দুর্বল ব্যাংকের গ্রাহকরা যেকোনো উপায় টাকা পাবেন: গভর্নর
২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:১৭ পিএম | আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬:১৭ পিএম

দুর্বল ব্যাংকগুলো থেকে যে কোনো উপায়ে উদ্ধার করে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, আপরারা বেশি লাভের আশায় এসব দুর্বল ব্যাংকে টাকা রেখেছেন। এখন অধৈর্য হলে চলবে না। আমি আশ্বস্ত করছি আপনারা সবাই টাকা পাবেন, তবে একটু ধৈর্য ধরতে হবে। মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ ও এ সংক্রান্ত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ফজলুল কাদের।
অনুষ্ঠানে দুর্বল ব্যাংকগুলো থেকে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ১০ বছর আগে থেকেই বলে আসছি এস আলমের ব্যাংকে টাকা রাখবেন না। কিন্তু দুই শতাংশ সুদ বেশি দিচ্ছে তাই রেখেছেন, এখন ধরা খেয়েছেন। আপনাদের উদ্ধার আমরা করবো; একটু সময় দিতে হবে। এখনই পারা যাবে না; ধাপে ধাপে করবো। রেজুলেশন অ্যাক্টে যাচ্ছি, কিছু ব্যাংক মার্জ করতে হবে। অনেক কিছু করা যাবে, করা হবে। এতটুকু বলতে পারি টাকা পান বা বন্ড পান কিছু একটা পাবেন। এই বছরের মধ্যেই ব্যাংকগুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
মাইক্রোক্রেডিট নিয়ে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘মাইক্রোক্রেডিট বেশিরভাগ পল্লী অঞ্চলে ফোকাস। কিন্তু প্রোপার্টি শহরকেন্দ্রীক মুভ করছে। তাই শহরকেন্দ্রীক ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফোকাস করতে হবে। শহরে গরীব ও বস্তির লোকদের কিভাবে উন্নতি করা যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে। ক্ষুদ্র ঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে একটা রেডি ফান্ড থাকা উচিত।’
আগামীতে মাইক্রেডিট প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ আসবে বলে মন্তব্য করেছেন গভর্নর। ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘এখন টেকনোলজি বেইজ অপারেশন বেড়েছে। গ্রামীণ পর্যায় এজেন্ট ব্যাংকিং ঢুকে গেছে; তারা সব পর্যায় চলে যাবে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা আপনাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। তাই টেকনোলজি সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আপনাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। তা-না হলে ৫ বছরের মধ্যে আপনাদের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।’
তিনি বলেন, ‘এক হাজার প্রতিষ্ঠান রাখার দরকার নাই। যারা শক্তিশালী হতে পারবে আইটি বা ইন্টারনেট বেজ হতে পারবে তারাই টিক থাকবে। এসব না হলে হারিয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে ঋণ কমবে না; প্রতিষ্ঠান কমে যাবে। মাইক্রোক্রেডিট প্রতিষ্ঠানগুলোর একটা ভালো অ্যাডভান্টেজ ক্যাপিটাল বেইজ শক্তিশালী। কারণ তাদের ট্যাক্স ও ডিভিডেন্ড দিতে হয় না। এটা পজিটিভ দিক। কিন্তু অনেক ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান ল্যান্ডে বিনিয়োগ করছে। এটা তাদের কাজ নয়। তারা ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠান।’
কিস্তি আদায় নিয়ে গভর্নর বলেন, ‘বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রাজনৈতিক কারণে কিস্তি আদায় হয় না। এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। ন্যায্য কারণে কিস্তি আদায় সাময়িক বন্ধ করে রাখা হয়। এটা পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না। কারণ ওই মুহূর্তে কিস্তি দেওয়ার কথা বলা মানবিক হবে না। এখানে মাইক্রোক্রেডিটের নিজেদের ফান্ড নিয়ে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তবে যেটা সোর্স অব ফান্ড বা ব্যাংক থেকে এসেছে তা নিয়ে কিছু করা যায় কি না চিন্তা করছি।’
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘মাইক্রো ক্রেডিটের বড় ঋণের জামানত রাখলে ব্যাংকের মতো হয়ে যাবে। সবাই ব্যাংক হয়ে গেলে ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান থাকার দরকার নাই। এছাড়া ২২টা মন্ত্রণালয় মাইক্রোক্রেডিট প্রোগ্রাম চালু করেছে। এটা রিভিউ করা দরকার। সরকারের এখানে যাওয়া উচিত না। বৃটিশ আমল থেকে চলছে দেখে চালিয়ে যেতে হবে এমন কিছু নেই।’
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারক বলেন, ‘বড় বড় বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে এবং তাদের মধ্য থেকে বড় বড় খেলাপি হচ্ছে। তাদের জন্য আমরা হয়রান হচ্ছি। সে তুলনায় ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতারা অনেক ভালো আছে।’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্রাহকের মধ্যে তিন লাখ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলো। এটি আগের অর্থবছরের তুলনায় ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ বেশি। বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৫০ শতাংশই কৃষি খাতে গেছে।
এমআরএ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট বিতরণ করা ক্ষুদ্রঋণের মধ্যে এমআরএ সনদপ্রাপ্ত ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের বিতরণ করা ঋণ ২ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহক থেকে ৯৭ হাজার কোটি টাকার আমানত তুলেছে। এর মধ্যে এমআরএ সনদপ্রাপ্ত ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান সংগ্রহ করেছে ৬৮ হাজার কোটি টাকা। ২০২৪ এএমআরএ সনদপ্রাপ্ত ৭২৪টি প্রতিষ্ঠানের ২৬ হাজারের বেশি শাখা রয়েছে বলে জানানো হয়।
বিভাগ : অর্থনীতি
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

ট্রাম্পের শুল্কে বাংলাদেশে কমবে প্রবৃদ্ধি, বাড়বে শঙ্কা-অনিশ্চয়তা

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বে শীর্ষে সউদী

দাঁত ভাঙ্গা জবাব চীনের

সেনাবাহিনীতে আরও রোবট নিয়োগ করছে রাশিয়া

ইমরান খানের সমর্থকদের বিক্ষোভ

ইনভেস্টমেন্ট সামিটে টেকসই অর্থনীতির ধারণা উপস্থাপন জামায়াতের

বাংলাদেশে সউদী আরবের সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে -স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে সউদী রাষ্ট্রদূত

ট্রাম্প ও ওবামার মধ্যে জনপ্রিয়তায় কে এগিয়ে?

জাতিসংঘ-ওআইসির নিশ্চুপ ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন এনপিপির

তানজির ফাহিম জুম্মার ১৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে সিকিউরিটি গার্ড আহত

ফিলিস্তিনে ইসরাইলি বর্বরতার নিন্দায় লেজিসলেটিভ অ্যাসোসিয়েশন

পহেলা বৈশাখে ব্যাপক নিরাপত্তার পরিকল্পনা ডিএমপি কমিশনার

ডাকাতির পর হত্যা : ১০ আসামির ১০ বছর করে কারাদণ্ড

আশুলিয়ায় সাব-রেজিস্ট্রারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ছাত্র জনতার মানববন্ধন

সড়কের মৃত্যুদূত মোটরসাইকেল

দায়ের করলেন ‘গোপন অভিযোগ’ দুদকে হঠাৎ হাসনাত-সারজিস

তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানি হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ

ধর্মনিরপেক্ষতা ও বহুত্ববাদের সঙ্গে একমত নয় বিএনপি : সালাহ উদ্দিন আহমেদ

গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান সৃষ্টির আহ্বান ইউজিসির