ঢাকা   মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২ আশ্বিন ১৪৩১

অনলাইনে অর্থ লেনদেনের পরিধি বাড়াতে হবে

Daily Inqilab ড. অজয় কান্তি মন্ডল

২৪ এপ্রিল ২০২৩, ০৮:২৪ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:৪৮ পিএম

অনলাইনের মাধ্যমে অর্থের লেনদেন খুবই সহজ ও নির্ভরযোগ্য। এই পদ্ধতিতে মানুষ মুহূর্তের মধ্যে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেকোন পরিমাণ অর্থের লেনদেন করতে পারে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে অনলাইনের মাধ্যমে অর্থের লেনদেনের ব্যাপারটি জনগণের কাছে খুবই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বিশেষ করে অনলাইন শপিংয়ের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতির জুড়ি মেলা ভার। বিজ্ঞাপনে বিক্রেতার পণ্যের মূল্য অনুযায়ী কোন রকম দেন দরবার ছাড়া ক্রেতা অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করে যেখানে পণ্যের অর্ডার করে। কোন কোন ক্ষেত্রে অবশ্য পণ্য বুঝে পাওয়ার পরে মূল্য পরিশোধ করার সুযোগ থাকে। অনলাইনে কেনাকাটার ক্ষেত্রে ক্রেতা বেশ কিছু সুবিধা পায়। যেমন, অনলাইনে ঘরে বসেই হোম ডেলিভারির পাওয়ার সুযোগ থাকে, বিক্রেতা প্রতিযোগিতার বাজারে সর্বনি¤œ লাভে পণ্যের কোয়ালিটি অনুযায়ি পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে। ফলে ক্রেতার ঠকার সম্ভবনা থাকেনা, সর্বোপরি দরদাম করার ঝামেলা নেই। কোন কোন ক্ষেত্রে পণ্যের বিজ্ঞাপনের সাথে ক্রয়কৃত পণ্যের গুণগত মানের কোনরকম হেরফের হলে রিটার্নের সুযোগ থাকে। এজন্য দিনকে দিন অনলাইন শপিংয়ের দিকে মানুষ ঝুঁকছে। অবশ্য বাইরের দেশগুলোতে অনলাইন বিজনেস, অনলাইনে অর্থ লেনদেন বহু আগে থেকেই ক্রেতাদের শতভাগ আস্থা অর্জন করেছে। আমাদের দেশে অনলাইন শপিংয়ের ক্ষেত্রে এখনো অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তাই অনলাইন শপিংয়ে এখনো মানুষ খুব বেশি খুশি হতে পারছে না।

অনলাইন বিজনেস পরিচালিত করতে গেলে সর্বপ্রথম অর্থের লেনদেনে শতভাগ অনলাইন স্থানান্তরের সুবিধা থাকা উচিৎ, আমাদের দেশে যার বেশ ঘাটতি রয়েছে। অনালাইনে অর্থের লেনদেনের জন্য প্রচলিত কিছু অ্যাপস আছে। এরমধ্যে বিকাশ ও নগদ বেশ জনপ্রিয়। এসব অ্যাপসের মাধ্যমে অর্থের লেনদেনে অনেক বেশি সার্ভিস চার্জ দিতে হয়। এজন্য অনলাইন বিজনেস সেভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারছে না। বাংলাদেশ সরকারের ডাক বিভাগ কর্তৃক পরিচালিত ‘নগদ’ বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে শুধুমাত্র লেনদেনে তুলনামূলক কম চার্জ কাটায়। কিন্তু অর্থের লেনদেন করতে গিয়ে জনগণের থেকে এই চার্জ কাটার ব্যবস্থা থাকাটা আদৌ সমীচীন নয়। এটা অনেকটা সিস্টেম লসের মত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, একজন দিনমজুর কাজের তাগিদে পরিবার ছেড়ে বেশ দূরে অবস্থান করে। তার দৈনন্দিন আয় থেকে যখন সে পরিবারের খরচ বাবদ কিছু টাকা পরিবারের উদ্দেশে পাঠাতে যাচ্ছে তখন প্রতি হাজারে বেশ একটা এমাউন্ট সিস্টেম লসের মধ্যে চলে যাচ্ছে। প্রতি হাজারে টাকা পাঠাতে তাকে অতিরিক্ত গুণতে হচ্ছে ১০-১৬ টাকা বা কোথাও কোথাও তারও বেশি। একজন দিনমজুরের কাছে এই টাকার অঙ্কটা কোন অংশে কম নয়। বিষয়টা অবাক হওয়ার মতই। কেননা অর্থের লেনদেনের জন্য কোনরূপ অতিরিক্ত চার্জ দিতে হয়না। অতিরিক্ত চার্জ দিতে হয় ‘ক্যাশ আউট’ নামক উদ্ভট এক ব্যবস্থার জন্য। আমরা জানি, অর্থের নায্য মূল্যের থেকে অতিরিক্ত মূল্য বা কম মূল্যে অর্থ কেনাবেচা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সেকারণে অর্থের অনলাইন লেনদেনে কোন রকম অতিরিক্ত চার্জ কাটা হয়না। চার্জ কাটা হচ্ছে যখন ক্যাশ আউট করা হচ্ছে তখন। অর্থাৎ ইলেক্ট্রনিক টাকাকে যখন নোটে পরিণত করা হচ্ছে তখন। হিসাবটা আমার কাছে কেমন একটু উল্টাপাল্টা মনে হয়। এটা একরকম গরীবের রক্ত চোষার মত ব্যবস্থা বললে ভুল হয়না।

এখানে বিষয়টা একটু পরিস্কার করে ব্যাখ্যা করতে চাই। একজন দিনমজুর যখন নিজ এলাকায় তার কাজ খুঁজে পায়না তখন পাড়ি জমায় অন্য এলাকায়। যেমন যে এলাকায় ধান হয় সেখানে ধান কাটার মৌসুমে বেশ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। আবার যে এলাকায় চিংড়ি চাষ হয় সে এলাকায় ধান কাটার মৌসুমে দিনমজুরদের তেমন কোন কাজ থাকেনা। তাই ধানের মৌসুমে চিংড়ি চাষ এলাকা হতে দিনমজুরেরা ধান চাষের এলাকায় কাজ করতে যায়। সেখানে গিয়ে তারা ২-৩ মাস পরে বাড়ি ফেরে। এ সময়ে তাদের আয়ের একটা অংশ পরিবারের খরচের জন্য পাঠায়। এই খরচ পাঠাতে গিয়ে তাদের অতিরিক্ত বেশ কিছু টাকা ক্যাশকে অনলাইনে রূপান্তর, পরক্ষণে আবার অনলাইন থেকে ক্যাশে রূপান্তর করতে গিয়ে গুণতে হয়। তাই এটাকে আমি সিস্টেম লস’ই বলব। দেশের বহু শ্রমিক এভাবে তাদের শরীরের ঘামকে জল করে তিলতিল করে জমানো অর্থের উপর ভাগ বসানোর ব্যবস্থা করে রেখেছে দেশের প্রচলিত কিছু অনলাইনে অর্থ লেনদেনের মাধ্যম।
ই-ব্যাংকিং এবং অনলাইন ব্যাংকিং চালু হওয়ায় ব্যাংকের ক্ষেত্রে এই অর্থ লেনদেনে সিস্টেম লসে পড়ে অতিরিক্ত অর্থ গুণতে হয়না ঠিকই কিন্তু দিনমজুরের ক্ষেত্রে ব্যাংকিং প্রক্রিয়ায় অর্থ লেনদেন একেবারেই ফিজিবল না। কেননা, ব্যাংকিং লেনদেন করতে হলে ব্যাংকে হিসাব থাকাটা জরুরি। সেইসাথে অফিস টাইম মেইন্টেইন করে নির্দিষ্ট শাখায় গিয়ে টাকা জমা দেওয়া ও উঠিয়ে আনতে হবে। যেটা অন্তপক্ষে একজন দিনমজুরের জন্য কখনো উপযুক্ত নয়। কিন্তু মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে টাকা পাঠানো দিনমজুর থেকে শুরু করে চাকুরিজীবী সকলের জন্য বেশ সুবিধা বলে পরিলক্ষিত হয়। তাই সিস্টেম লসে পড়ে অতিরিক্ত যে অর্থ দেওয়া লাগে এটা মোবাইল অ্যাপের ক্ষেত্রে না হয়ে ব্যাংকিং মাধ্যমে হওয়াটা সমীচীন ছিল। যেখানে অন্ততপক্ষে একজন দিনমজুরের আয়ের টাকায় ভাগ বসানোর মত বিষয় হতনা। দেশে যদি অনলাইন কেনাকাটার প্রচলন থাকত বা কেনাকাটার সকল স্তরে ইলেক্ট্রনিক অর্থের লেনদেনের সুবিধা থাকত তাহলে ইলেক্ট্রনিক অর্থকে পুনরায় ক্যাশে রূপান্তর করার প্রয়োজন পড়ত না। শহরে কিছু কেনাকাটায় এই সুবিধা থাকলেও গ্রামে একেবারেই নেই, যার ফলে গ্রামে বসবাসকারী কেউই ইলেক্ট্রনিক অর্থের ব্যবহার করতে পারেনা। ইলেক্ট্রনিক অর্থকে পুনরায় ক্যাশে রূপান্তর করার প্রয়োজন পড়ে। আর একজন দিনমজুরের জন্য উক্ত বিষয়গুলো কোনভাবে সামর্থ্যের মধ্যে পড়ে না। অনলাইন কেনাকাটায় সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট সংযোগ থাকার প্রয়োজন আছে। যে ইন্টারনেট আমাদের দেশে চড়া মূল্যে ক্রয় করা লাগে। কিন্তু পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ইন্টারনেট অনেক স্বস্তা। কোথাও কোথাও একেবারে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যায় আবার কোথাও নামেমাত্র মূল্যে ইন্টারনেট কিনতে হয়। তাই অনলাইনের সুবিধা বাড়াতে গেলে ইন্টারনেট সেবার মান বাড়িয়ে তার সাধ্যের মধ্যে ইন্টারনেট মূল্য রাখা উচিৎ।

জনগণকে অনলাইন বা ডিজিটাল সেবা দেওয়ার কথা বহুদিন থেকে শুরু হলেও জনগণ কবে পুরোপুরি এই সুবিধা পাবে তার সুনির্দিষ্ট কোন দিনক্ষণ নেই। আর অনলাইনের কথা বলে জনগণ একের পর ঝামেলা পোহায়েই যাচ্ছে। কিছুদিন আগে অনলাইনে কিছু পণ্য অর্ডার করি। পণ্যটি কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ডেলিভারি সম্পন্ন করে। পণ্য পাওয়ার পর মূল্য পরিশোধ করার কথা ছিল। কুরিয়ার সার্ভিস থেকে আমাকে ফোন দিয়ে পণ্যটি নিয়ে আসার ব্যাপারে বলে। পণ্য আনতে গেলে কুরিায়র সার্ভিস আমাকে সমপরিমাণ টাকা দিতে বলে। আমার কাছে ক্যাশ টাকা না থাকায় বিকাশের মাধ্যমে টাকাটা পরিশোধের ব্যাপারে কুরিয়ার সার্ভিসকে অনুরোধ করলাম। কিন্তু তারা নিতে নারাজ। তাদের কথা একমাত্র ক্যাশ ছাড়া অন্যকোন উপায়ে সেখানে অর্থের লেনদেন হয়না। বিষয়টা আমার কাছে একটু আজব মনে হল। যেখানে কুরিয়ারে পণ্য বুকিংয়ের পরে অনলাইনে ট্র্যাকিংয়ের সুবিধা থাকাটা বাঞ্ছনীয়, সেটা নেই। আবার ক্যাশ পেমেন্ট ব্যতীত অন্য কোন উপায়ে পেমেন্টের সুযোগ নেই। কোন উপায়ন্তু না দেখে পাশের বিকাশ এজেন্টের থেকে হাজারে ১৬ টাকা অতিরিক্ত চার্জ দিয়ে ক্যাশ আউট করে কুরিয়রে পণ্যটি বুঝে নিই।

দেশে রোজা শুরু হওয়ার সাথে সাথে ব্যাংকারদের সাপ্তাহিক ছুটি ১ দিন হয়ে যায়। মাঝেমধ্যে দেখা যায়, ঈদের সময়ে ব্যাংকারদের ছুটি পুরোপুরি বাতিল করা হয়। কর্পোরেট শাখাগুলোতে এই বিষয়টি বেশি পরিলক্ষিত হয়। আবার ইদুল আযহার সময়ে ব্যাংকারদের ব্যস্ততা অনেকাংশে বেড়ে যায়। ক্যাশ টাকার লেনদেন যত বেশি হয় ব্যাংকারদের ব্যস্ততা তত বেশি হয়। গ্রাহককে ব্যাংকে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে টাকা নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। টাকা হাতে পাওয়ার পরেও গ্রাহকের দুশ্চিন্তার সীমা থাকেনা। কেননা এই টাকার চুরি, ছিনতাই বা ডাকাতি হওয়ার বিষয়গুলো তখন সামনে হাজির হয়। আবার জাল টাকা, ছেড়া-ফাটা টাকার ঝামেলা তো আছেই। ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন যে পরিমাণ কেনাবেচা করে সেই টাকার নিরাপদে একস্থান থেকে অন্যস্থানে স্থানান্তরের সময়ে অনেক বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা লাগে। কোন কোন সময়ে ছিনতাইকারীর খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খোয়াতে হয়। কিছুদিন আগে বঙ্গবাজারের মার্কেটের ভয়াবহ অগ্নিকা-ে ড্রয়ার ভর্তি লক্ষ লক্ষ পোড়া টাকার ব্যান্ডেল দেখা যায়। ব্যবসায়ী সেখানে টাকাগুলো নিরাপদে ক্যাশ বাক্সে রেখে গিয়েছিল। কিন্তু আকস্মাৎ অগ্নিকা-ে নিমিষের মধ্যে লক্ষ লক্ষ টাকা ভস্মীভূত হয়ে যায়। এখানে যদি অনলাইনে পেমেন্ট করা হত তাহলে ক্রেতা সরাসরি বিক্রেতার একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করত। যেখানে চুরি, ছিনতাই, জাল, ছেড়া-ফাটা টাকার ঝামেলা তো থাকতই না আবার আগুনে পুড়ে টাকা ভস্ম হওয়ার মত ঘটনা ঘটত না। জাল টাকা ছাপানো চক্র সুবিধা করতে পারত না।

এ বিষয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত বা চীনের দিকে নজর দিলে দেখা যায়, সেখানে যাবতীয় কেনাকাটার পরে অনালাইনে অর্থ পরিশোধ করার শতভাগ সুবিধা আছে। কেউ চাইলে ক্যাশ টাকাও দিতে পারে কিন্তু ক্যাশ টাকায় লেনদেনে নানা ধরণের ঝামেলা থাকায় সবাই অনলাইনে পরিশোধের বিষয়টি বেছে নেয়। চীনে আমি দেখেছি একজন সবজি বিক্রেতা যদি ৫ আটি পালংশাক বিক্রি করতে বসে তাহলে তার কাছে উইচ্যাট এবং আলিপে’র কিউআর সংবলিত কোড থাকে। ছোট একটি কাগজের দুইপাশে উইচ্যাট এবং আলিপে’র কিউআর সংবলিত কোড প্রিন্ট করে বিক্রেতার পাশে রাখা থাকে। ভারতেও একই চিত্র। ক্রেতা পণ্য ক্রয়ের পরে কিউআর কোড স্ক্যান করে বিক্রেতার মূল্য বুঝিয়ে দিচ্ছে। যেখানে ক্রেতার একাউন্ট থেকে সরাসরি মুহূর্তের মধ্যে বিক্রেতার একাউন্টে অর্থ চলে যাচ্ছে। এত সহজ এবং নির্ভরযোগ্য মাধ্যম থাকাতে সর্বাধিক জনসংখ্যা ও বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীনে কখনো তাদের জাতীয় উৎসবগুলোতে অতিরিক্ত অর্থের লেনদেনের জন্য ব্যাংকারদের ছুটি বাতিল করতে হয়না। আবার ব্যাংকে টাকা তুলতে বা জমা দিতে গিয়ে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সময়ক্ষেপণ করা লাগেনা। কিন্তু ক্যাশ টাকা একেবারেই নেই তেমনটা নয়। ক্যাশ টাকা উত্তোলন বা জমা দেওয়ার জন্য অল্প দূরত্ব পর পর এটিএম বুথ আছে। যেখানে মুহূর্তের মধ্যে ক্যাশ টাকা জমা দিয়ে ইলেক্ট্রনিক অর্থে রূপান্তর করছে। চীনাদের অনলাইনে ট্রানজেকশনে সেকেন্ডের মধ্যে একজন গ্রাহক থেকে অন্য জন গ্রাহকের কাছে অর্থের স্থানান্তর হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এই পদ্ধতিতে বেশ সময় লাগে। কোন কোন ক্ষেত্রে ৪৮ ঘন্টার ও বেশি সময় অতিবাহিত হয়।

কিছুদিন আগে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে একজনের কাছে কিছু টাকা পাঠিয়েছিলাম। পুরো ৪৮ ঘন্টা পার হওয়ার পরে সেই টাকা তার একাউন্টে জমা হয়। ‘মোবাইল ব্যাংকিং’-এর অর্থ টাকা মুহূর্তের মধ্যে এক একাউন্ট থেকে অন্য একাউন্টে স্থানান্তর হওয়া। চীনে আমি তেমনটাই দেখেছি। কিন্তু আমাদের দেশের মোবাইল ব্যাংকিং পুরোপুরি ভিন্ন। ব্যালেন্স ট্রান্সফার ট্রান্সজেকশন হওয়ার সাথে সাথে একাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়। কিন্তু বেনিফিশিয়ারি ব্যাংক বা একাউন্টে জমা হতে দীর্ঘসূত্রিতা দেখা যায়। আমার কথা হল, ব্যালেন্স ট্রান্সফারের পর বেনিফিশিয়ারি একাউন্টে জমা হতে যে ৪৮ ঘন্টা সময় অতিবাহিত হল সেই ৪৮ ঘন্টা এই টাকাটা কোথায় ছিল। তাহলে কি ধরে নেব এটাও এক ধরণের সিস্টেম লস। এমন পরিস্থিতি হলে কেউ যদি ইমারজেন্সি টাকা পাঠাতে চায় তাহলে মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে সেটা সম্ভব নয়। ভিন্ন মালিকানাধীন ব্যাংকের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি বেশ সময় সাপেক্ষ। তবে সেক্ষেত্রে যে একাউন্টে টাকা পাঠাতে হবে ঠিক সেই ব্যাংকের শাখা খোঁজ করে এরপর সেই একাউন্টে টাকা পাঠালে অধিক দ্রুত পাওয়ার সম্ভবনা থাকে। বাকি সব ক্ষেত্রে অহেতুক কালক্ষেপণ। যেখানে অনলাইন বা ই-ব্যাংকিং বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের নামে ব্যপক প্রচালনা চালানো হলেও আমি বলব এখনো এই পদ্ধতি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের শতভাগ আওতায় আসেনি। আসলে অর্থের লেনদেন এত দীর্ঘসূত্রিতা থাকত না।

মোবাইল ব্যাংকিং, ই-ব্যাংকিং বা অনলাইনে তাৎক্ষণিকভাবে অর্থ লেনদেনের জন্য নির্ভরযোগ্য কিছু অ্যাপস থাকা বাঞ্ছনীয়, যে অ্যাপসগুলো গ্রাম বা মফস্বল থেকে শুরু করে শহরের প্রতিটি কেনাকাটায় ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়ই ব্যবহার করতে উৎসাহ পায় সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এই অ্যাপস ব্যবহার করে কেউই যেন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সে বিষয় নিশ্চিত করতে হবে। ক্যাশ আউটের নামে ইলেক্ট্রনিক অর্থকে কাগজি মুদ্রায় পরিণত করতে গিয়ে বাড়তি চার্জের নিয়ম বন্ধ করতে হবে। এগুলোর চালু করার পূর্বশর্ত হিসেবে মোবাইলে নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ থাকার ব্যবস্থা করতে হবে। এ উদ্দেশে ইন্টারনেট প্যাকেজের মূল্য কমিয়ে গতি বাড়াতে হবে এবং ইন্টারনেট সংযোগ সহজলভ্য করতে হবে। অনলাইনে অর্থ লেনদেন শতভাগ নিশ্চিত করতে পারলে চুরি, ছিনতাই রোধ করা সম্ভব হবে। এছাড়া ভাংতি, কয়েন, ছেড়া-ফাটা টাকা নেওয়া বা দেওয়া নিয়ে ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে বাক-বিত-া হওয়ার সম্ভাবনা থাকবেনা। উপর্যুপরি ব্যাংকিং সেক্টরের চাপ অনেকাংশেই কমে আসবে এবং ব্যাংক কর্মকর্তারা স্বাচ্ছন্দে ঈদের ছুটি পালন করতে পারবে। ডিজিটাইলজড দেশে অর্থ লেনদেন হবে স্মার্ট পদ্ধতিতে, যেখানে আমাদের দেশ পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে অনেক পিছিয়ে। বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব সহকারে ভাববার সময় এসেছে।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।
Email: [email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

ভারতের কাছে হারানো ২০০ একর জমি ফেরত পাচ্ছে বাংলাদেশ

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

সাবেক রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গ্রেপ্তার

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

যৌথ বাহিনীর অভিযানে ১৩দিনে ১৫৫ অস্ত্র উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৭২

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবীতে বালাগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিল

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারীর সাথে সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সৌজন্য সাক্ষাৎ

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

গুলশানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যশোরে ৪ দিনের বৃষ্টিপাতে নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা, বিপর্যস্ত জনজীবন

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান টেকনাফ থেকে গ্রেপ্তার

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

৪ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমালো পাকিস্তান

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

তারাকান্দায় সাবেক এমপি শরীফসহ ৫৯ আ’লীগ নেতাকর্মীর নামে মামলা

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

শার্শায় বাবার কোদালের আঘাতে ছেলে নিহত

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

গোলাপগঞ্জে ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

কিশোরগঞ্জে ঈদে মিলাদুন্নবীর র‌্যালিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, মসজিদ-মাজার ভাঙচুর, নিহত- ১

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাবিব-বিপ্লব গংদের নির্দেশে পুলিশ নেতা সেজে বিভ্রান্ত করেছিলেন কনস্টেবল জয়

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

ইসলামের বিধি-বিধান প্রতিষ্ঠা হলে ইসলামের প্রকৃত সৌন্দর্য জগতবাসী দেখতে পাবে -মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

যানজটের সমাধান খুঁজতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মহানবী (সঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করা হলে কোন রাষ্ট্র প্রধানকে পালাতে হবেনা-মিলাদুন্নবী (সঃ) এর আলোচনা সভায় বক্তারা

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

মসজিদ-মাদরাসা কমিটি থেকে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগীদের বিতাড়িত করতে হবে: আজিজুল হক ইসলামাবাদী

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

প্রশাসক হতে চান শিক্ষকরা, ঠেকাতে একাট্টা ৪ সংগঠন

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা

বাংলাদেশের এই দলকে সেরা বললেন হার্শা