কিশোর গ্যাং রুখতে হবে
১২ মে ২০২৩, ০৮:১২ পিএম | আপডেট: ১৩ মে ২০২৩, ১২:০২ এএম
কিশোর গ্যাংয়ের অরাজকতা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম নতুন কিছু নয়। দিন দিন এর দৌরাত্ম্য এতটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, কোনোভাবেই যেন নিয়ন্ত্রণ ও দমন করা যাচ্ছে না। রাজধানী ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সপ্তাহে যাত্রাবাড়ীতে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুন হয় এক পরীক্ষার্থী। চট্টগ্রামে জোড়া খুনের ঘটনা ঘটিয়েছে কিশোর গ্যাং। পুলিশের তালিকা অনুযায়ী, ডিএমপি’র ৮টি বিভাগের মধ্যে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য সবচেয়ে বেশি তৎপর তেজগাঁও বিভাগে। এ এলাকায় তালিকাভুক্ত কিশোর অপরাধীর সংখ্যা ১০৫০। এখানে বিভিন্ন নামে ১৪টি কিশোর গ্যাং রয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কিশোর অপরাধী রয়েছে উত্তরায়। মিরপুর এলাকায় রয়েছে ২৩টি গ্রুপ। এছাড়া অভিজাত এলাকা বনানী-গুলশানসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং গড়ে উঠেছে। দেখা যাচ্ছে, কিশোর গ্যাং রাজধানীতে জালের মতো বিস্তার লাভ করেছে এবং ভয়াবহ অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব গ্যাং গড়ে ওঠা এবং মদদ দেয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষ ও তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী, এলাকার রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তারা নানা কাজে কিশোর গ্যাংকে ব্যবহার করছে। এদের আশ্রয়-প্রশ্রয় পেয়ে কিশোর গ্যাং এখন অনেকটাই দুর্দমনীয় হয়ে উঠেছে।
সাধারণত ১৮ বছরের নিচে যাদের বয়স তাদের কিশোর হিসেবে অভিহিত করা হয়। তারা অপরাধে জড়ালে কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। তবে কিশোর গ্যাংয়ের বর্তমান যে ট্রেন্ড তা পেশাদার অপরাধীদের মতো। তারা খুন, ছিনতাই, মাদক কারবার, মাদকাসক্তিসহ এমন কোনো অপরাধ নেই, যাতে জড়াচ্ছে না। তাদের অপরাধ উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির দিকে ধাবিত। দিনে-রাতে অপরাধীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। রাতের ঢাকাও অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। কয়েকদিন আগে চালককে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। এছাড়া ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি হরহামেশা হচ্ছে। রাজধানীর রাত এখন আগের চেয়ে অনেক ব্যস্ত হয়ে উঠেছে। বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্রও রাত অবদি খোলা থাকে। বিভিন্ন অর্থনৈতিক কার্যক্রম চলে। এছাড়া বিদেশগামী যাত্রীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় যাত্রীরা চলাচল করে। চলাফেরার পথে তারা ছিনতাইকারিসহ দুর্বৃত্তদের কবলে পড়ছে। এমনকি খুনের শিকার হচ্ছে। ওদিকে সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতি ও মালামাল ছিনতাই হরহামেশা হচ্ছে। অন্যদিকে, রাতের ঢাকার রাস্তাঘাটের নিরাপত্তা দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, পুলিশকে অন্য কাজে বিশেষ করে রাজনৈতিক দমন-পীড়ন ও বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের কাজে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কাজে পুলিশ যত বেশি তৎপর, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দিতে ততটাই ব্যর্থ হচ্ছে। রাত-বিরাতে চলাফেরার ক্ষেত্রে মানুষ এখন অনেকটা আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে। এর মধ্যে এলাকাভিত্তিক কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত রয়েছে। এরা এতটাই দুর্দমনীয় হয়ে উঠেছে যে, তাদের ভয়ে এলাকাবাসী আতঙ্কে থাকে। এক্ষেত্রে পুলিশ তেমন কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছে না। সমাজবিদরা বলছেন, এক্ষেত্রে সমাজের আভিভাবকদেরও ভূমিকা রয়েছে। তবে কিশোর গ্যাংয়ের পেছনে চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালীরা থাকায় এবং তাদেরকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করায় সচেতন মহল তেমন ভূমিকা রাখতে পারছে না। এক্ষেত্রে পুলিশকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
কিশোর গ্যাং দমন করা এখন সময়ের দাবি। কিশোর বয়স থেকে যে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে, বড় হয়ে সে আরও বড় সন্ত্রাসী হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। ফলে কিশোর গ্যাংয়ের সাথে যারা জড়িত তাদের দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে। যেসব কিশোর গ্যাং কালচারে জড়িয়ে পড়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো এবং সেখানে যাতে তারা প্রকৃত অর্থেই সংশোধিত হয়ে সমাজে ফিরতে পারে, এ ব্যবস্থা করতে হবে। সমাজের অভিভাবকদেরও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। যারা কিশোর গ্যাংকে প্রশ্রয় দেয় তাদের চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। অভিভাবকদের তাদের সন্তানের আচার-আচরণ, চলাফেরার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সন্তান কখন কোথায় যায়, কি করে, কাদের সাথে মেশে, এ ব্যাপারে নিয়মিত খোঁজ-খবর নিতে হবে। কিশোর গ্যাং সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। যতই দিন যাচ্ছে তাদের অপরাধের দৌরাত্ম্যের মাত্রা ততই মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সমাজের জনপ্রতিধিদেরও দায়িত্ব রয়েছে। তাদের এলাকায় কারা কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে পড়ছে, এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে তাদের শোধরানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রাজবাড়ীর পদ্মায় বরশিতে ধরা পড়লো ১৬ কেজির বোয়াল মাছ
রাজবাড়ী ডিবেট এসোসিয়েশনের দ্বি-বার্ষিক কমিটি গঠন
প্রথমবারের মতো মক্কার বাইরে পবিত্র কাবার সম্পূর্ণ কিসওয়া প্রদর্শন
মেশিন দিয়ে পানি ছিটিয়ে ধুলো নিয়ন্ত্রণ করছে ভোলা পৌরসভা
তামিমকে মুশফিক-মাহমুদ উল্লাহদের বিদায়ী বার্তা
নিত্যপণ্যের দাম কমানোর দাবীতে আশুলিয়ায় সমাবেশ
ইবির হিসাববিজ্ঞান বিভাগের নবনিযুক্ত সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ
ইজতেমার সাদপন্থিদের নিষিদ্ধের দাবিতে কুষ্টিয়ায় হেফাজতের বিক্ষোভ
কুষ্টিয়া জেলা সমিতি ঢাকার দ্বিবার্ষিক নির্বাচনে শেখ সাদী সভাপতি, আবুল হোসেন মহাসচিব নির্বাচিত
সভাপতি মিজানুর ও সা. সম্পাদক আ. হাই নির্বাচিত
মাদরাসা শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষকদের ভূমিকা অগ্রগণ্য- মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজী
চট্টগ্রামে ম্যারাথন অনুষ্ঠিত
নির্দিষ্ট সময়েও শেষ হয়নি রাস্তার কাজ, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার
কেরানীগঞ্জে বন্ধুকে হত্যার ঘটনায় ঘাতক বন্ধু আল আমিন গ্রেফতার
সস্ত্রীক লন্ডনে গেলেন মির্জা আব্বাস
চট্টগ্রাম ইপিজেডে শ্রমিক সংঘর্ষে আহত অর্ধশত
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার: রিজভী
পটুয়াখালীতে ইমামের উপর সাদপন্থিদের হামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
দেশ গড়ার কাজে অন্তর্বর্তী সরকার অভিজ্ঞ নয় : মান্না
ভৈরবে ট্রেনের টিকেটসহ দুই কালোবাজারিকে আটক