সাম্প্রতিক রাজনৈতিক হালচাল ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের প্যারামিটার
২০ জুন ২০২৩, ০৮:০২ পিএম | আপডেট: ২১ জুন ২০২৩, ১২:০২ এএম
গণতন্ত্র, সুষ্ঠু নির্বাচন ও মানবাধিকারের প্রশ্ন সামনে রেখে বাংলাদেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন আধিপত্যবাদের রাজনীতির উপর ঘুরপাক খাচ্ছে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ, পশ্চিমা বাণিজ্য ও উন্নয়ন অংশীদার রাষ্ট্র এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আইনসম্মত নিরপেক্ষতা, সক্ষমতা নিশ্চিত করা, মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার মত মৌলিক ইস্যুগুলোতে দেশে গড়ে ওঠা উত্তুঙ্গ জনমতের প্রতি পশ্চিমাদের প্রকাশ্য, অকুণ্ঠ ও জোরালো সমর্থনের বিপরীতে আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী শক্তিগুলো দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে দেখা যাচ্ছে। আঞ্চলিক আধিপত্যবাদী শক্তি চীন ও ভারত বাংলাদেশ প্রশ্নে প্রায় অভিন্ন অবস্থানে রয়েছে। আগামী নির্বাচন প্রশ্নে শেষ পর্যন্ত আঞ্চলিক কুশীলবদের ভূমিকা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, এখনই তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তবে কেউ কেউ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকারের বদলে ক্রীড়নক, তল্পিবাহক সরকার চায়। রোহিঙ্গা সংকটের প্রশ্নে ভারত ও চীনের ভূমিকা থেকে বুঝা গেছে, এ অঞ্চলে বাংলাদেশ আসলে বন্ধুহীন। মিয়ানমারে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে দেয়া, সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদ উস্কে দেয়া, রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর গণহত্যা বা এথনিক ক্লিনজিং পরিকল্পনার প্রেক্ষাপটে প্রাণ বাঁচাতে সেখান থেকে ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ার পর তাদের স্বদেশে ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের সমঝোতার প্রস্তাবে মিয়ানমার সরকারের ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরণ এবং বছরের পর বছর ধরে শীতল ভূমিকার নেপথ্যে ভারত ও চীনের প্রচ্ছন্ন ভূমিকা অনেকটাই প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গা প্রশ্নে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক ফোরামের ভোটাভুটিতে চীন ও ভারত বার বার বাংলাদেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে ভোট দিতে দেখা গেছে। আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতিতে ভারত ও চীন পরস্পর বৈরী হলেও উভয় দেশই বাংলাদেশকে শ্রেফ বাণিজ্য ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে। এ দেশের জনগণের রাজনৈতিক প্রত্যাশা, মানবাধিকার, ভোটাধিকার, গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের কোনো মূল্যই যেন তাদের কাছে নেই। গত ১৬ বছরে ভারতের রেমিটেন্স আয় ও রফতানি বাণিজ্যের কামধেণুতে পরিনত হয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক নদী আইন ও অববাহিকা ভিত্তিক-আঞ্চলিক পানি ব্যবস্থাপনাকে অগ্রাহ্য করে অভিন্ন নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ, পানি প্রত্যাহার করে ভারত যখন বাংলাদেশকে পানি বঞ্চিত করে দেশের বিশাল অংশকে মরুভূমিতে পরিনত করছে, তখন বাংলাদেশের নদী বন্দর, সমুদ্র বন্দর, মহাসড়ক, রেলপথ ও নৌপথে ট্রানজিট ও করিডোর নিয়ে ভারত তার বিচ্ছিন্নবাদী হুমকি নিরসন, সেভেন সিস্টার্স রাজ্যগুলোর সাথে ভারতের মূল ভ’খন্ডের সরাসরি বাণিজ্যিক যোগাযোগের অভাবনীয় সুযোগ নিয়েছে ভারত। কিন্তু ভারতের চিকেন নেক করিডোর ব্যবহার করে নেপাল ও ভূটানের সাথে বাংলাদেশের সরাসরি বাণিজ্য করার পথে প্রতিবন্ধকতা জিইয়ে রাখছে ভারত। বাংলাদেশকে বশে রাখতে ভারতের চানক্য নীতি এবং চীনের আধিপত্যবাদী শ্যেণদৃষ্টির বিপরীতে বাংলাদেশের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের তীক্ষè নজরদারি শেষ পর্যন্ত একটি ত্রীমুখী ঠান্ডা লড়াইয়ের পাদপীঠ হয়েছে বাংলাদেশ।
শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশ ভারতের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারবে না, এমন ধারণা পোষণ করছেন ভারতীয় নীতি নির্ধারকরা। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রশ্নে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ গ্রহণের ক্ষেত্রে পশ্চিমা চাপ এড়িয়ে আবারো একদরফা নির্বাচনের পথ বেছে নিতে একই সাথে ভারত ও চীনের প্রভাব বলয়ে আশ্রয় নিচ্ছে সরকার। গত দুইটি নির্বাচনের পূর্বেও সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রশ্নে পশ্চিমা বিশ্ব রাজনৈতিক সংলাপ ও সমঝোতার জন্য নানাভাবে চাপ দিয়েছিল। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি নিশ্চিত করতে পশ্চিমাদের এই তৎপরতা আরো অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। নব্বই দশকের প্রথমার্ধে স্যার নিনিয়ান স্টিফেনের দূতিয়ালি, এরপর জাতিসংঘ প্রতিনিধি তারানকোসহ মার্কিন ও ইউরোপীয় প্রতিনিধিরা নানাভাবে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। এসব ব্যর্থতার জন্য মূলত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বকেই দায়ী করা হয়েছে। সরকার ও বিরোধীদল হিসেবে আওয়ামীলীগের একরোখা ভূমিকার মধ্য দিয়ে বার বার দেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, লগিবৈঠা দিয়ে রাজপথে মানুষ হত্যা এবং ওয়ান-ইলেভেনের সেনাসমর্থিত সরকার বসানোর পেছনে আওয়ামীলীগ নেতাদের ভূমিকার কথা নিজেরাই স্বীকার করেছেন। এক-এগারো সরকারের অধীনে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই ইনকাম্বেসি ফ্যাক্টর হিসেবে বিএনপি জোটকে হটিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানোর ব্যাপারে একটি আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক বোঝাপড়ার ফ্যাক্টর পরবর্তীতে নানাভাবে প্রকাশিত হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন এবং ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিসহ নানাজনের লেখায় সে বিষয়ে গোপণ তথ্য উঠে এসেছে। তবে ২০১৪ সালের দশম এবং ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে নির্বাচনের নামে প্রহসনে পরিনত করার পেছনে ভারতীয়দের ভূমিকা অনেকটা উলঙ্গভাবে প্রকাশিত হয়ে পড়েছে। দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচনে অংশ না নিতে যখন একাট্টা হয়ে মাঠে নেমেছিল, তখন সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নির্বাচনে না যাওয়ার প্রকাশ্য ঘোষণাকে ভন্ডুল করতে তাকে রোগী বানিয়ে সিএমএইচে ভর্তি করিয়ে নির্বাচন থেকে প্রত্যাহারের ঘোষণা রদ করার যে নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছিল, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে তা একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে। দেড়শতাধিক আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাস করা এবং শতকরা ১০ ভাগের কম ভোটার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় নির্বাচনের পর রাজনৈতিক সমঝোতার মধ্য দিয়ে সম্ভাব্য একটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছিলেন। এরপর ৫ বছরেও রাজনৈতিক সমঝোতার কোনো উদ্যোগ না নিয়ে ২০১৮ সালে শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতির উপর আস্থা রেখে বিএনপিসহ বিরোধিদল অংশগ্রহণ করলেও সাধারণ ভোটাররা ভোট দেয়ার কোনো সুযোগ পায়নি। আগের রাতে নৌকার ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভরে রাখার সচিত্র খবর ভোটের দিন বিদেশী গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়। সম্প্রতি বিদায়ী একজন জাপানী রাষ্ট্রদূত সেই নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, বিশ্বের আর কোথাও কখনো এমন নির্বাচনের কথা তিনি শোনেননি।
একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের জন্য দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দল এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক সংলাপ-সমঝোতার কথা বলা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক সূচকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থেকে ছিটকে বাংলাদেশ হাইব্রিড রিজিমে নেমে যাওয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশ আমন্ত্রণ না পাওয়া, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ধারাবাহিক অভিযোগ, র্যাব-পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণের পথে বছরের পর বছর সময় পার হয়ে গেলেও দেশের জন্য মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ ভোটাধিকার, মানবাধিকারের মত ইস্যুতে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বদলে পশ্চিমাদের দিকে ঢিল ছুরে পরিস্থিতি ক্রমেই প্রতিকূল করে তোলা হয়েছে। মে মাসের ৩ তারিখে মার্কিন ভিসানীতির বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ে চিঠি দিলেও সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া বা সমাধানের উপায় না খুঁজে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কিছু কিনব না, আমরাও পাল্টা ভিসানীতি গ্রহণ করব ইত্যাদি অবান্তর কথা বলে প্রকারান্তরে পশ্চিমা বিশ্বের সাথে এক প্রকার সাংঘর্ষিক অবস্থান গ্রহণ করেছে সরকার। যখন ডলার ও জ্বালানি সংকটে দেশের অর্থনীতি চরম নাজুক অবস্থায় পড়েছে, তখন দেশের রফতানি বাণিজ্যের শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ নির্ভরশীল পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে সাংঘর্ষিক অবস্থান গ্রহণের পেছনে দেশের বা সাধারণ মানুষের কোনো স্বার্থ নেই। এর মধ্য দিয়ে মূলত দেশকে একটি চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেয়ার আহাম্মকিপূর্ণ ঝুঁকি নেয়া হচ্ছে, যা’ মোটেও কাম্য নয়। চীনের মত অর্থনৈতিক পরাশক্তিও যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বড় কোনো বাণিজ্যিক বা অর্থনৈতিক ঝুঁকি নিতে চায়না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন চীনা পণ্যের উপর শত শত কোটি ডলারের বাড়তি কর চাপিয়ে মূলত চীনের বিরুদ্ধে ট্যাক্স ওয়ার শুরু করেছিলেন, তখনো এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চীনকে অনেক ভেবে চিন্তে পাল্টা বাণিজ্যিক ব্যবস্থা নিতে হয়েছিল। উল্লেখ্য, চীনের কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণ রয়েছে। এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রফতানী বাণিজ্যে হাজার হাজার কোটি ডলারের ব্যবধান চীনের অনুকুলে। সেখানে বিশ্বের এক নম্বর অর্থনৈতিক ও সামরিক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমাদের রফতানি ও রেমিটেন্স আয়ের দেশ প্রধান দেশ। মার্কিনীদের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ঠিক রাখতে বড় অর্থনৈতিক শক্তিগুলোও যেখানে ঝুঁকি নেয়ার সাহস পায়না, সেখানে শুধুমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচন ও মানবাধিকারের প্রশ্নে মার্কিনীদের আল্টিমেটাম এড়াতে তাদেরকে বৈরীতার অবস্থানে ঠেলে দেয়ার বাস্তবতা বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতী। চীন এবং ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় তিন হাজার কোটি ডলার। আমরা যা কিছু আমদানি করি তার শতকরা ৭০ ভাগের বেশি ভারত ও চীন থেকে। যদিও জ্বালানি ও খাদ্যের জন্য আমরা চীন বা ভারতের উপর নির্ভরশীল নই। বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশক থেকে আমরা মার্কিন খাদ্য সহায়তার উপর নির্ভর করে এসেছি। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালের দুর্ভীক্ষে বাংলাদেশে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর জন্য একদিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের লুটপাট-দুর্নীতি যেমন দায়ী, অন্যদিকে রাশিয়া ও ভারতের প্রভাবে মার্কিনীদের নীতি লঙ্ঘন করে কিউবার সাথে বাণিজ্যচুক্তির কারণে পিএল-৪৮০ খাদ্য সহায়তার চালান স্থগিত করায় দেশে দুর্ভীক্ষ চরম আকার লাভ করে। বাংলাদেশে মার্কিন খাদ্য সহায়তা এখনো বন্ধ হয়নি। পিএল ফোরএইটি (৪৮০) নামের সেই প্রকল্পের আওতায় প্রতিবছর শত শত কোটি টাকার খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। রোহিঙ্গা অভিবাসন সংকটের পর থেকে সহায়তার পরিমান অনেক বেড়েছে। বিশ্বের আর কোনো পরাশক্তি এভাবে সাহায্যের ডালি নিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। উল্লেখ্য, পিএল-ফোর এইট্টি হচ্ছে একটি মার্কিন নীতি কৌশলের অংশ। এর মধ্য দিয়ে খাদ্য সহায়তা, গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন এবং খাদ্য মূল্য ও খাদ্য নিরাপত্তার কর্মপরিকল্পনা নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত।
করোনা মহামারির সময় প্রতিবেশি দেশ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট আন্তর্জাতিক টীকা কর্মসূচির জন্য টীকা উৎপাদনে বিশেষ দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়। নরেন্দ্র মোদির টীকা রাজনীতির বাচালতাও দেখা গেছে। সে সময় শিনোফার্মা, মর্ডানাসহ টীকা উৎপাদনে অনেক অগ্রসর প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাশ কাটিয়ে বেক্সিমকো গ্রুপের তত্ত্বাবধানে জরুরি ভিত্তিতে করোনা ভ্যাক্সিনেশন কর্মসূচি শুরু করতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সাথে চুক্তি করা হয়। টিকা সরবরাহের সময়সীমা নির্ধারণ করে সাড়ে তিন কোটি ডোজ টিকার মূল্য হিসেবে প্রায় ৬শ’ কোটি টাকা অগ্রিম পরিশোধের পরও বাংলাদেশকে টিকা দেয়নি ভারত। অন্যদিকে আটলান্টিক মহাসাগরের ওপার থেকে কয়েক দফায় সাড়ে কোটির বেশি টীকা বাংলাদেশে পৌছে দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সবচেয়ে অগ্রসর চীনও চিকিৎসা সরঞ্জাম, কোটি কোটি ভ্যাক্সিন ও বিশেষজ্ঞ পাঠিয়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু বন্ধুত্বের ‘অনন্য উচ্চতা’য় আসীন ভারত বাংলাদেশের প্রতিটি দুর্যোগে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নিজের আসল চেহারা দেখিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বাংলাদেশের বিপক্ষে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতি সত্ত্বেও খোড়া অজুহাত দেখিয়ে বাংলাদেশের পাটের উপর ভারতের এন্টি ডাম্পিং ট্যাক্স বেরিয়ার সৃষ্টি করা, বিশেষ ঘাটতির সময়ে স্থল বাণিজ্যে অকস্মাৎ বাংলাদেশে চাল বা পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ার মত উদাহরণ দেয়া যায়। পানির অভাবে নদীগুলো নাব্য হারিয়ে পরিবেশগত ঝুঁকি এবং সেচের অভাবে কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার বিপদের কথা ভারত জেনে বুঝেও যৌথ নদীগুলোর উজানে বাঁধ দিয়ে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বাংলাদেশকে বঞ্চিত করার মধ্য দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের প্যারামিটার বুঝা যায়। এসব ছাপিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার হরণের ধারাবাহিক কার্যক্রমের সাথে ভারতীয় ভূমিকাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। পরিবর্তিত আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে এ অঞ্চলের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, জননিরাপত্তা, ভোটাধিকার ও সুশাসনের প্রশ্নে চীন-ভারতের ভূমিকাই হতে পারে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সম্পর্কন্নোয়নের মূল মানদ-। কোনো অগণতান্ত্রিক রিজিমকে টিকিয়ে রেখে জনগণের আস্থা হারানোর মত বোকামিপূর্ণ কূটনীতির মধ্য দিয়ে কোনো টেকসই সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারেনা।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সল্টের বিধ্বংসী শতকে উড়ে গেল উইন্ডিজ
নুনেজ-সালাহ নৈপুণ্যে জিতে পয়েন্ট ব্যবধান বাড়াল লিভারপুল
ছন্দ হারানো সিটি হারল ব্রাইটনের কাছেও
হাঁটুর চোটে মৌসুম শেষ মিলিতাওয়ের
ভিনির হ্যাটট্রিক,বেলিংহ্যামের গোলে ফেরার রাতে রিয়ালের জয়
রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে এগিয়ে গেল শ্রীলঙ্কা
শারজাহতে ৩৪ বছরের অপেক্ষা ঘোচালেন শান্ত
প্রথম আঘাত তাসকিনের
সিলেটে ইয়াকুবিয়া হিফযুল কুরআন বোর্ডের পরীক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত
'ডিডি একা নয় হলিউডে এমন অসংখ্য রাঘব-বোয়াল রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে'
শরণখোলায় বিএনপি.র আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
সম্মানসূচক ডক্টরেট অর্জন করেছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশী সমাজকর্মী ফয়েজ উদ্দিন এমবিই
পাঠ্যবইয়ে মুসলমানদের ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরতে হবে
যুক্তরাষ্ট্রের নারী প্রেসিডেন্ট কি অধরাই থেকে যাবে?
গণঅভ্যুত্থানের সাবলিমিটি : বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন
গণতন্ত্রের স্বার্থে এ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে হবে
পরিবর্তনের হাওয়া লাগেনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনে অফিস চালাচ্ছেন আওয়ামী কর্মকর্তারা !
ড. ইউনূসসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ করলেন লন্ডনে পলাতক আনোয়ারুজ্জামান
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বন্ধে কাজ করতে আগ্রহী ট্রাম্প
হতাশ মার্কিনিরা দেশ ছাড়তে চাচ্ছেন