রানা প্লাজার মতো বিভীষিকাময় ঘটনা, বাংলাদেশের জন্য নয়, গোটা পৃথিবীতে শ্রম বিপর্যয়ের মধ্যে সবচেয়ে নৃশংস এবং ধ্বংসাত্মক হিসেবে পৃথিবীর ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন । বৃহস্পতিবার দুপুরে এক যুগ পূর্তিতে রানা প্লাজার সামনে
এনসিপির উদ্যোগে এক সভায় এই মন্তব্য্য করেন তিনি ।
এসময় তিনি আরো বলেন, এতো বড়ো বিভীষিকাময় ঘটনার পরও বাংলাদেশের শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মস্থল এখনো পর্যন্ত নিশ্চিত করা সম্ভব হয়ে ওঠে নাই। শ্রমিকদের জন্য যে নিরাপদ কর্মস্থলের ব্যবস্থা করা গেল না, সেটির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী বাংলাদেশের দুর্বৃত্তায়িত, নষ্ট ও পচে যাওয়া রাজনীতি।
এর পরের ঘটনা আরও বিভৎস—এখানে মানুষ আহত হয়েছেন, তাদের জীবন প্রদীপ হয়তো এখনো নিভে যায়নি, কিন্তু সেই মানুষগুলোকে উদ্ধারের নামে তাদের লাশগুলোকে গুম করার মেকানিজম করেছিল এই অঞ্চলের কুখ্যাত সন্ত্রাসী এনাম।
বাংলাদেশের মানুষেরা খুব বেশি শিক্ষিত মানুষ নন। শিক্ষা-দীক্ষা অর্জন করে সরকারি চাকরি করে তাদের পেট চলবে, পরিবারের ভরণ-পোষণ চলবে—এই সক্ষমতা বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের নেই। বাংলাদেশের মানুষ খেটে খাওয়া মানুষ, শ্রমিক মানুষ। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়, দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখা সেই শ্রমিকেরা নিরাপদে তাদের কর্মস্থলে তাদের শ্রমজীবন অতিবাহিত করতে পারবেন—এই নিশ্চয়তাটুকু আমাদের সরকার এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করতে পারে নাই।
তিনি আরো বলেন, গত ১২ বছর ধরে আমাদের শ্রমিকেরা যারা আহত হয়েছেন, যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্বজনেরা এই জায়গাটিতে এসে একটি সমাবেশ করে তাদের দাবি-দাওয়া পেশ করবেন—সেই সুযোগটা পর্যন্ত তাদের দেওয়া হয়নি। এই জায়গাটিকে দখলে রেখে আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মারা, সন্ত্রাসীরা শ্রমিকদের কণ্ঠস্বর যেন উচ্চ না হয়, সেই কণ্ঠস্বরকে চেপে রাখবার সবধরনের ব্যবস্থা তারা পাকাপোক্তভাবে করে রেখেছিলেন।
২৪-এর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসীদের পরাজয় হয়েছে, খুনি হাসিনার পরাজয় হয়েছে, এনাম গংদের পরাজয় হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, আজকে শ্রমিকরা যে দাবি উত্থাপন করেছেন, সেই দাবির মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে পরিষ্কারভাবে বার্তা পৌঁছেছে, যার ফলে এই রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় যারা শহীদ হয়েছেন এবং যারা আহত হয়েছেন, তাদের পরিবারকে পুনর্বাসনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। যারা এই ঘটনায় দায়ী ছিলেন তাদের উপযুক্ত বিচারের আওতায় আনা হবে।
সারা বিশ্বে শ্রমিকদের স্মরণে পহেলা মে-তে শ্রমিক দিবস পালন করা হয়। সেই দিনে আমরা সারা বিশ্বের শ্রমিকদের সঙ্গে সংহতি জানাই। তেমনি ভাবে বাংলাদেশের শ্রমিক যারা আছেন, তাদের নিরাপদ কর্মস্থলের জন্য, শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির জন্য, ন্যূনতম ন্যায্য মজুরির দাবির জন্য, শ্রমের যে পরিবেশ—সেটি যেন শ্রমিকদের অনুকূলে থাকে—সেটিকে নিশ্চিত করবার জন্য সবকিছু মাথায় রেখে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-র পক্ষ থেকে সরকারি ভাবে ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা দিবসকে জাতীয় শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।
২৪ এপ্রিল জাতীয় শ্রমিক দিবসে সকল গার্মেন্টস কারখানাসহ যতগুলো শ্রমিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সব প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করতে হবে।