অবিলম্বে ইজিবাইক ও থ্রিহুইলার বন্ধ করতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

১০ জুন ২০২৩, ০৭:৫৫ পিএম | আপডেট: ১১ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম

দেশে ভয়াবহ বিদ্যুৎ সংকট চলছে। দিনের মধ্যে একাধিকবার লোডশেডিং করেও বিদ্যুতের ঘাটতি মেটানো যাচ্ছে না। সরকার অনেকদিন আগেই বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। দেখা যাচ্ছে, সাশ্রয়ী হওয়ার অপরিহার্যতা থাকলেও বাস্তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন অনেক কমে গেছে। ডলার সংকটের কারণে কয়লা আমদানি করতে না পারায় পায়রার তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং বাঁশখালী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে। এই দুই বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংকট আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। রামপালের উৎপাদনও কমে গেছে। ফলে সারাদেশে বিদ্যুৎ সংকট তীব্রতর হয়ে উঠেছে। শহরের চেয়ে গ্রামের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রামে ২৪ ঘন্টার মধ্যে গড়ে ২০ ঘন্টাই বিদ্যুৎ থাকে না। প্রচ- গরমে বিদ্যুতের অভাবে সাধারণ মানুষের কষ্টের সীমা নেই। কৃষিকাজও চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিঘিœত হচ্ছে শিল্পের উৎপাদন। এই সংকটের মধ্যেও বিদ্যুৎ চুরি ও অবৈধ লাইন বন্ধ হচ্ছে না। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে ৪০ লাখ বিদ্যুৎচালিত ইজিবাইক বিপুল বিদ্যুৎ খেয়ে ফেলছে। অবৈধ সংযোগ ও চুরির কারণে প্রতিদিন ১০ শতাংশের বিদ্যুৎ অপচয় হচ্ছে। ইজিবাইক ও বিদ্যুৎ চুরি বরাবরই বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে ‘গোঁদের ওপর বিষ ফোড়া’ হয়ে আছে।

বিদ্যুৎচালিত ইজিবাইক বন্ধের কথা বহুদিন ধরে বলা হচ্ছে। এমনকি ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর একটি রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্ট ব্যাটারি চালিত থ্রিহুইলার ও ইজিবাইক বন্ধের নির্দেশ দেন। সেইসঙ্গে এ ধরনের গাড়ি আমদানি, ক্রয় ও বিক্রয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। হাইকোর্টের এই নির্দেশ আজ পর্যন্ত কার্যকর করা হয়নি। ফলে রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র অবাধে ইজিবাইক চলাচল করছে। এসব ইজিবাইকে সাধারণত চারটি ব্যাটারি থাকে। এই ব্যাটারি বিদ্যুতের মাধ্যমে চার্জ দেয়া হয়। ইজিবাইককে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশে চার্জের বিভিন্ন জায়গা গড়ে উঠেছে। এসব জায়গায় অবৈধভাবে ব্যাটারি চার্জ দেয়া হয়। এতে বিপুল বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হচ্ছে। এ থেকে সরকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না। এছাড়া বস্তি ও ফুটপাতসহ বিভিন্ন স্থানে বছরের পর বছর ধরে অবৈধ লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ চুরি করা হচ্ছে। এসবের পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী, শ্রমিকনেতা, ছাত্রনেতা থেকে শুরু করে একশ্রেণীর ওয়ার্ড কমিশনার জড়িত আছে। তারা অবৈধ লাইনের মাধ্যমে মাসে কোটি কোটি টাকা লোপাট করে দিচ্ছে। ইজিবাইকের মালিকও তারা। ক্ষমতাসীনদলের লোকজন হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হয় না। ইজিবাইকে শুধু বিদ্যুত অপচয় হচ্ছে না, এর মেয়াদোত্তীর্ণ ব্যাটারি পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রাখায় তা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর তেজস্ক্রিয়তা মানবদেহে প্রবেশ করে বিভিন্ন রোগবালাই সৃষ্টি করছে। এসব ইজিবাইক সড়ক-মহাসড়কে চলার কারণে অহরহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। ইজিবাইকের চলাচল এখন লাগামছাড়া হয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট কেউই নিষিদ্ধ ইজিবাইক ও থ্রি হুইলারের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। দেশের বিদ্যুৎ সংকটের কারণে মানুষের কর্মস্পৃহা যেমন হ্রাস পেয়েছে, তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্য এবং উৎপাদন খাতে ব্যাপক ক্ষতি নেমে এসেছে। সরকার কোনোভাবেই তা সামাল দিতে পারছে না। একপ্রকার অসহায় হয়ে আছে। যদিও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী সময় বেঁধে দিয়ে বলছেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তবে এ ধরনের আশার বাণীতে সাধারণ মানুষ খুশি না হয়ে বরং বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে। কারণ, বিদ্যুতের অভাবে গ্যাস ও পানি সরবরাহ পর্যন্ত ব্যহত হচ্ছে। তাদের নিত্যকার জীবন অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। তারা সরকারের বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণতার বিষয় নিয়ে তিরস্কার করছে।

সরকারের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কথা বলা হচ্ছে, অথচ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও থ্রিহুইলার যে বিপুল বিদ্যুৎ টেনে নিচ্ছে, এদিকে নজর দেয়া হচ্ছে না। অবৈধ লাইন ও বিদ্যুৎ চুরি ঠেকানোর কোনো উদ্যোগ নেই। যে ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ এসব অপকর্মের মাধ্যমে অপচয় হচ্ছে, তা বন্ধ করতে পারলে এই সময়ে কিছুটা হলেও সংকট মোচন করা যেত। কেন ও কি কারণে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উপেক্ষা করে যাচ্ছে, তা বোধগম্য নয়। তবে বুঝতে অসুবিধা হয় না, এর সাথে ক্ষমতাসীনদলের লোকজন এবং বিদ্যুৎ বিভাগের অসৎ কর্মচারি ও কর্মকর্তারা জড়িয়ে থাকায় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুতের এই সংকট কাটাতে অবিলম্বে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও থ্রিহুইলার বন্ধ করতে হবে। এগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। সংকটকালে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য এর কোনো বিকল্প নেই। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে প্রয়োজনে স্কুল-কলেজে কিছুদিনের জন্য ছুটি ঘোষণা করা উচিৎ। এতে কিছুটা হলেও বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে এবং উৎপাদন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে তা কাজে আসবে।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বিহারিরা কেমন আছে
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
ভ্রমণকারীদের সচেতন হতে হবে
নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে নানা কথা
আরও

আরও পড়ুন

বাধা না থাকলেও গণহত্যাকারী ফ্যাসিবাদকে মানুষ নির্বাচনে আসতে দেবে না : আখতার হোসেন

বাধা না থাকলেও গণহত্যাকারী ফ্যাসিবাদকে মানুষ নির্বাচনে আসতে দেবে না : আখতার হোসেন

সালথায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে চলছে ডাকাতির নাটক, বিব্রত পুলিশ!

সালথায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে চলছে ডাকাতির নাটক, বিব্রত পুলিশ!

শিল্পকলায় শুরু হয়েছে মাসব্যাপী ভাস্কর্য প্রদর্শনী

শিল্পকলায় শুরু হয়েছে মাসব্যাপী ভাস্কর্য প্রদর্শনী

এনআইডির তথ্য বেহাত, কম্পিউটার কাউন্সিলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলো ইসি

এনআইডির তথ্য বেহাত, কম্পিউটার কাউন্সিলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলো ইসি

সোনারগাঁও বুরুমদী উচ্চ বিদ্যালয়ের হীরক জয়ন্তী উদযাপন

সোনারগাঁও বুরুমদী উচ্চ বিদ্যালয়ের হীরক জয়ন্তী উদযাপন

ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার পাওনা টাকা পরিশোধ না করলে মামলা- পৌর প্রশাসক ইকবাল হোসাইন

ঈশ্বরগঞ্জ পৌরসভার পাওনা টাকা পরিশোধ না করলে মামলা- পৌর প্রশাসক ইকবাল হোসাইন

সাদপন্থী তাবলীগের মুখপাত্র মুয়াজের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

সাদপন্থী তাবলীগের মুখপাত্র মুয়াজের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর

পূর্বাচলে বুয়েট ছাত্রের মৃত্যু : তিন আসামি ২ দিনের রিমান্ডে

পূর্বাচলে বুয়েট ছাত্রের মৃত্যু : তিন আসামি ২ দিনের রিমান্ডে

লক্ষ্মীপুরে সরকারি রাস্তা কেটে যুবলীগ নেতার চাষাবাদ, প্রতিবাদে মানববন্ধন

লক্ষ্মীপুরে সরকারি রাস্তা কেটে যুবলীগ নেতার চাষাবাদ, প্রতিবাদে মানববন্ধন

কলাপাড়ায় গরু চুরি করে পালানোর সময় জনতার হাতে আটক চোর

কলাপাড়ায় গরু চুরি করে পালানোর সময় জনতার হাতে আটক চোর

এবার পানামা খাল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের

এবার পানামা খাল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের

মাগুরায় গ্রামবাসির সংঘর্ষে নিহত যুবদল নেতা শরিফুলের বাড়িতে বিএনপি নেতারা

মাগুরায় গ্রামবাসির সংঘর্ষে নিহত যুবদল নেতা শরিফুলের বাড়িতে বিএনপি নেতারা

সিমকার্ডের আড়ালে সীমান্তে বেড়েছে চোরাচালান

সিমকার্ডের আড়ালে সীমান্তে বেড়েছে চোরাচালান

কিশোরগঞ্জের আব্দুল কাহার আকন্দ কোথায়? কেউ জানে না!

কিশোরগঞ্জের আব্দুল কাহার আকন্দ কোথায়? কেউ জানে না!

হাসিনাকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির অনুরোধ

হাসিনাকে গ্রেপ্তারে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির অনুরোধ

যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা

রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা

আবারও  ভানুয়াতুতে  দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প

আবারও ভানুয়াতুতে দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প

হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি

হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি

রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'

রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'