সাভার ও আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল হওয়ার সুবাদে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ জীবিকার সন্ধানে এখানে এসে বসবাস করে। এই জনবহুল এলাকায় প্রতিদিন বিভিন্ন সড়কে অসংখ্য মানুষ ও যানবাহন চলাচল করে। সড়কের দুই পাশে থাকা ফুটপাত ও ওভারব্রিজগুলো পথচারীদের যাতায়াত এবং নিরাপদে রাস্তা পারাপারের জন্য তৈরি করা হলেও, বর্তমানে এগুলো অবৈধ দখলদারদের কবলে পড়েছে।
পথচারীদের চলাচলের জন্য নির্মিত এ স্থাপনাগুলো এখন অবৈধ দখলদারদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালী মহল, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা ব্যক্তি ও কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী ও হকারদের দৌরাত্ম্যে ফুটপাতগুলো বেদখল হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড, নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের উভয় পাশ, বাইপাইল, জিরাবো, ফ্যান্টাসি কিংডমের সামনের এলাকা, আশুলিয়া বাজার, নরসিংহপুরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানের ফুটপাতগুলো বিভিন্ন ধরনের দোকানপাট, অস্থায়ী স্থাপনা ও নির্মাণসামগ্রী রেখে দখলের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। কোথাও কোথাও স্থায়ী কাঠামো নির্মাণ করে ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে। অন্যদিকে সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে অবস্থিত ওভারব্রিজের ফুটপাতগুলোতেও একই অবস্থা। স্থায়ী ও অস্থায়ী দোকানপাট স্থাপন করা হয়েছে। কোথাও ফল বিক্রেতা, কোথাও চা-সিগারেটের দোকান, আবার কোথাও বিভিন্ন ধরনের ছোটখাটো ব্যবসার পসরা সাজিয়ে বসেছেন দখলদাররা। এর ফলে পথচারীদের জন্য ওভারব্রিজের সামান্য অংশও ব্যবহার করার সুযোগ থাকে না। বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মূল সড়ক দিয়েই পারাপার হতে হয়, যা যানজট ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি বহুলাংশে বাড়িয়ে দিচ্ছে।
ভুক্তভোগী পথচারীরা জানান, ওভারব্রিজ তৈরি করা হয়েছে তাদের সুবিধার জন্য। কিন্তু অবৈধ দখলের কারণে সেই সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। বিশেষ করে স্কুলগামী শিক্ষার্থী, নারী, শিশু ও বয়স্কদের জন্য এই পরিস্থিতি আরও বেশি কষ্টদায়ক। বৃষ্টি বা রোদের সময় একটু আশ্রয় নেওয়ার জায়গাটুকুও মেলেনা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই অবৈধ দখলদারিত্ব চললেও প্রশাসন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। মাঝেমধ্যে লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করা হলেও কয়েক ঘণ্টা পর পরিস্থিতি আবার আগের মতোই হয়ে যায়। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের অসহযোগিতা ও দলীয় প্রভাবের কারণে অনেক সময় প্রশাসন নিরুপায় থাকে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তারা বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে ফুটপাতে দোকান বসানোর সুযোগ করে দেয়। যার কারণে অবৈধভাবে এই ফুটপাত দখলদারিত্ব একেবারে নির্মূল করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
অবৈধ ফুটপাত দখলের কারণে নষ্ট হচ্ছে আধুনিক নগরায়নের রুপ, সৌন্দর্য। জৌলুশ হারাচ্ছে নগরের সেফগার্ডখ্যাত ওভারব্রিজগুলো। এখানে শুধুই পথচারীদের দুর্ভোগ বাড়ছে না, বরং স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ফুটপাতের দোকানগুলোর কারণে তাদের দোকানে ক্রেতাদের প্রবেশে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার বিক্রি এবং যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। যা জনস্বাস্থ্যের জন্যও বিরাট ক্ষতিকর।
এই পরিস্থিতিতে সাভার ও আশুলিয়ার নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন খান নঈম’র কাছে জানতে চাওয়া হলে, তিনি বলেন- অবৈধ ফুটপাত দখলমুক্ত করার জন্য তারা জেলা প্রশাসকের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসক তাদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন, দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপের মাধ্যমে ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত করে পথচারীদের নির্বিঘ্নে চলাচলের ব্যবস্থা করা হবে। একইসাথে, যারা এই অবৈধ দখলের সাথে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও কথা জানিয়েছেন।
স্থানীয় প্রশাসন সাভার উপজেলা নির্বাহী মোঃ আবুবকর সরকার জানান, আমরা ইতিমধ্যে সাভারের হেমায়েতপুর, আশুলিয়ার জামগড়ায় অবৈধ ফুটপাত দখল উচ্ছেদ করেছি। এটা চলমান প্রক্রিয়া, দ্রুত এই জনদুর্ভোগের অবসান ঘটিয়ে সাভার ও আশুলিয়ার ফুটপাতগুলো সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।