সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ করতে হবে
১৭ জুন ২০২৩, ০৯:২৫ পিএম | আপডেট: ১৮ জুন ২০২৩, ১২:০২ এএম
দেশে সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন, হামলা-মামলা দিন দিন বেড়ে চলেছে। সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা নিয়ে বহু বছর ধরেই অভিযোগ করা হচ্ছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা থেকে শুরু করে বিরোধীদলের পক্ষ থেকে সাংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই বলে বলা হচ্ছে। সংবাদপত্র ও গণমাধ্যম ‘সেল্ফ সেন্সরশিপে’ চলছে। এমতাবস্থায়ও সাংবাদিকরা প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরতে গিয়ে প্রতিনিয়ত হামলা-মামলা, খুন ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। গত বুধবার জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার পাটহাটি মোড়ে একদল সন্ত্রাসীর হাতে বাংলানিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জেলা প্রতিনিধি গোলাম রাব্বানি নিহত হন। তাকে নির্মমভাবে মারপিট ও মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত) মাহমুদুল আলম লোকজন দিয়ে গোলাম রাব্বানিকে হত্যা করিয়েছেন। জানা যায়, মাহমুদুল আলম তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন, এমন সংবাদ প্রকাশ করায় গোলাম রাব্বানির ওপর ক্ষুদ্ধ ছিলেন তিনি। তাকে হত্যার আগে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাও করেছিলেন। সেই মামলায় ব্যর্থ হয়ে হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছেন। গোলাম রাব্বানির হত্যার পর ইউপি চেয়ারম্যান পালিয়ে গেলেও সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, গত শনিবার সকাল ৭টায় পঞ্চগড়ের সীমান্তবর্তী এলাকা দেবীগঞ্জ উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের চর তিস্তাপাড়া থেকে মাহমুদুল আলমকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সাংবাদিক গোলাম রাব্বানি হত্যাকাÐ নিয়ে সাংবাদিক মহল থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং মানবাধিকার সংস্থা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। আমরা গোলাম রাব্বানি হত্যাকাÐের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি, হত্যাকরীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ক্ষমতাশালীদের অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশ করার জেরে সাংবাদিকদের ওপর অবধারিতভাবে চলমান হামলা, মামলা, নির্যাতন ও হত্যা বাংলাদেশে স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।’ এখানেই আমাদের উদ্বেগের কারণ। দেশে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা বলে কিছু নেই। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত সংবাদপত্র ও সাংবাদিকরাই যদি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশেনের ক্ষেত্রে নিরাপদ না থাকে, তাহলে ওই স্তম্ভ বলে কিছু থাকে না। এটা যেকোনো রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সেই রাষ্ট্র এবং সরকার প্রকৃত তথ্য না পেয়ে দিকনির্দেশনাহীন হয়ে পড়ে। গণতন্ত্র, সুশাসন, আইনের শাসন দুর্বল হয়ে পড়ে। জনকল্যাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিগত কয়েক বছরে দেশে সাংবাদিক পীড়ন-দমন, নির্যাতন, হামলা-মামলা ও হত্যাকাÐ বহুগুণে বেড়েছে। গোলাম রাব্বানি হত্যাকাÐের পরদিনই বরিশালের উজিরপুরে সংবাদ প্রকাশের জেরে এক সাংবাদিককে মারধর করা হয়েছে। গতকাল একটি দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, দৈনিক বাংলাদেশ বুলেটিন পত্রিকার উজিরপুর প্রতিনিধি মো. আছাদুজ্জামানকে উপজেলার বামরাইল ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম মারধর করে এবং হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলার হুমকি দেয়। সাংবাদিকদের ওপর এ ধরনের হুমকি-ধমকি, নির্যাতন দেশের কোথাও না কোথাও চলছে। এসব দুর্বৃত্তদের অনেকে দাপটের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। দেশে সংবাদিকদের ওপর যেন খড়গ নেমে এসেছে। বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের পর থেকে ক্ষমতাসীনদলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে প্রভাবশালীরা এ আইনকে তাদের বর্ম হিসেবে নিয়েছে। চুন থেকে পান খসলেই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা থেকে শুরু করে নির্যাতন ও হত্যার মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। এ আইন বাতিল ও সংশোধন করা নিয়ে জাতিসংঘসহ দেশি-বিদেশি সংস্থা, নাগরিক সমাজ তাকিদ দিয়ে আসছে। সরকার তা করব, করছি বলে কেবল আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে। কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, সাংবাদিকরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশ করে। এ সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে তাদের সবসময়ই হুমকির মধ্যে থাকতে হয়। এক্ষেত্রে সাংবাদিক সুরক্ষা আইন বলে কিছু নেই। সংবাদ প্রকাশ করা নিয়ে কারো কোনো অভিযোগ থাকলে তার যথাযথ বিধিবিধান রয়েছে। সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি বা গোষ্ঠী প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতিবাদলিপি দিতে পারে। সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্র তা প্রকাশ এবং প্রতিবেদকের বক্তব্য প্রকাশ করে থাকে। সংক্ষুদ্ধ ব্যক্তি এতেও সন্তুষ্ট হতে না পারলে প্রেস কাউন্সিল অথবা প্রচলিত আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। দেখা যাচ্ছে, সরকার সংবাদ ও গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের দমনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো বিশেষ আইন করেছে, যার মাধ্যমে রাতের আঁধারে সাংবাদিককে তুলে নিয়ে যাওয়াসহ কারাগারে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। অন্যদিকে বিভিন্ন অপশক্তি সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হচ্ছে। তাদের হত্যা বা নির্যাতন করছে।
দেশে এমন এক অপসংস্কৃতির সৃষ্টি হয়েছে যে, ক্ষমতাসীনদলের লোকজন থেকে শুরু করে ও প্রভাবশালীরা সাংবাদিকদের ‘প্রতিপক্ষ’ হিসেবে গণ্য করছে। কোনো গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের অপসংস্কৃতি দেখা যায় না। এ পর্যন্ত দেশে যতজন সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তার প্রতিকার হয়নি বললেই চলে। এই প্রতিকার না হওয়াতে নিপীড়নকারীরা যেমন পার পেয়ে যাচ্ছে, তেমনি অন্যরাও উৎসাহী হয়ে উঠছে। ‘সাংবাদিক মারলে কিছু হয় না’ এমন একটা মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে। আমরা মনে করি, সরকার গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে ইচ্ছুক। এসব প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সংবাদপত্র, গণমাধ্যম ও সাংবাদিকরা সবচেয়ে বেশি সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। সরকারের উচিত হবে, সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমকে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করার ক্ষেত্রে সুরক্ষা দেয়া। যারাই সাংবাদিক নিপীড়ন, নির্যাতন ও হত্যার সাথে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে দ্রæত আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। সাংবাদিক গোলাম রাব্বানি হত্যাসহ আরও যেসব সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে এবং এর সাথে যারা জড়িত, তাদেরকে দ্রæত বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের ছাড় দেয়া যাবে না।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল
‘স্পেন্ড অ্যান্ড উইন’ ক্যাম্পেইনের বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেছে মাস্টারকার্ড
সিটি ব্যাংক আনল অভূতপূর্ব ভিসা ইনফিনিট ক্রেডিট কার্ড
শেখ হাসিনার কোনো ক্ষমা নেই, জবাব তাকে দিতেই হবে : মির্জা ফখরুল
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে খুনিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে