কাজী আনিস ও তার পরিবারের অর্থপাচার এবং সফট পাওয়ার কৌশলে হাসিনার জন্য লবিং
২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০১ এএম

দ্য ফিউচার ফোরামের আয়োজনে সিরিজ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের অংশ হিসেবে রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)-তে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘সফট পাওয়ার, হার্ড অ্যাবিউজ’: আওয়ামী লীগের মিডিয়া মাফিয়া’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) সম্মেলনে বাংলাদেশের মিডিয়ায় তেমনভাবে আলোচনায় না আসা সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের একটি বিপজ্জনক অস্ত্র, ‘সফট পাওয়ার’ নিয়ে আলোচনা করা হয়। কীভাবে সাবেক সরকার ‘সফট পাওয়ার’ ব্যবহার করে তাদের সহযোগীদের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে একটি নির্মম ও অগণতান্ত্রিক শাসনকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল সেগুলো তুলে ধরেন বক্তারা।
স্থানীয় মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ ও ২০১৮ সালে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট (পরবর্তীতে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট) প্রয়োগের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী সফট পাওয়ার প্রচারের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়েছিল বিগত সরকারের আমলে। বাংলাদেশ সীমান্তের বাইরেও এই নেটওয়ার্ক বিস্তৃত ছিল। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক লবিস্ট নিয়োগ, মার্কিন কংগ্রেসের কিছু সন্দেহজনক সদস্যকে অর্থ প্রদান, পক্ষপাতমূলক মতামত প্রকাশ করা, সিআরআই (সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন) প্রতিষ্ঠা, পেন বাংলাদেশ দখল ও ঢাকা লিট ফেস্ট প্ল্যাটফর্মের অপব্যবহার এরই উদাহরণ।
২০১৫ সাল থেকেই এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার ও অনেক মিথ্যা বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছিল যা মুসলিম-বিরোধী, উগ্র হিন্দুত্ববাদী ও ইসরায়েলপন্থী প্রচারণা হিসেবেও পরিচিত। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনকে লাখ লাখ ডলার প্রদান করা হয়েছিল, যা বাংলাদেশের আইনে অর্থপাচারের শামিল।
সংবাদ সম্মেলনে বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হয়। প্রথমত, আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় সফট ন্যারেটিভ প্রচারের প্রচেষ্টা। নেত্র নিউজের ২০২৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের জন্য ওয়াশিংটন ডিসিতে লিবার্টি সাউথ এশিয়া নামের লবিস্ট নিয়োগ করা হয় যার অর্থ প্রদান করা হয়েছিল দুবাইভিত্তিক গ্রিন পার্সপেক্টিভ নামের একটি কোম্পানির মাধ্যমে। কোম্পানিটি চা, কফি ও স্ন্যাকস বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিবন্ধিত।
আলোচকরা দ্য সানডে টাইমস (ইউকে)-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে জানান, স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একজন ব্রিটিশ ব্যারিস্টারকে নিযুক্ত করেছিলেন। এছাড়া সজীব ওয়াজেদ জয় স্ট্রাইক গ্লোবাল ডিপ্লোম্যাসি (এসজিডি) ও আওয়ামী লীগ সরকারের প্রাক্তন প্রধান সচিব আহমদ কায়কাউস মোরান গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিস (এমজিএস)-কে আন্তর্জাতিক প্রগাগন্ডা চালাতে অর্থ দিয়েছিলেন।
সিআরআই নামের যে প্রপাগান্ডা সংস্থাটি প্রাক্তন একনায়ক শেখ হাসিনার ভাগ্নের নেতৃত্বে ছিল, তা দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে প্রভাব বিস্তার করেছিল। ঢাকা লিট ফেস্টের প্যানেলের অপব্যবহার, সঠিক নির্বাচন ছাড়া পেন বাংলাদেশ দখল ও স্থানীয় কিছু সাংবাদিকের সহায়তায় মিডিয়ায় প্রভাব বিস্তার তেমন কিছু কাজের উদাহরণ।
আলোচনায় আরও উঠে আসে জেমকন গ্রুপের সাবেক ব্যবসায়িক অংশীদার আহসান আকবারের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের মার্চ থেকে ২০২৫ সালের ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে মামলা এবং আইনি হয়রানির ঘটনাও। বক্তারা আরও জানান, জেমকন গ্রুপের স্থানীয় ঋণের পরিমাণ ১,০০০ কোটি টাকারও বেশি। একই সঙ্গে এই গ্রুপের সংবাদপত্র ঢাকা ট্রিবিউনের প্রাক্তন কর্মীদের বকেয়া পরিশোধ না করার ঘটনাটিও আলোচিত হয়।
র্যাবকে ব্যবহার করে আসিফ আকবর এবং তার পরিবারকে মাফিয়া-ধাঁচে হুমকির অভিযোগও উঠে আসে আলোচনায়। গ্রুপটির বিরুদ্ধে অর্থপাচারের অভিযোগ নিয়েও আলোচনা করা হয়, যা তারা ইতোমধ্যে স্বীকার করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন বর্তমানে এই অভিযোগগুলো তদন্ত করছে, যা দ্য ডেইলি স্টারের ১০ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখের একটি প্রতিবেদনে বিশদভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া, জেমকন গ্রুপের পরিচালক কাজী আনিস আহমেদের জুলাই বিপ্লব চলাকালীন দেওয়া বক্তব্যগুলোর বেশিরভাগই বিতর্কিত ছিল। একইভাবে, তার ভাই এবং সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ ৪ আগস্ট ২০২৪ তারিখে জুলাই বিপ্লব চলাকালীন একটি র্যালি আয়োজন করেন, যেখানে আন্দোলনকারীদের 'সন্ত্রাসী' বলে অভিহিত করেন তিনি।
ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব)-এর সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনও এক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। ছাত্ররা ফ্যাসিবাদী শাসনের সমর্থক জেমকন গ্রুপের দুর্নীতিগ্রস্ত ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের বিরোধিতা করায় ‘জুলাই বিপ্লব’-এর ছাত্রদের সন্ত্রাসীর তকমা দেওয়া হয়। সাসপেন্ড হওয়া উপাচার্য ইমরান রহমানের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয় যিনি বোর্ডকে সক্রিয়ভাবে সমর্থন করছেন।
আলোচনায় কবি ও ঢাকা লিট ফেস্টের প্রতিষ্ঠাতা আহসান আকবার, সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক আশরাফ কায়সারসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রতিটি ঘটনায় স্বচ্ছতা ও ন্যায়বিচারের ওপর জোর দেন।
বিভাগ : অর্থনীতি
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

ট্রাম্পের শুল্কে বাংলাদেশে কমবে প্রবৃদ্ধি, বাড়বে শঙ্কা-অনিশ্চয়তা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে শীর্ষে সউদী

দাঁত ভাঙ্গা জবাব চীনের

সেনাবাহিনীতে আরও রোবট নিয়োগ করছে রাশিয়া

ইমরান খানের সমর্থকদের বিক্ষোভ

ইনভেস্টমেন্ট সামিটে টেকসই অর্থনীতির ধারণা উপস্থাপন জামায়াতের

বাংলাদেশে সউদী আরবের সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে -স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে সউদী রাষ্ট্রদূত

ট্রাম্প ও ওবামার মধ্যে জনপ্রিয়তায় কে এগিয়ে?

জাতিসংঘ-ওআইসির নিশ্চুপ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন এনপিপির

তানজির ফাহিম জুম্মার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে সিকিউরিটি গার্ড আহত

ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বর্বরতার নিন্দায় লেজিসলেটিভ অ্যাসোসিয়েশন

পহেলা বৈশাখে ব্যাপক নিরাপত্তার পরিকল্পনা ডিএমপি কমিশনার

ডাকাতির পর হত্যা : ১০ আসামির ১০ বছর করে কারাদণ্ড

আশুলিয়ায় সাব-রেজিস্ট্রারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র জনতার মানববন্ধন

সড়কের মৃত্যুদূত মোটরসাইকেল

দায়ের করলেন ‘গোপন অভিযোগ’ দুদকে হঠাৎ হাসনাত-সারজিস

তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানি হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ

ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদের সঙ্গে একমত নয় বিএনপি : সালাহ উদ্দিন আহমেদ

গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টির আহ্বান ইউজিসির