ডলারের বিকল্প মুদ্রা ব্যবহার করার উদ্যোগ নিতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৭ জুন ২০২৩, ০৯:০৪ পিএম | আপডেট: ০৮ জুন ২০২৩, ১২:০০ এএম

ঢাকার প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে একটি নতুন প্রত্যাশার জন্ম হলেও প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন শুরুর এক দশকের মাথায় এসে এর লক্ষ্য অর্জন সম্পর্কে নতুন প্রশ্নের উদ্ভব হচ্ছে। এক্সপ্রেসওয়েসহ ঢাকার যানজট নিরসনের লক্ষ্যে গৃহীত রাস্তা, রেল ও নৌপথের সাথে সংযুক্ত বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা ও সমন্বয়ের লক্ষ্যে গঠিত একটি বিশেষ কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কিছু বিরূপ প্রভাবের কথা তুলে ধরেন। পুরো এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ৪৬.৭৩ কিলোমিটার হলেও বিমান বন্দর থেকে কুতুবখালি পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এক্সপ্রেসওয়ে ৩১টি র‌্যাম্পের মাধ্যমে ২৭ কিলোমিটারে দাঁড়াবে। বিশেষত ভূমির উপরে থাকা ১৫টি র‌্যাম্পের স্থানগুলোতে যানজট আগের চেয়ে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশের প্রশাসন ও সাধারণ মানুষ যখন ভয়াবহ ডলার সংকট তথা অর্থনৈতিক সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছে , তখন হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মীয়মান প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যই যদি ব্যহত হয়, মাঝপথে এসে সে প্রকল্প বাস্তবায়নে এক ধরনের ধোঁয়াশা ও হতাশা দেখা দেয় তবে তার চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হয় না। পলাশি মোড় থেকে হাতিরপুল, পান্থকুঞ্জ ও এফডিসির সামনের রাস্তাসহ শহরের সবচেয়ে যানজট প্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত এলাকায় অবস্থিত এক্সপ্রেসওয়ের র‌্যাম্পগুলো যদি যানজট বাড়িয়ে দেয়, তা অগ্রাহ্য করার কোনো সুযোগ নেই।

প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি ২০১১ সালে গ্রহণ করা হলেও ২০১৩ সালে কিছু পরিবর্তন সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদন লাভের পর ২০১৫ সালে এর বাস্তবায়ন শুরু হয়। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের আওতায় চিনা, থাই ও ইতালিয়ান কোম্পানির একটি জয়েন্টভেঞ্চার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্প পরিচালকের মতে, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রকল্পের ৬২.১৮ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম রাস্তায় চলমান একটি উন্নয়ন প্রকল্প এক দশকের বেশি সময়ে শেষ করতে না পারা দুঃখজনক। একটি উন্নয়ন প্রকল্প একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে এর সর্বোচ্চ উপযোগিতা নিশ্চিত করতে পারে। বছরের পর বছর ধরে তীব্র যানজট ও জনদুর্ভোগ সৃষ্টির মধ্য দিয়ে বেশিরভাগ অংশ বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছার পর এর উপযোগিতা ও কার্যকারিতা নিয়ে নতুন প্রশ্ন দেখা দেয়া আরো দুঃখজনক ও বিস্ময়ের ব্যাপার। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মেগা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে যদি যানজট দূর করার পরিবর্তে বাড়িয়ে দেয়, সে প্রকল্পের ফিজিবিলিটি ও নকশা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। প্রকাশিত একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায়, গত ৮ মে অনুষ্ঠিত প্রকল্প সমন্বয় বিষয়ক একটি সভায় রাজউকের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের ৪১টি পিলার হাতিরঝিল প্রকল্পের মধ্যে পড়েছে, যা হাতিরঝিলের সৌন্দর্যকে ব্যহত করবে।

ডলার সংকটের কারণে গ্যাস ও কয়লা আমদানির বিল পরিশোধ করতে না পারায় বেশকিছু বিদ্যুতকেন্দ্রের ইউনিট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অস্বাভাবিক লোডশেডিংয়ের সম্মুখীন হয়েছে দেশ। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও কৃচ্ছ্রতার নীতি গ্রহণ করেছে সরকার। তবে যে সব প্রকল্প ইতোমধ্যে বাস্তবায়নের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে তা দ্রুত গতিতে শেষ করার উদ্যোগ নিতে হবে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে। এর জন্য মালামাল আমদানি কিংবা বিল পরিশোধে ডলারের বিকল্প মুদ্রা ব্যবহার করা যেতে পারে। পত্রপত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, বাংলাদেশকে জ্বালানি তেল সরবরাহ করে যে ৬টি কোম্পানি তাদের বকেয়া পাওনা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না ডলার সংকটের কারণে। তারা জ্বালানি সরবরাহ করবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছে। অন্যদিকে অতি জরুরি পণ্য ও সামগ্রীও আমদানি করা সম্ভব হচ্ছে না ডলার সংকটের কারণে। এমতাবস্থায় বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যে দেশের সাথে ব্যবসা সে দেশের মুদ্রায় পণ্য আমদানির ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যেমন, ভারত থেকে জ্বালানি তেল ও নানা আমদানিতে রুপি ব্যবহার করা যেতে পারে। অন্যান্য দেশের সঙ্গেও সেই সব দেশের মুদ্রা ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে ডলারের ওপর চাপ কমবে। প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত হাটের মাধ্যমেও পণ্য আদান-প্রদান বাড়ানো যেতে পারে। এতে দু’দেশের মুদ্রাই ব্যবহৃত হতে পারবে। কোনো মূল্যে ডলার সাশ্রয় খুবই দরকার। এদিকে সরকার অধিক মনোযোগ দেবে এবং প্রয়োজনীয় কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করবে, এটাই কাম্য।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বিহারিরা কেমন আছে
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
ভ্রমণকারীদের সচেতন হতে হবে
নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে নানা কথা
আরও

আরও পড়ুন

রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো

রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো

জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়

জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়

বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর

বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর

চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ

প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ

কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন

কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন

বিহারিরা কেমন আছে

বিহারিরা কেমন আছে

লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি

লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি

আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন

আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন

মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে

মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে

১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর

১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর

আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে

মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি

মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি

কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব

কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব

অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক

অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক

সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ

সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ

আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি

নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি

কিউবায় সমাবেশ

কিউবায় সমাবেশ