ঢাকা   মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪ | ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

নীতি সহায়তার অভাবে বিকশিত হচ্ছে না কসমেটিকস শিল্প

Daily Inqilab অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২০ মে ২০২৪, ০৬:১৫ পিএম | আপডেট: ২০ মে ২০২৪, ০৬:১৫ পিএম



আমদানির বিকল্প ও ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকার পরও দেশীয় কসমেটিকস শিল্পে উল্টোনীতি গ্রহণ রহস্যজনক। কসমেটিকস শিল্পখাতে নীতি সহায়তার পরিবর্তে বাড়তি শুল্ক ও ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। এতে নতুন উদ্যোগগুলো আরও বেশি অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়ছে বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা।
এদিকে কসমেটিকস শিল্প খাতের গুরুত্ব অনুধাবন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন এই শিল্পের নীতি প্রণয়নে ৪ দফার জোরালো সুপারিশ করেছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে সহায়তার নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে না। সেই সুপারিশ আমলে নেওয়া হচ্ছে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই খাতের ব্যাপক গুরুত্ব দিয়ে নীতি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশে সম্ভাবনাময় এই খাতটিতে উল্টোনীতি গ্রহণ নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের কোনও মহলের ভূমিকা রহস্যজনক এবং দেশীয় শিল্প বিরোধী। যার কারণে স্থানীয় বিনিয়োগ প্রবল অসম প্রতিযোগিতা ও ঝুঁকির মুখোমুখি হয়েছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। এ খাতের বাণিজ্য সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিন কেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স‌ বাংলাদেশের (এএসবিএমইবি) কার্যকরী সদস্য মো. মনির হোসেন বলেন, এই খাতে এখনই লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। শুধু সরকারের নীতি সহায়তার অভাবে শিল্পের আকার ও ব্যাপকতা আটকে আছে।
আমদানি বিকল্প দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটলে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হয়। কর্মসংস্থান ছাড়াও রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায়। তাই নীতিনির্ধারণে অগ্রাধিকার তালিকায় শীর্ষে থাকা উচিত স্থানীয় বিনিয়োগ সুরক্ষা।
তিনি বলেন, বর্তমানে কতিপয় মানহীন ও ভেজাল পণ্যের ছড়াছড়ির খবর প্রায়শই দেখা যায়। এসব ভেজাল পণ্য ব্যবহার করে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন। পড়ে যাচ্ছেন বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। তাই স্থানীয় উৎপাদনকে নীতি সহায়তা দিয়ে মানসম্মত পণ্য ক্রেতাদের জন্য সুলভ করা জরুরি। দেশে গ্লোবাল ব্র্যান্ডের উৎপাদন কার্যক্রম সম্প্রচারণে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি সহজলভ্য করা গেলে এবং সরাসরি কসমেটিক্স পণ্যের শুল্কহার বাড়ানো হলে দেশীয় উৎপাদন ও উদ্যোগকে এগিয়ে নেওয়া সহজ হবে মন্তব্য করেন বিশেষজ্ঞরা।

ট্যারিফ কমিশন তাদের সুপারিশে উল্লেখ করেছে, একজন স্থানীয় উৎপাদনকারীকে প্রতি পিসের একক মূল্যের ওপর ১০ শতাংশ হারে সম্পূরক শুল্ক প্রদান করতে হয়। যার ফলে স্থানীয় উৎপাদনকারীর ওপর সম্পূরক শুল্কের প্রভাব অনেক বেশি। কারণ আমদানিকৃত পণ্যের শুল্কায়ন মূল্যেও চেয়ে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের সম্পূরক শুল্ক আরোপযোগ্য মূল্য অনেক বেশি। ভোক্তা বাজার সবার জন্য এক হওয়ায় প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থায় স্থানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের বিনিয়োগ হুমকির সম্মুখীন।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও এনবিআরের চেয়ারম্যান প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ বলেন, প্রায় ৩শ’ কোটি ডলারের কসমেটিকস বাজারের শিল্পে বিদ্যমান সম্পূরক শুল্ক ও ভ্যাট স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য বৈষম্যের কারণ হবে। কারণ এই শিল্পের বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ১২ শতাংশ। তাই দেশীয় শিল্পে বিনিয়োগ আকর্ষণে নীতি সহায়তা জরুরি।

বাংলাদেশে কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার সামগ্রীর বার্ষিক বাজার ২১ হাজার কোটি টাকার ওপরে। এই খাত দেশের সম্ভাবনাময় একটি খাত হলেও আমদানিনির্ভর বিদেশি পণ্যের ভিড়ে দেশি কোম্পানির পণ্যগুলো অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে।

সরকারের পক্ষে দেশীয় এসব পণ্য জনপ্রিয় করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও সম্পূরক ভ্যাট, অতিরিক্ত শুল্ক আরোপকে বলা যায় এ খাতে অন্যতম বাধা। এই খাতের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্যের কাঁচামাল আমদানির শুল্ক কমালে দেশীয় বাজার আরও সম্প্রসারিত হবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কেননা এসব কাঁচামালের প্রায় ৯০ শতাংশই বিদেশ থেকে উচ্চমূল্যে আমদানি করতে হয়।

দেশীয় পণ্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের শুল্ক হ্রাস, বিদেশি পণ্য আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি, অবৈধ পথে বাজারে আসা পণ্য ঠেকানো, নকল পণ্য রোধ ইত্যাদি বিষয়ে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশে কসমেটিকস শিল্প খাতের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

লাইট ক্যাসেল পার্টনার্স‌ এবং অ্যালাইড মার্কেট রিসার্চের মতো গবেষণা সংস্থাগুলোর ভাষ্যমতে, বাংলাদেশের স্কিন কেয়ার বা পারসোনাল কেয়ার শিল্পের আনুমানিক বাজারের আকার ২০২০ সালে ছিল ১ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২৭ সালের মধ্যে এর আকার ২ দশমিক ১২ বিলিয়নে পৌঁছাবে বলে আশা করছে তারা। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০২১ থেকে ২০২৭ সাল পর্যন্ত️ ৮ দশমিক ৫ শতাংশ হারে এই শিল্প বৃদ্ধি পাবে।


বিভাগ : অর্থনীতি


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলো খুলনার তরুণরা
কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না: অর্থ উপদেষ্টা
সরকার কোনো ব্যাংক বন্ধ করবে না : অর্থ উপদেষ্টা
প্রাইম ব্যাংক’র সাথে চুক্তি করলো কাশপিয়া গ্রুপ
আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের সাথে হজ এজেন্সি প্রতিনিধিদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
আরও

আরও পড়ুন

বাইডেন সরকার বিশ্বব্যাপী উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে পারে: এফএসবি প্রধান

বাইডেন সরকার বিশ্বব্যাপী উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে পারে: এফএসবি প্রধান

অস্থিরতা ও আন্দোলনের মিত্রদের বিভক্তির দায় সরকার এড়াতে পারেনা - এবি পার্টি

অস্থিরতা ও আন্দোলনের মিত্রদের বিভক্তির দায় সরকার এড়াতে পারেনা - এবি পার্টি

বেগম জিয়া শিক্ষায় অনেক অবদান রেখেছেন-  শামীম

বেগম জিয়া শিক্ষায় অনেক অবদান রেখেছেন- শামীম

সাবেক র‍্যাব কর্মকর্তা মহিউদ্দিন ফারুকীর বিচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

সাবেক র‍্যাব কর্মকর্তা মহিউদ্দিন ফারুকীর বিচার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন

রাশিয়া দ্রুততম গতিতে ইউক্রেনে অগ্রসর হচ্ছে

রাশিয়া দ্রুততম গতিতে ইউক্রেনে অগ্রসর হচ্ছে

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার কান্ডে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার কান্ডে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

ইসকন সমর্থকদের হামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নিহত

ইসকন সমর্থকদের হামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নিহত

পাথর,বালু কোয়ারী খুলে ‍‌দেয়া সহ ১০ দফা দাবীতে সিলেটে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি

পাথর,বালু কোয়ারী খুলে ‍‌দেয়া সহ ১০ দফা দাবীতে সিলেটে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি

গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি নিয়ে জরুরি বৈঠক ডেকেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি নিয়ে জরুরি বৈঠক ডেকেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়

লক্ষ্মীপুরে ঋণের প্রলোভনে ঢাকায় লোক জড়োর চেষ্টার ঘটনায় স্বামী-স্ত্রী গ্রেপ্তার

লক্ষ্মীপুরে ঋণের প্রলোভনে ঢাকায় লোক জড়োর চেষ্টার ঘটনায় স্বামী-স্ত্রী গ্রেপ্তার

পড়লে জ্ঞান বাড়ে, ট্রেনিং করলে দক্ষতা: যবিপ্রবি উপাচার্য

পড়লে জ্ঞান বাড়ে, ট্রেনিং করলে দক্ষতা: যবিপ্রবি উপাচার্য

গণ-অভ্যুত্থান ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে শান্ত থাকুন: মাহফুজ আলম

গণ-অভ্যুত্থান ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে শান্ত থাকুন: মাহফুজ আলম

নওগাঁর গুলিবিদ্ধ যুবদল নেতা আব্দুল মজিদ মারা গেছেন

নওগাঁর গুলিবিদ্ধ যুবদল নেতা আব্দুল মজিদ মারা গেছেন

কোন ছাড় মানবে না দেশবাসী- দুর্নীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরাম

কোন ছাড় মানবে না দেশবাসী- দুর্নীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরাম

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের ওপর ক্ষিপ্ত হলেন ন্যাশনালের শিক্ষার্থী-ডাক্তাররা

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের ওপর ক্ষিপ্ত হলেন ন্যাশনালের শিক্ষার্থী-ডাক্তাররা

আয়ুবের তৃতীয় দ্রুততম শতকে উড়ে গেল জিম্বাবুয়ে

আয়ুবের তৃতীয় দ্রুততম শতকে উড়ে গেল জিম্বাবুয়ে

পদত্যাগ করলেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে

পদত্যাগ করলেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে

মহিশুরের বীর শাসক টিপু সুলতান কি হিন্দুবিরোধী ছিলেন?

মহিশুরের বীর শাসক টিপু সুলতান কি হিন্দুবিরোধী ছিলেন?

অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিনময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ

অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিনময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ

ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের আগেই বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফেরার আহ্বান

ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের আগেই বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফেরার আহ্বান