কক্সবাজারের রামুর বহুল আলোচিত গর্জনিয়া বাজার। উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নে এই বাজারের অবস্থান।গত বছর বাজারটি ইজারা হয়েছিল প্রায় আড়াই কোটি টাকায়। চলতি বছরে এই ইজারা ১০ গুণ বেড়ে হয়েছে প্রায় ২৬ কোটি টাকায়।
তবে বাজারের স্থানীয় ক্ষুদ্র ও পাইকার ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত টাকায় ইজারা নেওয়ার বিষয়টিকে ভালো চোখে দেখছে না। তারা বলছে এ অবস্থায় অতিরিক্ত খাজনা আদায় কৃষক, ব্যবসায়ী যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি সাধারণ মানুষকেও পন্য ক্রয় করতে হবে অতিরিক্ত মূল্যে।
রামু তথা কক্সবাজারের শষ্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত গর্জনিয়া বাজারের মিয়ানমার সীমান্তবর্তী হওয়ার এর গুরত্ব বেড়ে যায়, বাজারে তিন শতাধিক পাইকার আড়তের সঙ্গে পাঁচ শতাধিক ক্ষুদ্র স্থানীয় প্রান্তিক চাষি বেচা-কেনা করেন। এমতাবস্থায় এক লাফে বাজার ইজারা দশগুন বৃদ্ধি পাওয়ায় চড়া মুল্যে বাজারের হাসিল দিতে গিয়ে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এক কথায় এই ইজারা মূল্য জনগনের গলার কাটায় পরিণত হবে বলে জানা গেছে।
সুত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে মিয়ানমারে সংঘাত শুরু হলে সীমান্ত দিয়ে এপারে অবৈধভাবে গরু প্রবেশ শুরু হয়। স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি ও বাজার ইজারাদারের রশিদ ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নের মাধ্যমে বৈধতা পাচ্ছে এসব চোরাই গরু। এছাড়া গরুর সাথে একসাথে আসছে ইয়াবা, আইস, স্বর্ণ ও সুপারী সিগারেট। অবৈধ পন্থায় এসব চোরাই গরু ঢোকায় স্থানীয় খামারিরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। পাশাপাশি সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব। এদিকে গরু পাচারকে কেন্দ্র করে ডাকাতি, ছিনতাই ও হত্যা নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। মোটা অংকে টাকার প্রলোভনে পড়ে শিক্ষার্থী ও শিশুরা গরু পাচারে যুক্ত হয়ে বিপদগামী হয়ে যাচ্ছে দিন দিন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী নুরুল আলম জানান, ২০২৩ সালে ৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকায় গর্জনিয়ার এই বাজার ইজারা পেয়েছিলেন রামুর দক্ষিণ মিঠাছড়ির ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ইউনুছ ভুট্টো, ২০২৪ সালে ২ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা দরে ইজারা পেয়েছিলেন কক্সবাজার সদরের বাসিন্দা আবদুর রহিম।
আর চলতি ২০২৫ সালে উক্ত বাজারের ইজারা মুল্য এক লাফে ১০ গুন বেড়ে ২৬ কোটিতে দাড়ায়। যা পুরো দেশ জুড়ে আলোচনার ঝড় উঠে। মিয়ানমারের অবৈধ গরুর অনুপ্রবেশকে ঘিরেই মূলত এই অস্বাভাবিক বাজার মূল্য বৃদ্ধির মূল কারন বলে জানান এই ব্যবসায়ী।
স্থানীয় এক সাংবাদিক জানান, অবৈধ গরু অনুপ্রবেশের পাশাপাশি কয়েকটি সিন্ডিকেটের মাদক চোরাচালান ঘিরে কয়েক বছর ধরে গর্জনিয়া বাজার নিজেদের নিয়ন্ত্রনে নেয়ার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যার ফলে চড়ামূল্যে বাজার ইজারা নেয়ার ব্যাপারে নিজেদের মাঝে প্রতিযোগিতা বিদ্যমান ছিল। এর প্রেক্ষিতে চলমান বছরে উল্লেখযোগ্যহারে বাজার মূল্য বেড়ে গেছে। যার ফলে অবর্ননীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে প্রান্তিক কৃষক ও পশু খামারীগন। একইভাবে ক্রেতা সাধারনগনকেও ব্যয় নির্বাহে সিমাহীন দুর্দশার স্বীকার হতে হচ্ছে বলে জানান।
রামুর সচেতন মহলের দাবী, বাজারের ইজারামূল্য বৃদ্ধি পেলে স্থানীয় কৃষক,ব্যবসায়ি, পশু খামারী ও ক্রেতা সাধারণের উপর নেতীবাচক প্রভাব পড়বে। আমরা চাই গর্জনিয়া বাজার থেকে সরকারের সুনির্দিষ্ট রাজস্ব আদায় হোক একই সাথে জনগনের উপর চাপও নিম্নমুখী হোক।
গর্জনিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এরশাদ উল্লাহ জানান, চলমান বছরের বাজার ইজারা মূল্য নিঃসন্দেহে স্থানীয় জনসাধারণ চরমভাবে শোষনের শিকার হবে। কিছু মানুষের অর্থনৈতিক আয়ের খেসারতের বলি হবে পুরো গর্জনিয়া তথা রামুর মানুষ।