অনাবাদি জমি আবাদের আওতায় আনতে হবে
০২ জুন ২০২৩, ০৭:৫০ পিএম | আপডেট: ০৩ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভুট্টা চাষ অনেক আগে থেকেই হচ্ছে। বিশেষ করে আবাদি জমিতে এ চাষ করা হয়। এ ফসল কম খরচে বেশি উৎপাদন করা যায় বলে কৃষকরাও ভুট্টা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। উন্নত বিশ্বেও অধিক হারে ভুট্টা চাষ হয়ে থাকে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কৃষকরা আবাদি জমির পাশাপাশি অনাবদী জমি কাজে লাগিয়ে ভুট্টা চাষে ব্যাপক সাফল্য লাভ করেছে। হবিগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা বছরের অর্ধেক সময় অনাবাদি পড়ে থাকা জমিতে ভুট্টা ফলিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে তারা অনাবাদি জমিতে ভুট্টা চাষ কয়েক গুণ বাড়িয়েছে। এ বছর ৬৫২ হেক্টর জমিতে তারা চাষ করেছে। এর মধ্যে নবীগঞ্জ উপজেলায় ১৩০ হেক্টর জমিতে বাম্পার ফলন হয়েছে। ভুট্টা চাষে প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। ভুট্টা পাওয়া যায় ৩০ থেকে ৩৫ মন। বিক্রি হয় প্রতি মন ১২০০ টাকায়। ফলে অনাবাদি জমিতে ভুট্টা চাষে কৃষকদের ব্যাপক আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্বে এখন খাদ্য সংকট পরিস্থিতি চলছে। ইউক্রেন যুদ্ধ লাগার পর থেকে এ সংকট তীব্র হয়ে উঠেছে। আফ্রিকার অনেক দেশে দুর্ভিক্ষাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। খাদ্যমূল্যও অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দেশও এর বাইরে নয়। তবে কৃষকদের অক্লান্ত শ্রম ও ঘামে আমরা খাদ্য উৎপাদন ধরে রাখতে পেরেছি। বিশ্বের খাদ্য সংকটকে সামনে রেখে সরকার আগে থেকেই কৃষকদের তাকিদ দিয়ে আসছে, কোনো অনাবাদি জমি যাতে পতিত অবস্থায় না থাকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় বলে থাকেন, খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে দেশের প্রতি ইঞ্চি জায়গা চাষের আওতায় আনতে হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৯-২০২০ সালের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশে ৪ লাখ ৩১ হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি রয়েছে। কৃষিবিদদের মতে, এর পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে। বিবিএস’র প্রতিবেদনে অনাবাদি জমির যে পরিমান উল্লেখ করা হয়েছে, তাও কোনো অংশে কম নয়। এসব জমি পুরোপুরি আবাদযোগ্য করে ফসল ফলালে খাদ্যের পরিমান উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেতে পারে। এজন্য কৃষকদের উৎসাহিত করতে হবে। দেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেকগুলো কৃষি গবেষণা সংস্থা রয়েছে। সংস্থাগুলোর গবেষণায় ইতোমধ্যে অপ্রচলিত খাদ্য উৎপাদনসহ প্রচলিত খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, একেক অঞ্চলের মাটির উর্বরতা ও ধরন একেক রকমের হয়ে থাকে। ফসলের ধরন অনুযায়ী, কোনো অঞ্চলের মাটিতে বেশি ফসল উৎপাদিত হয়, কোথাও কম উৎপাদিত হয়। এক্ষেত্রে কৃষি গবেষণা সংস্থাগুলো বিভিন্ন অঞ্চলের মাটির ধরন ও উর্বরতা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কোথায় কি ফসল ভালো হবে, তা নির্ণয় করেত পারেন। এভাবে অনাবাদি জমি ব্যবহার অনেক কার্যকর হতে পারে। ইতোমধ্যে গবেষকরা উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত জমিতে লবণ সহিষ্ণু ধান আবিষ্কার করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে। এছাড়া অনেকেই অনাবাদী পাহাড়ি জায়গায় বিভিন্ন ধরনের বিদেশি ফল-ফলাদি যেমন আঙ্গুর, আপেল, ড্রাগন, সউদী খেজুর ইত্যাদি চাষ করে সাফল্য লাভ করেছে। কোথাও কোথাও পানির ওপর ভাসমান পদ্ধতিতে চাষ করে ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে, দেশের সকল অনাবাদি জমি আবাদযোগ্য করে তোলার ব্যবস্থা নিতে হবে। এমনকি গ্রামের গৃহিনীদের বাড়ির আশপাশের পতিত জায়গা কাজে লাগিয়ে শাক-সবজি ও অন্যান্য ফসল উৎপাদনে ব্রতী হতে পারে। আমাদের দেশে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে উঠানের পাশে বা আঙিনায় গৃহিনীরা শাক-সবজি চাষ করে থাকে। তাদের যদি বাড়ির চারপাশের পতিত জায়গায় ফসল চাষে উদ্ভুদ্ধ করা যায়, তাহলে ব্যাপক সাফল্য পাওয়া সম্ভব।
আমাদের দেশের কৃষকদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, তারা স্বপ্রণোদিত হয়েই ফসল ফলিয়ে থাকে। কারো আশায় বসে থাকে না। তবে সরকার সহায়তা করলে তারা উৎসাহিত হয়। বিশ্বে যেহেতু খাদ্য সংকট চলছে, এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে মনোযোগ দেয়া। অনাবাদি জমি চাষে চাষীদের উৎসাহী করে তোলা। হবিগঞ্জের কৃষকরা যেভাবে অনাবাদি জমিতে ভুট্টা চাষে উৎসাহী করে সাফল্য লাভ করেছে, একইভাবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে অনাবাদি জমি চাষে কৃষকদের উৎসাহী করে তুলতে হবে। এ ব্যাপারে কৃষি মন্ত্রণালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিক তৎপর হতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, আবহাওয়ার পরিবর্তন, খরা, বন্যা ও পানিশূন্যতা এখন আমাদের কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে উঠেছে। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা এবং বিবেচনায় নিয়ে কীভাবে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করা যায়, সেদিকে বেশি জোর দিতে হবে। এক্ষেত্রে অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনার বিকল্প নেই।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ