চীন-মার্কিন দ্বন্দ্ব যেন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের অন্তরায় হয়ে না দাঁড়ায়
০৭ জুন ২০২৩, ০৯:০৩ পিএম | আপডেট: ০৮ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আর মাত্র ৬ মাস সময় আছে। দীর্ঘদিনে জমে ওঠা জঞ্জাল ও প্রতিবন্ধকতা দূর করে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু করতে অন্তত দু’তিনমাস সময় হাতে রাখতে হলে এখনই তা শুরু করতে হবে। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে তার কোনো আলামত দেখা যাচ্ছিল না। মার্কিন ভিসা পলিসি ঘোষণার ব্যাপারটি মে মাসের ৩ তারিখে সরকারকে জানানো হলেও মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট এন্থনি ব্লিঙ্কেনের টুইট বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেরিয়ে আসার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার বিষয়টি গোপন রেখেছিল। ভিসা পলিসির তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর এ নিয়ে সরকার ও বিরোধিদলের মধ্যে এক ধরণের রশি টানাটানি দেখা গেছে। একটি একক দেশের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এমন ভিসা পলিসির ঘোষণা নজিরবিহীন। এই ভিসা পলিসি অনুসারে, বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা, পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা বাহিনী কিংবা সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট সদস্যসহ সরকারি আমলা, নির্বাচন কমিশন, বিচারবিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ রাজনৈতিক দলসমুহের কেউ যদি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে, তাহলে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাবেন না। যারা ইতিমধ্যে ভিসা পেয়েছেন, তাদের ভিসা বাতিল হবে। এমনকি তাদের স্ত্রী-সন্তানসহ নিকটাত্মীয়দের কেউ যদি ইতিমধ্যে ভিসা পেয়ে থাকেন, তাও বাতিল হবে। ভিসা পলিসির ধারাবাহিকতায় এমনকি গত এক-দেড় দশকে পাচার হওয়া হাজার হাজার কোটি টাকাও বাজেয়াপ্ত হতে পারে। কৌতুহলের ব্যাপার হচ্ছে, ভিসা পলিসির সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর একদিকে বিরোধীদল বিএনপি’র নেতাকর্মীরা উল্লসিত হয়েছে, অন্যদিকে সরকারিদলের মন্ত্রী এমপিদের কেউ কেউ বলেছেন, এই পলিসি বিএনপি’র বিরুদ্ধে। তাঁদের মতে, শেখ হাসিনার অধীনে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে বিএনপি বাঁধা দিলে তারা মার্কিন ভিসা পাবেনা। তবে সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের এমন দাবির প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি প্রকাশের শুরুতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বাহ্যিকভাবে একটি উইন-উইন পরিস্থিতি তৈরী করলেও সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের ভোল বদলে যেতে বেশি সময় লাগেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়াতে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুতের উদ্যোগ গ্রহণের বদলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আর না যাওয়ার পক্ষে মত দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ট্রলের ঝড় তুলেছেন। তবে জুনের ৩ তারিখে আইনমন্ত্রীর বরাতে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট কিছুক্ষণের জন্য অনলাইন মিডিয়ায় দেখা যায়। যেখানে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করবেন। তবে রিপোর্টটি ১৫ মিনিটের মধ্যে প্রত্যাহার করে নেয়া এবং পরবর্তীতে সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কিছু মন্তব্য থেকে প্রতিয়মান হচ্ছে, শেখ হাসিনা সরকার এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। আইন মন্ত্রনালয়ের তরফে প্রকাশিত বিবৃতিতে আইনমন্ত্রীর বরাতে প্রকাশিত রিপোর্টকে ‘শব্দচয়নে ভুল’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। তবে ১৪ দলের সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর বক্তব্য থেকে বুঝা যায়, সরকারের অবস্থান বদলে যেতে শুরু করেছে।
গত একযুগ ধরে ‘উন্নয়নের জোয়ারে’ ভাসছে দেশ। স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুন বেশি বাজেটে অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে জনগণের রাজস্বের হাজার হাজার কোটি লোপাট করে তা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। মেগা উন্নয়নের নামে মেগা দুর্নীতির মচ্ছব দেখেছে দেশের মানুষ। মহাজোটের নির্বাচনী মেনিফেস্টো এবং বহুজাতিক নীলনকশার নির্বাচনে ক্ষমতায় বসার পর প্রথমেই বিদ্যুত খাতকে সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবে গ্রহণ করা হয়। দেশের পুরনো বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোকে রি-শাপল করা কিংবা গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রের জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত রাখতে গ্যাস খাতের উন্নয়নে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার, পুরনো গ্যাসক্ষেত্রগুলোর সংস্কার ও সরবরাহ বৃদ্ধির উদ্যোগ, কিংবা বহুল কথিত ব্লু-ইকোনমি তথা সমুদ্রের গ্যাস ব্লকগুলো থেকে গ্যাস উত্তোলনের উদ্যোগ না নিয়ে অর্ধশতাধিক কুইকরেন্টাল বিদ্যুতকেন্দ্রের অনুমোদন দিয়ে তাদের সাথে অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তি এবং ক্যাপাসিটি চার্জের নামে এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ না নিয়েও হাজার হাজার কোটি টাকা সার্ভিস চার্জ পরিশোধের নামে জনগণের অর্থ লোপাটের মহোৎসব চলেছে, এখনো চলছে। বিদ্যুতের মত জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে লুটপাটের রাস্তা অস্বচ্ছ ও বাঁধাহীন করতে এ নিয়ে সাধারণ জনগণের প্রশ্ন কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা ঠেকাতে ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) আইন জারি করা হয়েছিল। সংসদে আলোচনা ছাড়া, দরপত্র ছাড়া যথেচ্ছভাবে ঠিকাদার নিয়োগ ও মূল্যনির্ধারনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সবচেয়ে বেশি অর্থ লোপাট করা হয়েছে। এর সর্বশেষ নজির হচ্ছে, ভারতের আদানি গ্রুপের সাথে কথিত বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি। কথিত আছে, ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের এক বছর আগে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রেসক্রিপশনে আদানি গ্রুপের সাথে গোপনে বিদ্যুৎচুক্তি করা হয়েছিল। সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি দেখানো হয়েছিল, বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে বড় বিনিয়োগ ছাড়াই প্রচলিত মূল্যে ঝাড়খন্ডে অবস্থিত আদানির কয়লাবিদ্যুত কেন্দ্র থেকে ১৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। ২০১৭ সালে আদানির সাথে চুক্তি হলেও ঝাড়খন্ডের গোড্ডায় আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শুরু করে ২০২০ সালে। দায়মুক্তি আইনের সুযোগ নিয়ে এই চুক্তির তথ্য সরকার পুরোপুরি চেপে রেখেছিল। ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় আদানি গ্রুপের লক্ষকোটি টাকার দুর্নীতির নানা রকম তথ্য ফাঁস হলে বাংলাদেশের সাথে অস্বাভাবিক বিদ্যুৎ বিক্রির চুক্তিটি আলোচনায় উঠে আসে। দেশে প্রচলিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে আদানির বিদ্যুৎ কেনা এবং ক্যাপাসিটি চার্জের নামে কোনো বিদ্যুৎ না নিয়েও বছরে ৪০০ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা দেয়ার কথা রয়েছে চুক্তিতে। এই চুক্তি বহাল থাকলে পঁচিশ বছরে এক লক্ষাধিক কোটি টাকা বেহুদা খরচ করতে হবে বাংলাদেশকে। গত ১৪ বছরে ভাড়াভিত্তিক ও কয়লাভিত্তিক নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট। কয়লা কেনার টাকা না থাকায় দেশি-বিদেশি হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ করে নির্মিত মাতারবাড়ি, পায়রা ও রামপালের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা কাজে লাগানো না গেলেও আদানির ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতেই হবে। এই মুহূর্তে দেশে একই সঙ্গে গ্রীষ্মের নজিরবিহিন তাপদাহ ও লোডশেডিং চলছে। গত বছরের শুরুতে শতভাগ বিদ্যুতায়নের সাফল্যে কোটি কোটি টাকা খরচ করে উৎসব উৎযাপন করে সরকার। এক বছরের মধ্যে সেই সাফল্যের ঝলকানো তরবারিতে মরিচা ধরে ধসে যাওয়ার এক বিবর্ণ উপাখ্যান তৈরী হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে খরচ হওয়া লক্ষকোটি টাকা আদতে এখন আর কোনো কাজে আসছে না।
দেশে সত্যিকার অর্থে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার না থাকা, গণতন্ত্র এবং রাজনৈতিক শক্তির ভারসাম্য না থাকায় প্রতিটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান তার ইতিবাচক সক্ষমতা হারিয়েছে। এ কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে প্রথমেই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করার দিকে নজর দিয়েছে। বিশ্বের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিনিধি এবং আমাদের বাণিজ্য ও উন্নয়ন অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকার কারণেই তার পক্ষে এ ধরণের পলিসি ও নীতি কৌশল বাংলাদেশে যথেষ্ট কার্যকর বলে প্রমানিত হচ্ছে। গত ১৪ বছরে দুর্নীতির মাধ্যমে দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থের একটি বড় অংশ গিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নষ্ট করে দিয়ে, উচ্চশিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ ও নিরাপত্তা ছাত্রলীগ নামধারি সন্ত্রাসিদের হাতে তুলে দিয়ে সরকারী দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মী, আমলা, পুলিশ, মন্ত্রী-এমপি ও বিরোধীদলের নেতা ও ব্যবসায়ীরা তাদের সন্তানদের পড়ালেখা ও বসবাসের জন্য প্রধানত আমেরিকা ও কানাডায় পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিছু বিচ্ছিন্ন ব্যতিক্রম বাদ দিলে, পুলিশের মত বিচারবিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশনকেও বিরোধীদল দমনের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। বিরোধী মতের গণমাধ্যমকে টুটি চেপে ধরার মাধ্যমে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভকে অকার্যকর করে তোলা হয়েছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও সাংবাদিত দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের বিচার নিয়ে টালবাহানা চলছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মী থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্পৃক্ত বিরোধীদলের নেতাকর্মী থেকে সাধারণ মানুষ ও শিশুরাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাথে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আতঙ্ক ভয় ঢুকিয়ে সরকারের সব রকম অপকর্ম আড়াল করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, আদানি গ্রুপের সাথে লক্ষকোটি টাকার গোপন চুক্তির মত ইস্যুগুলোর তথ্য বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত না হলে এ দেশের মানুষ এই সরকারের আমলে আদৌ জানতে পারত কিনা তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। বিরোধীমতের মূলধারার গণমাধ্যমগুলোর শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দিয়ে, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে কোনোমতে টিকে থাকা গণমাধ্যমকে ভয়ের মধ্যে রেখে সরকারের অন্ধ আনুগত্যশীল গণমাধ্যমকে শুধুমাত্র তেলবাজি ও উন্নয়নের রেকর্ড বাজানোতে লিপ্ত রেখে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভটিকে অকার্যকর করে তোলা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গণসম্পৃক্ততা এবং দেশের বাইরে কোটি মানুষের বাংলাদেশী ডায়াসপোরা এ ক্ষেত্রে জনসচেতনতা ও জনমত গঠণে অনেক বড় ভূমিকা পালন করছে। দেশের গণমাধ্যমগুলো যখন সত্য উদঘাটনে ভয়ের সংস্কৃতির কাছে ব্যর্থ তখন পশ্চিমা মূল ধারার গণমাধ্যমের যৎকিঞ্চিৎ ভূমিকা রিজিমের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করছে।
বাংলাদেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের রোডম্যাপ সৃষ্টিতে মার্কিন ভিসা নীতিকে একটি বাজি বা তুরুপের তাস হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ফরেন পলিসি অনলাইন মেগাজিনের এক রিপোর্টে উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের বাংলাদেশ নীতির বিশদ ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন। দেশের একটি বাংলা টেবলয়েড দৈনিক পত্রিকা কুগেলম্যানের নিবন্ধটির অনুবাদ ছেপেছে। সেক্রেটারি অব স্টেট এন্থনি ব্লিঙ্কেন ভিসা নীতি প্রকাশিত হওয়ার পর এ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তুমুল আলোচনা, রাজনীতিতে দুই প্রতিপক্ষ একে সমর্থন করা এবং রাতারাতি পরিবর্তনের সুর ধ্বনিত হওয়ার যে আমেজ বাংলাদেশে দেখা দিয়েছে, কুগেলম্যান তাকে বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পিপলস ডিপ্লোম্যাসির বিজয় বলে উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক বাস্তবায়ন এ দেশের শতকরা ৯০ভাগ মানুষের প্রাণের দাবি। এ দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস এবং আশির দশকের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মূল লক্ষ্যই ছিল গণতন্ত্র ও অংশগ্রহণমূলক অবাধ নিরর্বাচন ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। ঘোষিত মার্কিন ভিসা নীতির প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে গিয়ে কুগেলম্যান বাংলাদেশের দশম ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নজিরবিহীন কারসাজি-কাচুপির তথ্য তুলে ধরেন। সে সব নির্বাচনের আগে-পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাথে সাথে অংশগ্রহণমূলক নতুন নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছিল। জাতিসংঘ ও কমনওয়েলথের তরফ থেকেও রাজনৈতিক সমঝোতার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। শেখ হাসিনার উপর ভারতের অত্যাধিক প্রভাবের কারণেই সে সব সমঝোতার উদ্যোগ সফল হয়নি। বাংলাদেশে একপেশে ও প্রহসনমূলক নির্বাচনকে বহাল রাখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর ভারত তার প্রভাবকে সর্বাত্মকভাবে কাজে লাগিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধে ভারতের দ্বৈত ভূমিকা এবং চীনের সাথে কোনো দ্বন্দ্বে জড়ানোতে ভারতের অনীহার কারণে বাংলাদেশ প্রশ্নে এবার আর ভারতীয় প্রেসক্রিপশন হোয়াইট হাউজে কোনো কাজ করছে না। বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে প্রধান মানদন্ড হিসেবে গ্রহন করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এখন একটি ক্রান্তিকালে পড়েছে। কুগেলম্যানের মতে বাংলাদেশ চীনের মত বৈরী প্রতিপক্ষ কিংবা মিয়ানমারের মত বিচ্ছিন্ন দেশ নয়। বাংলাদেশ এতদিন ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং ভারতের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে আসছে। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ও বাণিজ্য অংশীদার হিসেবে চীনের ভূমিকার চেয়ে বিনিয়োগ, রেমিটেন্স ও গার্মেন্ট রফতানির ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়নকে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা ও নতুন সিদ্ধান্তের মূল নিয়ামক হিসেবে গ্রহণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কোনো দেশের চাপে নয়, বৈদেশিক বাণিজ্য বা কূটনৈতিক সম্পর্কের খাতিরে নয়, বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা, আকাঙ্খা ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের লক্ষ বাস্তবায়নের স্বার্থেই বাংলাদেশে জনগণের সরকার ও মানবাধিকার সমুন্নত করতে হবে। দেশের গণতন্ত্রকামী সাধারণ মানুষ গত ১৫ বছর ধরেই একটি রাজনৈতিক সংলাপ ও সমঝোতার কথা বলছে। শুধুমাত্র ভারত ছাড়া প্রায় সব উন্নয়ন অংশীদারও বাংলাদেশে একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন দেখতে চাইছে। চীন-রাশিয়ার সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব যেন বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় অন্তরায় হয়ে না দাঁড়ায়, সেদিকে সব রাজনৈতিক পক্ষকে সচেতন দৃষ্টি রাখতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপি তার বিপরীত কাজ করে সুন্দর সমাজ গড়বে- কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের নেতা ইয়াকুব চৌধুরী
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি