে জালিয়াতি করে দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি ও বেতন-ভাতা গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। তিনি চাঁদট গ্রামের ভাদু বিশ্বাসের ছেলে। এনটিআরসির মাধ্যমে নিয়োগে পেয়ে ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তিনি ওই মাদরাসায় আরবি প্রভাষক পদে যোগদান করেন। এই চাকরিতে তিনি গাজীপুরের ঠিকানার জাতীয় পরিচয় ব্যবহার করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেজাউল করিম মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এসইএসডি উন্নয়ন প্রকল্পের অধীন ২০১২ সালে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার পদে যোগদান করেন। ২০১৫ সালের ১৫ জুন থেকে তিনি মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় কর্মরত। সরকারি প্রকল্পের চাকরিতে ব্যবহার করেছেন খোকসার চাঁদট গ্রামের ঠিকানার জাতীয় পরিচয়পত্র। খোকসার চাঁদট গ্রাম থেকে মাগুরার মহম্মদপুরের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটারেরও বেশি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই মাদরাসার একাধিক শিক্ষক জানান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসার সাবেক সভাপতি বাবুল আকতারের লোক হওয়ায় রেজাউল করিম মাসের পর মাস মাদরাসায় অনুপস্থিত থেকে বেতন নিয়েছেন। ২০২২ সাল থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেও বেতন তুলেছেন তিনি।
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেরা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, একাডেমিক সুপারভাইজার রেজাউল করিম চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত সরকারি বেতন-ভাতা নিয়েছেন। এছাড়া গত একমাস যাবত ধরে অপারেশনজনিত কারণে ছুটি নিয়েছেন। তবে মাঝে মধ্যে অফিস করছেন।
রেজাউল করিমের সঙ্গে কথা হলে তিনি দুই পদে চাকরির কথা স্বীকার করেন। তবে মাদরাসা থেকে বেতন উত্তোলন করেননি বলে দাবি করেন। তিনি আরও জানান, মাধ্যমিক অধিদপ্তরের যে প্রকল্পে চাকরি করতেন, সে প্রকল্পটির মেয়াদ এরইমধ্যে মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। একাডেমিক সুপারভাইজার পদের চাকরি থেকে তিনি যে বেতন গ্রহণ করেছেন, তা সরকারি তহবিলে ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি টাকা ফেরত দেবেন।
চাঁদট এম বিমদিনাতুল উলুম ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মহম্মদ শহিদুজ্জামান জানান, আরবি প্রভাষক রেজাউল করিম এনটিআরসির মাধ্যমে নিয়োগ পেছেন। তিনি যোগদানের পর থেকে নিয়মিত ক্লাস করছেন। সঙ্গে বেতন-ভাতার সুবিধা পাচ্ছেন।
এ বিষয়ে মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মুহম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, একাডেমিক সুপারভাইজার রেজাউল নিয়মিত অফিস করছেন। সরকারি বেতন-ভাতার সুবিধা পাচ্ছেন। তবে পাইলস অপারেশনের কারণে গত একমাস ছুটিতে কাটিয়েছেন।
খোকসা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তিনি শুনেছেন। তবে মাদরাসাগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এখানে তাদের কিছু করার থাকে না। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই শিক্ষককে ডেকেছিলেন। সেখানে কী কথা হয়েছে তা জানা নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রদীপ্ত রায় দ্বিপন বলেন, এ ঘটনায় অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে জালিয়াতির ঘটনার সত্যতা মিলেছে। মাগুরার সঙ্গে সমন্বয় করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।