বিশ্বের বিভিন্ন বিমান সংস্থার পাওনা পরিশোধ করতে না পারা অসম্মানজনক
০৬ জুন ২০২৩, ০৮:১৮ পিএম | আপডেট: ০৭ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম
বিমান বাংলাদেশের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, অস্বচ্ছতা ও প্রতিবছর শত শত কোটি টাকা লোকসান চলছে দীর্ঘদিন ধরে। টিকিট কেলেঙ্কারি, শিডিউল বিপর্যয়, বিমান বন্দরে যাত্রী হয়রানি, দুর্ভোগ-দুর্নীতিও অব্যাহত রয়েছে। বিমানের সারা বছরের লোকসান পুষিয়ে নিতে হজ মৌসুমেও অস্বাভাবিক তোড়জোর শুরু হয়। এ বছর হজের খরচ একলাফে প্রায় দেড় লাখ টাকা বাড়িয়ে হজযাত্রীদের কার্যত নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। বারবার সময় বাড়িয়েও হজের কোটা পূরণ করা যায়নি। লোকসানের কারণে বিমানের বেশকিছু আন্তর্জাতিক ও আভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে বিমানের জগৎ। তবে দেশের প্রধান বিমানবন্দর হযরত শাহজালাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে দেশি-বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর কার্যক্রম যথারীতি চালু থাকলেও এখন তা নতুন সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। গত সোমবার অন্যতম আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন(আইএটিএ)’র এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বাংলাদেশের কাছে আটকে থাকা বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের ২১৪ মিলিয়ন ডলার যথাশীঘ্র ছাড় না করলে তাদের পক্ষে এদেশে এভিয়েশ সেবা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইএটিএ’র ২.২৭ বিলিয়ন ডলার আটকে থাকার তথ্য জানা গেছে। এর মধ্যে প্রধান ৫টি দেশ হচ্ছে, নাইজেরিয়া, বাংলাদেশ, আলজেরিয়া, পাকিস্তান এবং লেবানন।
মূলত ডলার সংকট এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভে টান পড়ায় টিকিট বিক্রির টাকা ডলারে পরিশোধ করতে পারছেনা বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থা। বিভিন্ন বিদেশি বিমান সংস্থার তহবিল আটকে রাখায় ইতিমধ্যে বিভিন্ন সময়ে তারা টিকিটের মূল্য বাড়িয়ে দিয়েছে। বিমানের সিডিউল কমিয়েছে। অর্থাৎ এভিয়েশন নিয়ন্ত্রক সংস্থার গাফিলতি ও ব্যর্থতার দায় বহন করতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। আইএটিএ তাদের সর্বশেষ অবস্থান পরিষ্কার করে সামনের দিনগুলোতে করণীয় সম্পর্কে সতর্ক বার্তা দিয়েছে। বিদেশি এয়ারলাইন্সের আটকে রাখা তহবিল পরিশোধ না করলে এয়ার সার্ভিস বন্ধ করে দেয়ার মত ঘটনা ঘটলে দেশের ভাবমর্যাদা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়বে। এয়ারলাইন্সগুলো আন্তর্জাতিক বিশ্বের সাথে দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। আমরা যখন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলছি, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কথা বলছি, তখন দেশের পতাকাবাহী একমাত্র এয়ারলাইন্সটাকে ঠিকমত পরিচালনা করতে পারছিনা। দেশের বাইরে থাকা প্রায় দেড়কোটি প্রবাসী কর্মী রেমিটেন্স যোদ্ধারা দেশে রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল রেখেছে। সেসব রেমিটেন্স যোদ্ধারা দেশের মাটিতে নেমে বিমানবন্দরে নাজেহাল-দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। বিমানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের শত শত কোটি টাকার দুর্নীতির দায় বহন করতে হচ্ছে দেশের সাধারণ নাগরিক এবং পুরো এভিয়েশন ব্যবস্থাকে। অথচ আইএটিএ’র টাকা শোধ করতে পারছে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, আমরা আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে তা সুনামের সাথে শোধ করেছি। বিশ্বে ভাবমর্যাদা উজ্জ্বল থেকেছে। এখন জি-২০ তে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এমতাবস্থায় বিশ্বের বিভিন্ন বিমান সংস্থার পাওনা টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও অসম্মানজনক। আমরা আগেও বলেছি, দেশের ডলার সংকট কাটানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ও অর্থমন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগের সচিবের অদূরর্শিতার অভাব এক্ষেত্রে অনেকাংশে দায়ী। তারা যথাসময়ে যাথাযথ পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় ডলার সংকট দিন দিন তীব্র হয়ে উঠেছে। ফলে আমদানি-রফতানি থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়েছে। কয়লা আমদানি করতে না পারায় বিদ্যুৎ সংকট থেকে গ্যাস ও পানি সংকট দেখা দিয়েছে। আগে থেকে ডলার সংকট মোকাবেলার কার্যকর পদক্ষেপ নিলে চলমান সংকট অনেকটাই মোকাবেলা করা যেত। অর্থ পরিশোধের ব্যর্থতার মতো অসম্মানজনক পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না।
বিমান বন্দরগুলো দেশের গেটওয়ে বা প্রবেশ দ্বার। বিমানবন্দর এবং দেশীয় বিমান সংস্থার সার্ভিস দেশের উন্নত ভাবমর্যাদার প্রতীক। এ বছরের শেষের দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এশিয়ার মধ্যে অন্যতম আধুনিক বন্দরে পরিণত হতে যাচ্ছে। একে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পাঁচ তারকা হোটেল গড়ে উঠছে। এমতাবস্থায় বিশ্বের বিভিন্ন বিমান সংস্থার পাওনা পরিশোধ করতে না পারায় ইমেজ সংকট সৃর্ষ্টি হয়েছে। এহেন বাস্তবতায় বিদেশি এয়ারলাইন্সের তহবিল ছাড় করতে না পারলে আইএটিএ’র ঘোষণা অনুসারে, বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর সার্ভিস ও রুট বন্ধ হয়ে গেলে দেশের অর্থনীতি যেমন বড় ধরণের সংকটে পড়বে, একইভাবে দেশের সব অর্জন, সুনাম ও ভাবমর্যাদা প্রশ্নের সম্মুখীন হবে। ডলার সংকট সামাল দেয়ার ক্ষেত্রে যারা ব্যর্থ হয়েছে, তাদের কারণে এখন দেশের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, অর্থপাচার ও ডলার সংকট একই সূত্রে গাঁথা। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল ব্যক্তিসহ যারা ডলার ও অর্থনৈতিক সংকটের অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী, তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। এদের কারণে দেশের ইমেজ ক্ষুণœ হবে, তা মেনে নেয়া যায় না।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঘণকুয়াশায় আরিচা-কাজিরহাট, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ
আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপি তার বিপরীত কাজ করে সুন্দর সমাজ গড়বে- কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের নেতা ইয়াকুব চৌধুরী
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত