ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

ইনকিলাব নিয়ে চিন্তাশীলদের ভাবনার বিষয় রয়েছে

Daily Inqilab কামরুল হাসান দর্পণ

০৮ জুন ২০২৩, ০৮:০৯ পিএম | আপডেট: ০৯ জুন ২০২৩, ০৭:১৪ পিএম

গত বছর ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে উপসম্পাদকীয়তে ‘ইনকিলাব আজ যা ভাবে, অন্যরা তা আগামীকাল ভাবে’ শিরোনামে উপসম্পাদকীয় লিখেছিলাম। সেখানে ক্ষুদ্র পরিসরে ইনকিলাব পত্রিকার বৈশিষ্ট্য, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং কেন দেশ ও জাতির জন্য এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম। কেন ইনকিলাব দেশের অন্য দৈনিক পত্রিকার চেয়ে আলাদা, এ বিষয়টিও ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছিলাম। ইনকিলাব এমন একটি দৈনিক, যা সর্বকালের জন্য প্রাসঙ্গিক। পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ মাওলানা এম. এ. মান্নান (রহ.) নির্মোহভাবে দেশ, জাতি, দেশের সার্বভৌমত্ব সর্বোপরি ইসলামের খেদমতে তাঁর দর্শন ও চিন্তা, যা সর্বজনগ্রাহ্য, সে লক্ষ্যে আজ থেকে ৩৭ বছর আগে (গত ৪ জুন ছিল পত্রিকাটির ৩৮তম বর্ষে পদার্পণের দিন) পত্রিকাটি প্রকাশ করেন। শুধু এই পত্রিকাটিই নয়, তার দর্শন ও চিন্তাকে বিভিন্ন মাত্রায় দেশ ও মানুষের কল্যাণে সাপ্তাহিক পূর্ণিমাসহ ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ প্রকাশ করেছিলেন। পত্রিকা দুটির প্রকাশনা বন্ধ হলেও দৈনিক ইনকিলাব তাঁর সেই দর্শন ও চিন্তাকে ধারণ করে এগিয়ে চলেছে। বলা বাহুল্য, তাঁর এ দর্শন ও চিন্তা দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য হয়েছে এবং তা হয়েছে বলেই ইনকিলাব শত প্রতিকূলতার মধ্যে টিকে আছে। আমার মনে আছে, তিনি জীবিতকালে ইনকিলাবের এক প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তার দর্শনভিত্তিক বক্তব্যের এক পর্যায়ে বলেছিলেনে, ‘ইনকিলাব কেয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবে, ইনশাআল্লাহ।’ আমরা যারা প্রতিষ্ঠানটির সাথে যুক্ত, তারাও মনে করি, ইনকিলাব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে তাঁর দর্শন ও চিন্তা নিয়ে টিকে থাকবে। ইনকিলাবের অন্যতম বৈশিষ্ট হলো, ‘আপসহীনতা’। শত বাধা-বিপত্তি, হামলা-মামলা এবং বিভিন্ন গোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এগিয়ে চলেছে। এমনকি সাময়িক বন্ধের শিকার হয়েও আপস করেনি কিংবা সত্য প্রকাশে বিন্দুমাত্র পিছ পা হয়নি।

দুই.
ইনকিলাব এমন একটি পত্রিকা, যার দর্শন অত্যন্ত গভীর। এখানে চিন্তাশীলদের জন্য চিন্তার বিষয় রয়েছে। ইনকিলাবের বস্তুনিষ্ঠ ও সত্য প্রকাশের ক্ষেত্রে আপসহীন হওয়ায় অনেকে নানা ধরনের নেতিবাচক কথাবার্তা বলে থাকে। এ সংখ্যাটা হাতেগোনা। বলা বাহুল্য, তারাই নেতিবাচক কথা বলে, যারা দেশের ৯২ ভাগ মুসলমানের প্রতিনিধিত্ব করে না। যারা অন্য দেশের তাঁবেদারিতে বিশ্বাসী, যাদের দেশপ্রেমের অভাব রয়েছে, ইকিলাবের সত্যভাষণ পছন্দ হয় না এবং চিন্তার গভীরতা কম। তাদের ‘বোঝা’র ক্ষেত্রে গলদ রয়েছে। যারা বোঝে, তারা অকপটেই বলে, ইনকিলাবের মতো পত্রিকা দেশে আর দ্বিতীয়টি নেই। চিন্তাশীলরা মনে করেন, আমাদের দেশে এ পত্রিকার প্রয়োজনীয়তা সর্বকালের জন্য প্রয়োজন এবং প্রাসঙ্গিক। ইনকিলাব সময়কে ধারণ করে, অগ্রগামী চিন্তা করে। আগেই বলেছি, ইনকিলাব আজ যা ভাবে, অন্যরা তা পরে ভাবে। আলহাজ মাওলানা এম. এ. মান্নান (রহ.)-এর দর্শন ও দূরদর্শী চিন্তা নিয়ে ইনকিলাব যখন প্রকাশিত হয়, তখন চিন্তাশীল পাঠকদের মনে এক নতুন ভাবনার জগৎ খুলে যায়। একটি পত্রিকা এমন হতে পারে, এ চিন্তা তাদেরকে বিস্ময়াভিভূত করে। ফলে প্রকাশের দিন থেকেই এটি বিপুল পাঠকপ্রিয়তা পায়, যা অদ্যাবধি চলমান। শুধু দেশ, জাতি ও ইসলামের খেদমতে নয়, যুগের চাহিদা, অগ্রাগামী চিন্তা নিয়ে, প্রথাগত পত্রিকার বৈশিষ্ট্যের বাইরে একটি পত্রিকা কতটা আধুনিক ও উন্নত হতে পারে, তা দেখে সে সময় পাঠকরা বিস্মিত হয়েছে। সংবাদপত্র জগতে এক নতুন ধারার সৃষ্টি করে ইনকিলাব। পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ইনকিলাবই তখন একমাত্র পত্রিকা ছিল, যা সে সময়ের সর্বাধুনিক ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করে। বিষয়বস্তুর ক্ষেত্রে ভিন্ন চিন্তা যোগ করে। দেশের সে সময়ের প্রখ্যাত সাংবাদিকদের সমন্বিত চিন্তা ও গবেষণালব্ধ জ্ঞানে ইনকিলাব পত্রিকা জগতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। মূল পত্রিকার সাথে যে বিষয়বস্তু নির্ভর আলাদা সাপ্লিমেন্ট বা ফিচার পাতা থাকতে পারে, এ চিন্তা অন্য পত্রিকাগুলোর মধ্যে না থাকলেও ইনকিলাব তা প্রকাশ করে সবাইকে সে পথ অনুসরণে বাধ্য করে। মূল পত্রিকার সাথে আলাদাভাবে রাজনীতি, বুদ্ধিজীবীদের মতামত প্রকাশ, সাহিত্য, ইসলামী জীবন, ইসলামী দর্শন ও কোরআন-হাদিস নিয়ে আলাদা ফিচার পাতা, মফস্বলের সংবাদভিত্তিক পাতা আভ্যন্তরীণ, বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক ফিচার যেমন উপহার, বিনোদন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, খেলার পাতাসহ অন্যান্য বিষয়ের ওপর ফিচার পাতা প্রকাশ করে পত্রিকা জগতে এক নবযুগের সূচনা করে। ইনকিলাব পুরো পত্রিকা জগতের চিন্তা, চেতনা ও ভাবনাকে বদলে দেয়। পাঠকরা সেই থেকে আজ পর্যন্ত ইনকিলাবে কি সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে, নতুন কি যুক্ত হয়েছে, তা জানার জন্য সর্বাগ্রে পত্রিকাটি হাতে তুলে নেয়। এমনকি এর বিরুদ্ধবাদীরাও ইনকিলাবে কি লেখা হয়েছে, তা দেখার জন্য পত্রিকাটি পড়ে, বরং বলা ভালো, পড়তে বাধ্য হয়। অস্বীকার কারার উপায় নেই, অর্থনৈতিক সংকট এবং বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়ে পত্রিকাটির কলেবর ছোট হয়েছে বটে, তবে পাঠকের কাছে এর আবেদন এতটুকু কমেনি। সব পত্রিকার ক্ষেত্রেই এমনটি ঘটেছে। ইনকিলাবের সংবাদের ‘ওজন’ এবং ‘গভীরতা’ চিন্তাশীল পাঠকদের চিন্তার খোরাক জোগায়। এজন্য কোথাও ইনকিলাব পাওয়া না গেলে তারা খুঁজে বের করে। এক কপি ভাগাভাগি করে দশজনে পড়ে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা কালাকানুনের মাধ্যমে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা যখন খর্ব করা হয়েছে এবং হচ্ছে, কিংবা সংবাদপত্রগুলোকে ‘সেল্ফ সেন্সরশিপ’ অবলম্বন করতে হচ্ছে, তখনও ইনকিলাব অনিয়ম, দুর্নীতি এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে পিছপা হয়নি। দেশকে দিকনির্দেশনা দেয়ার পবিত্র দায়িত্ব নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। এতে বাধা এসেছে। মামলা-মোকদ্দমার শিকার হতে হয়েছে। তবে দমে যায়নি। যা বলা প্রয়োজন, তা বলেছে এবং প্রকাশ করা অব্যাহত রেখেছে। এতে ইনকিলাবের ওপর ক্ষমতাসীন ও প্রভাবশালীদের বিরূপ মনোভাবের অপছায়ার মধ্যে বরাবরই থাকতে হয়েছে এবং হচ্ছে। পত্রিকার আয়ের অন্যতম যে খাত সরকারি-বেসরকারি বিজ্ঞাপন, তা ইনকিলাবের জন্য সংকুচিত করা হয়েছে। প্রশাসনের বিরূপ মনোভাবের কারণে প্রাপ্য বিজ্ঞাপন দেয়া হয় না। এতসব প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও ইনকিলাব তার লক্ষ্য, আদর্শ ও দর্শনে অবিচল রয়েছে। বরং সময়ের সাথে সাথে শানিত হয়েছে। পাঠকদের সামনে ন্যায়নিষ্ঠ ও সত্য তুলে ধরে যে আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছে, তাই ইনকিলাবের চলার শক্তি হয়ে রয়েছে। তারাই ইনকিলাবের চলার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছে এবং দিচ্ছে। ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ মাওলানা এম. এ. মান্নান (রহ.) যেমন আধ্যাত্মিক ব্যক্তি ছিলেন, তেমনি দেশের আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখ, আধ্যাত্মিক ব্যক্তি এবং ইসলামপ্রিয় মানুষের দোয়া ও ভালবাসা এর অন্যতম শক্তি হয়ে রয়েছে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান এবং স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে ইনকিলাবের অগ্রণী ও আপসহীন ভূমিকাই এর মূল ভিত্তি। শুধু দেশেই নয়, দেশের গ-ি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও ইনকিলাবের সংবাদের গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা দেখেছি, ইনকিলাব যখন অন্যায়ভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল, তখন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে তা নিয়ে ব্যাপক সংবাদ পরিবেশিত হয় এবং নিন্দা জানানো হয়।

তিন.
একটি কথা না বললেই নয়, যে দূরদর্শী চিন্তা ও দর্শন নিয়ে আলহাজ মাওলানা এম. এ. মান্নান (রহঃ) ইনকিলাব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তাঁর ইন্তেকালের পরও তা পথ হারায়নি। এ পথ হারাতে দেননি পত্রিকাটির জন্মলগ্ন থেকেই এর সম্পাদক ও প্রকাশনার দায়িত্ব পালন করা তাঁর বড় পুত্র এ এম এম বাহাউদ্দীন। এত দীর্ঘসময় ধরে বাংলাদেশে তো বটেই, বিশ্বের আর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন কিনা জানা নেই। ইনকিলাব প্রতিষ্ঠার যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য, তা তিনি সফলভাবে ধরে রেখেছেন। এ থেকে এতটুকু বিচ্যুত হননি, বিচলিত হননি, বরং ইনকিলাবকে তাঁর প্রজ্ঞা ও মেধা দিয়ে আরও শানিত করেছেন। সময়কে ধারন করে, সময়োপযোগী করে ইনকিলাবকে এগিয়ে নিচ্ছেন। ইনকিলাবে আমার ক্যারিয়ার ২৭ বছর। এই দীর্ঘ সময় ধরে নিজ সামর্থ্য ও জ্ঞান দিয়ে তাঁকে পর্যবেক্ষণ করেছি। বিস্মিত হয়ে লক্ষ্য করেছি, ইনকিলাব ছাড়া তাঁর আর কোনো ধ্যান-জ্ঞান নেই। এই এক ইনকিলাব নিয়েই জীবন কাটিয়ে দিচ্ছেন। আমরা সাধারণত দেখি, নতুন কোনো পত্রিকা প্রকাশিত হলে তার পেছনে কোনো না কোনো বিশাল শিল্প প্রতিষ্ঠান বা কর্পোরেট হাউস জড়িয়ে থাকে। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠান পত্রিকা প্রকাশ করে নিজ স্বার্থ রক্ষা ও ব্যবসায়িক ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার জন্য। এতে দেশ ও জাতির কল্যাণের প্রতিফলন খুব কমই ঘটে। পাঠক, লক্ষ্য করলে দেখবেন, প্রচারের শীর্ষে, সর্বাধিক প্রচারিত ইত্যাদি নানা স্লোগান নিয়ে যেসব পত্রিকা বাজারে রয়েছে, সেগুলোর প্রত্যেকটির পেছনে রয়েছে কোনো না কোনো শিল্পগোষ্ঠী, যাদের উদ্দেশ্যই হচ্ছে, নিজ স্বার্থ ও সম্পদ রক্ষা এবং নিজের মুখপাত্র হিসেবে প্রকাশ করা। কিংবা ক্ষমতাসীনদের তোয়াজ বা তাঁবেদারি করে স্বার্থ হাসিল করা। দেশ, জাতি ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের পক্ষে তাদের ভূমিকা বলতে কিছু নেই। দিক নির্দেশনামূলক কোনো লক্ষ্য নেই। অথচ ইনকিলাব কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এটি সুনির্দিষ্ট দর্শন নিয়ে ‘শুধু দেশ ও জনগণের পক্ষে’ কথা বলার জন্য ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পত্রিকার আয় দিয়েই পত্রিকা চলার নীতি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ এম এম বাহাউদ্দীনের নিজেরও কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নেই। তিনি এমন একজন সম্পাদক, যাঁর পুরো সময়ই কাটে ইনকিলাব নিয়ে। দেশ ও জাতির স্বার্থে ইনকিলাবকে আরও কিভাবে বিস্তৃত করা যায়, এ চিন্তা ও গবেষণায় ডুবে থাকেন। বিচরণ করেন দেশ-বিদেশের সংবাদের মধ্যে। দেশ তো বটেই, আন্তর্জাতিক অঙ্গণের রাজনীতি, অর্থনীতি, মুসলমানদের পরিস্থিতি ও স্বার্থ, পরাশক্তির দেশগুলোর আগ্রাসন ও বৈষম্যমূলক নীতি থেকে শুরু করে হেন কোনো বিষয় নেই, যা তিনি পর্যবেক্ষণ করেন না। ইন্টারনেটের এ যুগে তাঁর পর্যবেক্ষণকে আরও সহজ করে দিয়েছে। বিশ্বের কোথাও কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা মুহূর্তে সংগ্রহ করে ইনকিলাবের পাঠকদের সামনে তুলে ধরছেন। দেখা গেছে, একই সংবাদ ইনকিলাবে যেদিন প্রকাশিত হয়েছে, তা কয়েক দিন পর অন্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। অর্থাৎ সবার আগে দেশ ও বিদেশের সব সংবাদ তাঁর গোচরিভূত হচ্ছে। দেশ ও আন্তর্জাতিক সমস্যাকে মানুষ হিসেবে মানুষের সমস্যাকে উপলব্ধি করেন তিনি। এ নিয়ে কি করতে হবে, তাঁর দিকনির্দেশনামূলক প্রতিবেদন, সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় ও নিবন্ধ প্রকাশ করেন। বিশ্বে মুসলমানদের ওপর পরাশক্তির দেশগুলোর নিপীড়ন ও নির্যাতনের পক্ষে ইনকিলাবকে নিয়ে সোচ্চার থাকেন। বলা বাহুল্য, বিশ্বে মুসলমানদের স্বার্থ নিয়ে কথা বলার মতো পত্রিকা বিরল। এ এম এম বাহাউদ্দীন ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থ নিয়ে যেভাবে চিন্তা করেন এবং তার প্রতিফলন ঘটান, সেভাবে কোনো পত্রিকাকে দায়িত্ব নিতে দেখা যায় না। ইনকিলাব যারা পড়েন, তারা এ বিষয়টি ভালো করেই জানেন। তিনি ইনকিলাবকে এমন একটি পত্রিকায় পরিণত করেছেন, যা চিন্তাশীলদের চিন্তা করতে কিংবা তাদের বোধকে জাগাতে বাধ্য করে। এই যে ইনকিলাবের প্রথম পাতায় ‘শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম’ নামে যে কলামটি ছাপা হয়, তা কি গভীর চিন্তার বিষয় নয়? ভারত সরকার যখন ভারতের মুসলমান শাসকদের অবদান ও শাসন ব্যবস্থা নিয়ে ইতিহাস বিকৃতি ও একের পর এক তাদের স্থাপত্যকীর্তি ধ্বংস করে দিচ্ছে, তখন ইনকিলাব মুসলমান শাসকদের শাসনামলের প্রকৃত ইতিহাস এবং তাদের অবদান ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরেছে। মুসলমানদের গৌরবোজ্জ্বল শাসন ব্যবস্থার ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরেছে। এই গভীর চিন্তা করেছেন এ এম এম বাহাউদ্দীন। আর কোনো পত্রিকা কিংবা তার সম্পাদক কি এ কাজটি করেছেন? করেননি। এখানেই ইনকিলাব এবং এর সম্পাদকদের সাথে অন্যদের পার্থক্য। তারা ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে বসবাস করেও মুসলমানদের স্বার্থে ও পক্ষে কথা বলে না। অসাম্প্রদায়িকতার নামে দেশের মূল ধারা বা অস্তিত্বকে অস্বীকার করে। সম্পাদকীয় বিভাগে আমরা যখন সম্পাদকীয় লেখার বিষয় নিয়ে মিটিং করে বিভিন্ন বিষয় নির্ধারণ করি এবং তাঁর সাথে কথা বলি, তখন দেখা যায়, আমরা যে চিন্তা করি, তার চেয়ে ভিন্ন অথচ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় তিনি উপস্থাপন করেন। আবার আমরা যে চিন্তা করি, তার সাথে একমত হয়ে যে কথাগুলো বলেন, তাতে একটি সাধারণ বিষয় অসাধারণ এবং দেশ ও জাতির জন্য দিকনির্দেশনামূলক হয়ে ওঠে। আমরা দেখেছি, ইনকিলাবে যে সম্পাদকীয় লেখা এবং বলা হয়, সরকারের নীতিনির্ধারকরাও তা গ্রহণ করে সেভাবেই নীতিনির্ধারণ করেন। ইনকিলাবের দিকনির্দেশনা জনসমক্ষে উচ্চারণ করেন। অর্থাৎ ইনকিলাব পাঠক থেকে শুরু করে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত চিন্তা করতে এবং সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করে। অন্য পত্রিকা থেকে ইনকিলাবের পার্থক্য এখানেই। অন্যদিকে, যাদের কাছে ইনকিলাবের প্রতিবেদন ও সম্পাদকীয়কে অকল্যাণকর মনে হয়, দেখা যায় পরবর্তীতে তাই কল্যাণকর হয়ে দাঁড়ায়। এর কারণ হচ্ছে, ইনকিলাব নির্মোহ ও নিঃস্বার্থভাবে দেশ ও মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে পথ চলে। এখানে ইনকিলাবের কোনো কর্পোরেট সুবিধা লাভ কিংবা নিজ স্বার্থ হাসিলের বিষয় নেই।

চার.
ইনকিলাবের সাথে অন্য পত্রিকাগুলোর পার্থক্য হচ্ছে, ইনকিলাব কোনো ব্যক্তি কিংবা বাণিজ্যিক স্বার্থে প্রকাশিত হয় না। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সত্য ও বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করে যাচ্ছে। এখান থেকে এ এম এম বাহাউদ্দীন কোনো আর্থিক সুবিধা লাভের চিন্তা করেন না। আর্থিক সংকট, নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যেই তিনি ইনকিলাব প্রকাশ অব্যাহত রেখেছেন শুধু মাত্র দেশ, জাতি ও ইসলামের খেদমতে। এ যে কত বড় দায়িত্ববোধ, তা একমাত্র চিন্তাশীল ছাড়া উপলব্ধি করা সম্ভব নয়।

[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী  প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।

ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল

রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল

‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড

‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড

সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড

সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড

শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল

শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে