ভারতে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় আমরা শোকাভিভূত
০৪ জুন ২০২৩, ০৮:৪৩ পিএম | আপডেট: ০৫ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের বালাসোরে সংঘটিত ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ২৮৮ জনে দাঁড়িয়েছে। আহতের সংখ্যা ৭৪৭। শনিবার উদ্ধার অভিযান শেষে ভারতের রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আহতদের মধ্যে ৫৬ জনের অবস্থা গুরুতর। নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। রেল কর্তৃপক্ষের তদন্ত দলের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে সংকেত দিয়ে আবার তুলে নেয়ার কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। কলকাতা থেকে চেন্নাইগামী করম-ল এক্সপ্রেসকে মূল লাইন দিয়ে চলে যাওয়ার সংকেত দেয়া হয়। এরপরই আবার সংকেত তুলে নেয়া হয়। ট্রেনটি তখন বাড়তি লাইনে ঢুকে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মালবাহী ট্রেনে ধাক্কা দেয়। তখনই বিপরীত দিক যশবন্তপুর-হাওড়া এক্সপ্রেস অপর মূল লাইন ধরে চলে আসে। এতেই এই ভয়ংকর দুর্ঘটনা ঘটে। ইতোমধ্যে এই দুর্ঘটনাকে দেশটির এই শতকের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে। ১৯৮১ সারে বিহারে বাগমতি সেতু পার হওয়ার সময় একটি ট্রেন নদীতে পড়ে গেলে সাড়ে সাত শতাধিক মানুষ নিহত হয়। এরপর ১৯৯৫ সালে উত্তর প্রদেশের ফিরোজাবাদে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত হয় ৩০৫ জন। এ শতকের ২০১৯ সালে উক্ত প্রদেশের পুখরায়ানে একটি ট্রেনের ১৪টি বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় নিহত হয় ১৫২ জন। ২০১০ সালে পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়গ্রামে মুম্বাইগামী জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে একটি মালবাহী ট্রেনের মুখোমুখী সংঘর্ষে ১৪৮ জন নিহত হয়। ট্রেন দুর্ঘটনা ভারতে কোনো নতুন ঘটনা নয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ছোটখাটো দুর্ঘটনা তো বটেই, বড় দুর্ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। যদিও তুলনামূলক বিচারে ট্রেন সবচেয়ে নিরাপদ ও আরামদায়ক গণপরিবহন। মালামাল পরিবহনেও ট্রেনের অবদান বেশি। দেখা গেছে, চালকের অসতর্কতা ও ভুল সিগনালের কারণে অধিকাংশ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। সংশ্লিষ্টরা আরো সতর্ক, সাবধান ও দায়িত্বনিষ্ঠ হলে অনেক দুর্ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব।
একথা অস্বীকার করা যাবে না, গণপরিবহন হিসাবে ট্রেন বরাবরই যাত্রীদের প্রথম পছন্দ। নিরাপদে ও আরামে গন্তব্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ট্রেন অদ্বিতীয়। এর ভাড়াও অন্যান্য পরিবহনের চেয়ে কম। মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রেও টেনের অবদান অনস্বীকার্য সেই সূচনাকাল থেকেই মালবাহী ট্রেনের ব্যবস্থা রয়েছে। এখনো মালবাহী ট্রেনের অপরিহার্যতা ও জনপ্রিয়তা বিদ্যমান। ভারতে ট্রেন নিয়ে অনেক কথা আছে। ব্রিটিশ আমলে এর যাত্রা শুরু। বলা হয়ে থাকে, রেলওয়ে খ--বিচ্ছিন্ন ভারতকে ঐক্যবদ্ধ করে। একথা মিথ্যে নয়। ব্রিটিশ ভারত আলাদা আলাদা রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে গেলেও প্রতিটি দেশেই রেলওয়ে যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসাবে বিদ্যমান আছে। দেশ হিসাবে ভারত রেলওয়ে বা ট্রেনের উপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। বিপুল জনসংখ্যার দেশ হওয়ায় সেখানে জনগণের যাতায়াত ও গমনাগমনে ট্রেননির্ভরতা অনেক বেশি। এক হিসাবে দেখা গেছে, ভারতে প্রতি বছর ৮৪০ কোটির বেশি মানুষ ট্রেনে ভ্রমণ করে। প্রতিদিন ভ্রমণকারীর সংখ্যা গড়ে ২ কোটি ৩০ লাখ। বিশ্বের শীর্ষে থাকা জনবহুল দুটি দেশের অপরটি হলো চীন। চীনে ভারতের চেয়েও অধিক মানুষ ট্রেনে ভ্রমণ করে থাকে। এদের সংখ্যা বছরে গড়ে আড়াই শ’ কোটির কম নয়। রেলওয়ের উন্নয়নে ও বিকাশে চীন ও ভারতই শুধু নয়, অন্যান্য দেশও সর্বাধিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ট্রেনের গতি, লাইনের উৎকর্ষ ও যাত্রীনিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অবিরাম প্রয়াস চলছে এবং এর উল্লেখযোগ্য সাফল্য ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে। উড়োজাহাজের সমান গতিতে ট্রেন চলা এখন আর কোনো বিস্ময় নয়। তিব্বতের বরফঢাকা উঁচু পাহাড়ের ওপর দিয়ে চীনের ট্রেন লাইন বসানো পরম আশ্চর্যের বিষয় হিসাবে গণ্য হয়ে থাকে।
তারপরও ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে এবং হরহামেশাই ঘটছে। মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। তার অসতর্ক ও অসাবধান হওয়া অসম্ভব নয়। তেমনি প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির ওপর শতভাগ নির্ভর করা যায় না। যে কোনো কারণে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। তবে যে কোনো দুর্ঘটনা থেকেই শিক্ষা নেয়ার অনেক কিছু থাকে। বাংলাদেশেও ট্রেন দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এ দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে ১৯৮৯ সালে। টঙ্গীর মজুখানে দুটি ট্রেনের মুখোমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে ১৭০ জন যাত্রী নিহত ও ৪০০ যাত্রী আহত হয়। ২০১৯ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় দুই ট্রেনের মুখোমুখী সংঘর্ষে নিহত হয় ১৬ জন। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৯ পূর্ববর্তী ১০ বছরে ২০০০ ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রাণ হারিয়েছে আড়াই শতাধিক যাত্রী। আহত হয়েছে এক হাজারের বেশি। দেখা গেছে, ট্রেন দুর্ঘটনার অন্তত ৮০ শতাংশের জন্য দায়ী রেল কর্মীদের অবহেলা ও অসতকর্তা। ত্রুটিপূর্ণ সিগন্যালিং সিস্টেমের কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে। লাইনের ত্রুটির কারণেও ঘটে। তবে সতর্ক ও সাবধান হলে অনেক দুর্ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। ভারতের বালাসোরের ট্রেন দুর্ঘটনা থেকে বাংলাদেশে রেল কর্তৃপক্ষ ও কর্মীরা শিক্ষা নেবে, সাবধান হবে, কর্তব্যনিষ্ঠ হবে, সেই কামনা করি। পরিশেষে কথিত ট্রেন দুর্ঘটনায় বিপুল মানুষের নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনায় আমরা আন্তরিক শোক জানাচ্ছি। তাদের পরিবার পরিজনের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সহানুভূতি।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপি তার বিপরীত কাজ করে সুন্দর সমাজ গড়বে- কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের নেতা ইয়াকুব চৌধুরী
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি