রোহিঙ্গাদের ফেরাতে জোরালো কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে
০৯ জুন ২০২৩, ০৭:৪৬ পিএম | আপডেট: ১০ জুন ২০২৩, ১২:০৩ এএম
মিয়ানমার সরকারের নিপীড়ন, নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়ে প্রায় ছয় বছর আগে রাখাইন থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিল। মানবিকতা দেখিয়ে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় দেয়। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় তাদের জীবনযাপনেরও ব্যবস্থা করে। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন ও বিতাড়নের প্রতিবাদে জাতিসংঘসহ যুক্তরাষ্ট্র ও প্রভাবশালী দেশগুলো মিয়ানমার সরকারের নিন্দা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে। এসবে মিয়ানমার সরকার তেমন কোনো কর্ণপাত করেনি। রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে আন্তরিক আগ্রহ দেখায়নি। বাংলাদেশ সরকার বহুভাবে মিয়ানমার সরকারের সাথে আলাপ-আলোচনা করেছে। তাতেও খুব একটা কাজ হয়নি। আমরা বরাবরই বলেছি, চীন যদি আন্তরিকভাবে উদ্যোগ নেয়, তাহলে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি অনেকটাই সহজ হতে পারে। এর সাথে ভারত যুক্ত হলে আরও গতি পাবে। শুরুর দিকে চীন এ বিষয়ে তেমন একটা আগ্রহ না দেখালেও এখন তার সক্রিয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা আশা ব্যঞ্জক। অনেকটা মৌনতা অবলম্বন করেছে। কূটনৈতিক কিছু কথাবার্তা ছাড়া আর কোনো বক্তব্য দেয়নি।
২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়ন শুরু করলে দেশটি থেকে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এ সংখ্যাটি এখন প্রায় দশ লাখ। সে সময় বিশ্বজুড়ে তোলপাড় ও নিন্দার ঝড় ওঠে। রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা ও নির্যাতনের অভিযোগে মিয়ানমার সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) এবং গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মামলা হয়। চীন রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে মধ্যস্থাপনাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। তার মধ্যস্থতায় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর উদ্যোগ নেয়া হয়। তখন প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ থেকে ৮ লাখ রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারে পাঠানো হয়েছিল। এর মধ্যে পাইলট প্রকল্পের আওতায় প্রথম ধাপে ১১৪০ জন রোহিঙ্গাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ৭১১ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার সম্মতি দেয়। বাকি ৪২৯ জনের ব্যাপারে মিয়ানমারের আপত্তি ছিল। বাংলাদেশ সরকারের দাবির প্রেক্ষিতে, মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধিদল এ বছরের মার্চে টেকনাফ এসে ৪২৯ জন রোহিঙ্গার পাশাপাশি তাদের পরিবারে জন্ম নেওয়া আরও ৫১ জন শিশুর তথ্য সংগ্রহ করে। রোহিঙ্গাদের আস্থা অর্জনের জন্য তাদের ২০ জনের প্রতিনিধিদলকে গত ৫ মে রাখাইনের পরিস্থিতি দেখানো হয়। বলা যায়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের একটি ধীরলয়ের প্রক্রিয়া চলছে। একটা সময় বিতাড়িত রোহিঙ্গারা নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে দেশে ফিরে যাবে না বলে বেঁকে বসে। আশার বিষয়, এখন রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যেতে চাইছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে কয়েকশ’ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার ‘গো হোম’ ক্যাম্পেইন করে উখিয়ার কুতুপালং আশ্রয়শিবিরে মানববন্ধন করেছে। এছাড়া বিভিন্ন ক্যাম্পে তারা দেশে ফিরে যাওয়ার প্রচারণা চালায়। মানববন্ধনে রোহিঙ্গা নেতারা চারটি দাবি উত্থাপন করে যার মধ্যে রয়েছে, নাগরিকত্ব প্রদান, রাখাইনে ফেলে আসা জন্মভিটাতে পুনর্বাসন, স্বাধীনভাবে চলাফেরার সুযোগ এবং লুণ্ঠিত সম্পদ ও জায়াগ-জমি ফেরত দেয়া। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার এই আগ্রহ অত্যন্ত ইতিবাচক। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিদেশে যত সুযোগ-সুবিধা দেয়া হোক না কেন, প্রত্যেকেই একটা সময় নিজ দেশে ভিটামাটিতে ফিরে যেতে চায়। নাগরিক হিসেবে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে চায়। রোহিঙ্গারা যে বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে তা তারা উপলব্ধি করতে পারছে। তাদের ভরণপোষণ করতে বাংলাদেশকে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি তো বটেই, অর্থনৈতিক চাপ, সামাজিক সমস্যা থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রেও এক ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে।
প্রতিবেশি হিসেবে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয়ে দুদেশ সম্পর্কযুক্ত। এর মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সমস্যা কাঁটা হয়ে রয়েছে। এ সমস্যা মিয়ানমারই সৃষ্টি করেছে। এখানে বাংলাদেশের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। বরং তা তার জন্য একটা সংকট হয়ে রয়েছে। ফলে এ সমস্যার দ্রুত সমাধান হওয়া জরুরি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাংলাদেশকে আরও দ্রুত, গতিশীল ও জোরালো কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে চীন যাতে আরও তৎপর হয়, এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। চীনসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কার্যকর ও আন্তরিক সহযোগিতা করলে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিষয়ক জটিলতা কেটে যেতে খুব বেশি সময় লাগবে না। রোহিঙ্গাদের ফেরার ক্ষেত্র যাতে সহজ ও মসৃণ হয় সেজন্য তাদের দাবি অনুযায়ী, নাগরিকত্বসহ নিজ দেশে যাতে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ঘণকুয়াশায় আরিচা-কাজিরহাট, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ
আওয়ামী লীগ যা করেছে, বিএনপি তার বিপরীত কাজ করে সুন্দর সমাজ গড়বে- কেন্দ্রীয় শ্রমিক দলের নেতা ইয়াকুব চৌধুরী
রোমাঞ্চকর ম্যাচে বার্সাকে হারিয়ে শীর্ষে আতলেটিকো
জেসুসের জোড়া গোলের রাতে আর্সেনালের বড় জয়
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত