চালু হল দেশের প্রথম নিজস্ব ন্যাশনাল কার্ড স্কিম
০২ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৫ এএম
দেশের প্রথম নিজস্ব ন্যাশনাল কার্ড স্কিম ‘টাকা পে’ চালু হয়েছে। যা আর্থিক লেনদেনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এর মাধ্যমে দেশের বিদেশি কার্ডের উপর নির্ভরতা ও ব্যাপক বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এই কার্ডের ধরন হবে ভিসা ও মাস্টারকার্ডের মতো। প্রাথমিকভাবে দেশে অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য এটি চালু করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে এর মাধ্যমে টাকা-রুপি কার্ডও চালু করা হবে, যার মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশ ভারতে লেনদেন করতে পারবে। বর্তমানে প্রতিবেশী অধিকাংশ দেশে এমন নিজস্ব কার্ড আছে। সেগুলো হলো-ভারতের কার্ড ‘রুপে’, পাকিস্তানের ‘পাকপে’, শ্রীলংকার ‘লংকাপে’ ও সউদী আরবে আছে ‘মাদা’। ‘টাকা-পে’ হল এক ধরনের ডেবিট কার্ড। এ কার্ডের মাধ্যম প্রচলিত ভিসা বা মাস্টার কার্ডের মতই লেনদেন করতে পারবেন গ্রাহকরা। আন্তর্জাতিক কার্ডের ওপর নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয়ে চালু হল বাংলাদেশের নিজস্ব কার্ড ‘টাকা-পে’। ‘টাকা-পে’ হল এক ধরনের ডেবিট কার্ড। এ কার্ডের মাধ্যম প্রচলিত ভিসা বা মাস্টার কার্ডের মতই লেনদেন করতে পারবেন গ্রাহকরা। দেশের ভেতরে বিভিন্ন ব্যাংক এই কার্ড ইস্যু করতে পারবে, নিয়ন্ত্রণ থাকবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার (১ নভেম্বর) এক অনুষ্ঠানে এ কার্ডের উদ্বোধন করেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রথম লেনদেন করা হয় রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। এছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক এবং ব্র্যাক ব্যাংকের কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
ডেবিট কার্ড দিয়ে শুরু করে পরবর্তীতে ক্রেডিট ও আন্তর্জাতিক কার্ড তৈরির লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ডিসেম্বরে ‘টাকা-পে’ কার্ডের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে ডুয়ল কারেন্সি বা দ্বৈত মুদ্রা ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হতে যাচ্ছে। তখন বাংলাদেশিরা ভারতে গেলে ‘টাকা-পে’ কার্ডের মাধ্যমে ভারতীয় মুদ্রা রুপিও ব্যবহার করতে পারবেন। আলাদাভাবে বিদেশি মুদ্রা, ডলার বা রুপি বহনের প্রয়োজন পড়বে না। বর্তমানে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে বাংলাদেশি নাগরিকরা প্রতিবেশী দেশ ভারতেই সবচেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা খরচ করছেন।
ব্যাংক হিসাবে থাকা আমানতের বিপরীতে যে কার্ড ব্যবহার করা হয় তা ডেবিট কার্ড। আর একটি সীমা বেঁধে দিয়ে ব্যাংক যে পরিমাণ ধার নেয়ার সুযোগ দিয়ে কার্ড ইস্যু করে, সেটি হল ক্রেডিট কার্ড। গ্রাহকের ব্যাংক হিসাবে অর্থ না থাকলেও গ্রাহকরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ খরচ করতে পারেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে খরচ হওয়া অর্থ ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে ব্যাংকে পরিশোধ করতে হয় বিনা সুদে। এরপর বকেয়া থাকা অর্থের ওপর সুদ যোগ করে ব্যাংকগুলো।
নগদ টাকা বহনের চেয়ে নিরাপদ ও লেনদেন সহজ হওয়ায় কার্ড ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে মানুষ। দেশে ৪৩টি ব্যাংক ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড ইস্যু করছে। এছাড়া একটি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানও ক্রেডিট কার্ড দিচ্ছে। সব মিলিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানের ইস্যু করা কার্ডের সংখ্যা ৩ কোটি ২৭ লাখের বেশি।
দেশে যতগুলো কার্ড ব্যবহার হচ্ছে তার সবগুলোই বিদেশি কোম্পানির তৈরি। একটি নির্দিষ্ট ফির বিপরীতে ব্যাংকগুলো এই কার্ড সেবা দিয়ে আসছে। এতে এক ব্যাংকের ইস্যু করা কার্ড অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথে লেনদেন করতে বাড়তি খরচ দিতে হয়। এছাড়া বছর শেষে গ্রাহককে ১৫০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত কার্ড ব্যবহারের ফি দিতে হয় ব্যাংকগুলোকে। তার সঙ্গে রয়েছে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। এর বাইরে প্রি-পেইড কার্ড রয়েছে, যার ব্যবহার একেবারেই কম। গ্রাহকদের কাছ থেকে ব্যাংকের নেয়া ফির একটি অংশ পায় কার্ড মালিক বিদেশি মালিকানা প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে বিদেশি মুদ্রা চলে যায়।
কিন্তু ‘টাকা-পে’ কার্ড পরিচালিত হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (এনপিএসবি) এর মাধ্যমে। ফলে এই কার্ড যে কোনো এটিএম বুথে সহজে লেনদেন করা যাবে। সেক্ষেত্রে দ্রুত ও নির্বিঘেœ লেনদেন করা যাবে।
সোনালী ব্যাংক পিএলসির সিইও এন্ড ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. আফজাল করিম বলেছেন, নিজস্ব কার্ড ব্যবহার বাড়লে কার্ডভিত্তিক লেনদেনে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরতা কমে আসবে বাংলাদেশের। সাশ্রয় হবে বিদেশি মুদ্রা। এই কার্ডের মাধ্যমে প্রচলিত কার্ডের চেয়ে খরচ অন্তত ৫-৬ শতাংশ কম হবে।
মো. আফজাল করিম বলেন, আমাদের দেশে ভিসা, মাস্টার বা বাইরের কোম্পানিগুলোর ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ড আছে। আমাদের নিজস্ব কোনো কার্ড ছিল না। এর ইউজার ছিল রেস্ট্রিকটেড। যে ফি দেয়া হয় এটা অনেকটা বাইরে চলে যায়। আমরা ন্যাশনাল ডেবিট কার্ড তৈরি করছি। সব ব্যাংক ও ফিনান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন এক কার্ড ব্যবহার করবে। এটার প্রচলন হলে আমরা মনে করি টাকার পরিবর্তে এই কার্ডের ব্যবহার বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, এ কার্ড থাকলে গ্রাহকেরা বাংলাদেশে এটিকে ডেবিট কার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে পারবেন। যে কোনো কেনাকাটা করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, ‘টাকা-পে’ কার্ড চালুর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে শুরুতে যুক্ত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি মিলিয়ে ৮টি ব্যাংক। কার্ড ব্যবহারে গ্রাহক সংখ্যায় এগিয়ে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ব সোনালী ব্যাংক, বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক (ইবিএল), ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি), ডাচ-বাংলা ব্যাংক ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক প্রথম দিকে ‘টাকা-পে’ কার্ড ইস্যু করার সুযোগ পাচ্ছে। পরবর্তীতে অন্যান্য ব্যাংকগুলোও চাইলে এই কার্ড ইস্যু করতে পারবে। আর বাংলাদেশের জাতীয় ডেবিট কার্ড প্রস্তুতে কারিগরি বিষয় দেখভালে নিয়োগ দেয়া হয়েছে প্যারিসভিত্তিক পরামর্শক ‘ফিম’কে।
বিভাগ : অর্থনীতি
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
ট্রাম্পের তথ্য চুরি করে বাইডেন শিবিরে পাঠিয়েছিল ইরান! দাবি গোয়েন্দা সংস্থার
সুনামগঞ্জে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম.এ মান্নান গ্রেফতার
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।