বাংলাদেশের সামনে বড় চার চ্যালেঞ্জ : ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ
১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৪২ পিএম | আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০৪ এএম
কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশ বিভিন্ন খাতে বেশ সাফল্যের ধারায় চলছিল। তবে গত এক দশকে সেই গতি কিছুটা কমেছে। অন্যদিকে ২০২৬ সাল নাগাদ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ হবে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সামনে অন্তত চারটি দীর্ঘমেয়াদি বড় উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে জনগণকে মানসম্মত রাষ্ট্রীয় সেবা দিতে রাজস্বের পরিমাণ আরও বাড়ানো, জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা, রফতানি বহুমুখীকরণ ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা। বাংলাদেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে হলে এই বিষয়গুলো অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন করতে হবে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ ও রাষ্ট্রের কার্যকারিতা বিষয়ে আয়োজিত এক গণবক্তৃতায় এসব কথা বলেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা ফরেন, কমনওয়েলথ ও ডেভেলপমেন্ট দফতরের (এফসিডিও) অর্থনীতি ও মূল্যায়ন বিভাগের প্রধান অর্থনীতিবিদ আদনান খান। রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) গণবক্তৃতাটির আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন পিআরআই চেয়ারম্যান জায়েদি সাত্তার। এ ছাড়া সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক বিনায়ক সেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
গণবক্তৃতায় আদনান খান বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশের উন্নয়নের গতি কিছুটা কমেছে। যেমন দারিদ্র্য হ্রাস ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির গতি কমেছে। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) বিপরীতে রফতানির পরিমাণও কমেছে। অন্যদিকে এক বছরের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে উচ্চমাত্রায় মূল্যস্ফীতি রয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছে ও বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। তবে এগুলোর সবই স্বল্পমেয়াদি সমস্যা। তবে সামনে বেশ কিছু দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তার মতে, উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হলে জনগণ ভালো মানের নাগরিক সুবিধা পেতে চাইবেন। আর এ সুবিধা দিতে হলে সরকারের অনেক বেশি রাজস্ব আয়ের প্রয়োজন হবে। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশের কর-জিডিপির হার অনেক কম। এটিকে অন্যতম প্রধান উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করেন অর্থনীতিবিদ আদনান খান।
অর্থনীতিবিদ আদনান খান বলেন, সরকারি বিধিবিধান প্রয়োগ ও জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত কর প্রদানÑএই দুটি উপায়ে রাজস্ব বাড়ানো যেতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে বিধিবিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রে অনেক জটিলতা রয়েছে। এখানে আয়কর আদায়ের আগ্রহ কম। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় তথ্য, প্রযুক্তি, সম্পদ ও অর্থায়নের অভাব রয়েছে। অন্যদিকে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবা নিয়ে অবিশ্বাস থাকায় সাধারণ মানুষও স্বেচ্ছায় কর দিতে উৎসাহী হন না।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, কাক্সিক্ষত কর আদায়ের জন্য যে দক্ষতার প্রয়োজন, তা আমাদের কর কর্মকর্তাদের মধ্যে নেই। তারা মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযান (রেইড) চালান। এটা উদ্যোক্তাদের জন্য একধরনের হয়রানি। এতে করদাতারা আস্থা হারিয়ে স্বেচ্ছায় কর দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। মসিউর রহমান বলেন, কর আদায় না বাড়ার পেছনে রাজনৈতিক কারণের চেয়ে প্রশাসনিক কারণই বেশি। করহার এমন পর্যায়ে হওয়া উচিত না, যাতে করদাতারা সেই কর দিতে নিরুৎসাহিত হন। পাশাপাশি কর প্রদানের বিষয়ে করদাতাদের শিক্ষিত করারও পরামর্শ দেন তিনি।
দ্বিতীয় আরেকটি উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবিলার কথা বলেন এফসিডিওর অর্থনীতিবিদ আদনান খান। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের কৃষি খাতের জিডিপি এক-তৃতীয়াংশ কমে যেতে পারে। এ ছাড়া ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে অভিবাসী হতে পারেন। ফলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় জলবায়ু পরিবর্তন একটি বড় প্রভাবক হবে।
দেশের রফতানি আয় মূলত তৈরি পোশাকনির্ভর। রফতনি তেমনভাবে বৈচিত্র্যপূর্ণ হচ্ছে না। একই সঙ্গে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগও (এফডিআই) প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়ছে না। এই বিষয়টিকে বাংলাদেশের জন্য তৃতীয় প্রধান উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন আদনান খান।
আর চতুর্থ উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ মানসম্মত শিক্ষার বিষয়ে আদনান খান বলেন, বাংলাদেশে সাক্ষরতার হার অনেক বাড়লেও মানসম্মত শিক্ষার দিক থেকে দেশটি এখনো অনেক পিছিয়ে রয়েছে। ফলে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা অবকাঠামো নির্মাণ করলেই উন্নয়ন টেকসই হবে না। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার আওতা বৃদ্ধিকে (এনরলমেন্ট) আমরা সফলতা হিসেবে দেখাই। তবে আমাদের মানসম্মত শিক্ষায় অনেক ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে প্রয়োজনীয় নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করাও সম্ভব হচ্ছে না। এটি আবার বিদেশি বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক গতিকে কমিয়ে দিতে পারে।
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও পিআরআই চেয়ারম্যান জায়েদি সাত্তার বলেন, দেশে সুশাসনের একটা ঘাটতি আছে, এটা সত্য। তবে বাংলাদেশ আসলেই উন্নয়ন করছে। যুগোপযোগী ব্যবসা উদ্যোগ, শ্রমশক্তি ও শ্রমে নারীর অংশগ্রহণের হার বৃদ্ধির কারণেই এ উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে।##
বিভাগ : অর্থনীতি
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল
‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড
সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড
শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে