ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের ফেরাতে জোরালো কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৯ জুন ২০২৩, ০৭:৪৬ পিএম | আপডেট: ১০ জুন ২০২৩, ১২:০৩ এএম

মিয়ানমার সরকারের নিপীড়ন, নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে প্রায় ছয় বছর আগে রাখাইন থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। মানবিকতা দেখিয়ে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় দেয়। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় তাদের জীবনযাপনেরও ব্যবস্থা করে। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও বিতাড়নের প্রতিবাদে জাতিসংঘসহ যুক্তরাষ্ট্র ও প্রভাবশালী দেশগুলো মিয়ানমার সরকারের নিন্দা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে। এসবে মিয়ানমার সরকার তেমন কোনো কর্ণপাত করেনি। রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে আন্তরিক আগ্রহ দেখায়নি। বাংলাদেশ সরকার বহুভাবে মিয়ানমার সরকারের সাথে আলাপ-আলোচনা করেছে। তাতেও খুব একটা কাজ হয়নি। আমরা বরাবরই বলেছি, চীন যদি আন্তরিকভাবে উদ্যোগ নেয়, তাহলে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি অনেকটাই সহজ হতে পারে। এর সাথে ভারত যুক্ত হলে আরও গতি পাবে। শুরুর দিকে চীন এ বিষয়ে তেমন একটা আগ্রহ না দেখালেও এখন তার সক্রিয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা আশা ব্যঞ্জক। অনেকটা মৌনতা অবলম্বন করেছে। কূটনৈতিক কিছু কথাবার্তা ছাড়া আর কোনো বক্তব্য দেয়নি।

২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়ন শুরু করলে দেশটি থেকে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এ সংখ্যাটি এখন প্রায় দশ লাখ। সে সময় বিশ্বজুড়ে তোলপাড় ও নিন্দার ঝড় ওঠে। রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগে মিয়ানমার সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) এবং গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলা হয়। চীন রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে মধ্যস্থাপনাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। তার মধ্যস্থতায় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর উদ্যোগ নেয়া হয়। তখন প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ থেকে ৮ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারে পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে পাইলট প্রকল্পের আওতায় প্রথম ধাপে ১১৪০ জন রোহিঙ্গাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ৭১১ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার সম্মতি দেয়। বাকি ৪২৯ জনের ব্যাপারে মিয়ানমারের আপত্তি ছিল। বাংলাদেশ সরকারের দাবির প্রেক্ষিতে, মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধিদল এ বছরের মার্চে টেকনাফ এসে ৪২৯ জন রোহিঙ্গার পাশাপাশি তাদের পরিবারে জন্ম নেওয়া আরও ৫১ জন শিশুর তথ্য সংগ্রহ করে। রোহিঙ্গাদের আস্থা অর্জনের জন্য তাদের ২০ জনের প্রতিনিধিদলকে গত ৫ মে রাখাইনের পরিস্থিতি দেখানো হয়। বলা যায়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের একটি ধীরলয়ের প্রক্রিয়া চলছে। একটা সময় বিতাড়িত রোহিঙ্গারা নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে দেশে ফিরে যাবে না বলে বেঁকে বসে। আশার বিষয়, এখন রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যেতে চাইছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে কয়েকশ’ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ‘গো হোম’ ক্যাম্পেইন করে উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরে মানববন্ধন করেছে। এছাড়া বিভিন্ন ক্যাম্পে তারা দেশে ফিরে যাওয়ার প্রচারণা চালায়। মানববন্ধনে রোহিঙ্গা নেতারা চারটি দাবি উত্থাপন করে যার মধ্যে রয়েছে, নাগরিকত্ব প্রদান, রাখাইনে ফেলে আসা জন্মভিটাতে পুনর্বাসন, স্বাধীনভাবে চলাফেরার সুযোগ এবং লুণ্ঠিত সম্পদ ও জায়াগ-জমি ফেরত দেয়া। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার এই আগ্রহ অত্যন্ত ইতিবাচক। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিদেশে যত সুযোগ-সুবিধা দেয়া হোক না কেন, প্রত্যেকেই একটা সময় নিজ দেশে ভিটামাটিতে ফিরে যেতে চায়। নাগরিক হিসেবে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে চায়। রোহিঙ্গারা যে বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে তা তারা উপলব্ধি করতে পারছে। তাদের ভরণপোষণ করতে বাংলাদেশকে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি তো বটেই, অর্থনৈতিক চাপ, সামাজিক সমস্যা থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রেও এক ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে।

প্রতিবেশি হিসেবে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয়ে দুদেশ সম্পর্কযুক্ত। এর মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সমস্যা কাঁটা হয়ে রয়েছে। এ সমস্যা মিয়ানমারই সৃষ্টি করেছে। এখানে বাংলাদেশের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বরং তা তার জন্য একটা সংকট হয়ে রয়েছে। ফলে এ সমস্যার দ্রুত সমাধান হওয়া জরুরি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশকে আরও দ্রুত, গতিশীল ও জোরালো কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে চীন যাতে আরও তৎপর হয়, এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। চীনসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কার্যকর ও আন্তরিক সহযোগিতা করলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ক জটিলতা কেটে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না। রোহিঙ্গাদের ফেরার ক্ষেত্র যাতে সহজ ও মসৃণ হয় সেজন্য তাদের দাবি অনুযায়ী, নাগরিকত্বসহ নিজ দেশে যাতে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী  প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।

ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল

রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল

‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড

‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড

সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড

সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড

শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল

শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে